Tuesday 28 July 2020

|শুভাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়| ২৮শে জুলাই|

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা | | ২-য় বর্ষ ||












শুভাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়
অনুভবে____

' আসা যাওয়ার পথের ধারে..কেটেছে দিন গান গেয়ে মোর কেটেছে দিন..যাবার বেলায় দেবো কারে...'
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কন্ঠ। ঊনসত্তর সালের কোনো এক সময় হিজ্ মাস্টার্স ভয়েস থেকে গানটি রেকর্ড করা হয়েছিল। আশির দশকের প্রথম দিকে বাড়ির পুরনো ইলেকট্রিক রেডিওটা খারাপ হয়ে যাওয়ায়  একটা নতুন ট্রানজিস্টার রেডিও এসেছিল। ঠাকুর্দার খুব প্রিয় রেডিও ছিল সেটা। ওঁর ঘরেই রাখা থাকতো। দুপুর বেলায় দাদুর পাশে বসে অনুরোধের আসরে গানটি প্রথম শুনি। কতই বা বয়স তখন। গানের ভেতরে প্রবেশ করে তার রসাস্বাদন করবার সাধ্য তখনো গড়ে ওঠে নি। গড়ে ওঠা সম্ভবও নয়। কিন্তু কি একটা অদ্ভুত ভালোলাগা জন্মে গিয়েছিল গানের প্রতি যতটা,তার থেকেও বেশি হয়তো সুরের প্রতি। মাঝে মাঝেই রেডিওতে গানটা দিত আর আমিও মনোযোগ দিয়ে শুনতাম। 
কতকাল কেটে গিয়েছে। আমার সে আসা যাওয়ার পথের ধার দিয়ে কত স্রোত বয়ে গিয়েছে। ঠাকুর্দা গত হয়েছেন বহুকাল হয়ে গেল। জীবন থেকে অনেক কিছু হারিয়ে গিয়েছে, বিদায় নিয়েছে। আবার অনেক কিছু পেয়েওছি..তার মূল্যও নেহাৎ কম নয়। 
সে পুরনো রেডিও খানা আজও রয়ে গেছে ঘরে।এখন আমার ঘরে। স্থানে স্থানে রঙচটা। বিবর্ণপ্রায়। ব্যাবহার হয় না অনেকদিন। আজ দুপুরবেলায় দাদু ঠাকুমার স্মৃতিবিজরিত আমাদের সে ৩৫ নম্বর মুক্তারাম বসু স্ট্রিটের পুরনো বাড়ির কথা(যে বাড়ি ছেড়ে এসেছি অনেককাল) গল্প করতে করতে খেয়ে দেয়ে উঠে কি মনে করে রেডিওটা 
 একটু চালাতে গিয়ে হঠাৎই গানটা আবার কানে বেজে ওঠে... সেই একই মানুষের কন্ঠ। শুনতে শুনতে শৈশবের সেই হারিয়ে যাওয়া আস্বাদ যেন বর্ষার মেঘের মতো অদ্ভুতভাবে নতুন করে ফিরে এলো আমার মনে..।  
জানি, ইউ টিউব সার্চ করলেই হয়তো বারবার গানটি শুনতে পাবো। কিন্তু চাইলেই কি আর পৌঁছাতে পারবো সে ৩৫ নম্বর ডাউন মেমোরি লেন এ, ফিরে দেখা স্মৃতির অলিন্দে, বিবর্ণপ্রায় রেডিওটার মতো করে?? 
জীবন বদলে যায়। শৈশবের আস্বাদ বোধহয় বদলায় না, যার মাঝেই লুকিয়ে থাকে বেঁচে থাকার রসদ...আসা যাওয়ার পথের ধারে ছড়িয়ে থাকা মালার ছিন্ন বিচ্ছিন্ন  ফুলগুলো যেটুকু পেরেছি যত্ন করে রেখে দিয়েছি,  হয়তো আমার ছোট্ট বাবলুর জন্যই...

No comments:

Post a Comment