|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা | | ২-য় বর্ষ ||
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
পাখি রঙের আকাশ ---- ৯৫
গভীর রাতে ঘুম ভেঙে গেলে একেবারে চুপ হয়ে যাই। মনে হয় যেতে যেতে আমাকে কেউ থামিয়ে দিয়েছে। হয়ত আমিই থেমে গেছি। বুঝতে পারি না, আমি কোথায় আছি। তাই আবার কোথা থেকে শুরু করব স্থির করতে পারি না। জানলা খুলে দিই। অন্ধকার পড়তে চেষ্টা করি। আমার যাতায়াত পথের সঙ্গে একটা মিল খুঁজে পাই। কাউকে কাউকে চিনতে পারি। চোখ পার করে চলে আসা এমন কোনো হাওয়া হঠাৎ গায়ে এসে লাগলে শীত করে। আর ঠিক তখনই মনে পড়ে যায় আমার একটা জানলা ছিল। কোনো এক সকালে সেই জানলায় হাত রেখে আমি কথা দিয়েছিলাম। অনেক কিছুই বদলে বদলে গেছে। কিন্তু সেই কথারা মাঝে মাঝেই আমাকে পড়া ধরে। আর পড়া না পারলেই ওরা আমার ঘুম ভাঙিয়ে দেয়। হঠাৎ জেগে ওঠা এইকারণেই। আমার ঘুম এলেও মুখের কথারা এখনও জেগে। বুঝতে পারি, আড়ালে আড়ালে কোনো কিছুর প্রস্তুতি চলছে। অনেক দূর যাবে বলে যে কথারা তাদের স্বভাব অনুযায়ী সকাল সকাল রাস্তা পার হচ্ছিল, তারা এখন চলন্ত রাস্তার মাঝে। হঠাৎ করে বিস্ফোরণ হলে কারও কিছু বলার থাকবে না।
নীলিমা সাহা
'অহন্যহনি ভূতানি গচ্ছন্তীহ যমালয়ম্
শেষাঃ স্থাবরমিচ্ছন্তি কিমাশ্চর্যমতঃ পরম্'
1)
জন্ম!জীবন! মৃত্যু!চিরচেনা শব্দের /সফর-যাপন---
দেখি,
দুঃখ-নদী
চাঁদের হাসি
নানান রঙের আগুন-বিলাস
টের পাই,
সিঁড়ির মধ্যমায় পিছল পা
বুঝি,চাবি ঘোরাচ্ছে কেউ
জানান দেয়,চাকা ঘুরছে
মহাকবিতার চাকা!জন্ম-জীবন-মৃত্যু ...কখনও মাত্রাহীন কখনও অর্ধমাত্রা ভাঙতে ভাঙতে /শীতাভ পরাণ যে প্রশ্রয় চায়
অথচ চাকার চারধারে ওয়েট শব্দটি অস্তিত্বহীন/
তবু,অপেক্ষা জেগে থাকে কামদুনিতে---চরাচরে কড়া নাড়ে সফর.../জীবন-বিহারের যে সুতোঘুড়ির সম্পর্ক----
সুতো যতই ওড়াক,ঘুড়ির মুখস্থ ছিঁড়ে যাওয়ার সুখ/
জোনাকির উপস্থিতি স্বীকৃতি পায়,তবু,পদ্মপাতায় টলমল
আলোর মুকুর
জলের অতলে তাকিয়ে থাকে সরল/দুটি চোখ
চাকা ঘোরে,চক্রবৎ আসে
জন্ম! জীবন! মৃত্যু!
2)
আগু-পিছু নেই,তবু অগ্নিহোত্রী/এই জল এই আগুন/হু হু প্রতিধ্বনি
গার্হপত্য নেই,তবু বোবা ধিক্কার/হি হি হি হি ভাষা-বন্ধন
এই চরাচর,এই সংসার
অ-শোক বোধি,দুঃখ--এই আছে এই নেই/তবু জলপ্রপাত/অনন্ত কৃষ্ণ-গহ্বর
নাভিশ্বাস,না বিশ্বাসের
কোনও গ্রন্থি নেই ,তবু
ভাতের সন্ত্রাস
শব্দাক্ষরে অবধ্য ঢেউ
চিত্রনাট্যে দ্বন্দ্ব সমাস
পথের রেওয়াজে শুধুই জীবন-জিজ্ঞাসা,তবু
অনপেক্ষ উত্তরেই ঝুঁকে থাকে
বাসনার পুনরায়ন
3)
অ শ্ব ত্থ
(অ=নেই।শ্ব=আগামী কাল।ত্থ--স্থ=স্থিতি-)
আগামী কাল পর্যন্ত যে স্থিতি
সুনিশ্চিত নয়...তবু
ঋতায়নে রোমকূপে জাগে শিহরণ
কারণেই শৃংখলিত কার্য---
অতীত ভোলে না--হাত আজ
নিজেই পোশাক পরেছে আঁজলা ভরা জলের তৃষ্ণা ---সেও বাহ্য ... মুঠো খুলে দশাঙুল সরিয়ে নিচ্ছে আবিশ্ব ভাবনা,
নিরবধি সময়ের এখন ভরা টান,আল ভাঙা /শুধুই হু হু হাওয়া ---দূরে কাছে /অদৃশ্য জৈব অস্ত্র,হিংস্র ঘাতক:নীরবে/
শিকড় নেড়ে দোলাচ্ছে,দোল খাচ্ছে---কেড়ে নিচ্ছে মায়ার আলো
ঘটমান বর্তমান আর দেখতে পাবে না ভবিষ্যত ...তবু
হাঁটু মুড়ে বসেছে জীবন,বিলাপ ও বন্দনায়
মহান চাইছে সংশয়হীন বাঁচার তাগিদ
4)
"ঐশ্বর্য সমগ্রস্য বীর্যস্য
যশসঃ শ্রিয়ঃ
জ্ঞান বৈরাগ্যয়োশ্চৈব যন্নাং
ভগ ইতিঙ্গনা"--
হাজারো ক্রোধ কেউ কি টেনে
হিঁচড়ে আনল! না কি বাঁশবনে কবি আড়মোড়া ভাঙছেন অক্ষরবৃত্তের মাঝে কোন পয়ার ভাবনায়
বিজন সেতুর মুখে শত সহস্র ক্ষত--অহংকারের ওম্ ছিঁড়ে লজ্জা কোথায় লুকোবে নিজেকে,কালপুরুষের টাওয়ারে ধর্ষকাম শাসক!
হে চক্ষু,অবধিবিহীন দ্যাখো,চারপাশে খাড়ি রা নেই,দুর্বোধ্য আঁধি,বিভীষণ মন কী পান করছে! আধুনিকোত্তর মানুষ অধুনা দুর্বোধ্য--পুড়ছে রোম থেকে অযোধ্যা,হরপ্পা থেকে খাজুরাহো,মিশর---অনিশ্চিত
নিঃশ্বাসের শেষ বিশ্বাসটুকুও
দরজা ঠেলে ঢুকে পড়ছে সকল নিষেধ ...
No comments:
Post a Comment