Wednesday 29 July 2020

|কেয়া চক্রবর্তী | ২৯শে জুলাই|

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা | | ২-য় বর্ষ ||












কেয়া চক্রবর্তী
ও চাঁদ_____

ও চাঁদ তোমার মোহিনী ওই রূপে,
মন চায় যাই চলে মেঘের পানসি চেপে,
তুমি আছো মোর অনুভবে, ধরা ছোঁয়ার বাইরে,
বাতায়ন পথে তোমায় দেখেই মনের সাধ আমি মেটাই রে।।

পূর্নিমা রাতে তোমার মায়াবী আলো 
 পড়ে এসে যখন আমার বাতায়নে,
তোমার জোছনার ওই আলোকছটায়,
উদাস হয়ে অপলকে থাকি চেয়ে আনমনে।।

আঁধার রাতের ঘুচিয়ে দাও তুমি সকল কালো,
তোমায় নিয়ে হারিয়ে যেতে উদাসী এই মন চায়,
হাজার তারার আলোক বাতি লাগে না তখন ভালো
তোমার প্রেমে পাগল পারা কাব্য লিখি তায়।।

হঠাৎ যখন ঈর্ষাকাতর মেঘ এসে তোমায় যায় ছুঁয়ে,
তোমায় দেখতে না পাওয়ার যন্ত্রনায় কেঁদে উঠি ভয়ে,
ও চাঁদ তুমি দূর আকাশে আছো লক্ষ তারার ভিড়ে,
বাতায়নে বসে দেখি তোমায়, আমার নিভৃত নীড়ে।।


শহরের ইতিকথা____

কালের চক্রে ইতিহাসের হয় পুনরাবৃত্তি,
সময়ের খাতে বিলীন হয়ে যায় অতীতের কত স্মৃতি,
চাপা পড়ে গেছে কত মানুষের বুকফাটা চিৎকার
 অন্নের খোঁজে ডুকরে ওঠা বুভুক্ষু মানুষের হাহাকার।।

তবুও আজও নীরব রয়েছে পায়নি যোগ্য সম্মান,
দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় গেছে কত প্রাণ বলিদান,
সভ্যতার ক্রমবিবর্তনে সর্বহারারা আজও উপেক্ষিত,
শাসকশ্রেণীর অত্যাচারে অবহেলিত, নির্যাতিত।।

আজও তারা রয়েছে সুবিচারের অপেক্ষায়,
ভাগ্যের ফেরে যদি কখনোও তাদের বদল হয়,
ভগ্নশহরের হাড় পিঞ্জরে প্রোথিত আছে সেই সব কথা,
যদি অনুভব করতে পারো, কখনো তাদের মর্মব্যথা।।

এখানে শান্তি নেই, এখানে স্বস্তি নেই,
জীবনের কত ফুল মুকুলেই পড়ে ঝরে, তার হিসেব নেই,
অন্ধ গলির নরকে এখানে মুক্তির আকুলতা,
প্রাসাদোপম নগরী যেন বিলাসব্যসনের নিদারুণ রসিকতা।।

মনের কথা___

যখন থেকে পেন্সিল ছেড়ে,
হাতে তুলে নিলাম কলম,
ভুলগুলোকে শুধরে নিয়ে,
ঠিক করার রইলো না কোনোই মলম।।

কলম আবিষ্কারের পর লিখি
মনের কতই না  কথা,
লেখাই আমার মলম ক্ষততে,
ঘুচায় যা মনের ব্যথা।।

কলম আছে তাই লিখতে
পারি মনে আসে যত ভাবনা,
এর আগে লিখে চিরস্থায়ী
করার উপায় এত সহজ ছিল না।।

কলম ধরার মাঝে আছে
এক অসীম আনন্দ,
যা চেঁচিয়ে আমি পারিনা বোঝাতে,
লিখতে সেটা লাগে না তো মন্দ।

দুখের কথা লিখতে গিয়ে
কষ্ট আমার হচ্ছিলো বেশ,
সুখের কথা লিখতে গিয়ে,
দেখি কলমের কালিই শেষ।।

কলমের এক খোঁচাতে 
কত জীবন বদলে যায়,
কেউ সুবিচার যদিও বা পায়
কেউ থাকে বসে অপেক্ষায়।।

কলমের মত পরম বন্ধু
লেখকের কেউ নেই আর,
কত সহজেই বর্ণিত করতে পারে,
নিপীড়িত আর্তের চিৎকার।।


প্রতিবাদী_____

যদি চুপ করে থেকে অন্যের কথায় দাও তুমি সায়,
তোমার থেকে ভালো মানুষ আর কেউ নেই এই দুনিয়ায়,
যেই মুহুর্তে তুমি অন্যায়ের করবে প্রতিবাদ,
চলতে থাকবে সহস্র বাদানুবাদ।।

যার কাছে এতদিন ছিলে নয়নের মণি,
আজ তুমি হয়ে যাবে, সাক্ষাৎ শনি,
অন্যায়ের বিরুদ্ধে চুপ থেকে আমরা পরোক্ষে শক্ত করছি তাদের হাত,
প্রতিবাদী হয়ে ভেঙে দাও তাদের এই আঁতাত।।

সারাজীবন মুখ বুঝে সহ্য করেছি কত অত্যাচার,
এবার তবে গর্জে উঠে তোলো প্রতিবাদের ঝড়,
বুঝিয়ে দাও আমরা আর সইবো না অনাচার,
থাকবো না আমরা কুলুপ এঁটে, প্রয়োজনে তুলে নেবো হাতিয়ার।

নারী পুরুষ সমাজে উভয় উভয়ের পরিপূরক,
সভ্য সমাজ গড়তে হলে এদের মাঝের বৈষম্য দূর হোক,
আর কতকাল সইবে নারী অত্যাচার আর বঞ্চনা,
এবার নারী হও প্রতিবাদী, নয় তো তুমি ফেলনা।।


কবে হবে প্রতীক্ষার অবসান?___

বলতে পারো, কবে হবে এই প্রতীক্ষার অবসান?
দুপুর থেকেই মেঘলা হয়ে আছে যে আসমান,
সাগরতীরে বসে আছি হয়ে আনমনে,
স্মৃতিগুলো ভিড় করে আসে কেন সন্তর্পণে?

সাগরতীরে বইছে হাওয়া, দুলছে দূরে ঝাউ,
একলা বসে অভিমানীর পাশে নেই তো কেউ কোথাও,
হাওয়ার তোড়ে দুলছে কেমন তার কেশ,
তরঙ্গের দিকে আনমনে চেয়ে আছে হয়ে নির্নিমেষ।।

তরঙ্গের ওঠানামা দেখে সে অবাক নয়নে,
সাগর এসে মিশেছে সেথা বেলাভূমির সনে,
যেদিকে তাকাই সেদিকেই সুনীল জলরাশি,
ঢেউয়ের টানে যে সবকিছুই যাচ্ছে কূলে ভাসি।।

সাগরে ওঠে ঊর্মিমালা সাদা ফেনা রাশি রাশি,
আকাশ যেথা দিগন্তে যায় মিশি।।
এসব কথা ভাবতে ভাবতেই আঁখি করে ছলছল,
সাগরজলে মিশে যায় অভিমানীর চোখের জল।।

আর কতদিন এভাবেই করে থাকবে অভিমান,
আমার জন্য কাঁদে না বুঝি তোমার কঠিন পরান,
কোনদিনই আসবে না কি ভাঙাতে মানিনীর মান,
বলতে পারো কবে হবে এই প্রতীক্ষার অবসান?


No comments:

Post a Comment