|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা | | ২-য় বর্ষ ||
মনজুর রহমান ( রাজশাহী, বাংলাদেশ )
ঊনপঞ্চাশ ব্যঞ্জন
ইটের হাজার কত?
রড?
সিমেন্টে বড্ড ভেজাল আজকাল
একেবারে পেরেশান!
সাত তলার ফাউন্ডেশান,
গতকাল চারতলার ঢালাই হলো
-বাহ্! বেশ, আলহামদুলিল্লাহ!
ছেলে কোথায়?
-ট্রিপলই পছন্দ ছিলো, আমি জোর করে
সিএসই তে , বড্ড খরচ জানেন
প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি, খুব পেরেশান।
-তাতে কী,ছেলে তো কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার - আপনার চিন্তা কী?
আলহামদুলিল্লাহ।
জীবনের এইসব কাসুন্দি ঘাটতে ঘাটতে আমাদের দিন চলে যাচ্ছে!
সন্তানেরা মানুষ কী হচ্ছে?
ইটের দাম উঠছে, পড়ছে,
সিমেন্ট ভেজাল বাড়ছে
আমি এই পৃথিবীর মাটিতে একটিও ইট গাঁথিনি সজ্ঞানে
আমার বাউলস্বভাবী ছেলেটিও এসবের কিছুই হতে পারেনি
অথবা হতে-ই চায়নি
না সিএসই - না ট্রিপলই
ছেলেবেলায় নচিকেতার অ্যাম্বিশান গানটা প্রিয় ছিলো-
ছেলে এখন গিটার হাতে ফোক গায়
মাঝেমাঝে ফোনে করে বলে,
একুশ আর একাত্তর, ব্যবধান কত জানো ?
মাত্র উনিশ!
উনিশের ব্যবধানে দুটো মহান অর্জন, একসুত্রে গাঁথা,
তারপর ঊনপঞ্চাশ বছর!
আমরা কী ভীষণ জোড়াতালি দিয়ে বেঁচে আছি দেখো!
এখন ইট-সিমেন্টের বাজার দর--সিএসই আর ট্রিপলই আমাদের বোধের ভেতর ঊনপঞ্চাশ ব্যঞ্জন!
আমরা ক্রমশঃ হারিয়ে ফেলছি একুশ, একাত্তর!
হারিয়ে যাচ্ছে লালন...
ঘোর
নীরবতা বললো কানে কানে
স্তব্ধতার আগল দিলাম খুলে
এবার শোন নৈঃশব্দ্যের সুরে
অাঁধার চিরে মৌনস্বরের গান
কথানদী দিচ্ছে পাড়ি সাঁকো
নদীর ওপর কথার বসতবাড়ি
শব্দ যেন শরীরী এক প্রত্নগন্ধানারী
তিমিরগর্ভ ফুঁড়ে ওঠা--
অতীত নগরী।
নৈঃশব্দ্যের নিবিড় সংকেতে
অধর প্রসূন অাপেলরঙে ফোটে
স্বর্ণগ্রীবায় অলকচূর্ণ রাশি
স্বেদবিন্দুর জলের ছোঁয়ায় সিক্ত
নুনপিপাসু রাতের তামস ঠোঁটে
মৃত্যুকুসুম লুটায় স্বর্ণত্বকে
মহাকালের মুগ্ধ অাঁধারক্ষণে
মায়াকোমল বৃত্তচূড়ায়--
বিমূর্ত রাত ফোটে।
গ্রন্থিকাল
হয়তো কোথাও যাওয়া হবে না আর
হয়তো তুমিও হাসবে না এই বিষণ্ন নীলিমায়, আমাদের বিভাজন পথ জুড়ে শুয়ে আছে অন্ধ পাইথন, প্রান্তরের বাতাসে ঘুটঘুটে বিষাদ, করুণ পথের রেখায় ফেলে আসা রৌদ্রপ্রহরে--একদিন ছিলো সবুজ প্রজাপতি রঙ;
এখন মেঘের ধূসর প্রচ্ছদে দিনগুলি আড়মোড়া ভাঙে প্রতিদিন,
বাতাসে তবু একই গন্ধ পুরাতন-সুপ্রাচীন,
আমাদের হাত তবু ব্যাকুল প্রত্যাশায় সন্নিবদ্ধ হতে চায় একই রঙে- ঘ্রাণে- উষ্ণতায় ; পরস্পরকে ছুঁয়ে থাকার আমৃত্যু লিপ্সা- ব্যাকুল বাসনার মতো ঘোরগ্রস্থ করে রাখে আমাদের চোখ;
বিনিদ্র তারাদের নিচে--দুঃখেরা নিবিড় জড়িয়ে নিলে, আমরা রাতের পাশে এসে বসি, পরস্পর নিদ্রাহীন...অপেক্ষায়...
থালার ভেতরে ঢলে পড়ে চাঁদ
থালায় দুধ ঢেলে দিতেই
খালার ভিতরে যেন হেসে উঠতো চাঁদ,
আর মায়ের মুখ উপচে গড়িয়ে নামতো জ্যোৎস্নার ঢল
দুধ-ভাতে লবন খাওয়ার অভ্যাস
আমার ছেলেবেলার
বাবা বলতেন- বিষ;
আমি মায়ের মুখে জ্যোৎস্নার ঢল নামা দেখবো বলে - সেই বিষ-ই খেতাম;
এখনো খাই--
শুধু জ্যোৎস্নার ঢল নামতে দেখি না কোথাও...
মনজুর রহমান ( রাজশাহী, বাংলাদেশ )
ঊনপঞ্চাশ ব্যঞ্জন
ইটের হাজার কত?
রড?
সিমেন্টে বড্ড ভেজাল আজকাল
একেবারে পেরেশান!
সাত তলার ফাউন্ডেশান,
গতকাল চারতলার ঢালাই হলো
-বাহ্! বেশ, আলহামদুলিল্লাহ!
ছেলে কোথায়?
-ট্রিপলই পছন্দ ছিলো, আমি জোর করে
সিএসই তে , বড্ড খরচ জানেন
প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি, খুব পেরেশান।
-তাতে কী,ছেলে তো কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার - আপনার চিন্তা কী?
আলহামদুলিল্লাহ।
জীবনের এইসব কাসুন্দি ঘাটতে ঘাটতে আমাদের দিন চলে যাচ্ছে!
সন্তানেরা মানুষ কী হচ্ছে?
ইটের দাম উঠছে, পড়ছে,
সিমেন্ট ভেজাল বাড়ছে
আমি এই পৃথিবীর মাটিতে একটিও ইট গাঁথিনি সজ্ঞানে
আমার বাউলস্বভাবী ছেলেটিও এসবের কিছুই হতে পারেনি
অথবা হতে-ই চায়নি
না সিএসই - না ট্রিপলই
ছেলেবেলায় নচিকেতার অ্যাম্বিশান গানটা প্রিয় ছিলো-
ছেলে এখন গিটার হাতে ফোক গায়
মাঝেমাঝে ফোনে করে বলে,
একুশ আর একাত্তর, ব্যবধান কত জানো ?
মাত্র উনিশ!
উনিশের ব্যবধানে দুটো মহান অর্জন, একসুত্রে গাঁথা,
তারপর ঊনপঞ্চাশ বছর!
আমরা কী ভীষণ জোড়াতালি দিয়ে বেঁচে আছি দেখো!
এখন ইট-সিমেন্টের বাজার দর--সিএসই আর ট্রিপলই আমাদের বোধের ভেতর ঊনপঞ্চাশ ব্যঞ্জন!
আমরা ক্রমশঃ হারিয়ে ফেলছি একুশ, একাত্তর!
হারিয়ে যাচ্ছে লালন...
ঘোর
নীরবতা বললো কানে কানে
স্তব্ধতার আগল দিলাম খুলে
এবার শোন নৈঃশব্দ্যের সুরে
অাঁধার চিরে মৌনস্বরের গান
কথানদী দিচ্ছে পাড়ি সাঁকো
নদীর ওপর কথার বসতবাড়ি
শব্দ যেন শরীরী এক প্রত্নগন্ধানারী
তিমিরগর্ভ ফুঁড়ে ওঠা--
অতীত নগরী।
নৈঃশব্দ্যের নিবিড় সংকেতে
অধর প্রসূন অাপেলরঙে ফোটে
স্বর্ণগ্রীবায় অলকচূর্ণ রাশি
স্বেদবিন্দুর জলের ছোঁয়ায় সিক্ত
নুনপিপাসু রাতের তামস ঠোঁটে
মৃত্যুকুসুম লুটায় স্বর্ণত্বকে
মহাকালের মুগ্ধ অাঁধারক্ষণে
মায়াকোমল বৃত্তচূড়ায়--
বিমূর্ত রাত ফোটে।
গ্রন্থিকাল
হয়তো কোথাও যাওয়া হবে না আর
হয়তো তুমিও হাসবে না এই বিষণ্ন নীলিমায়, আমাদের বিভাজন পথ জুড়ে শুয়ে আছে অন্ধ পাইথন, প্রান্তরের বাতাসে ঘুটঘুটে বিষাদ, করুণ পথের রেখায় ফেলে আসা রৌদ্রপ্রহরে--একদিন ছিলো সবুজ প্রজাপতি রঙ;
এখন মেঘের ধূসর প্রচ্ছদে দিনগুলি আড়মোড়া ভাঙে প্রতিদিন,
বাতাসে তবু একই গন্ধ পুরাতন-সুপ্রাচীন,
আমাদের হাত তবু ব্যাকুল প্রত্যাশায় সন্নিবদ্ধ হতে চায় একই রঙে- ঘ্রাণে- উষ্ণতায় ; পরস্পরকে ছুঁয়ে থাকার আমৃত্যু লিপ্সা- ব্যাকুল বাসনার মতো ঘোরগ্রস্থ করে রাখে আমাদের চোখ;
বিনিদ্র তারাদের নিচে--দুঃখেরা নিবিড় জড়িয়ে নিলে, আমরা রাতের পাশে এসে বসি, পরস্পর নিদ্রাহীন...অপেক্ষায়...
থালার ভেতরে ঢলে পড়ে চাঁদ
থালায় দুধ ঢেলে দিতেই
খালার ভিতরে যেন হেসে উঠতো চাঁদ,
আর মায়ের মুখ উপচে গড়িয়ে নামতো জ্যোৎস্নার ঢল
দুধ-ভাতে লবন খাওয়ার অভ্যাস
আমার ছেলেবেলার
বাবা বলতেন- বিষ;
আমি মায়ের মুখে জ্যোৎস্নার ঢল নামা দেখবো বলে - সেই বিষ-ই খেতাম;
এখনো খাই--
শুধু জ্যোৎস্নার ঢল নামতে দেখি না কোথাও...
No comments:
Post a Comment