Friday 17 April 2020

বিপাশা ভট্টাচার্য

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ









বিপাশা ভট্টাচার্য


স্নান
ভেজা ভেজা শিউলীর গন্ধে
মনে পড়ে যায় গতজনমের ভোর
হয়তবা এমনই কোন শারদপ্রাতে
তুমি এসে দাঁড়িয়েছিলে দুয়ারে।
সমস্ত অর্গল কেঁপে উঠেছিলো সেদিন
কিসের এক অজানিত আবেশে,আর শরতের শিশির লাগা আমার
পিঠ ছাপানো কালো চুল বেয়ে
গড়িয়ে পড়েছিলো যে দু'এক ফোঁটা জল
তুমি আঁজলায় ধরে রেখেছিলে তাকে।
বলেছিলেপুণ্যতোয়ার পবিত্র এই স্নান।
আজ আমার করতলগত মৃত্যুছায়া দেখে
ভয়ে শিউরে উঠি সুন্দরহয়ত লক্ষাধিক
অপূর্ণ স্নানবাকি থেকে গেছে আজো।
আমার সমস্ত সত্তা জুড়ে,শেকড় গেড়েছে যে মহীয়ান অশথ গাছ,তুমি তার কাছে দীর্ঘজীবনের পাঠ নিতে এসো।
অথবা দীর্ঘতর যে মৃত্যুযাপন তারও উৎসব
শিখে নিয়ো আমারই বুকের ভেতর
শেকড় ছড়ানো ক্ষতদের থেকে।
আমার ভিটেবাড়ি দেউলিয়া হলো যে জলের দরে
সে কানাকড়ির হিসেব মেলাবে সাধ্য কই?তার চেয়ে বরং চলো অন্যতর জীবন খোঁজা যাক
অন্য কোন শিউলী ঝরা ভোরের আগমনীতে...

পথ
সেই রাতে ঘোর কালো চরাচর,হিম নামা অন্ধকারে জাগেনি কোন প্যাঁচা
অথচ মৃত্যুর মতো ঘুম সমাগতপ্রায়
আমাকে নিয়ে যাচ্ছিল কোন অতল সন্ধানে।
পথের পাশে কোন নিভু নিভু আলো
জ্বলে ওঠেনিশেষ বিশ্বাসের স্ফুরণ নিয়ে
ডেকে ওঠেনি দু'একটা কুকুর কিংবা শেয়াল
জীবনকে জানান দিতে সেদিন ছিল না কেউ।
রাত্রির সমুদ্র পেরিয়ে ক্লান্ত নাবিকের মতো
একা ভেসে চলেছিলাম  পথ ধরে ভাঁটায়।
ছেঁড়া মাস্তুল আর বন্ধ কম্পাস
কোন দিকদর্শন করাতে অক্ষমঅপারগ।
ওই প্রবল একলা রাতে তুমি এসেছিলে।
হাত ধরে বলেছিলে সঙ্গী হবে এই বিপুল রাতে
আঁধার রাতের পথিক আমারদিকভ্রান্ত নাবিককে
তুমিও কী পেরেছিলে দিশা দেখাতে?জানিনাশুধু এটুকু জানি ধ্রুবসত্য,সুদূর পথের প্রান্তে ওয়েসিসের বিভ্রান্তি নও তুমি
এই সারসত্যটুকু বুঝেছি মনের গোপনে।
তাই এই পথ আর আমায় ক্লান্ত করেনা।

সমর্পণ
 নিঃশব্দ প্রেম আমি তোমায় দিলাম।
দেবার মতো আর কানাকড়ি বেঁচে নেই,
 প্রেমঅন্ধত্ব আর সমর্পণ ছাড়া।
বাউল কিশোরতোমার একতারাটিতে
কোনোদিন কোনো সুর বেজে ওঠে যদি,আমার চোখের তারার কথা মনে করে,সেইদিন আমার দীঘিতে ফুটে উঠবে
একটি তাজা শুভ্র পদ্ম। আমি অপেক্ষা করব
সেই মাহেন্দ্রক্ষণেরযখন,আকাশ আর পৃথিবী এক করে নামবে ঘোর বর্ষা,আমি ভিজে ঝুপ্পুস হয়ে জ্বরো গায়ে
তোমার শীতল অবগাহনের প্রতীক্ষারত।
সেই দিন মাটির দালানে দুটো মোমবাতির আলো
পরস্পরকে ছোঁবে নিবিড় আলিঙ্গনে
আর আমার উঠোনে শঙ্খ বেজে উঠবে।

বোধ
কত কথা শেষাবধি আর বলা হয় না।
তারা জমে জমে গাছ হয়,
শিকড় চারিয়ে যায় আরো গভীর যন্ত্রণার দিকে।
ঘুম দীর্ঘতর হতে হতে মৃত্যুর মতো মনে হয়।
পরাজিত বোড়ে একলা হেঁটে বেড়ায়
জীবনজোড়া দাবাখেলার চৌখুপিতে।
দুঃখ জমে জমে নদী হয়,সে নদীর জল তুমি আঁজলা ভরে পান করেছো,তৃষাতুর তোমাকে সে দিয়েছে জীবনসন্ধান।
অথচ তার উৎসমূল খুঁজতে যাওনি কেউ,গেলে দেখতে পেতে এক আবিল ঝর্ণা--বেদনা জমে গড়ে ওঠা পাহাড়ের গা বেয়ে
চুঁইয়ে পড়ছে।
আঘাত পেতে পেতে কখনও ঢাল,কখনও বা শাণিত তরোয়াল হয়ে ওঠে।
তখন জীবন আর মৃত্যু সমার্থক।
হারানোর ভয়টুকু চলে গেছে যার,তার সমস্তদিনব্যাপী শুধু কবিতা আর গান।

ছায়া
অপরাহ্নে আলো কমে আসে--ছায়ারা দীর্ঘতর হয়ে ওঠে
কায়াকে ছাপিয়ে।
সেই ছায়ার দিকে মুখ করে চাই--এই বিশালতাকে পেরিয়ে কিভাবে সম্ভব
কায়ার সন্ধান?যে নিজেই হারিয়ে যেতে চেয়েছে,তাকে ফেরাবে তোমার সাধ্য কই?ক্ষীণ অবয়বখানি ক্রমশ বিলীন
ছায়ার সমুদ্রে।
দীর্ঘদীর্ঘতর পদযুগলঝুলে থাকা কাঁধ,লম্বাটে মগজ-- ক্রমশ দিগন্তবিসারী।
নিজের থেকে বিচ্ছিন্ন এক অপর সত্ত্বা,যা অনেকটা ঠিক তোমারই মতো,কিন্তু তুমি নও,তোমার আদিম সত্ত্বাটিকে গিলে নিচ্ছে,হারাচ্ছো তোমার রক্তমাংসঘাম,সে জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে
একটি অতিকায়অতিমানবিক ছায়া,শূন্যে দোদুল্যমান।
পৃথিবীতে অন্ধকার আরো ঘনীভূত হচ্ছে।

এইটুকু নরম...

ক্লান্ত হেমন্তের সমাগমে
বুকের ভেতর মেঘ করে আসে
অদূরে পোষ মানা মার্জার
একমনে চেটে যায় থাবা
দুপুরের এঁটো মাছের কাঁটাকোটা
আর ফেলে দেওয়া অন্ন খুঁটে খেয়ে
এইমতো দিয়েছে তৃপ্তির ঘুম।
নরম কাঠবেড়ালিটি থেকে
হিংস্র শার্দূল হয়ে উঠতে
পেরোতে হয় যতখানি ঝড়,তাহাদের পূর্বাভাস জানিতে চেয়ো না।
কলহ থামিলে পরে অদূরে চেয়ে দেখো,কাঠবেড়ালিটি ঘুমোলো কি?

No comments:

Post a Comment