Sunday 19 April 2020

বিমল মণ্ডল

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ










বিমল মণ্ডল 


আক্রোশ 

পাহাড়  ধসে ফেলি আক্রোশে 
জঙ্গলে  আগুন  জ্বালিয়ে হাসি
বিরহের মুখে  স্বপ্নকে করি জয়ী
পাহাড় থেকে  জঙ্গল  করে অট্টহাসি 
ভুলে গেছি এতো দ্রুত  আমি ছলনাময়ী। 

জোয়ারের  জলে এতো বেনোজল 
জেনেও চুপচাপ  ছিলাম কতদিন 
ভূকম্পনে ধসে গেল সব ফল
পুরনো  স্মৃতি ফিরাবে না আর মন। 

ফিরে এলাম প্রেমাহত পাখি একা
অসময়ে ঝড় ছিল  বিদায়ের  সেই রাতে
জঙ্গল  আজ সাফ, চারদিক শুধু ফাঁকা 
আমার জীবনে  কোকিল ডাকবে  না প্রভাতে। 

ভাষার  খেলা  করেছি নিজ ক্রোধে 
তার প্রতিদানই  পেয়েছি শব্দের  চোখে 
সব হারাবার  আক্রোশে  জ্বলেছি মধ্যে মধ্যে 
আজ আমি বিরহী  রাধা কৃষ্ণের  দুঃখে। 


তুমি

তুমি যখন  আমার কাছে এলে
তোমার  দুচোখে দেখেছি সীমার মাঝে  অসীম
আমার হৃদয়ে  তুমি ভালোবাসা  দিলে 
রাত্রিময় আকাশে তোমার দান  অপরিসীম। 

বেদনা  আর কষ্টে  গড়া  তোকার শরীর 
চিন্তার  মাঝে খুঁজে  পেয়েছো আমায়
তুমিই প্রতীক  আমার পৃথিবীর 
প্রতিজ্ঞাবদ্ধ  আমি শরীরের অর্ধেক দেবো  তোমায়।

কতবার  তুমি আঘাত  খেয়েছো কাঁটার 
কতবার  তুমি  ধরেছো বেদনার গান
হৃদয়ে  শূণ্যতার   সুর পেয়েছো কতবার 
তোমার সান্নিধ্যে  আজ পেয়েছি অপরূপ  ঘ্রাণ। 

জীবনে  ধরে রাখো জয়ের সাক্ষর
এ তোমার সব চেয়ে বড়ো পাওয়া 
আমি তোমার হয়ে করবো  ঝঙ্কারমুখর
তোমার কাছে শুধু  এই টুকু  চাওয়া । 

অন্ধকার থেকে আলোর  পথে  এলে 
তোমার মুখে  তবুও  মধুর  অস্ফুট সুরে
অস্থির অবগাহনে ডুব দিয়ে তুমি গেলে। 

যা কিছু তুমি- আমি ভাগ করে নেবো 
আমার ভালোবাসায়  খাদ নেই জানো
তাই আমি   তোমায় সাথে  পত্রপুটে খুঁজে  যাবো 
যেখানে  তুমি তোনার স্পর্শে ভালোবাসা দেবে। 


আত্মকেন্দ্রিক 

অন্ধকারে জ্বলে ওঠে গগনচুম্বী  স্বপ্ন 
জেগে ওঠে মনে কত বাসনার ঢেউ
আমি পাবো না কিছু দেখিনি তা দুঃস্বপ্ন 
আমি ছাড়া এ আকাশ পাবে না কেউ। 

আকাশের  সব তারা মিটিমিটি  করে তাকায় 
আমার কাছে  একথা ধ্রুব অবশ্য 
আকাশে  বসে তারাদের কতকথা জানায়
দূর থেকে দেখবে আমায় প্রকাশ্য।

পাহাড়, নদী , জঙ্গল পেরিয়ে আমি যাবো 
কু-রুচিতে থামবো  না আর মোটে
দেখবে সবাই আমায়, সে কথাটা  ভাবো
মাটি থেকে  আকাশ  কত ফুল ফোটে । 


পিঁপড়ে 

পিঁপড়ে  পিঁপড়ে এদিক শুনো ভাই
তোমার অতো বদবুদ্ধি আমাদের মধ্যে নেই
মাঝেমধ্যে অকারণে ঢুকে  যাও চটপট 
ঠান্ডা মাথায় কোপ মারো বেশ কটকট। 

সাবধান বলি ভাই শোনো বলি কথা 
তোমার কারণে কেন লোকে পাবে ব্যথা? 
ভালো আছো ভালো থেকো শান্তির  দেশে
সুযোগ বুঝে কোপ মারো এ কোন ছদ্মবেশে? 


আমি চলে যাচ্ছি

আমি  যাচ্ছি, নদীর পর সমুদ্রের  পাড় ধরে
কত জলচ্ছ্বাস,  পাখিরা  দেশ -বিদেশে  উড়ে
মাঝমাঝে  শোনা যায়  জাহাজের সাইরেন 
মাঝিরা  মাঝধরে ভাটিয়ালি  সুরে গান ধরেন।

আমার   ক্লান্ত  অপরিশ্রীয়মান সেই হাঁটা পথে 
আমি চলে যাচ্ছি  তোমার থেকে দুরত্বের সাথে 
তবুও  আমার চলে যাওয়া  কিছুতেই  শেষ নয়
তোমার ভালোবাসার ঘরে বসে থাকি প্রতিক্ষায়।     

বাতাসের  সাথে কথা  বৃষ্টির সাথে কথা বলে
আমার  দিকে চোখ ফেরাতেই তুমি দেখলে 
আমি দেখলাম   তুমি যাচ্ছো সময় ভরে ভরে
আমি হাঁটছি নদীর  পর সমুদ্রের  পাড়  ধরে।

আমি যাচ্ছি অস্থিরতা, কান্না শুনতে শুনতে
আমি যাচ্ছি চৈতন্যময়  হৃদয়ের বান ভাঙতে 
তবু্ও  তোমার থেকে চলেছি অনেক দূরে    
আমার দিকে ফিরেও চাওনি তুমি একেবারে।      


হতাশার গল্প

আমার স্মৃতি  জেগে ওঠে রাতের অকূল অন্ধকারে
অবোধ্য  বিলাপ গল্পের নদীটা মেশে গভীর সমুদ্রে 

রৌদ্রস্নাত নির্জনতা শূন্য মরুময় চারদিকে
এমনই ভাবে ভুলে  থাকা যায়,পরিপূর্ণ ভালোবেসে
দূরে  গেলে আমায় ফেলে অনেক অনেক দূরে   

আমার নিবিড় আত্মায় তোমার কথামালা,
 তোমার প্রীতি বন্ধনে, স্মরণ পাতায় 


তোমার  সামনে অসংখ্য  বিপ্লব পুঞ্জীভূত
 আর  পরীক্ষার  প্রশ্ন পত্র  হাতে
তুমি জেগে  শান্তির  লালিত বানী শোনাও আমায়।

সময় বলে দেয় দিগন্ত রেখা ধরে 
সমুদ্রের  অগাধ গভীরে 
  সমস্ত  দুঃখ  হতাশায় কাটে দিন-রাত । 


প্রায় আকাশ  পেরিয়ে

ছাউনি  ঘেরা  মাটির  দেওয়াল ঘেরা
তার মাঝে   আকাশ পেরিয়ে চাঁদের  বাড়ি
জানালা  থেকে  একটুকরো  আলো 
 বাড়িময় ছড়িয়ে 
উঠানের পাশে পুকুরের জলে ভাঙ্গা চাঁদ 
মাছেদের সাথে খেলা  করে 

এই রাতে নীল আকাশের  নীচে 
তুমি আর আমি
ঝোড়ো  রাত, চাঁদিনী  বাতাসে 
উন্মত্ততার ভেতরে 
তোমার অফুরান ভালবাসার বাতাস 
আমার হৃদয়ে  আসে 
এই উন্মুক্ত আকাশে।   

2 comments:

  1. খুব সুন্দর কবিতা। ভালো থাকবেন

    ReplyDelete
  2. প্রাণ ভরেছে, ভাল লেগেছে,
    এমন ই যেন মন থাকে!
    সত্যি শুধুই যেন ছন্দ গেথে
    সময় পেরোনোর পন থাকে !

    ReplyDelete