Tuesday, 14 April 2020

তৈমুর খান

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ





তৈমুর খানের কবিতা 

রাতজাগা চিঠি 

কতরাত চেয়ে থাকি, বলো—
সব দরজায় আলো নিভে গেল—
অন্ধকারে অন্ধ চেয়ে থাকা 
দূরের নক্ষত্রদের মনে মনে ডাকা 

নিজেরও কি ফুটে ওঠা ঘ্রাণ পাই নিজে? 
যে নদী জল দেয় সেও কি জলে ভিজে? 
আমি আছি, সন্ধেমণি আছে 
কেউ তবু যাইনি কারও কাছে 

বাতাসের হাঁস উড়ে এলে 
কেউ কেউ ভাসে পাল তুলে 
আকাশের ডাকঘরে রাতজাগা চিঠি 
লিখতে থাকে আমাদের গূঢ় ঠিকানাটি 

আমার আত্মাকে 

বিহ্বল দুঃখের কাছে নিজের আত্মাকে পৌঁছে দিই 
যদি ও বাউল হয়ে বাঁচে 
যদি ও ধ্বংসের মাঠে গাছ হয়ে জন্মায় 

পবন উঠুক তবে হিল্লোলিত গানে 
অদৃশ্য ডানার স্বর খুঁজে খুঁজে আনি 
পাতায় পাতায় সবুজের নরম হাতছানি 

অশ্রুভর্তি নদীতে নামাই ওকে 
স্নান সারা হলে স্বপ্নহীন ধুলোভাত দিই 
তারপর বেড়াতে বেরোই আগুন-বিকেলে 

তাপ নাও, আত্মা আমার 
রাস্তায় রাস্তায় গাছ হয়ে দাঁড়াও 

ভোর

একটা ভোর কুড়োতে চেয়ে 
সকাল সকাল উঠে আসি। 
তুমি কি কোথাও ফুটে উঠছ? 
জঙ্গলমহল, খোয়াইয়ের রাস্তা 
অথবা পাহাড়ি ঝরনার স্তবে? 

সাঁওতাল পল্লির নির্জন এলাকা জুড়ে 
আমার বিস্মিত চোখ কিছুটা লজ্জানত 
অথবা লালমোরামের রাস্তায় 
ছড়ানো তোমারই সিঁদুর চূর্ণ 
ধুলো মেখে ফিরে আসি অপার্থিব ঘরে 


কোনও কোনও চৌকাঠে তোমার মুখ 
নীল ঠোঁটে কালো  তিল 
আঁচলে বসিয়েছ বাগান 
উড়ে যাচ্ছে দু-একটি মাধুকরী পাখি 
তাদের ডানার শিল্পে তোমার ভোরের শব্দ… 


সকাল সকাল আমি ভোর খুঁজে খুঁজে 
একা পথ, 
সমস্ত না-লেখা কবিতায় রেখে যাই। 


স্বনির্মিত 

মনে মনে একটা পুকুর বানাই 
পুকুরে আমার আকাঙ্ক্ষারা সাঁতার কাটে 

আকাঙ্ক্ষাদের পোশাক নেই 
সবাই দারুণ দেখতে 
হাতের নখ থেকে মাথার চুল 
নাভি-নিতম্ব হাতের বাহু 
সংরাগে কেঁপে কেঁপে ওঠে

আমি সারাদিন দেখি আর গান গাই 
এত গান আমার কোথা থেকে আসে? 

স্তব্ধ নীল সিঁড়ি বেয়ে ঘাটে নামি 
আকাঙ্ক্ষাদের পিচ্ছিল শরীরে 
মৈথুনের স্বপ্ন লেগে থাকে 

আমি ভ্রমের জলে ঢেউ তুলে 
উৎসাহ দিই 
সাঁতার কাটুক, সাঁতার কাটুক 
মোহের আলোয় অলৌকিক 
দৃশ্যপট ফুটে ওঠে। 


সভ্যতা 

যারা এসেছিল সবাই চলে গেছে 

রক্তের দাগ লেগে আছে ধুলোয় 

ভোরবেলার আলো পড়ে 

একটা পরাবাস্তব নৌকা হয়ে গেছে 

অস্পষ্ট ছবির মতো মানুষের কায়াগুলি চেঁচাচ্ছে 

বাতাসে মিশে যাচ্ছে তাদের কাতরতা 

যেন পৃথিবীতে প্রথম পাঠশালা বসেছে 


মৃত্যু কি অনিবার্য ছিল? 

দাঙ্গা কি এড়ানো যেত না? 

প্রশ্নগুলি নিরুত্তর হয়ে বাজতে থাকে 

ইতিহাস অন্ধকারের পটভূমিতে দাঁড়ায় 

সময়ের শৃগাল এসে খেয়ে যায় মানবিক লাশ 


হতশ্বাসে বিশ্রামের ঘর ভরে আছে 

ছুটে যাচ্ছি সেদিকে আমিও 

ইশারা কি আমার সন্তান? 

পূর্বপুরুষের হাড় রাস্তার দুপাশে 

সভ্যতা কতদূর আর!

No comments:

Post a Comment