মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ
তনিমা হাজরা
তনিমা হাজরা
পাখিটা
কাঁঠাল গাছের ডালে বসে
যে পাখিটা গান গেয়ে
ঘুম ভাঙাতো প্রতি ভোরবেলা,
সে কী এখনো তেমনি আসে,
ডাকে?
আমার ঘরে তো তালা,
বন্ধ জানালা,
না দেখে আমার মুখ,
সে কী আমাকে খোঁজে, রোজ।
সামান্য সম্পর্ক ছিল চালের দানার, গমের দানার, তবু রোজ দেখা, তবুও হাতে নিয়ে চায়ের কাপ,
ছিল রোজকার অপেক্ষা,
কিছুক্ষণ অবান্তর কূজন,
তারপরে যে যার নিজস্ব কাজে।
এটুকু সামান্য আদানপ্রদানে কী সম্পর্কে "স্বজন" সীলমোহর পড়ে?
এটুকু সামান্য আদানপ্রদানে কী
অভ্যাস নির্ভর মনখারাপ জন্ম নিতে পারে কারো প্রাত্যহিক যাপন অন্তরে??
আরাধনা
এখন মূর্তির মতো বেশ আছো তুমি,
নির্লিপ্ত নিবেদন ভোগ,আরতি, শীতল।
অর্ঘ্য,নৈবেদ্য, অঞ্জলি নিয়মিত,
নাও কি না নাও জানিনা,
তবুও ঝাটপাট,সাজগোছ, দৈনিক।
প্রেম মরে গেলে, নিভে যায় সব অভিমান, অভিযোগ,
তখন প্রেমিক হয় ঈশ্বর কিংবা শয়তান,
যদিও ভাবতে গেলে এ শ্মশানে দুটোই সমান,
তুমি ঈশ্বর হয়েছ,
মুখে বেশ খানিকটা স্মিত হাসি,
রাজবেশ,
সাজন্ত সব আছে ঠিক ঠিক,
শুধু প্রাণ নেই, শুধু প্রাণ নেই।
আমাদের যত দায়
কোথায় ফেলে দেবো দায়,
অসহায় সম্পর্কগুলি নিয়ে
নিজমেধ যজ্ঞে মেতে উঠি,
আহুতি দিতে লাগি
অমূল্য সময়।।
আমাকে উদ্ধার করে
যে নিয়ে যেতে পারে
তারও কাঁধে ভার পাহাড়প্রমাণ
বেলা চলে যায়,
বেলা চলে যায়
আমি, তুমি আর আমাদের যত দায়।
রঙ
কালো রঙ মুছে দেব
এমনই রঙবাজিতে,
লালনীলহ্লুদসবুজ
তুলে দিয়েছি যে সব ঝুলিতে।।
আকাশে চাঁদ ওঠাবো
ওঠবস শাস্তি দেব আঁধারটাকে,
সাদারঙ একতারাতে আমাদের
সাতরঙসুর অষ্টপ্রহর গিটকিরিতে
বাঁধা থাকে।।
সাদাচোখে যায় না দেখা
নিগূঢ় রহস্য মাখা
ধূসর বর্ণ ছাইয়ের ভেতর
নিঃদগ্ধ অস্থি রাখা।।
বসন্ত মানে কি বাসনার অন্ত
ভালবাসা আলোতেই
ধুয়ে দিই এ বিরাট ধূসর দিগন্ত
বেলাশেষে পুঁজি বলে কিছু নেই, কিছু নেই।।
রঙিন খামের ফাগুন চিঠি
আগুন যখন ডাকহরকরা
পর হয়ে এই আত্মিকতার পরীক্ষাটাই চিরকালীন শুদ্ধপ্রেমের পরম্পরা।।। ত নি মা।।
বিদায় বলতে নেই
ফিরবে বলে হাত নেড়ে বিদায় জানাচ্ছে যেসব সময়, তার সাথে যাতায়াতে ট্রেনেই আলাপ,
মুগ্ধবোধ ছেলে, বারবার তাকিয়েছিল দূর থেকে শুধু,
তারপর নেমে গেছে নির্দিষ্ট ষ্টেশনে,
না জানিয়েই ইতিউতি বিশদ পরিচয়।
বিছিয়ে দিয়ে গেছে মাদুরের মতো একবুনট ঘাস ঘাস সুখ,
এ বয়সে এমনই তো হয়,
গোলাপি কামিজের দিকে চোখ মেলে দিলে নীলরঙা শার্টটির
প্রাণের গভীরে গভীরে পিপারমিন্ট স্বাদ
জেগে রয়।
লিখতে লিখতে এমনই কত দিনগত অভ্যাস অক্ষর, আক্ষরিক অর্থেই শ্লেট ভেসে যায়,
তবু, কাব্য লেখা হয়ে ওঠে কই,
স্বরে আর ব্যঞ্জনে শুধু রোজ রোজ তীব্র কশাঘাত সই,
প্রাণের ভেতর অক্ষরমালার এমন অপরিমিত জমিজমা আছে, ফেলে রেখে কি হবে,
অগত্যা ভাগচাষে দিয়ে দিই
পাট্টা তাদের,
স্মৃতির বিভ্রম ঠেলে সেসব কতো মুখ
লাইনে দাঁড়িয়ে তার রোজকার মজুরি নিয়ে গেছে,
তাদের স্বেদ, দীর্ঘশ্বাস লেগে আছে কাঁধের গামছায়,
চক খড়ি ক্ষয়ে ক্ষয়ে খর্ব হয়ে যায়,
ক্ষয়ে ক্ষয়ে খর্ব হয়ে যায়।।
গুঁড়ো গুঁড়ো দিন বলে- বিদায়!বিদায়!!
No comments:
Post a Comment