Monday 27 April 2020

অমিত পাল

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ










অমিত পাল



কবিতার মহড়া

একদিন সবাই কবিতা লিখবে,
দারিদ্রতার ঠুনকো রাজনীতি বা মাংসভূখ প্রেমিক নিয়ে।
রাতের অন্ধকারে পড়শি জানলায় গোটা দুই চোখ,
খুঁজবে মৃত্যুর ওপারের চাপানউতোর তর্জা।
একদিন সবাই কবিতা লিখবে,
বিধানসভা, লোকসভায় নগ্ন সন্ন্যাসীর অধিবেশনে,
সব উলঙ্গ প্রেমিক-ও।
একদিন সবাই কবিতা লিখবে,
দূষিত জলবায়ু, লালসা বাসনার স্বৈরাচারিতায়,
অতৃপ্ত মধ্যরাত ও যোনির তাজা রক্ত নিয়ে।
একদিন সবাই কবিতা লিখবে,
নারী লিখবে সব ধর্ষিত পুরুষ নিয়ে,
যারা নিজের ছায়া দেখে নিজেকে চেনে।
একদিন সবাই কবিতা লিখবে,
বিস্তর থুতু, লালা, পুঁজরক্ত নিয়ে,
বন্ধ কারখানার জঙ্গলে বসে।
একদিন সবাই কবিতা লিখবে,
মাকড়সার জাল, মৃত লণ্ঠন ও
মর্ত্যলোকের আত্মবদল বা নিজের জীবাশ্ম নিয়ে।

আগন্তুক 
         
আচমকা জেগে ওঠা আগ্নেয়গিরির মতো 
ধর্মও জেগে উঠবে বিভাজনের তর্জমায় !

নাগরিকত্ব আজ এক আত্মসঙ্কট, 
এ এক সুদূরপরাহত তবু ভারসাম্যে অবিচল !
এ কোনো ভ্রম নয়, এ এক বিবর্তন 
এক তীক্ষ্ণ নির্মোহ দৃষ্টিতে যেনো 
সংলাপহীন মুখাভিনয় !

আমিও চাই একটা বদল আসুক ধর্ম কুটিরে, 
ব্যর্থ হোক ছাঁচে ফেলা পরিশ্রম, 
নিবৃত্ত হোক গনশত্রুর বাদানুবাদ !

এক নতুন কাল আসবে এই পৃথিবীতে, 
এ নিম্নচাপ কাটবে, চুরমার হবে তাবৎসংসার, 
সমস্ত দেশ মহাদেশ দুমড়ে মুচড়ে লঙ্গরখানা !

চুপ করে আছো শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে, 
বক্তৃতায়, সেমিনারে, গনকবরে, বারুদ ও 
পোড়া মাংসের গন্ধে, নিপাত চিত্রকল্পে !

টিকটিকির কণ্ঠে ধিক্কার ---
                           জাহান্নামে যাও !
                           জাহান্নামে যাও !
                           জাহান্নামে যাও !

ক্রীতদাস 
              
আমার পাঁজরে লুকিয়ে আছে মৃত অরণ্যের দেহাবশেষ !

এ প্রতিক্ষার শেষ কোথায়? 
কিছু অলিখিত শর্তের পসরা নিয়ে 
ধূর্ত কপটতা হিংসা, পায়ে বেরী, বন্দিদশা !
ভয় নেই মৃত্যুতে আমার 
মৃত্যুকে অপব্যবহার করেছি বহুবার, 
মৃত্যুতে আমার হাজার পদচিহ্ন রয়ে গেছে, 
কেবল নিজেকে অজ্ঞাত করে দু-একটি বচনে অস্তিত্ব !
গভীর বিষাদ আজ আর বিশেষ ন্যূব্জ করে না, 
ভাঙা নিঃশ্বাস বইছি স্বযত্নে, 
কিছু বারুদও জমিয়ে রেখেছিলাম 
অন্তর্ঘাত উচাটন ডিঙাতে কাজে লাগবে !

আমার পাঁজরে লুকিয়ে আছে আত্মার আদিম শস্য !
এ প্রতিক্ষার শেষ কোথায়? 
আর কতকাল থাকবো প্রতিক্ষার ক্রীতদাস? 

বাসস্থান 
                
এ অন্ধদের বাসস্থান বৃথা বিস্ময়, 
কোনো কিছুতেই আপত্তি করিনা আর, 
আমার অস্তিত্বের ছাল বিক্রি করি প্রতি ভোরেই ;
মন্দির, মসজিদ, গির্জা সবই শব্দ ব্রহ্ম !
আমার মস্তিষ্কে, গর্ভে, পদচিহ্নে উন্মাদিনী অবচেতনা;
এই আমার অন্ধদের বাসস্থান !

ভিতরে দহন, সূর্যকে বলি 
পোড়াও আমার দস্যুতা, 
এ আমার আত্মসমর্পন নয় 
শতাব্দী পূর্বে ছেড়ে আসা ভিটেমাটির অনুনয় !

কতটা পথ পেরোলে মানুষ হওয়া যায়? 
কতটা পথ পেরোলে ফকির হাসে? 
কত কেল্লাফতে কত গোল্লাছুট কত খোলা জানালা, 
বন্য স্বভাবে হন্যে অভাবে বা 
কত অকাল বাদলে ধুয়ে গেছে !

একদিন সব ব্যবধান মুছে যাবে, 
সেদিন মানুষ খুজবে মানুষকে, 
ফুঁসবে আত্মবিস্মৃত পুরুষ, দংশিত অপয়া নারী, 
ভিনদেশী হওয়ায় ভাসবে এ অন্ধদের বাসস্থান !

No comments:

Post a Comment