Friday 24 April 2020

পারমিতা ভট্টাচার্য

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ










পারমিতা ভট্টাচার্য

জ্বলছে মানবতা

পুড়ছে মানবতা,মানবতায় জ্বলছে রিপুর আগুন
অন্ধকারে হোঁচট খেতে খেতে ভাবি
রক্ত শিকলে বাঁধা অস্তিত্বের বিকিকিনি হাট জুড়ে
তবুও তো মানুষ হিসাবে দেখি তোমার আমার মুখ।

রাস্তা জুড়ে ছড়ানো ছিটানো লাশ
দুপায়ে মাড়িয়ে যাই চেতনার ছিন্নমূলের সারি
নাড়ির টানে,মাটির টানে যারা মুখ গুঁজে পড়ে রয়
কাগুজে সভ্যতা বুকে শেল বিঁধে চোখ করে দেয় ভারী।

আজ ফুঁপিয়ে ওঠে মন ,কত পরিজন
নদীর স্রোতের টানে ভেসে গেছে ঘর, পরিবার
ত্রস্ত মন তবু অণুপুঙ্খ বিশ্লেষণে বসে
মানুষের নামে চলে আজ ধর্মের করবার।

আজ অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে সারি সারি মুখ
মানুষের পরিচয় শিকার অথবা শিকারী
বুকে চেপে ধরি সন্তানের কোমল মুখ
বাঁচতে দাও মানুষ হিসাবে হে,সভ্যতার কারবারি।

রক্ত আর আগুনে তাপ সেঁকে সভ্যতা দিচ্ছে ঘুম
ভ্রম হয়, এ কোন আলোয় দেখি মুখ
মানবতার শিকড়ে শিকড়ে বিষের সমারোহ
হিংসার স্রোতে ভেসে যায় আজ মানুষের যত সুখ।

অতর্কিতে

আরও একটা নির্ঘুম রাত
পাটি পেরে বসে গল্প শোনায়
শ্যাওলা ধরা,জরাজীর্ণ সময়ের।
জীবনের প্রমূর্ত সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে
শীতলপাটি বিছায় রোমন্থনের ইতিহাস।

আমি নখরের দাগ বুকে চেপে,
রোদচশমার আড়ালে রাখি
লোকলজ্জার সমস্ত উপকরণ।
সংস্কারের অশনিসংকেত রাখি
নিভাঁজ খাতায় পরিপাটি।

গলি থেকে রাজপথে বিছানো
শরশয্যার গোপন আহ্বান,
পা দিলেই শেষ পত্রের শেষ অক্ষর
জীবনের নিবন্ধ লেখে নরকের কীট
জীবন্ত লাশ করে দেয় এই নশ্বর দেহ।

তথাপি

বুকের মধ্যে যত্ন করে আঁকি একটা নদী
যার ছোট্ট ছোট্ট ঢেউয়ে আমি বাঙুর হয়ে যাই
দুচোখে আঁকি নক্সী কাঁথার অপূর্ব এক মোহ
টুপটাপ শব্দে সারা শরীর জুড়ে তবু বৃষ্টি নামে কই?
হৃৎপিণ্ড থেকে নাভিমূল অবধি বনবিথির ছায়া
ঠোঁটের কোণে পুষে রাখি মাতাল মহুয়া বসন্ত
একটিবার বুকের ঊষর উপত্যকায় বৃক্ষ রোপণ করো
সমস্ত অনাবিল ইচ্ছেরা ছুঁয়ে যাবে দূর দিগন্ত
মনের অদম্য ইচ্ছেগুলো আজ
প্রজাপতির মত মেলতে চায় পাখা
তবুও সংযমী সময় বারবার কড়া নাড়ে
রাকা চাঁদ দেখো কালো মেঘে রয় ঢাকা।
এসো আজ আরও একবার ঘুমঘোর মুছে
নদীর মোহনায় অস্তরাগে মাখামাখি হয়ে বসি
পাঁজরে তালাবন্ধ রাখি বিষের তীব্র জ্বালা
তথাপি বুকের মধ্যে গুঁড়ো স্বপ্নের আসমানী রঙ পুষি।

কাকতালীয়

বহুমুখী প্রতিভা চলকে ওঠে মাঝেমাঝে,
অন্তহীন কাব্যিক দ্যোতনায়।
সঙ্গতহীন হয় একাকী শ্রাবণের বিরহী অশ্রু,
কাকতালীয় ভাবে একটা গিরগিটি
রঙ বদলায়,পূর্ণিমার জ্যোৎস্না মেখে।
অহরহ আঁতলামিতে ডুবে থাকা জীবন যাপন
হঠাৎ আশ্রয় নেয় শব্দ শৈলীর ছত্র ছায়ায়।
নমাসে ছমাসে কবিতারা হয়ে ওঠে স্রোতস্বিনী,
দুদিনের বরষায় ফুঁসে ওঠে কলম
আগলে রাখে তার সম্ভ্রম,
সময়ের নিরিখে তা আবার 
কালের গর্ভে হয় লুক্কায়িত।

প্রেমে অপ্রেমে

জীবন একটা রঙহীন রূপকথা
পরাগের সাথে ওড়ে ডাকনাম যত
ফেলে আসা সময়ের টুংটাং সুর
কেউ ছিলনা কোনোদিন শুধু ভালবাসবার মতো।

ফুরফুরে ফাগুনে ওড়ে ছেঁড়া চিরকুট
না রাখা কথারা মেশে বিস্মৃতির বুকে
হলোনা যে কথা বলা, তা আজও না বলাই থাক
শুধু কেউ সুখী হোক ভালোবাসা মেখে।

চুপিচুপি রাত নামে, শূন্যতা ঘিরে
কারা যেনো রাখা কথা পুরে রাখে খামে
তবু,আজও কেউ সুখ খোঁজে বিকোতে বিকোতে
কেউ আজও বেঁচে থাকে জং ধরা প্রেমে।

No comments:

Post a Comment