Thursday 23 April 2020

সিদ্ধার্থ সিংহ

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ










সিদ্ধার্থ সিংহ

হাইট

লোকটার নাম শুনেছিলাম।
সবাই বলতেন, লোকটার হাইট সাত ফুট তিন ইঞ্চি
ইয়া ছাতি
লম্বা লম্বা হাত।
আমি বিশ্বাস করতাম না।
দূর থেকে যে দিন দেখলাম
বুঝলাম, কেউ মিথ্যে বলেননি।
সাত ফুট তিন কী?
ঠিকঠাক মাপলে, দু'-চার ইঞ্চি বেশিই হবে।
এর ক'দিন পরেই
লোকটার সঙ্গে আমার আলাপ হল,
ভাল করে চিনলাম।
একদিন ফিতে দিয়ে মাপতে গিয়ে দেখি
তাঁর হাইট মাত্র পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি।
পাঁচ ফুট চার!
হিসেবে কোনও গণ্ডগোল হচ্ছে না তো!
পরের দিন মাপতে গিয়ে দেখি
তিন ফুট সাত,
তার পরের দিন
কোনও রকমে টেনে-টুনে দু'ফুট।
দু'ফুট! এর পরের দিন মাপতে গেলে
হয়তো আরও কমে যাবে...
আমি ছিটকে চলে এলাম।
মানুষকে আর কত ছোট হতে দেখব!
কত! 

সুতো

যত দূর যাই, যাব 
হাওয়ায় ভাসিয়ে দেব গা
এই ভাবে গেলেই তো পাব মণি-মাণিক্যে ভরা
গুপ্তধনের গুহার মুখ
খেলতে বসলে সাপলুডোর মই
হাসতে হাসতে পৌঁছে যাব
মূল ফটকের ও পারে। 
যত দূর যাই, যাব
হাওয়ায় ভাসিয়ে দেব গা
হাত, পা, চোখ, মুখ, কান, মন, প্রাণ
শুধু ভেসে যাওয়ার আগে একবার দেখে নেব
শরীরের কোথাও কোনও সুতো বাঁধা নেই তো! 

সম্পর্ক

আমি তোমার সঙ্গে আর খেলব না।
তুমি যদি এই ভাবে গাড়ি-রাস্তার মাঝখান দিয়ে হাঁটো
তুমি যদি একের পর এক উপরতলা দেখিয়ে হঠাৎ হঠাৎ বায়না ধরো
তুুমি যদি হেঁশেলের থেকে বেশি পছন্দ করো ড্রেসিং টেবিল
আমি তা হলে তোমার সঙ্গে আর কখনও, কোনও দিন খেলব না।
খেলতে খেলতে বালির স্তূপে বানানো ঘর
আমি একদিন বালিতেই আড়াল করে ফেলব।

রূপান্তর

মানুষের একটা লেজ হোক
দুটো শিং
এক~একটা থাবা হোক সাত মন।
বাচ্চাটাকে কাপড়ে জড়িয়ে কারা যেন ফেলে গিয়েছিল রাস্তার ধারে
যতক্ষণ না লোকজন এসে তাকে তুলে নিল
একটা কাকও যাতে ঠোকরাতে না পারে
আগলে রেখেছিল কয়েকটা সারমেয়।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের একটা দল গভীর জঙ্গলে ঢুকে একেবারে তাজ্জব
পরে সারা পৃথিবী জেনেছিল
সেই গোরিলা~মা আর তার কাছে বেড়ে ওঠা মানব শিশুটির কথা!
তাড়া খেতে খেতে পাহাড়ের এক গুহায় এসে লুকিয়েছিলেন
তাসখন্দের রাজা সিন্দাবাদ
পিছনে তলোয়ার উঁচিয়ে হাজার হাজার সৈন্য
এই বুঝি কোপ পড়ল!
ঠিক তখনই গুহার মুখ ঢেকে যেতে লাগল এক জংলি মাকড়সার জালে।
সামান্য একটা মাকড়সা
কেমন করে তাঁকে সে দিন বাঁচিয়ে দিয়েছিল
সে কথা তিনি লিখে রেখে গেছেন তাঁর আত্মজীবনীতে।
জংলি মাকড়সাও বিপদ থেকে অদ্ভুত ভাবে রক্ষা করে একটা জীবন
বনের গোরিলাও কত মমতা দিয়ে বড় করে তোলে একটা মানবশিশু
রাস্তার কুকুরও কী সুন্দর আগলে রাখে একটা সদ্যজাতকে
আর মানুষ?
মানুষের একটা লেজ হোক
দুটো শিং
থাবা হোক ইয়া বড় বড়।

ক্ষোভে আর শোকে

থমকে গিয়েছে সব আজকে হঠাৎ
হয়েছে সকাল, তবু উঠছে না সূর্য
বাতাসও গুম মেরে বসে আছে ঘরে
বৃষ্টিকে বুকে নিয়ে মেঘ থমথমে।
টিভিতে খবর দেখে ক্ষোভে আর শোকে
ফুটছে না বেল, জুঁই, টগর, মালতি
নদীতেও খেলছে না তিরতিরে ঢেউ
পাখিরা ঝিমিয়ে আছে এ ডালে ও ডালে।
রাজনীতি এ রকম! এত ভয়াবহ!
দোয়ায়নি গোরু কেউ, লেপেনি উঠোন
উনুন জ্বালেনি কেউ, কাটেনি আনাজ
শিশুরা যায়নি মাঠে, পুকুরে নামেনি।
ঘেন্নায় ফিরিয়ে মুখ সব সরে গেছে
প্ল্যাকার্ড-ব্যানার নেই, মিছিল-টিছিল
সুনসান পথঘাট, জ্বলছে না চিতা
বুকের গভীরে জ্বলে কুশপুত্তলিকা। 

1 comment:

  1. অসাধারণ লাগলো আপনার কবিতা । আন্তরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা দাদা ।

    ReplyDelete