Tuesday, 21 April 2020

সৌমী আচার্য্য

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ










সৌমী আচার্য্য


হতেও পারে

"কি রে,ওয় লেড়কি,ইধার আ,চল আজকে আমার সাথে।আরে শুন না।"...ছেলেটা এবার হাতটা ধরেই নেয় মেয়েটার।মেয়েটা ঘুরে তাকায় বিড়বিড় করতে থাকে।ছেলেটা বলে..."আরে রাগ করছিস কেনো?চল,চল...বিরিয়ানি খাওয়াবো।আমাকে কি ছিঁচকে পেয়েছিস নাকি?টাকা আছে,চল।".....মেয়েটার বিড়বিড় বাড়তেই থাকে,মাথাটাও দোলাতে থাকে অল্প অল্প।ছেলেটা ওর হাতটা ছেড়ে দেয়......"কি রে রেগে যাচ্ছিস না কি?"....হাতের নোংরা ব‍্যগটা আচড়ে ফেলে,নিজের বুকে কিল মারতে মারতে মেয়েটা বলে ওঠে...."বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ উদ্ দৌল্লা,মিরজাফর শয়তানি,এ পিলাস বি হোলেস্ কয়ার ইজকল্টু ভৌম জল......"....এইসব বলতে বলতে মাথা নাড়তে নাড়তে মুখ থেকে থুতু বার করে ফেললো।লোকজন এদিকে তাকাচ্ছে দেখে ছেলেটা গলা চুলকে গুটিগুটি কেটে উঠলো।দূরে থাকা জি আর পি দুজন হেলেদুলে এসে বললো...."ভাগ ইয়াসে,ভাগ,চিল্লায়েগি তো মার পড়েগা,নিকাল"....মেয়েটা জামা তুলে থুতু মুছলো,ব‍্যাগটা নিয়ে হেলেদুলে স্টেশনের একধারে চলে এলো।পেছন পেছন প্ল‍্যাটফর্মে বসে বসে ঘষটে ঘষটে একটা ছেলেও এলো।মেয়েটা ঘষটানোর আওয়াজ পেয়ে তাকালো,ছেলেটার বারো তেরো বছরের চোখে ভয়,বিস্ময়।ষোলো সতেরোর দুই বিনুনি মিচকে হেসে বললো....."ভয় খেয়েছিস?ভয় খাসনা এদিকে আয়।ঐ দেখো ভ‍্যাবলা হয়ে থাকে।আয় এই ছায়ায় বসি।"....ছেলেটা সংকোচে এসে বসে।মেয়েটা ব‍্যাগ থেকে কাগজের থালা বার করে রাখে।তারপর একটা প্লাস্টিক বার করে সেটা থেকে খাবার বার করে।পরোটা,ভাত,সোয়াবিনের তরকারি মাংসের ঝোল,আলু একসাথে মাখামাখি অবস্থা।তবু তাই দেখিয়ে এক আকাশ হাসে।

 পাশের কল খুলে হাত ধোয় ঘষে ঘষে।মুখে,চোখে জল দেয়।নোংরা জামাতেই হাত মুছে নিজে খায়,নুলো ছেলেটাকেও খাইয়ে দেয়।গড়িয়ে পড়া ঝোল মুছে দেয় ছেলেটার ঠোঁটের পাশ থেকে।ভুরু নাচিয়ে বলে...."তখন থেকে অমন চুপ মেরে আছিস কেনো?".....ছেলেটা ঢোক গিলে বলে...."আবার যদি ওরম হয়ে যাও?".....মেয়েটা হাসতে হাসতে স্টেশনে শুয়ে খানটেক গড়াগড়ি দিয়ে নিয়ে বড়োবড়ো চোখ করে বললো ....."বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব??....ধুস,তুই একটা পাগল।তোর ঐ করিনা কাপুর শুধু পারে,আমি পারি না ভেবেছিস?".....ছেলেটা অবাক চোখে তাকায় ....."ওটা মিথ‍্যে ছিলো।".....মেয়েটা থালা,প্লাস্টিক তুলে দূরের ডাস্টবিনে ফেলে আসে।হাত,মুখ ধুয়ে নেয় ।নিজের হয়ে গেলে ছেলেটাকেও মুখ ধুয়ে দেয়।দুদিকে দুপা ছড়িয়ে বসে বলে....."বুদ্ধি হওয়া থেকে দেখেছি একেক রাতে একেক জন,মার পাশে।ঘেন্না করতো জানিস।আমি একটু বড়ো হতে আমার শরীরটাও হাতাতো লোকগুলো।তারপর মা পাগল হয়ে গেলো।সবাই কে কামড়াতো,মারতো।একদিন এই বেজম্মার জীবন রেলের নীচেই শেষ।বুঝে গেলাম একাই বাঁচতে হবে।এসব কত শয়তান আসে,তখন একটু পাগল হয়ে যাই বুঝলি।".....ছেলেটা করুণ চোখে বললো....."এভাবে বাঁচবি কতদিন?"......মেয়েটা ব‍্যাগটা তুলে নিলো কাঁধে,বললো......"বাঁচবো না তো,তবু ফাদারের স্কুলে পড়তে যাই,ফাদার বলেছে পড়াশোনা করলে বাঁচতেও পারি।".....জোরে হুইসেল বাজিয়ে দূরপাল্লার ট্রেনটা প্ল‍্যাটফর্ম ছেড়ে চলে গেলো।

No comments:

Post a Comment