Thursday, 16 April 2020

হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ













হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়


পাখি রঙের আকাশ  ----- ৫৪

ছোটোখাটো পেটাই চেহারার লোকটা ট্রেনে ছোলা বিক্রি করছিল। "ছোলা" শব্দটা এমনভাবে উচ্চারণ করছিল যেন ছোলাগুলো ওর মতোই তেজিয়ান। ঠোঙার ভেতর দাঁড়িয়ে থাকা ছোলাগুলোকে দেখতেও ঠিক ওইরকমই লাগছিল। গ্লাসের ভেতর যখন সে ছোলাগুলোকে নাড়ছিল তখন মনে হচ্ছিল ভেতরে যেন যুদ্ধ হচ্ছে। বোঝাই যায় লোকটির বাড়িতে তৈরি করা ছোলা। ওর বাবাও মনে হয় এই ছোলার চাষই করত। তার কারণ একসঙ্গে অতগুলো ছোলাকে কী দারুণ হাতের কায়দায় নাচাচ্ছিল। তাছাড়া দেখে মনে হয় লোকটা শুধু ছোলা নিয়েই বছরের পর বছর কাটিয়ে দিতে পারে। কামরা জুড়ে শুধু গ্লাস আর চামচের একটানা আওয়াজ। লোকটা একের পর এক হাতে সাজিয়ে দিচ্ছিল তার বিদ্রোহী ছোলাদের। অথচ হাতে পড়তেই ছোলাগুলো কেমন যেন নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছিল। লোকটাও সেটা বুঝতে পারছিল। কথা রাখতে না পারার প্রত্যেকটা যন্ত্রণা তাকে ভেতরে ভেতরে ভেঙে দিচ্ছিল। একটানা হাত সাজানোর পরে লোকটা একছুটে দরজার কাছে। অনেকটা শরীর ও বাইরে বের করে দিয়েছিল। বুঝতে পারছিলাম শুধুমাত্র পেটের টানে ছাপোষা লোকটার কাছে বাইরের হাওয়াটা এইমুহূর্তে ঠিক কতখানি জরুরী।

No comments:

Post a Comment