Tuesday 14 April 2020

আফজল আলি

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ ,





আফজল আলির কবিতা 

ফাঁকা শব্দের প্রতিধ্বনিত 
(একটি puzzle poetry)

একটা শব্দের পিছনে তোমাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে 
কিংবা একটা শব্দকে তোমার পিছনে
এবং সামনে থেকে একটা শব্দ ও তার উল্টো দিকে 
এভাবে সামনে পিছনে , পিছনে সামনে ,এগিয়ে পিছিয়ে 
চোখের অস্তিত্ব টের পাওয়া যাচ্ছে 
শব্দগুলোকে ঠেলতে ঠেলতে আরো দূরে , কিছুটা কাছে 
ঠিক সাজানো যাচ্ছে না , পুনরায় আবার 
তুমি এবং শব্দ , শব্দ এবং তুমি , নতুন করে 
মেঘের থেকে শব্দ , হাওয়ার থেকে শব্দ 
ভীষণ এলোমেলো চারদিক , 
উৎপন্ন হচ্ছে , মিলিয়ে যাচ্ছে , ব্রহ্ম , কমল , নাভি 
ওঁ ধ্বনি , আলিফ লাম মিম , হেমলক হাতে সক্রেটিস 
প্লেটো দাঁড়িয়ে আছেন , চোখ জল , ক্রিটোও আছেন
কোনো শব্দই হচ্ছে না আর 
তুমি দেখছো , তোমার পিছনেও ফাঁকা শব্দের প্রতিধ্বনি

ময়ূর এবং ময়ূরী হেনা 
(একটি elastic কবিতা )

ময়ূর এবং ময়ূরীহেনা , এরা দুজন ই-পেট্রল পাম্পে গিয়েছিল বাতের যন্ত্রণার ওষুধ আনতে
কিন্তু ওদের দুজনকেই পেটাল পুলিশ 
বলল ওষুধ কেনার জন্য যেতে হবে ওষুধের দোকানে , পাম্পে কেন
ভুল হয়েছে বলে ওরা মাফ চাইল 

হাঁস একটি উভচর প্রাণী , সন্তরণ এবং ডুব-সাঁতারে পটু
আমাদের গ্রামের রাস্তা দিয়ে যখন সময়ের অতিরিক্ত খুচরো পয়সাগুলো হেঁটে হেঁটে যায় 
আমি তাদের বাতিল ঘোষণা করি
তাই পাখিদের নিস্পৃহ কলতান এবং ফুলদানির সৌন্দর্য বিতরণ 
এখন দুপুরে শোভা পাচ্ছে ভীষণ 
একটি কবিতা সমাজের কল্যাণে নাকি শিল্পের সাধনে
এ নিয়ে অনেক বিতর্ক 
কিন্তু আপেল আনারস ও নাসপাতি , কিংবা গাঁদাফুল বা গন্ধরাজ 
এদের নিয়ে কোনো চুলকানি নেই 
আসলে শ্রমিকরা কখনোই সঠিক মূল্য পায় না 
অথবা সেই কৃষক যারা মানুষের খাদ্যের ব্যবস্থা করছে 
এখন বিশ্বজুড়ে সব কিছু বন্ধ - ট্রেন বাস প্লেন , এমনকি ঠেলা গাড়িও
তাই বলে জীবনযাত্রা বন্ধ , এক্কেবারেই তা নয় 
চলুন একটু উঁকি মেরে দেখি ময়ূর এবং ময়ূরীহেনা বাতের ওষুধ পেল কিনা 
এবং আপনারাও পরবর্তী কল্পনা সম্ভার সাজিয়ে কবিতাটিকে লিখতে থাকুন প্রাণ খুলে 
শুধু দেখবেন শর্ট সার্কিটে যেন আগুন লেগে না যায়


ছাতা 

ছাতাটিকে যদি ভালো করে দেখেন 
দেখবেন অজস্র ফুটো
এবং অন্ধ হয়ে বসে আছে
বিশ্বাস করুন , আমি ছাতার কথা না আনলেও
ছাতাটি এসে হাজির হয় 
সমতার লক্ষ্যে ছাতাটি অকেজো 
তবু বিজ্ঞাপন বাবদ খরচ হয়েই চলেছে
হৃদয়ের ছাতাগুলো আজ ভেঙে গেছে 
মনে হয় চাঁদ একটি অসমাপিকা শব্দ 
যা মানুষকে জাগিয়ে তোলে
কিন্তু চাঁদ ও ছাতা সমান নয় 
ভিতরের যন্ত্রণা সম্পৃক্ত হলে জানা যাবে 
ছাতাটি আপনার জন্য খুনি সেজে আছে
এখন আপনি কল্পনা করতে পারেন 
ছাতাটি হরিণের চামড়া দিয়ে তৈরি ছিল কিনা


বিশ্ব-পৃথিবীর কলতান 

রূপকথার গল্পে শেষ পর্যন্ত চলে এলো একটি ঢেঁড়সের কাব্য 
কাহিনিগুলো আমি গুটিয়ে রাখলাম 
এ কী বলছো 
ভয়ের সংকেত থেকে প্রচন্ড অভিমান নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে কার ভালো লাগে 
একটি বাক্যের অপচয় ঘুচিয়ে বারান্দায় এসে দেখলাম 
ট্রেন চলে গেছে 
ভয় দাঁড়িয়ে আছে মৃত্যুর সমদূরত্বে 
একটা গদ্যের উপকরণ খুঁজতে খুঁজতে দেখি 
কতজন আমাকে unfriend করে চলে গেল 
ভাগ্যের মর্যাদায় যখন নিজের মুখোমুখি হলাম 
ভাগ্যিস রাত তখনও কিছুটা অন্ধকার বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল 
আমার একাকিত্ব চাপা দিলাম দু চারটে কবিতা লিখে 
কলম্বাস , তুমি কি জবচার্নকের খুড়তুতো ভাই ছিলে
তোমার নাম নিতেই কলকাতা কেমন ভ্রু তুলে পপ-কীর্তন গাইল
জানা হল না কত কিছু 
দেখা হল না কত কিছু 
প্রতিদিন শুধু নিজেই নিজেকে গন্ডি দিয়েছি 
এখনো কি একটু আকাশ মেলে ধরতে পারব না 
বলো কলকাতা বলো , তুমি কি বিশ্ব-পৃথিবীর কলতান নও 
এই বাংলার হৃদয় ছুঁয়ে তোমাকে এত ভালোবাসি কেন


তালাবন্ধ ঘর 

পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়া এ সময় রামধনু চিন্তা করা মানা 
চিৎকার উঠে আসছে
তালাবন্ধ ঘর
মাঝিদের ডাক পর্যন্ত নিলাম করা হয়েছে 
আসুন লিকার চায়ে আদা সহযোগে সংযম আচরণ করি
কবিগুরু লহ প্রণাম , 
তোমার বিচিত্র ভাবনার কাছে কবিতার উসকানি 
ধরে রাখি হাত পরস্পর 
হাত তো ধরতেই হবে আজ হোক কাল , না ছুঁয়েও
একটা উপন্যাস লেখা বেশ কঠিন মনে হয় 
একটা গল্প লেখাও
অত্যাধিক কল্পনায় ভেসে যেও না 
কাচের শিশির ভিতর মাঝে মাঝে এসো , দেখো 
জীবন কোথাও একটু একাকিত্ব পছন্দ করছে কিনা


2 comments:

  1. অসাধারণ সব আবিষ্কার আপনার। জুড়ীয়ে গেল মন। কবিতায় শব্দ চাতুরী দেখ মন ভরে গেল।
    প্রিয় কবির জন্য শুভেচ্ছা

    ReplyDelete