Friday 24 April 2020

শম্পা মনিমা

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ










শম্পা মনিমা

জমে থাকা ক্ষোভ

সন্ধ্যাবেলায় ছায়ার মতো কল্পনাগুলো আবছা হতে থাকে, বেদনা তনু পৃথিবীটা সাগর চোখে ঝাঁপ দেয় আজগুবি মাতাল হাওয়াতে।

সান্নিধ্যে কতটা সাগর ছিল– কতটা পরিমাণ সত‍্যি পদার্থ ছিল তা জানা নেই, তবে মনটা ছিল, মোহ-দূর্বলতা নয় ; পাখায় লেখা মনপাতায় নিজের মনটা তিল থেকে তাল হয়ে উঠতো একদল ভালোবাসায়।

তবুও বলা হয়নি... নিজের ইচ্ছে নিজের মধ্যেই ঠেলে রেখেছি, পিছুটান ছিলো,ছায়া ফেলা মুখে পুড়িয়েছি বুক,চেনা অনন্ত ডাকে - বলা হয়নি তাকে।

হোলিখেলার মাতামাতি সুরে সব কিছু বুঝিনি –
যা কিছু বুঝেছি সে শুধু অসুখ নয়,হৃদয়ের ভনিতা নয় ,সত্যি আর উত্তেজনা আশ্রয় ভেবে একখানা ভুল যদি হয়,তাহলে তুমি আঙুল তুলে লিখে যাও তাকে নিয়ে সাজাবো–

" আমার হৃদয় আমারি আছে
বেচি নি তা কারোর কাছে
ভাঙাচোরা হোক যা হোক তা হোক
আমার হৃদয় আমারি আছে "


তবু আমি রাজি

যখন তখন খুব বায়না করছিস
হঠাৎ করে সব পাখির মতো
আমাদের গল্পটা ডানায় জমা রাখতে চাইছিস
আমের বকুলের গন্ধে লাজুক সন্ধ্যা নাক ঘষছে
এখন তোর আকাশ রেশমিচোখে বন্ধ হচ্ছে বুকে, লজ্জা পেয়ে লাল রঙটা ঠোঁটে লাগিয়ে
এখন কিভাবে বেখাপ্পা অবুঝ গল্পটা জমা রাখবে
নাছোড় ড্রাগসে ঝিমিয়ে গায়ে এখন ডিগ্রি জ্বর
শ্বাসের গন্ধে লুকিয়ে রাখা আবেশ রাখা কঠিন হতাশার মৃত্যু কে গলায় আকন্দে জড়িয়ে থাকে
থাকবে না, জানা, কিন্তু কাহাতক এড়ানো যায়
আমি রাজি হই
ভালোবাসলে হয়তো রাজি হতে হয়।


সোঁদা স্বাদ

অশান্তির ঘষা বাক্সের থেকে বেরোয়নি বারুদকাঠি
রাজকুমার ছুঁয়ে যায় নি রাসলীলার শূণ্য চুমু, ফেলেনি খসখসে ঘর্ষণে আওয়াজ, উত্তেজনার ভীষণ ঘাম; ভুলে গেছে একান্ত ব্যক্তিগত সময়।

কাটছে এভাবেই পছন্দের আকাশবাণী, দূরদর্শন,স্টার জলসা অঢেল টাইম,বারান্দায় ঘুরে, অনেক দিন পর হাসিতে দেখলো আয়নায়..
এই শুনছো,তোমাকে একটা কথা বলবো ভেবেছিলাম, এবার পুজোয় আমরা কদিন যাবো সবুজের গায়,তাঁত বোনা গন্ধরাজে গুমোট কাটিয়ে খুব বৃষ্টি যখন হবে তখন তুমি গলা জড়িয়ে বলবে,তোর কি যান্ত্রিক স্বর মনে পড়ে,
জীবন্ত পোষ্টারে আপসহীন নির্দেশের রাত?

উশখুশ করা সময়রেখা জোড়াতালি দিয়ে জুড়ে রাখা আছে, সলুকসন্ধান নেই পোড় খাওয়া নিলয়ের.. প্রয়োজন নেই মোলাকাত করতে, জাষ্ট বসে থাকতে, হন্তদন্ত হয়ে এঘর ওঘর খুঁজতে–নেই প্রয়োজন; শরীর ভারী হয় , বড়ো বড়ো চোখদুটোয় মৌরসী পাট্টা করে বৃষ্টিফোঁটা থাকে প্রস্তুতি ছাড়া নামে, আজও রওনা দেয় তোমার কথা মনে এলে...দেরী হয়ে যাচ্ছে ,বিজ্ঞাপন শেষ হবার আগেই কফি নিয়ে পৌছাতে হবে তাড়াতাড়ি ..আরো দূরে যাবার কথা ছিল..
পুড়ে যাক নির্মম ক্ষুধা,ক্ষমাহীন অপেক্ষাদাঁত।


সেদিন সন্ধ্যায়

কারুকাজ বোনা অর্ধেক আকাশে প্রলাপ নিয়ে
শত লাইট হাউসে সবুজ ম‍্যানগ্রোভ
আরো তীব্র সবুজ আত্মজীবনী হয়ে
আল্পনা দেয় চেনা রচনাবলীতে,
মনে হয় সীমান্তে দাঁড়িয়ে রুমাল ওড়াই
লম্বা একটা চিঠি লিখি তোমাকে
যে পঙক্তি লিখে ছিলাম বসন্ত বৃষ্টিতে
হঠাৎ করেই সেগুলো যেন নামেছে ভিড় করে
রাত বাড়িয়ে রজনীগন্ধা অপেক্ষা করে
তোমার আমার ছোট-কবিতার পান্থশালায়
এক পেয়ালা নেশা নিয়ে।


তোকে আমি ভুলবোনা কোনদিন

আপ্রান উষ্ণতা মুড়ে হাসিতে তুই ফিরে আসছিস
সফেন বালি থেকে ,বেলোয়ারি দিন –

ঘাম মোছা শহরের শহীদ মিনারে ঠোঁটের কোণে
ছুঁয়ে যাচ্ছে ঠুনকো হয়ে ওঠা হাইফেনের মিঠে সময়
তর্জনীতে জলন্ত স্পর্শ কাছাকাছি আসতে চায়,
সর্বহারার স্বাদটা ধুলোবালির দাম দিয়ে কিনলাম।ধুসর আত্মীয়তা জড়ানো মাফলারে রয়েছে শেষবেলার শীত। ফিকে হচ্ছে উঠোন, জেটিঘাট,একলা পথ,মাঠের কান্না, বরফের কুচির মতো বিষাদ থরে থরে সাজানো অস্তিত্ব সন্ধ্যের মরশুমী প্রনয়।বসন্তের আজান উদাসী লগ্নে কানে আসে,জলের ছায়া আরো গভীর হয় অভিমান করে, আমি খুঁজি বিচ্ছেদের আড়াল অমিতাক্ষর ছন্দে, মায়াছোঁয়া ধূপের গন্ধে, পাতা ঝরার ভালোবাসার ঋতুতে।
মুহূর্তের সোমলতাহীন চাঁদে বিরোধিতা খুলে বিজনে মেলে হাত,নেই সেখানে কান্না চোখ মোছার নক্ষত্রের হাত।

এই বেলায় থেমে থাক,এতটুকু থেমে থাক – যাযাবরের মধুমাস।


No comments:

Post a Comment