Friday, 12 June 2020

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ১২।০৬।২০২০

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ
আসুন সকলে ভালো থাকি। সুস্থ থাকি। সুস্থ রাখি। বদ্ধ অঙ্গিকার করি...

                            হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

পাখি রঙের আকাশ  -------  ৮২

একটা দমকা বাতাস হঠাৎ করে জানলা দিয়ে ঢুকে পড়ে জানিয়ে দিল, এটাই তাদের দরজা। কিন্তু তা কি করে হয়। এটা তো আমার জানলা নয়। আমার দাদুর বাবার জানলা। দাদু বাবাকে দেখাতেন, ভোরের কুয়াশায় বটগাছ। বাবা দেখাতেন, সবুজের ঘর ; সবুজকে ডাকলে হাজার রঙ ছড়িয়ে গিয়ে বুকের কন্দরে বাসা বাঁধে। জানলায় সূর্য ওঠে। কিন্তু সারা ঘর জুড়ে বাতাসের দৌড়ঝাঁঁপ চলতে থাকে। জানলা ভুলে যাই। মনে মনে ভাবি, কি আসে যায়। বটগাছ সামনে রেখে একটু ঘুরতেই পারি। বুকে তো আমার পুবের সূর্য ওঠা ভোর।


হামিদুল ইসলাম


      তিত জমিন 
                    
কুঞ্জবনে মৌমাছিরা উদাস 
বৃক্ষের শেকড়ে রাখি ভালোবাসা 
তোমাকে দেবো
একমুঠো জোছনা রাত  ।।

অভয় দিলে ফিরে আসি
দুহাতে নিরুত্তাপ ছোঁয়া 
এক একটি চুম্বন ভরিয়ে দেয় শূণ‍্যতার আকাশ 
পতিত জমিনে ভ্রুণের আবাদ  ।

             পরস্পর 

কবিতার সাথে আলাপ 
দীর্ঘ পথ 
মেট্রো চ‍্যানেলে তখনো ট্রেণ দাঁড়িয়ে আছে 
পার্শের ভেতর মুক্তছন্দের ভাঙা রেকর্ড় 
বেশ ভারি। ঘেমে ওঠে নাভিমণ্ডল ।।

শৈশব থেকেই আসক্তি কিশোরী প্রেম 
প্রেম ছুঁলে কালঘুমে নামে রাত  
আজ তার রক্তে যাপন 
একঝাঁক উষ্ণতা 
ভালোবাসা পরস্পর  ।

              জীবন

ঝুল বারান্দায় রোদ এসে ভিজিয়ে দেয় 
বিছানার চাদর আসবাব
অবসর জীবনের একঘেয়েমি 
চেনা বৃত্তের মধ‍্যে প্রতিদিন লোকগুলো মরে যাচ্ছে 
                    হেরে যাচ্ছে জীবন ।।

কার কলমে ছুটি হয়েছিলো একদিন 
ছন্দবদ্ধ কবিতার 
তার জন‍্য নতজানু অন্তত এক মিনিট 
ভাগ‍্যিস সেদিন মরে যায় নি 
                    কবিতার প্রাণ  ।।

এখন কবিরা প্রতিদিন হাততালি দিচ্ছে অবসরের ঠেকে 
                    অসম্ভব উৎসাহ 
                          জীবন  ।


            সোহাগ 

মাটির উর্বরতা জেগে থাকে 
বিছানার পাশে 
তোমার শরীর বৃত্তীয় ছায়ায় 
পরমাণু বিষ্ফোরণ  ।।

দূরে থাকি মৃত‍্যুর আশংকা নিয়ে 
সেলুলয়েড জীবনের রঙঝরা পথ 
ভাঙছে প্রতিদিন 
তবু সোহাগের সমুদ্রে তোমার নিত‍্য বিচরণ  ।

              সাহস

সন্ধ‍্যেতারা নিভে যায় 
ঝাপসা অন্ধকার। অপরেশ খোলা বারান্দায় 
ঘড়ির পেণ্ডুলামে জীবনবোধ 
               নিঃশব্দ যুদ্ধ আলো ছায়ায়  ।

কে কার হাতে শত্রুতা মাপে 
জীবনের বিভৎসতা ছুঁয়ে যায় পরশ পাথর
মৃত মানুষগুলো মৃত‍্যুর বুকে ঘুমায় 
              অপারগ জিয়ন কাঠির ছোঁয়া  ।

ঈশ্বরের স্বর্গ পোড়ে আগুন 
ঈশ্বর পোড়ে জীবদ্দশায়  ।

সোমনাথ বেনিয়া
অণুগল্প

ঘা 

ব‌উ, দুই মেয়ে আর কোলের ছেলেটাকে নিয়ে রতন ফুটপাথে থাকে। মেয়ে দুটো চুপ থাকলেও কোলের ছেলেটি সব সময় খিদের জন‍্য কাঁদে। ছেলেটি যখন‌ কাঁদে তখন রতনের ব‌‌উ তার দুধের বোঁটা ছেলেটির মুখে গুঁজে দেয় কিন্তু ছেলেটি তা মুখ থেকে বার করে দেয়। রতনের ব‌উও জানে সব খালি হয়ে শুকিয়ে গেছে!
       একদিন ছেলেটির একঘেয়ে কান্নায় রতন বিরক্ত হয়ে তার মুখের জ্বলন্ত বিড়িটা ওই ছোটো শিশুটির মুখে ঠেসে দেয়। রতনের ব‌উয়ের আর্তনাদের সঙ্গে ছেলেটির ভয়ংকর চিৎকার সেদিন ফুটপাথকে নাড়িয়ে দিয়েছিল।
       রতনের কাজ বলতে প্লাস্টিক কুড়ানো। তা সারা দিনের কুড়ানো প্লাস্টিক জমা দিয়ে কত টাকা‌ই-বা আয় হয়। যা পায় তাতে এতগুলো পেট চলে না। তবুও সে বাবা। নিজের ভুল বুঝতে পেরে ছেলেটিকে কোলে নিয়ে ফুটপাথের এককোণায় অসহায় ভাবে বসে থাকে। সে খেয়াল করে তার ছেলের মুখের দগদগে ঘা দেখে অনেকে পয়সা দিয়ে যাচ্ছে। মুখের উপর যখন মাছি বসে তখন সে হাত দিয়ে সরিয়ে দেয়। সে দেখলো লোকে যখন পয়সা দিচ্ছে তখন ছেলেটিকে কোলে নিয়ে ওইভাবে সে প্রতিদিন বসবে। সে ভাবে গরীবের আবার ভালো-খারাপ! এভাবে পয়সা আসলে অন্তত পেটগুলো বাঁচবে।
       যেমন ভাবা তেমন কাজ। শুধু ছেলের পোড়া ঘা শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম হলে সে তার জ্বলন্ত বিড়ির ছ‍্যাঁকা দিয়ে পুনরায় ঘা-টাকে দগদগে করে দিতো ...


No comments:

Post a Comment