Tuesday 16 June 2020

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ১৬।০৬।২০২০

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ
আসুন সকলে ভালো থাকি। সুস্থ থাকি। সুস্থ রাখি। বদ্ধ অঙ্গিকার করি...

                           হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

পাখি রঙের আকাশ  -----  ৮৫

কোনো পোড়ো বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালে চোখ জুড়ে শুধু ধুলোছাপ। কোনো পা কাউকে কিছু না বলে হঠাৎ যেন নিজ ইচ্ছার বাঁকে বেঁকে গেছে। কেউ কেউ আবার যেন অনেকক্ষণ এক জায়গায় দাঁড়িয়ে। এখনও তাদের কথা ঘুরে ঘুরে উড়ে উড়ে সারা বাড়িময়। কোনো কোনো পা গেঁথে গেছে শুকনো মাটিতে। বুঝতে পারি, বোঝা কত কঠিন ছিল। নিজ ইচ্ছার ডালে ডালে কত গভীরে পৌঁছে গিয়েছিল পা। হাতে জল, পায়ে জল নিয়ে এখনও হয়ত কেউ দাঁড়িয়ে সিংহ দরজায়। পথে পথে ফিরে এলে আজও বাড়ি জুড়ে শুধু কথাদের দিনলিপি। কেউ যেন দিন ধরে ধরে সাজিয়ে দিয়ে গেছে।

মঞ্জু বন্দ্যোপাধ্যায় রায়

মর্মান্তিক

দুটো হাঁটু আর একটা গলা নিয়ে খুব বেশি
কোনোদিনই মাথা ঘামাই নি।
কারণ ওই দুটি বিষয়ের উপর আমার কোনো ডিগ্রি নেই।
ছোটবেলায় টনসিলে ভুগলেও ওই পর্যন্ত।
হাঁটু দুটোর রোগে জর্জরিত আবাল বৃদ্ধ বনিতা।
এমতাবস্থায় অন লাইনে যোগা করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর একটা  চেষ্টা চলতেই পারে। 

কিন্তু ঠিক এই সময়ে  শুধু মাত্র দুটো হাঁটুর ফাঁকে গলাটা ফেলে চাপ দিয়ে  যে ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে
সেখানে  গলা না হাঁটু  কোনটি বেশি মর্মান্তিক 
সেটি বিশেষজ্ঞদের উপর ই ছাড়া থাক।

তবে হাঁটু দিয়ে গলার চিৎকারের শব্দ এবং শ্বাস 
বন্ধ হয়ে যাওয়ার যে নিপুনতায়  সাদাকালো ছায়া 
পড়েছে 
সেই ছায়ায় লাখ লাখ ছায়া  ইতিহাসের বই হয়ে 
এলোমেলো  পরে রইল।


দূরত্ব যখন গুলিয়ে যায়


কোনটা ঠিক ?? সোশ্যাল ডিস্টেন্স না ফিজিক্যাল ডিস্টেন্স ? 
নেতা , মন্ত্রী, শিশু, বৃদ্ধ ,সুস্থ, পাগল
সবাই এক যোগে বলে চলেছে সামাজিক দূরত্ব বজায় থাক।

অথচ সোশ্যাল নেট ওয়ার্কের মাধ্যমে আপনি 
জানতে পারছেন মহামারীর ওই সব ভাষণ , বিধি নিষেধ ।
কে কতখানি মানবেন কি মানবেন না
সেটা পরের কথা।
কিন্তু সত্যি করে বলুন তো , মহামারী বা অতিমারীর
হাত থেকে বাঁচতে কি সোশ্যাল ডিস্টেন্স  প্রয়োজন?
মাক্স,  স্যানিটাইজার, করেন্টাইন, আইসোলেশন 
সবই তো শারীরিক দূরত্বের গল্প শোনায়।

সামাজিক দূরত্ব বজায় করলে বাঁজবেন তো?
এই যে একটু আগে ফোনে খোঁজ নিলেন 
ছেলেটা অফিস থেকে বেরিয়েছে কিনা
কিংবা বাপের বাড়ির বিড়াল টা কদিন খাচ্ছিল না
আজ খেয়েছে কি না।
হয়তো বা  সোশ্যাল মিডিয়ায় খুঁজে পাওয়া পুরোনো প্রেমিক বন্ধু কেমন আছে 
ম্যাসেঞ্জারে টুক করে মেসেজ করা থাকলো, "Miss you"  ।
পারা যেতো সোশ্যাল ডিস্টেন্স থাকলে? 

উঃ ,আমার গলাটা খুসখুস করছে। 
ইয়ার্কি করছি না। তফাৎ যাও তফাৎ যাও।
সাবধানের মার নেই ।
প্রয়োজনে খোলা ছাতার দুরত্ব বজায় থাক
খোলা আকাশের নিচে।
অতএব শারীরিক দূরত্ব ই আসল কথা 
বাঁকি সব ভাষণ।


ঘুম ভাঙা মাঝপথ


এক  আঁজলা ঠান্ডা বাতাসের মতো ঢুকলো
একটা  নিঝুম মেসেজ ,ঘুমাও নি ?
সব অস্বস্তির অবসান ,ঘুম ভাঙা মাঝ পথ
পিঠে লেগে থাকা আরাম চলে যায় দূর দুরান্তে।
কথা হয় না দেখা হয় না 
অথচ কত গভীর ভাবসম্প্রসারণ ।

আমি যে ভাবে ভাবি ওরা ও কি  আলপনা দেয় সেভাবে ভাবনার পিটুলি গোলায়।
কত কত লক্ষণযুক্ত চিত্রী গড়ে ওঠে শুভাশুভর।
আমি  অনায়াসে উদোম হতে পারি ঝরে যাওয়া পাতার কাছে। 
ঝরে যাওয়া পাতার বোঁটায় জন্ম নেয় আর এক কচিপাতা 
সবুজে ভরে ওঠে কিশলয়।

ঘন মেঘে দিন বড় বিশ্রী হলেও 
সহজপাঠ সেজে ওঠে বেহাগের আলাপে ।
শীতকালের খোঁজ সুপর্ণা জানলেও,তিনমাস ঘুমালেও 
বারান্দার ইজি চেয়ার আর ওই সামনের টলটলে পুকুরে 
টুপটাপ বৃষ্টি ফোটা আমাকে আর নিদ্রাহীন হতে দেয় না। 


হিমেল  ছোঁয়া 

শব্দময় চারপাশে আমি প্রতিমুহূর্তে
নিজেকে আবডালে রাখার চেষ্টা করি।
কখনো ভাঙাচোরা শব্দগুলো জড়ো করি।
কখনো সাজিয়ে টানিয়ে দিই চৈত্রের সেলে। 
বিক্রি না হলে সেগুলো থেকে যায় স্টোরেজে।
মাঝে মাঝে ব্যাক বটম পুশ করে  ক্ষিধে মেটাই।
সই পাতাই উড়ে যাওয়া মেঘের সাথে।

বসন্ত চলে গেলো কি না বুঝি না
অথচ  নিজ নিকেতনে কথামৃত পাঠ শুনি ।
পলাশ বিছানো পথে মহুয়া ফুলের নেশায় সব বুঁদ ।
দোয়েল , শালিখ , বদড়ি , কোকিলের ডাক আর
ভোরবেলায় হিমেল ছোঁয়ায় আমার ঘুম ভাঙায়।

ব্যালকনির বাসায় ময়নার সাথে দেখা হলে
বললাম, এতো কেন ?কাকে ডাকিস ?
সে বলল , যে, আমার ডাকে সাড়া দেয় তাকেই ডাকি।
বরাবরই আমরা এমনই কথা বলি , ডাকি
ভালোবাসা ছুঁয়ে যায় তার পরানে ।
কেবল তোমাদের কানে পৌঁছায় না কারণ।
তোমরা যে রাতদিন শব্দ জড়ো করতে ব্যস্ত।


বেনিআসহকলা

অপেক্ষারা দাঁড়িয়ে আছে 
যত কিছু থাকে  থাক  শ্বাস যেন  থামে না ।
ওইটুকুর জন্যে সব কালো সাদার লড়াই।
শ্বাসের রং যে কী জানতে উঁকি দিয়েছিলাম 
জন্মদিনের বেলুনে।

লাল বেলুনে লাল শ্বাস, সাদায় সাদা
গোলাপি তে মিঠে রং বাকি বেনিসহককলা।
সুস্থতা হারিয়ে গেছে শুকনো হিংসার আড়ালে
জল  যদি জীবন হয় তবে জীবন ও জলের মতো।

তুমি যে অপেক্ষায় আমিও সেই অপেক্ষায়।

শঙ্খধ্বনিতে  বোঝা যাচ্ছে  গৃহস্থ এখনও ঘরে ।
দেখা  নাই হলো ,দূর থেকে যে আলো দেখা যায়
তাতেই আমরা বুঝে যাই ওরা ঘরে আছে।

সুখে আছে কি না জানি না 
কিন্তু ওই আলোর জানালা সুরে ভেসে যাচ্ছে 
" দুখেরে কান্ডারী করি 
আমি ভাসিয়েছিলাম  ভাঙা তরী...


রঞ্জন চৌধুরী 

ছায়ামুখ 

কয়েকটি মুখোশ বানিয়ে রেখেছি
এবং কয়েকটি জবরদস্ত টুপি
যখন যেটা দরকার পরবে
সুবিধামত বিভূষণ ভেবে পরে নেবো।

আজকাল খুব সমঝে চলছি
কথা কম বলছি
হাসছি বেশি।

জীবন চলার পথে চলতে চলতে লক্ষ্য করেছি
চলমান মূল স্রোতে মিশে যেতে হলে
লণ্ঠনপ্রমান আলোতেই শুধু নয়
ঝা চকচকে ঝলসানো আলোতেও দেখেছি
সমীপবর্তী তীরে পৌছতে গেলে প্রথম প্রয়োজন
নিজের সাথে নিজেকে নিয়ে প্রতারণা করা...

আর তার জন্য চাই
নিদেনপক্ষে একটি মুখোশ
কিংবা
একটি টুপি

আর কিছু নয়......






No comments:

Post a Comment