মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ
জুলিয়েট-রাকা ব্যানার্জী
অনুগল্প
দাগ
জুলিয়েট-রাকা ব্যানার্জী
অনুগল্প
দাগ
দেবযানীল জীবনে এই ঘটনার সূত্রপাত যখন তার একবছর বয়স, সবে হাঁটতে শিখেছে, মা বাবার নয়নের মণি ছিল দেবযানী।
বাবা ছিলেন নামজাদা স্কুলের শিক্ষক, টাকী রাজবাড়ীর অন্দরের বিশালাকার ঘরে ছিল তার শৈশব যাপন, পুজোর সময় ঠাকুরদালানে তৈরী হতো প্রতিমা, মায়ের কোলে চেপে সারাদিন দেখতো মৃন্ময়ী থেকে চিন্ময়ীরূপ, অবশ্য এ সবটাই শোনা তার মায়ের মুখে
প্রতিবেশী বছর পাঁচেকের শুভ্রই ছিল তার খেলার সাথী, তখন সদ্য হাঁটতে শিখেছে সে,সেদিন শুভ্রর হাত ধরে গুটিগুটি পায়ে সকলের চোখের আড়ালে বেরিয়ে গিয়েছিল দেবযানী,তারপরেও ঘটল অঘটন, খেলতে খেলতেই কাঁচের টুকরো তুলে দেবযানীর হাতে আঁচড় দিল শুভ্র, অকস্মাৎ কচি হাত কেটে একসা, তারপর ডাক্তার -ওষুধ একটা হুলস্থুল কান্ড, সেযাত্রা উদ্ধার হলেও আজীবনের কাটা দাগ সঙ্গী হলো দেবযানীর, বেশ কিছুদিন পর বদলী হলো শুভ্রর বাবার, যথারীতি ছেদ পড়ল দেবযানী ও শুভ্রর বন্ধুত্বে
এরপর কেটে গেছে অনেকগুলো বছর, শুভ্র কলেজ জয়েন করেছে, দেবযানী তখন মাধ্যমিক দেবে, হঠাৎ একদিন বিকেলে ওদের বাড়িতে এলেন শুভ্রর বাবা, সবাই মিলে সুন্দর একটা বিকেল কাটালো স্মৃতি রোমন্থন করে, যাবার আগে দেবযানীর হাতের কাটা দাগটা দেখে আফশোস করলেন উনি,
বেশ কিছুদিন পরে সপরিবারে মিলিত হলো ওরা, খাওয়া দাওয়ার পরে বড়োরা যখন গল্প করতে ব্যস্ত ওরাও তখন ছাদে খেলতে গেল, হঠাৎ শুভ্র বলল কী সুন্দর হাত তোর দেবযানী, একটু ধরতে দিবি, একথা শুনেই দেবযানী বলল কেন! আবার কাটবে বুঝি!
শুভ্র বলল কী যে বলিস তখন তো আমিও ছোট, ইচ্ছে করে কি দিয়েছি বল! ঠোঁট ফুলিয়ে দেবযানী বলল সে তুমিই জানো
শুভ্র হঠাৎ বলল আমাকে বিয়ে করবি দেবী,
একথা শুনেই দেবযানী বলল বিয়ে! তোমাকে! ছোটবেলায় হাত কেটেছো শেষে আমার গলা কাটবে বুঝি!
স্তব্ধ হয়ে শুভ্র সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেল নিচে,পেছনে পেছনে রাগে গড়গড় করতে করতে নেমে এলো দেবযানী
সবার সামনেই মাকে বলল
জীবনে বিয়ে করব না, ছেলেরা খুব বাজে,শুধু হাত-পা কেটে দেয়
আজ মধ্যবয়সী দেবযানী স্মৃতির ঝাঁপি খুলে বসতেই যেন জ্বলজ্বল করে উঠলো সিগারেটের ছ্যাঁকার সঙ্গে সেই শুভ্রর দেওয়া কাটা দাগটা
আজ সকালেই দেবযানী খবর পেয়েছে মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছে শুভ্র।
No comments:
Post a Comment