Tuesday, 23 June 2020

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ২৩।০৬।২০২০

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ 
আসুন সকলে ভালো থাকি। সুস্থ থাকি। সুস্থ রাখি। বদ্ধ অঙ্গিকার করি...
                              হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

পাখি রঙের আকাশ  -----  ৯০

মেঘের দেশে পা দিয়ে মনে হয়, কিভাবে সারা শরীর জুড়ে জল আল্পনা দিয়ে রেখেছে। এখন তো হাত পাতলেই জল। এ তো আজ বিকেলের গল্প। কিন্তু গভীর অন্ধকার দেশ ভেঙে ভেঙে যখন সকাল প্রতিদিনের বারান্দায় বই খুলে বসলো তখনই তো মেঘ উঠোনে এসে দাঁড়িয়ে পড়েছে। সে কি কিছু চাইতে এসেছিল ?  চলার আনন্দে যে পা ফেলে তার কি কিছু চাইতে মনে থাকে ? ওই সকালেই সে এমনভাবে দাঁড়িয়েছিল যে দেখে মনে হচ্ছিল, বৃষ্টি দিয়েই সে যেন তার ক্যানভাস ভিজিয়ে তুলবে। মনে মনে সে কতদিন বৃষ্টির চর্চা করেছিল তাই বৃষ্টি আসার আগেই বৃষ্টিরঙে ভিজেছিল ক্যানভাস। আজ যা মেঘের দেশে বৃষ্টির গল্প একদিন কিন্তু মেঘের আয়নাতেই বৃষ্টি পড়া যেত। শুধুমাত্র চর্চার অভাবে আমাদের রাজ্যে মেঘের অনেক পরে বৃষ্টি আসে।


                            হীরক বন্দ্যোপাধ্যায়

অমোঘ অপার 

সুন্দরী নারীর দিকে ভেসে যাচ্ছে মোলায়েম চঞ্চলতা ,ভয়াবহ উৎসবে মেতেছে পুরুষ
নপুংসকতা নিরক্ষীয় রাঘববোয়াল
তিমির জড়ানো অক্ষর গুলি সিদ্ধ যোগিনী হয়ে
সূচীপত্রে অমোঘ অপার
ঘন হচ্ছে কালো হচ্ছে মহাশূন্যে ভাসছে তখন
ওজনহীন নৌকো শেষ থেকে শুরু ভাইরাস পিয়ানো অশ্ররাশি প্রণত অনুরাগে
তারপর যতবার আকাশে তাকিয়ে দেখি
ঘূর্ণিঝড় জীর্ণ প্রদীপের ছায়া
এখনো সমানুপাতিক ধ্রুবতারা
আসলে ইচ্ছায় অনিচ্ছায় সালিশি আদালত
কে কার সম্ভ্রম দেবে,হবে আব্রু তার ই বিচার


নার্সিসাস

তারপর অনেক রাস্তা ঘুরে একদিন
তোমার সাথে দেখা
এতদিন তোমাকে দেখিনি কেন?
জরা ও কঙ্কালসার দেহ
কী আসক্তিময় হয়েছো তুমি ?
কী এক উদাসীন ,চকিত এক ছায়া যেন
তিমিরজড়ানো সেই রূপ কোথায় ?
শেষ তোমাকে দেখেছি ধর্মতলার মোড়ে
চিনেবাদাম ছাড়াতে ছাড়াতে এগিয়ে যাচ্ছো
সন্ধ্যায় সদর স্ট্রিটের বারান্দায় কবিতা পাঠে
এখনো এখানে সূর্য উঠছে বৃষ্টি পড়ছে দার্জিলিং জুড়ে বরফ,তোমাকে এখন লালমাটি খুঁজে চলেছে, রাঢ়ের ধুলো খুঁজছে
এখন সারা বছরই উৎসব এখানে
ঐতো শুরু হল কাড়ানাকড়ার শব্দ
শুনতে পাচ্ছোনা  ?
আজ তুমি ক্লান্ত, চলো তোমায় বাড়ি পৌঁছে দি....

চুম্বনযোগ‍্য
মানুষের খুব কাছে গেলে ফিরিয়ে নেয় হাত
সুন্দরী রমণীদের মতোই তাতে লেগে থাকে গ্লানি
অমীমাংসিত বহু প্রশ্নের ভিড়ে,কেঁদে উঠলো কে যেন দরজায়, নদীঘাটে ঠিক তক্ষুণি বাড়ে মনস্তাপ,তর্জনী তুলে যদি বলে কেউ কথা
সে কথার মাঝেও থাকে প্রাণ কিছুটা রসের ভিয়েন,সুরের আজান...
কখনো আকাশ দেখেনি যে পাতালে ডুবে যেতে যেতে উঠে আসে নতুন রূপে ভ্রূক্ষেপবিহীন
আমি তার কাধে হাত রেখে দেখেছি
এখনো গোপন গুহার ভেতরে লুকানো রয়েছে
মণিমুক্তো তবু মানুষের ভেতরেই একটা মানুষ রয়েছে বলে এখনো কিছুটা স্বস্তি...
বাকীটা আবর্জনা সংসার আসবাবে বন্দী
নির্জন নদীর ধারে কিংবা প্রান্তিক গাছের ছায়ায়
তখনই ঠোঁটে ঠোঁট চোখে চোখ রমণীর খোঁপায় কিছু ভুল ও বকুল সমেত চুম্বন সহজ হয়ে ওঠে
ফলনের যোগ্য হয়ে ওঠে ,চুম্বনযোগ‍্য জমি...

নতুন অধ‍্যায়

অতীত মানুষের স্মৃতি সতত ধূসর সেখান থেকে
শুরু হয় নতুন অধ‍্যায়, আকাশে দীর্ঘশ্বাস তৃতীয় পুরুষের মহাতরঙ্গের মাঝে নৈরাজ্য আর এনকাউন্টার নিয়ে কথা হয়
জলের স্বচ্ছ রঙ আগুনের গনগন
বৃষ্টি যেখানে পান করে নিজস্ব নিয়মে
যেভাবে সম্মিলিত শীতের সমুদ্রে সন্ধ্যা নামে
নাটকের শেষ পর্বে ক্লাইমেক্স দেখার আশায়
বসে থাকে অডিয়েন্স, এসবের কিছুই বোঝেনা মহাকাল ,জরা কঙ্কালসার প্রহেলিকা
ধীর ঘুমে ডুবে যায় সভ‍্যতার প্রথম পাঠ
আরো কিছু যা এখনো আশ্রয়
জয় পরাজয় শ্রমিক বুর্জোয়া সাদা কালো রাত্রি দিন,তখন অন্তহীন খেলায় ডাক দেয় দাঁড়ে বসা ময়না অনন্য উত্তরাধিকার
জাহাজ বন্দর বাণিজ্য এবং মাতৃগর্ভে আগামী সন্তান যদিও একথা সত্য অতীতের স্মৃতি চিরকাল ধূসর ,অথচ কী আশ্চর্য
সেখান থেকেই শুরু হয় নতুন অধ‍্যায়...

পলাশ

তুমি নীরব জলের সংশয়
তুমি আত্মঘাতী ফাঁস
চিত্ত নয়,বিত্ত নয় তুমি ছায়াকে সত্য ভেবে
ডুবেছো একদিন আজ শেষের তর্পণে এসে দেখি তুমি ই  মহৎ...
প্রজ্ঞায় ভরপুর শুদ্ধ প্রাণ তুমি বসন্তের বজ্রনাদ
জন্মজন্মান্তরের কমলেকামিনী
বিশুদ্ধ পঞ্জিকা মতে কড়িকাঠজুড়ে নামাও লাশ
বলো,ন ইলে  কিকরেইবা ফুটবে পলাশ  ?

কী কথা বলতে গিয়ে

কী কথা বলতে গিয়ে কী কথা বলেছো
আজ শুধু জল ছোট বড়ো ডিঙ্গি
ডিঙ্গি চালাচ্ছো তুমি... ডুবাইলিরে ভাসাইলিরে ...আহা আজ তুমি গাও আমি শুনি
আজ তুমি কথা বলো,ভালোবাসার বিভ্রম নিয়ে
বলো কথা হ‍্যালুশিনেসন নিয়ে শিল্পিত সৌন্দর্যময় ,যে কথা এতদিন নদীরা বলতে বলতে সমুদ্রে গেছে, গাছেরা বলেছে পাতা ঝরার গল্প ...আজ আমি কান পাতি তুমি বলো
আমাদের লড়াই ,হেরে যাওয়া, উঠে আসা
দমিত স্বাধীনতাহীন যাপনপ্রনালী
শ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসা
প্রতিদিনের সেই চাপ চাপ অন্ধকার
আজ আমি শুনি তুমি গান গাও...

                                  সুষ্মিতা রায়চৌধুরী

গল্প 
অসমাপ্ত আগামী

এত রস পেয়ে নীরস শীর্ণ ক্ষুধিত তরে
কেন কেঁদেছিলেকেন কাঁদাইলে আজীবন প্রেম ভরে।

ছেচল্লিশের প্রেক্ষাপটে,বুড়ো ঘড়িটাকে আর সজাগ থাকতে হয়না 
কুহুর ঘুম ভেঙ্গে যায় কোনও অজানা অঙ্গসৌরভে,
অগোছালো শাড়ীতে আলতা পা এক ছুটে বারান্দায় 
লোহার সবুজ রেলিং,আমের মুকুল,পাখীর ডাক পেরিয়ে,রাস্তার বাঁক ধরে আসবে কুশ 
চার মাস হয়ে গেলো অপেক্ষাই সার 
আসেনা কুশ,না আসে তার চিঠি..
কাতর হৃদয়ে শুধুই বিশ্বাসের পরশমণি....

খবর আসে ব্রিটিশরা নাকি যত্রতত্ জেলে পুরছে ছাত্রদের 
মিটিঙ,মাইকস্ট্রাইক আর প্রলয় মাঝে পরিবর্তন আসছে,জানে কুশ।
গোপন ডেরায় ভেসে আসে বকুলফুলের সুবাস,কুহুর কঙ্কণে শেষদিন ছিলো আশ্বাসের অনুরণন 
বড্ড সহজে কুহুকে বুঝতে পারে কু,
কবিতার খাতার ওপর রিভলবারটা জানেফিরতেই হবে ।।
শেষ লড়াই  আজ লক্ষ্যভেদ হলেই,ন্দ্রধনুস কুহুর আচঁলে...ললাটচুম্বনে “তুমি আমারই” 

রেডিওতে আনন্দমুখর দিনের বার্তা...
হৃদয়রক্তরাগে স্বাধীনতার আলোক-শিখা,
শহীদ হয় ধ্বজাধারীর কঠিন সংকল্প,বেঁচে থাকে বিদ্রোহ,
খবর আসেনা কুশের,
কুহু নিশ্চিত,কুশের হাসিকে বরণ করার সময় এলো বলে 
ফুল ঋতুতে আর নেই বারুদের গন্ধ 
লাল পেড়ে শাড়িতে এলোকেশ সরালেই প্রস্ফুটিত নবকিরণ 
নীল খামে কুহু সাজায় না বলা কথা,
আজ কুশকে দু চোখ ভরে শুধু দেখবে কুহু,সহচরী হবে স্বর্গের পরী  মায়াবী রাত.....

হঠাৎ দরজায় টোকা,
মাপা পদচারনায় এগোয় কুহু,
কুশের কাঁধের ঝোলাটা রাখা দরজায় ,
কবিতার ডায়েরি আর চশমাতে হাত যা কুহুর,
চশমা ছাড়া তো দেখতে পায়না কুশ 
তাহলে কি .......!!!!! 
জোৎস্নাস্নাত চিঠিগুলোয়ইতি কু   
শঙ্খধ্বনিতে স্বাধীন আগামীর শুভ সূচনা....


No comments:

Post a Comment