Thursday, 4 June 2020

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ০৪।০৬।২০২০

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ
আসুন সকলে ভালো থাকি। সুস্থ থাকি। সুস্থ রাখি। বদ্ধ অঙ্গিকার করি...

                                        হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

পাখি রঙের আকাশ  ---- ৮০

এক একসময় ঘর অন্ধকার হয়ে এলে নিজের চোখেই নিজের ঘরকে বড় অচেনা লাগে। আবার কখনও আলোতে নিজের ঘরকেই নিজে চিনতে পারি না। এক একসময় যে ঘরকে একমুহূর্তের জন্যেও চোখের আড়াল করতে পারি না, সেই ঘরও কোনো কোনো সকালে বা মেঘলা সন্ধেয় বড় অসহ্য বোধ হয়। যখন ডালপালা গজায় নি তখন ঘরের এই রঙবদল মনকে ভীষণ ক্লান্ত করে দিত। তারপর একদিন যখন গাছের শিকড় মাটির অনেক গভীরে গিয়ে পৌঁছালো তখন গ্রীষ্মের দুপুরে জানলা দিয়ে বাইরে তাকালাম। ঘরের আমি কতটুকু আজকের আমি? পথ চলতে চলতে আমি কি আমার অংশকে কোথাও ছড়িয়ে এসেছি? দিনের শেষে যে আমি ঘরে ফিরি, দিনের শুরুর আমির সঙ্গে সে কি পুরোপুরি লীন হয়ে যেতে পারে? পারে না। আর পারে না বলেই আমার যে আমি এইমুহূর্তে সারা ঘর জুড়ে ছড়িয়ে আছে সে কিন্তু আমার সম্পূর্ণ অংশ নয়। তাই আজকের আমার দেখা আমার অনুভব সম্পূর্ণ আমির সঙ্গে কোনো কোনো জায়গায় অমিল তো হবেই।



চৈতালী বসু 

অমোঘ সত্য

কাল মাহাত্ম্যের গুণে,
যুগের খেলাঘর থেকে, 
কালের প্রহারে বিসর্জনের পথে,
                  একদিন সবাই যাব চলে ।
মহাকাল এসে ধরবে হাত,
                   কখন তোমার বা পাশের জনের।
মৃত্যুপতি যমের সাজিয়ে রাখা সম্ভারে,
                   তাইতো নিত্যই হাতছানি মোদের। 
সেও তো এক, নিয়তিরই টানে ?

শিববচন শুনে ফিরি, সকাল হতে সন্ধ্যে,
             আত্মা আমি অমর অজর অবিনাশী                                                                
চিরতরের।
জন্ম হ'তে মৃত্যু আর মৃত্যুর পরেই জন্ম ,
                    পাকচক্র কাটিয়ে আসি সত্য থেকে 
                                                               কলিতে।
সম্পর্কের বাঁধন এক জনমেই না কাটে ।
                    লৌকিক হয়ে রইনা কেউই জনম 
                                                        জনম এসে।
নতুন নামে নতুন রূপে ঘুরে ফিরব এ, ভূ- মন্ডলে।

কখনও কি চিনবে না কভু ,
                      আত্মার অমোঘ টানে ?
কেউ তো ছিলাম আগে ,
                       বুঝবে না কি অনুভবেও?
পিপাসার্ত মন যদি হঠাৎ খুঁজে ফেরে ,
                       ধরা দিও গো অনামি হয়ে মনের 
                                                            অগোচরে। 

প্রত্যাশার পাত্র 

প্রত্যাশার পাত্রটা আর কেন বেড়াই শুধু বয়ে?
জানি , সময় হয়েছে তার অনেক আগেই। 
পারিনি ছাড়তে শুধু অভ্যাসের বশে। 
কম তো হল না নয় নয় করে ?
দীর্ঘ বরষ আঁকড়ে রয়েছি ধরে ।
চাতক হয়ে শুধু চেয়েই গিয়েছি ।
মেলেনি কখন এক টুকরো কিছু।
না দেওয়ার দোষ আমি কখনোই, 
পারবো না দিতে তোমাকে।
ও পাত্র খানিও যে মহাশূন্য,
ক্ষণিকের তরেও, চকিত নয়ন পড়েনি তাতে।
সে আমারই অজ্ঞানতার পরিচয়ে ।
জীবনাহূতির ব্রত নিয়ে জন্ম যাদের,
জীয়ন্তের দায় নেবে কারা তাদের ?
ঈশ্বর ? সেও তো বলে শুধু যাও দিয়ে। 
চেয়ো না গো তুমি কণা মাত্র তারে।
ফিরে দেখো নিজ পানের গহীন স্তরে।
যা চাইছ অন্যেরে ?
নিজ গূণে ভরপুর রয়েছো তাতে।
দিব্য গূণের আধার খোঁজ,  নাহি মেলে।
স্মৃতির অন্তরালে তা চাপা পড়ে থাকে।।

হারজিত

হারজিতের খেলা খেলি 
                   সর্বদা তোমাতে আমাতে। 
সন্ধ্যেটা আমার হয় 
                   সকাল তোমার হলে।
কে যে ঠিক আর 
                   কে যে বেঠিক?
এই নিয়েই মেতে থাকি 
                    বাকি সব ফুঃ। 
যুক্তির বেড়াজাল দিয়ে,
                      ইমারত গড়ি, 
উদাহরণের পাহাড় ডিঙ্গোই, 
                         স্মরণে শাস্ত্রর ।
সব পথো শেষে যখন ,
                      এক পথে ঠেকি গিয়ে, 
দেখি তুমিও ঠিক ,
                       আমিও ঠিক ,
নিজ যাত্রা পথে ।।

রূপসী শহর

বিস্ময় মুগ্ধতা জড়ানো,
রাশি রাশি ঝড়া শিমুলে, 
ইতস্ততঃ ছড়িয়ে থাকা ঢাকা-
রাঙা পথ খানি ,
থোকবন্দি পলাশের, 
বিস্তৃত ডালপালার তলায়, 
শান্ত নিবিড় ঘুমে মগ্ন হয়ে থাকা 
শহরখানি মোর কল্যাণী।
অপরূপ রূপে বাহারী রঙে ,
চির সজ্জিত চির নবীন। 
চওড়া ধূসর রাস্তা কিনারে 
দেবদারুর সমারোহ যেন এক 
ধ্যানস্থ ঋষি। 
বাঁধাহীন চলা ছেদহীন দৃষ্টি
যেন এক মায়াবী অনুভূতি। 
হঠাৎ দৃষ্টিপাতে ভ্রম হয়, 
স্বর্গের কোনো দেবলোক বলিয়া। ।

মানবিকতা

এক বুড়ি দোকানি , 

সকাল সকাল তার দোকানের 
পসার সাজিয়ে বসল হাটের এক কোণে। 
রঙ বে-রঙের ঝুড়ি ভর্তি অভিনব সামগ্রীতে
ভরে উঠল অসংখ্য বিক্রেতার ঠেলাঠেলি আর ভিড়ে। 
কোনো ঝুড়িতে অহংকার তো কোনো ঝুড়িতে 
লোভ, আবার কোনো ঝুড়িতে হিংসা, ভয় ,ভালবাসা, মানবিকতা সহ নানা সামগ্রীতে।
কিছুক্ষণ যেতে না যেতেই বুড়ির বেশির ভাগ 
ঝুড়িই গেল খালি হয়ে। 
পড়ে রইল শুধু মানবিকতা কোণের এক ঝুড়িতে। 
হাটভর্তি একটা মানুষও এলোনা ঝুড়ি থেকে এক 
মুঠো মানবিকতা কিনতে।
হেনকালে ভাঙা হাটের শেষে এক দেব শিশু এল
বুড়ি দোকানির কাছে মানবিকতার টানে।
বুড়ি দোকানি ঠিক করে নেয় মনে ,
এক পয়সাই রাখি না কেন মানবিকতার জন্যে?
ঝুড়ি সমেত দিই তবে দেব শিশুর কাঁধে। 
দেব শিশুটি কাছে আসি ব্যাকুল ও দু-চোখ খানি
মানবিকতার ঝুড়িখানি আগলে বুড়ি দোকানি। 
দেব শিশুকে দেখে বলে তুমিই সঠিক জানি,
মানবিকতার ঝুড়িখানি তাই ,দিলুম তোমায় আমি।
পয়সা আমার লাগবে না আর ,
কি এমন এ আর দামি ?
সকাল থেকে বসে বসে ক্লান্ত হয়ে খানিক,
বিকোয় না আর কিছুতেই আজ,
মূল্য নাই তার জানি।।

                  

No comments:

Post a Comment