মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ
আসুন সকলে ভালো থাকি। সুস্থ থাকি। সুস্থ রাখি। বদ্ধ অঙ্গিকার করি...
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
আসুন সকলে ভালো থাকি। সুস্থ থাকি। সুস্থ রাখি। বদ্ধ অঙ্গিকার করি...
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
পাখি রঙের আকাশ ------ ৮৯
যুদ্ধের পাশ দিয়ে যে নদী বয়ে গেছে অনেক দিন তার সঙ্গে আমার দেখা হয় নি। তাকে শেষ দেখেছিলাম গ্রামের হাটবারে। আনাজের দোকানের সামনে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়েছিল সে। শুকনো ব্যাগের মধ্যে কোঁচকানো আলু পটল দেখে সে আমার হাত চেপে ধরেছিল। এত ঠাণ্ডা শরীর আমি জীবনে কখনও ছুঁই নি। নদী আমাকে মাটির কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল। আমি তাকে আমার ভাতের হাঁড়ি দেখিয়েছিলাম। তার স্থির চোখ দেখে পড়ে নিয়েছিলাম প্রকৃত লড়াইয়ের সংজ্ঞা। জলের হাত ধরেই শিখেছিলাম, মাটির গভীর প্রদেশে যে সবুজ থাকে তার দেখা পেলেই ধীর পায়ে দিগন্ত পর্যন্ত হেঁটে যাওয়া যায়।
অভিজিৎ পালচৌধুরী
ঘুঙুর জন্ম ..
প্রকৃত প্রস্তাবে আমি হয়তো
ঘুঙুর ছড়ানো রাত্রিজল
ভোরের বাতাস হয়ে
ইথারে ভাসি
ভেসে চলি, আঁকি নিজস্ব মুখচ্ছবি
ছিঁড়ে ফেলি
অবয়ব দ্রাঘিমা
আবার ফিরে আসি মুখে
এভাবে সীমানা ছাড়ালে
মৃত্যু আমার হাত ধরে
নিয়ে যায়
রোজ
অন্য জন্মের বৃত্তে
আমি জন্মাই প্রতিটি রাতে
রাত্রিজল ছড়ানো
ঘুঙুরে..
বিসর্জন
কিছু বেদনাকে আমি প্রশ্রয় দিই রোজ
বলি - আমাকে কুরে কুরে খাও
তোমাদের জঠর উৎসবে
আমাকে ঝাঁঝরা করে দাও
শুধু ডালপালার আড়ালে
তোমাদের উচ্ছিষ্ট হয়ে
একমুঠো চেতনার রোদ যেন পড়ে থাকে
বলি - আরো পোড়াও আমাকে
দাহ করো এই নদীতীরে
আমি, আমার ছাই, মুঠো চেতনা
বিসর্জিত হই
এই আনন্দ পারাবারে ..
কাটাকুটি খেলা
কিছু একটা লিখে আবার কেটে দেওয়া
এ জগতে আমার কোন ধারদেনা নেই
ভাঙনের দেওয়ালে লিখে রাখি
সভ্যতার সংকট, ঘর বদলের ইতিহাস
বহুরূপী সেজে নিজেকে লিখেছি
কেটেছি বারবার
তবু ভিতরের আমি আয়নায়
মুখ দেখেনি আজও
পাতা ওল্টানো পাতার ন'টি খোপেই
বসিয়েছি হয় শূন্য নয় কাটাচিহ্ন
এভাবে যা আহরিত হয়
মিলের অক্ষরেখায়
তা এই মাধুকরীর খুদকুড়ো
নয় খোপে খেলা শেষে
পড়ে থাকে শুধু
একমুঠো সময়ের ম্লান আলো ..
হানিমুন..
তারপর সে এক মাংসের ভোর
নখের নিচে নীল অন্ধকার
খুবলে খাওয়া শরীর থেকে
রক্তের তঞ্চকতা চুইয়ে পরছে
শঙ্খলাগা তিস্তা রঙ্গিত শরীরে
মাখছে জলের প্রসন্ন নির্লিপ্তি
টুরিস্ট বাস থেকে এখনই নামবে
একরাশ হলিডে উচ্ছলতা
মধুচন্দ্রিমা শেষে নিয়ে যাবে
নদীর শীৎকার , আর
নীল অন্ধকারের পালক
ড্রয়িংরুমে ঝোলানো হবে
ফটোজেনিক সেইসব
হলিডে-ফান, পালকের স্যুভেনির
সময়ের ধুলো জমবে,
ধুলোর নিচে শুয়ে থাকবে
ফেড-আউট মাংসের ভোর,
পালকের চাপাকান্না ।
যাপন নিশ্বাস
তোমার ব্রা-এর হুক্ খুলতেই
যে রমণীয় সন্ধ্যা
আমার করতল স্পর্শ করল
আর নদীর বুকে সাইরেনের কান্না ছড়িয়ে
শেষ লঞ্চটি ছেড়ে গেল ফেরিঘাট
তাকে আমি দিতে পারিনি
কোন নিশ্চিত আশ্বাস -
আশ্রয় ও যাপনের ।
অথচ তোমার দুচোখে যে অনাবিল আলোর নদী
তার তল খুঁজে চলি আমি
আর ঠিক তখনই, এক দূরাগত লাইট হাউসের
সার্চলাইট আমাকে তুলে আনে
এই নিষ্প্রেম স্বীকৃত নিয়তির উপকন্ঠে
জোৎস্না ভরা ব্লাউজ থেকে
উপচে পড়ে অলীক নক্ষত্রের রাত
পৃথিবী নদী হয়ে গেলে
ডানা ভাঙা পাখি থিরথির কেঁপে ওঠে -
কি চাও তুমি বলো
নাভিমূলে খর জিহ্বাস্পর্শ
না জঙ্ঘার উপত্যকায়
আত্মবিস্মরণ ?
সব দেব আমি,
জোৎস্নাময়ী
যাপন - নিশ্বাস !
সুজিত রেজ
গ্রহণ
বেশ কিছুদিন ধরে লক্ষ করছি , হা করলেও দাঁত দেখা যাচ্ছে না আবার বিশ্বরূপ দর্শনও হচ্ছে না।
পায়ের ছাপ পড়ছে না রাঙা পথের ধুলোয়। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও প্রশ্বাস আটকে থাকছে ফুসফুসে। চিরুনির দাঁড় পটপট করে ভেঙে যাচ্ছে কেশবিন্যাসে।
কথা বলার সময় জিভ ঠেকছে না উচ্চারণ স্থানে। মগজ বলে কিছু আছে বোধ হচ্ছে না একেবারেই। চোখের জলে ভাসছে তার্পিন তেল।
গির্জার ঘণ্টাধ্বনি শুনে মনে হচ্ছে , হুটার বাজিয়ে মন্ত্রী এসে ঢুকে পড়ছে কর্ণকুহরে।
এইসব নেতির মধ্যে সূর্যগ্রহণ দেখতে গিয়ে , তোমায় দেখে ফেললাম , এইটুকুই যা প্রাপ্তি।
এখন বুঝতে পারছি , রবীন্দ্রনাথ কেন লিখেছিলেন , গ্রহণ করেছ যত ঋণী তত করেছ আমায়।
No comments:
Post a Comment