Friday, 19 June 2020

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ১৯।০৬।২০২০

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা, ২য় বর্ষ
আসুন সকলে ভালো থাকি। সুস্থ থাকি। সুস্থ রাখি। বদ্ধ অঙ্গিকার করি...

                 হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

পাখি রঙের আকাশ  ------  ৮৮

পাতার জল ভেঙে গেলে সূর্য অনেকখানি ওপরে উঠে যায়। তখন জানলা দিয়ে সূর্য। দরজা দিয়ে সূর্য। চোখ খুললেই সূর্য। যখন তখন সূর্য। পাতার সারা শরীর জুড়ে তখন সূর্য। জল পেতে রেখেছিল পাতা। সারা রাত ধরে। একটু একটু করে সময় গুণছিল কখন সে আসে। এখন সূর্য গোটা পাতায় বসে। নিজের খুশি মতো রঙ বোলায় পাতার ঘরে। আজ সব রঙই পাতার পছন্দের। আসলে বিশ্বাস জমতে জমতে এখন একটা পূর্ণ অবয়ব। দুজন দুজনকে এত গভীরভাবে চেনা জানা যে দুজনেই আজ পায়ে পায়ে মেঠোপথে। এ যেন এক যৌথ নির্মাণ।

                               জয়ন্ত মুখোপাধ্যায়

শীতের ডায়েরি

কবিতা শীতের মত হলে গরম পোশাক দরকারি
বিরহ বৃষ্টি ভেজা হলে আমিও কান্না হতে পারি।

শরীরে ফুলের রেণু পেলে মননে পাপড়ি জমকালো
কবিতা মাঘের রাতে এলে লেপেতে আদর রাখা ভালো।

উদাসী বাতাস আনমনে গভীরে রোপণ করে ব্যথা
হিমেল রাত্রি নেমে এলে কবিতা শোনায় রূপকথা।

আকাশে স্বপ্ন করে খেলা, জোছনা নিবিড় কোনো চোখে
হৃদয়ে গ্রহণ লাগে যদি আমিও খুঁজব জানি তোকে।


         সেই সন্ধ্যা

অচিনপুরে পা বাড়িয়েই ছিলাম
তুমি এলে, উপহার দিলে এক
বিশুদ্ধ সন্ধ্যা। 
সন্ধ্যা ছিল নিবিড় বড়
সুখ মিশে গেল যেমন মেশে
বাতাসে ফাগুন।

সেই সন্ধ্যা রাখি যতনে।
দিনের তাপে সন্ধ্যা গলে,
দুপুরের নির্জনতা তাকে
করে তোলে আবেগঘন।
গোধূলি রাঙায় আমার
আপন সন্ধ্যা,
রাতের তারায় তারায়,
সেই কী সন্ধ্যাতারা!

সেই সন্ধ্যা থাকুক
আমার চোখে, বুকে
আর ঠোঁটে।

একটা চুমো খাবো বলে।

     
       ব্যথার সাগর

             হেথা
         কিছু ব্যথা
     সাগরে যায় ভেসে
কিছু ঢেউয়ে ফিরে আসে
     কিছু নোনতা জলে
         কাঁদে আর
              হাসে


              ঘুম

বিশ্বাস থেকে অবিশ্বাসের দিকে
প্রেম থেকে অপ্রেমের দিকে
ঘুম থেকে নির্ঘুমের দিকে
ছুটে চলি অক্লেশে!

যদি পরজন্ম থাকে
তবে ঘুম আসুক....
অনন্ত।
আমায় ডেকো না।


আপেক্ষিকতাবাদ

হত্যা করেছ কত চিরহরিৎ কাব্য
ছিঁড়ে নিয়েছ ভ্রণ অবিশ্বাস্য আত্মবিশ্বাসে
শুধু নিজের ই স্বার্থে।
কেঁদেছে প্রহর, আলো ছিনিয়ে
দান করেছ অমানিশা 
ক্ষতি কথা টা বড় ক্ষুদ্র হয়ে পড়ে আছে।

স্থির- চলমান এর মত ভালো- মন্দ, 
ন্যায়- অন্যায়, লাভ- ক্ষতি সব ই
নিজের স্বার্থে হয়েছে আপেক্ষিক।
নতুন জন্ম নিয়েছে আপেক্ষিকতাবাদ।

মুচকি হাসেন আইনস্টাইন।

                              শুভাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়


উপহার

'তা ধরুন এইট্টি থ্রি কি ফোর হবে। আমার বন্ধুর এক জামাইবাবু নেভিতে কাজ করার সুবাদে জাপান থেকে ওটা এনে দিয়েছিলেন। তখন এ জিনিস এদেশে যতটা দুষ্প্রাপ্য ছিল, আজ তো বিস্মৃতপ্রায় অতীত।'
' এমন অতীতকেই যে ধরে রাখতে চাই। দয়া করে ফেলে দেবেন না..।'
অণুকুলের কথার উত্তরে ভারী উৎসাহের সঙ্গে বললেন প্রতিবেশী কমল দা।
ভদ্রলোকের এই এক শখ! যত পুরনো, আদ্দিকালের জিনিস কোথা থেকে সংগ্রহ করে বাড়িতে স্বযত্নে সাজিয়ে রেখে দেন। একটা ছোটো মিউজিয়াম যেন ঘরখানা। সেদিন গিয়েছিল অনুকুল দেখতে।
অচল হয়ে যাওয়া,ঘরের বাঙ্কে পড়ে থাকা বহু স্মৃতিবিজরিত টেপ রেকর্ডারটা 
আর একটু হলে হয়তো বেচেই দিত কিলো দরে। শেষমেশ কমল দাই নিয়ে চলে গেলেন। সাথে খান তিনেক ফিতে জড়ানো ব্ল্যাঙ্ক ক্যাসেট অবশিষ্ট ছিল। তখনকার কেনা। সেগুলোও দিয়ে দিল।
দিন তিনেক বাদে কমল দা এলেন আবার, অনুকূলের বাড়ি। সাথে একগাল হাসি।' মশাই দিয়েছেন বটে একটা অ্যাসেট! গ্রামোফোন কোম্পানির নুটু মুখুজ্জে আমার বাল্যবন্ধু। সেদিন এয়েচিল আমার বাড়ি। জিনিস দেখে সে কি তারিফ! উঁহু, আপনাকেও বঞ্চিত করবো না। একটা উপহার আছে।'
ভদ্রলোক মুখে কিছু না বলে ব্যাগ থেকে তার ফিট করা একটা কি মেশিন বের করলেন।
'বুঝলেন না তো? এ হলো ক্যাসেট ডিজিটাইজ করার যন্তর। আপনার  ঐ বাকি দুটো ব্ল্যাঙ্ক ক্যাসেট কিছু আর করা গেল না। ফিতে জড়িয়ে অনেক আগেই পঞ্চত্ত প্রাপ্তি ঘটে গিয়েছে। যেটা পেরেছি সেটা আমি আজ আপনার জন্যেই..।'
মেশিনে ক্যাসেট সেট করা হলো। ভেসে আসছে আওয়াজ। বহুযুগ আগে হারিয়ে যাওয়া বাবা মৃগাঙ্কশেখরের স্বকন্ঠে আবৃত্তি....  কিছুটা করে গাওয়া রবীন্দ্রনাথের গানের কলি...। 
সুদূর সোনালী দিগন্তরেখার ওপাড়ে দাঁড়িয়ে হাতছানি দিয়ে ডাকছে কে যেন! অশ্রুবাষ্পের মতো জমে থাকা থাকা রুদ্ধ আবেগকে সংযত করতে পারে না অনুকুল। 
জীবন সায়াহ্নে দাঁড়িয়ে ফিরে পাওয়া দুর্মূল্য উপহারখানা হারাতে চায় না সে কিছুতেই..।



No comments:

Post a Comment