Wednesday, 3 June 2020

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ০৩।০৬।২০২০

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ
আসুন সকলে ভালো থাকি। সুস্থ থাকি। সুস্থ রাখি। বদ্ধ অঙ্গিকার করি...

   হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

পাখি রঙের আকাশ  --- ৭৯

"আমার সকল নিয়ে বসে আছি সর্বনাশের আশায়" শুনলেই মাথাটা অনেকখানি নিচু হয়ে যায়। আমার মধ্যে থেকে একটা নদী বেরিয়ে আসে। কতদিন এ গল্প তোমাকে করেছি। তুমি সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠেছ সে নদীতে তুমি স্নান করবে। আমি বলেছি, করতেই পারো কিন্তু নদী তোমার পরীক্ষা নেবে। নদীর জন্মমাত্রেই মনে হয় একটা নয়, আরও অসংখ্য নদী পথ চলার মধ্যে দিয়ে বেরিয়ে আসবে। এতদিন নিজের মধ্যে যে ইমারত গড়েছি তার একটা ইঁটও শরীরে নেই। আর তখনই মনে হয় তোমার জন্যে অনেকটা জায়গা ছেড়ে দিই। বাকিটুকুও আমার থাকবে না। সারাটা শরীর জুড়ে লেখা থাকবে শুধু তোমার নাম। আর সেই নাম পাঠের মধ্যে দিয়েই সম্পন্ন হবে আমার চূড়ান্ত ভাঙনপর্ব।

                                       সত্যজিৎ রজক     

ছায়া বিবর্তন 
                          
আলোর মানে তো শুধু আলোয় , অন্ধকারের মানে শুধু অন্ধকার নয়। অন্ধকারের অনেক মানে হয়,অনেক প্রকার হয়।
যেমন চর্যাপদের অন্ধকার লুকিয়ে থাকে প্রাচীন হরিণীর চোখে, যেমন পিথাগোরাসের উপপাদ্যে ভেঙ্গে পড়ে যথারীতি প্রাগৈতিহাসিক যুগ।
আবার সোজা কথায় বলতে গেলে, যেরকম ভাবে প্রেমিক বা প্রেমিকা হার্টফিক্সিং কান্ডে জড়িয়ে পড়ে গলির মোড়ে। আলোর থেকে অন্ধকারের পার্থক্য তো এরকমই। 

আজ সারা শরীরে দুরন্ত মেঘের ছায়া, পরিযায়ী পাখিদের পালকের গন্ধ আষ্ঠেপৃষ্ঠে। সমুদ্রের যত শব্দে সব এলোমেলো। তবু যেন নত হওয়ার নয় চাঁদ বণিকের মায়া।
সম্পর্ক গুলিকে সমাধি করে আমরা চাঁদের যুগ বানাতে চাইলেও কয়েক লক্ষ আলোকবর্ষ অন্ধকার পেরিয়ে যেতে হয় ! কয়েক লক্ষ মৃত্যু পেরিয়ে যেতে হয় !
আমরা জানি প্রতিবেশিনীর জীবনশৈলী সেই অন্ধকার হতে পারে না সেই মৃত্যু হতে পারে না। কোনো হিংস্র জন্তুর চোখ হতে পারে সেই অন্ধকার ! যার চোখ পৃথিবী পার হয়ে যাওয়ার মতো বরাবর...


ফিরে যাওয়া অভিমান গুলি
    
শেষ রাতের অভিমান গুলি ফিরে ফিরে গেছে বার বার, মৃত জ্যোৎস্নার গায়ে আদিম হাওয়ার জীবাশ্ম
লেগে আছে অনবরত শরীরী অভিধান ঘিরে।
জানি না,  আমি ঈশ্বরের মানে জানি না , সেদিন ঈশ্বর ভেবে যাকে আমার লিঙ্গ ছুঁয়ে শুধু পরিচয়
জানতে দিয়েছিলাম সে আমার সমুদ্রমন্থনের মানে জেনেছিল...
জীবনের সমস্ত অভিঘাত ঘিরে সমাধানের শেষ গল্পে একটা গাছ হয়ে ওঠে একটা পৃথিবী হয়ে ওঠে,
আমরা ঈশ্বর বলতে তো তাই বুঝি...


একটা নদী বয়ে যেতে যেতে প্রতি মুহূর্তে কিছু না কিছু গল্প বলে যায় । সেই গল্প কবিতা হয়ে উঠলে
তার কাছে নিঃশব্দে চুপ করে বসে থাকতে ইচ্ছে হয়। মনে হয় প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে
উঠছি !
কেননা একজন নারীই তো বোঝে পথ চলার গল্প, পথ হারিয়ে যাওয়ার গল্প।

আর এরকম ভাবেই এক সময় প্রসব বেদনাও ভুলে যেতে হয় ,
মাতৃত্বহীন হয়ে পড়তে হয় বিস্ময়ের কালশিটে দাগে...

পারমিতা দে (দাস)

ঝড়ের প্রকোপ


আয়ুরেখা ধরে মুছে গেছে সহস্র তারা।
 মাথার ওপর ভেঙে পড়া ছাদ,অগুনতি পাখির খসে গেছে ডানা।

ধানক্ষেতে পড়ে আছে হতদরিদ্র চাষীদের লাশ।
  সর্বস্বান্ত মানুষের চোখে মৃত্যু নিছক পরিহাস।

থেমে গেছে ঝড়,বিপন্ন শহর।
 আশ্রয়হীন মানুষ খুঁড়ছে নিজেদের কবর।


                                                                    তীর্থঙ্কর সুমিত

রজনীগন্ধার গল্প

পথের সাথে সাথে 
যে পথ মিশেছে বহুদিন রাস্তায়
সেই রাস্তার বাঁকে
একটা বটগাছ দাঁড়িয়ে আছে
হাত - পা ছড়িয়ে
প্রতিনিয়ত তার তলায় এসে জমায়েত হই
বটগাছের গা দিয়ে যে ঝুরিগুলো নেমে গেছে
তাতে লিখে রাখি
পাওয়ার চাহিদা
না পাওয়ার আর্তনাদ
আর ক্ষণিকের বদলে যাওয়া কত হাত
চুপ করে শোনে
আর যতদূর বিস্তারিত হয়
হাত পা আরো প্রসার করে দেয়
আমি  দাঁড়িয়ে থাকি তার নিচে
মনে হয় কত যুগযুগ ধরে তার সাথে পরিচয় আমার
এভাবেই কত স্মৃতি তাকে অর্পণ করি

আর ভালোবাসার হাতে লেখা হয় রজনীগন্ধার গল্প।

আজকে আমরা

মেঘে ঢাকা সেই আকাশটার কথা
আজকে আবার মনে পরে
অবশ্য আজকে চড়া রোদ
তবুও কোথায় যেনো একটা বিষাদ
লুকিয়ে আছে
হিসেবের খেলায় আজ 
সবাই গোলকিপার
তবুও কেউ বল সামলাতে পারছিনা
গোল গোল গোল
আজ আর কোনো উচ্ছ্বাস নেই
শুধুই ঢেউ 
হেলে দুলে

আয় ...

সবাই ঘর দখল করছি।


এগিয়ে যাচ্ছি

ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছি
এক এক করে
বিন্দুর ঘর দখল করতে
কত ঘটা মোমবাতি জ্বলছে
বাজি ফাটছে
এক দুইয়ের হিসেব ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে
গ্রাফের চিহ্নে
অংকের হিসেব মেলানো দায়
তবুও খাতা বই
ভুলের তর্জমা
নীতি কথায় বিশ্বাসী মন
একপা দুপা 
অপেক্ষা  ...

কাঁটা ঝরা গাছে গোলাপের সুবাস।

অজানা পথ

স্বর্গের পথ 
যেদিকটা ঘুরবে সেদিকটাই
তফাৎ শুধু চোখের
মাটি থেকে উঠে আসা - 'বেলা '
আমায় স্বর্গের গল্প শোনায়
মাথার ওপর একটা অদ্ভুত ছাতা ঝুলছে
শরীর লুকোনোর খেলা আজীবন
কে কাকে ছুঁলো
স্পর্শের দুনিয়ায় কেউ হিসেব রাখেনা
তবুও 
কিনু গয়লার মেয়ে 
লুকিয়ে, জুতো জোড়া হাতে
 নিয়ে বাড়ি ফিরছে পা টিপে টিপে

বাবা একডজন পেন কিলার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

হিসেব জানেনা --
কতগুলো খেলে যন্ত্রণা মিটবে ।


নদীকান্না

একদিন চলে যায় আরো একদিন আসে
দুপুরের নদীগুলো স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে
বটগাছ,ঘর বাড়ি নিশ্চুপ
কত কথা পাখিদের 
গাছ,নদী,বাড়ি
আশ্চর্য আমরা কেউ বুঝিনা
দুপুরের রোদ যে সরু পথটায় পরে
ওই পথ ধরে আমি এগিয়ে আসি
যে বটের ঝুড়িগুলো তার শেখরকে ধরতে চায়
সেই পথ বেয়ে নেমে আসে কত পিপরে
তারাও কিছু বলতে চায়

কান পাতো শুনতে পাবে 
প্রতিদিনের নদীকান্না।




No comments:

Post a Comment