Sunday 7 June 2020

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ০৭।০৬।২০২০

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ 
আসুন সকলে ভালো থাকি। সুস্থ থাকি। সুস্থ রাখি। বদ্ধ অঙ্গিকার করি...



হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

পাখি রঙের আকাশ  ----  ৮১

এখানকার কাউকেই আমি চিনি না। এখানকার সবাই কেমন হতে পারে তা সম্পর্কেও আমার বিন্দুমাত্র কোনো ধারণা নেই। তবু আমি এখানে এসেছি। আমাকে কে এখানে পাঠিয়েছে, জিজ্ঞাসা করলে তারও যথাযথ কোনো উত্তর আমার কাছে নেই। আমার এখানে আসার উদ্দেশ্য কি তাও আমি ঠিক ঠাক জানি না। তবু আমি এখানে এসেছি। এত জায়গা থাকতে এখানেই কেন এলাম ------ আমি জানি না। তবু আমি এখানে এসেছি। আমি দেখছি। কতদূর পর্যন্ত দেখা যাবে আমি জানি না। চোখ চালিয়েছি। চোখের রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে মাঝে মাঝেই পর্দা আসে। কেউ কেউ পর্দা দিয়েও দেখে। আমি হোঁচট খাই। তারপর হঠাৎ করেই একদিন খিড়কি দরজা খুলে যায়। সদর দরজা কেন নয় ------ প্রশ্ন করার আগেই আমি নালি দিয়ে বেরিয়ে যাই। ফলাফল প্রকাশ হলে দেখি আমি দশে দশ।

                                     রঞ্জনা ভট্টাচার্য্য

বসার ঘর

সাজানো ফুলদানিতে শুকনো পাতায়
আগুন লাগা আদিম‌ গন্ধ

রান্নাঘর

জল, হাওয়া,আলো‌ দিয়ে
ম্যাজিকের পাকশালা,
যেখানে জানালার পাশে
একলা শরীর শুকাতে দিই,
শুকাতে দিই নীল যমুনা,লাল পদ্ম,
দুর্বাঘাসের ভেজা দেহে শিশুর বুলি,
চটকভাঙা ঘুম_
সব শুকানোর পর ‌রান্নাঘর মায়াদ্বীপ


বারান্দা

একটা ব্ল্যাকহোলের মধ্যে অন্য ব্ল্যাকহোল
ঢুকে গেলে‌  মাধ্যাকর্ষণ তরঙ্গে তৈরী হয়
আমার বারান্দা;
সে‌এই আছে,এই নেই;
থাকলেও বা কী?
না‌ থাকলেই বা‌ কী?
কিছু মনে না পড়া অস্বাভাবিক সময়
শুধু বারান্দার  তারে রোদ খায়

শোওয়ার ঘর

অনন্ত শয়ানে কমলালেবু রং এর
সূর্য্য,সে আমার ঘরে শুয়ে ঘুমায়
তাই পৃথিবীর কবচকুণ্ডল ক্রমশ
শক্তি হারাচ্ছে,
সূর্যেরও ঘুম পায়,এই সহজ‌ সত্যি টুকু
তোমাদের মেনে নিতে হবে।

পড়ার ঘর

শরীরের ভিতরের ময়লা_ক্বাথ
স্তূপাকার পড়ার টেবিলে,
তবু এঘরে ঢুকলে একমাত্র
নিজেকে চিনতে ‌পারি

                                  শুভাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়

উপহার

'তা ধরুন এইট্টি থ্রি কি ফোর হবে। আমার বন্ধুর এক জামাইবাবু নেভিতে কাজ করার সুবাদে জাপান থেকে ওটা এনে দিয়েছিলেন। তখন এ জিনিস এদেশে যতটা দুষ্প্রাপ্য ছিল, আজ তো বিস্মৃতপ্রায় অতীত।'
' এমন অতীতকেই যে ধরে রাখতে চাই। দয়া করে ফেলে দেবেন না..।'
অণুকুলের কথার উত্তরে ভারী উৎসাহের সঙ্গে বললেন প্রতিবেশী কমল দা।
ভদ্রলোকের এই এক শখ! যত পুরনো, আদ্দিকালের জিনিস কোথা থেকে সংগ্রহ করে বাড়িতে স্বযত্নে সাজিয়ে রেখে দেন। একটা ছোটো মিউজিয়াম যেন ঘরখানা। সেদিন গিয়েছিল অনুকুল দেখতে।
অচল হয়ে যাওয়া,ঘরের বাঙ্কে পড়ে থাকা বহু স্মৃতিবিজরিত টেপ রেকর্ডারটা 
আর একটু হলে হয়তো বেচেই দিত কিলো দরে। শেষমেশ কমল দাই নিয়ে চলে গেলেন। সাথে খান তিনেক ফিতে জড়ানো ব্ল্যাঙ্ক ক্যাসেট অবশিষ্ট ছিল। তখনকার কেনা। সেগুলোও দিয়ে দিল।
দিন তিনেক বাদে কমল দা এলেন আবার, অনুকূলের বাড়ি। সাথে একগাল হাসি।' মশাই দিয়েছেন বটে একটা অ্যাসেট! গ্রামোফোন কোম্পানির নুটু মুখুজ্জে আমার বাল্যবন্ধু। সেদিন এয়েচিল আমার বাড়ি। জিনিস দেখে সে কি তারিফ! উঁহু, আপনাকেও বঞ্চিত করবো না। একটা উপহার আছে।'
ভদ্রলোক মুখে কিছু না বলে ব্যাগ থেকে তার ফিট করা একটা কি মেশিন বের করলেন।
'বুঝলেন না তো? এ হলো ক্যাসেট ডিজিটাইজ করার যন্তর। আপনার  ঐ বাকি দুটো ব্ল্যাঙ্ক ক্যাসেট কিছু আর করা গেল না। ফিতে জড়িয়ে অনেক আগেই পঞ্চত্ত প্রাপ্তি ঘটে গিয়েছে। যেটা পেরেছি সেটা আমি আজ আপনার জন্যেই..।'
মেশিনে ক্যাসেট সেট করা হলো। ভেসে আসছে আওয়াজ। বহুযুগ আগে হারিয়ে যাওয়া বাবা মৃগাঙ্কশেখরের স্বকন্ঠে আবৃত্তি....  কিছুটা করে গাওয়া রবীন্দ্রনাথের গানের কলি...। 
সুদূর সোনালী দিগন্তরেখার ওপাড়ে দাঁড়িয়ে হাতছানি দিয়ে ডাকছে কে যেন! অশ্রুবাষ্পের মতো জমে থাকা থাকা রুদ্ধ আবেগকে সংযত করতে পারে না অনুকুল। 
জীবন সায়াহ্নে দাঁড়িয়ে ফিরে পাওয়া দুর্মূল্য উপহারখানা হারাতে চায় না সে কিছুতেই..।


No comments:

Post a Comment