Thursday 25 June 2020

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ২৫।০৬।২০২০

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ 
আসুন সকলে ভালো থাকি। সুস্থ থাকি। সুস্থ রাখি। বদ্ধ অঙ্গিকার করি...
                               হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
পাখি রঙের আকাশ  ------  ৯২

নদীর ওপর যে ক'টা বাড়িকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি তাদের প্রত্যেকটার রঙ সাদা। সব রঙ নদী তার বুকে সাজিয়ে রেখেছে। যেমন খুশি, যতদূর খুশি তাদের ছড়িয়ে দেওয়া যায়। একটা বাড়িরও কোনো জানলা দরজা নেই। বিনা প্রস্তুতিতেই ঢুকে পড়া যায়। লিখিত সংলাপের কোনো মহড়া নেই। সবকিছু দিনের আলোর মতো পরিস্কার। এখানের কথা সকলের কথা। সারা দিন রাত এখানে যখন খুশি, যেমন খুশি আঁকা যায়। এখানে কোনো আঙুল নেই। যে যেদিকে খুশি ছড়িয়ে আছে নিজের ঢঙে। খোলা আকাশের নিচে হাত পা টান টান করে জেগে আছে সবাই। এখানে কেউ থেমে নেই। নিজের মতো করে সবাই তাদের সবটুকু উজাড় করে দেয়। এখানে সকলের একটাই পরিচয় ------ নদী।

                                  রাণা চ্যাটার্জী
            অপেক্ষা                           

এক সমুদ্র জল হতে চাওয়ার  স্বপ্ন দেখিয়ে
                ফোঁটা ফোঁটা  এক বিন্দুতেই শেষ !
প্রখর রুদ্র দাপটে ফুটি ফাটা সম্পর্কের মানব জমিন,
তবু আহ্নিক গতির চাতক অপেক্ষায়,এই বুঝি
        ঝিম ঝিম বৃষ্টি স্নাত বালিকার নুপুর ধ্বনি !

নখে স্ফটিক ছাপ বার্তায় উড়ে যায় এক ঝাঁক সাদা বক, ভেসে আসে মেঠো বাঁশুরিয়া সুর !
গরুর গলায় মানতের সুমিষ্ট ঘন্টাধ্বনি ঘুমিয়ে পড়া
         আলপথ জাগিয়ে সাপ লুডো খেলতে বসায়।

নিঃসঙ্গ জাদুগর হয়ে আমার কৌতুহলি দৃষ্টি ,
এই বুঝি দর্শকাসনে অনন্ত অপেক্ষায় ,তোমার     
          আগমন এক ঘটি বিশুদ্ধ জল হয়ে।

এক ফালি চাঁদ
                              
পোড়া রুটি এক ফালি,চাঁদ ওই আকাশে,
ওরে ছেলে খাস নি কো,মুখ বড়ো ফ্যাকাসে!
পিঠে দেখি বোঝা ভারী , কাগজের বস্তা ,
হাড়ে হাড়ে বুঝেছিস জীবন  নয় সস্তা !

চাঁদ দেখে বড়ো হওয়া,ছোটো বড়ো সকলে,
চাঁদ মামা দেয় হামা ,টিপ ও দেয় কপালে ।
এক ফালি চাঁদ দেখে,শূন্যতা আসে ওই ,
জোছনার আলোতে চল খেলি ওরে সই ।

কবিদের মনে কতো ,লেখা ভাসে শত শত ,
চাঁদ পানা মুখ দেখে, খুশি হওয়া অবিরত ।
তবু দেখি খিদে পেলে,পোড়া রুটি চাঁদ টা ,
জীবন টা ক্ষতে ভরে,খাবি খায় প্রাণ টা !

চাঁদ দেখে আসে ঈদ, পূর্ণিমা পূজাও,
পঞ্জিকা চাঁদ দেখে ,রমজান রোজাও I
এই চাঁদ ভালোবাসি,তুমি,আমি,রোমিও,
চাঁদ মামা রাত জাগে,ভালো করে ঘুমিও।

চলো যাই
           
  বলো কে যাবে  ঘুরতে ?ট্রেনের জানলায়  বসে
 প্রকৃতির অফুরন্ত রূপ বৈচিত্রে পান কৌরি ডুব ...

সঙ্গ দিয়েছে  উদাস করা মেঘলা আকাশ ,
ঝির ঝির বৃষ্টি,
 আমার মেঘ বালিকাকে ,অপূর্ব মুগ্ধতায় করেছে প্রাণ সঞ্চার।

সাক্ষী কৃষ্ণচূড়া ডালি সাজিয়ে অদূরে ,অস্ফুটে  রাখালিয়া বাঁশি ,
হকারের কোলাহলে  মিলেমিশে একাকার ।

লূপ লাইন লোকাল,আজ  মাতাল যেনো,এমন ভাবুক যাত্রি পেয়ে...
দূরে আঁকা বাঁকা লাল মাটির হাতছানি ,
          সাঁওতাল রমণীরা,
 নিকানো কুঁড়ের সারিবদ্ধতা দেখে অজয় পার হওয়া ,
      ভরা সবুজ ক্ষেতের অমোঘ আকর্ষণ ।
রোজ দেখি তবু এক বুক আকাঙ্ক্ষা নিয়ে..
এ এক অদ্ভুত নেশাতুর রোজনামচায় পথ চলা।

                   প্রেম                  

তোমার ওই কাজল আঁখি ,ডুবিয়েছে আমায় সৈকতে !
নীরব হাতের স্পর্শ পেতে ,ততোই গেছি নৈকটে ।

ভাবুক মনে ভাটার টানে ,ভরেছে মন আশকারায় !
কারণ ছাড়া সামনে গেছি,মেতেছি হাসি মশকরায়।

তুমি ছিলে ফুলের শিশু ,তাই তো কিছুই বুঝতে না ,
আমিও যেতাম হৃদয় ঢেকে,থাকতে তুমি আনমোনা।

আজ কে যখন বছর ঘুরে ,আমিও থাকি অনেক দূরে !
ঘূর্ণাবর্তে ,এই আবর্তে,প্রেম আজ তোমায় পাগল করে!

ব্যস্ত থাকি ভীষণ কাজে ,আসতেও আজ পারি না যে!
কল্পনাতেই তোমায় দেখি ,মোর "পল্লবিত সূর্যমুখী "।

                                    অর্পিতা রায়

অঙ্কটাই গোঁজামিলের

ধিকি ধিকি আগুন জ্বলছে শহরের আনাচে কানাচে,
মনের আনাচে কানাচেও জ্বলছে কি?

সামনের মুখার্জীদের বাড়ির ঝুল-বারান্দাটা বড়ই সুন্দর।
টবে রাখা কি সব বিদেশী লতানো গাছ গুলো
নীচে নামার চেষ্টায় উপর থেকে পা বাড়িয়েছে।
বাড়িটার বড়ো বড়ো ঘরগুলোতে
ইদানীং নৈঃশব্দ্য বাসা বেঁধেছে গাঢ়ভাবে।
কিছুদিন আগেও বাড়িটাতে যেন স্নিগ্ধ দখিনা বাতাস বইত।

ওই বাড়ির মেয়ে রেখা আসতো আমার কাছে অঙ্ক কষতে,
আমার চোখে চোখ রেখে সে হাসতো,
আমায় ভালোবাসতো।
চলে যাবার শেষদিনে তার বড় বড় চোখদুটো দিয়ে
জল গড়াতে দেখেছিলাম,
বলেছিল " তোমার সমস্ত অঙ্কটাই গোঁজামিলে ভরা। "

আজ সকাল থেকে পাড়ার মোড়ে আগমনীর গান বাজচ্ছিলো।
একসময় সেটা থেমে গেল।
চোখ গেল টেবিলে রাখা খাতাটির দিকে,
চার পাতা হিসেব কষেও
শেষপর্যন্ত আর অঙ্কটা মেলাতেই পারলাম না।
কত হিসেব-নিকেশ করেও কি দিনের শেষে
জীবনের সব অঙ্কের সঠিক উত্তর মেলে?


রুচিশীলতার এতই অভাব বুঝি!

" চুড়িদার-ই তোকে পরতে হবে।
শাড়িতে কি কোনোদিনই দেখবো না তোকে?
ফাটা-ছেঁড়া জিন্স পরে কি আনন্দ পাস?
আর ওই ওই যে কাঁধ ছেঁড়া ড্রেসটা
কেন গায়ে দিয়ে রাস্তায় বেরোস বল্ তো?
রাস্তার নোংরা লোকগুলো তোর শরীরের ওপর
হালকা করে চোখ বুলিয়ে যায়।
রুচিশীলতার এতই অভাব তোর মধ্যে? "

আজ আমি শাড়ি পরেছি, চোখে মোটা দাগের কাজল, কপালে একটা লাল টিপ, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক।
অন্য একটা পুরুষ কন্ঠ ঝাঁঝিয়ে উঠলো-
" শর্টস না পরলেও অন্তত জিন্সটা পরতে পারতে?
সবসময় শাড়িতে কি আর ভালো লাগে?
বড্ড বেশি বেমানান হয়ে পড়ছো আজকাল।
রুচিশীলতার এতই অভাব তোমার মধ্যে? "


তোমায় ভালোবেসে

আমি না কি তোমার স্বপ্নে-জাগরণে বাসা জমিয়ে বসেছি?
নির্জন দুপুরে যখন চারদিক শূন্য হয়ে যায়
আমি না কি তখন তোমার চারপাশে
অবাধ্য চাপা কোলাহলের মতো ঘুরে বেড়াই।
আমার আলগা শাড়ির আঁচলটা তোমার মুখ ছুঁয়ে যায়,
তোমার ক্লান্ত চেতনাকে শিহরিত করে।

কৃষ্ণচূড়ার গাছটিতে যেদিন মরসুমের প্রথম ফুল এল
তুমি বলেছিলে-
" ওই সবটুকু রাঙ্গা ভালোবাসা আমি শুধু তোমায় দিলাম "
বিনিদ্র রাতের শেষ ভোরের মতো ছিল তোমার সেই উপহার!
তোমার ঠোঁটের কোণে সেদিন একটা অদ্ভুত হাসি দেখেছিলাম,
মেঘ কেটে গিয়ে চাঁদ ওঠার মতো সেই হাসি।
সেই হাসিটা আমাকে আচ্ছন্ন করে, আমাকে ভালোবাসে।
ঢেউ যেমন তার আগের ঢেউকে আলগোছে কাছে ধরে রাখতে চায়, 
তোমার আবেগটুকুকে আমি তেমনিভাবেই সন্তর্পণে
অভিমান দিয়ে বেঁধে রেখেছি।

তোমার জীবনের গলিপথে
যে অদম্য বৃষ্টিধারার স্রোত প্রতিনিয়ত বাঁধন ভাঙছে নির্দ্ধিধায়,
সেটা আমারই ভালোবাসার প্রতিধ্বনি মাত্র।

No comments:

Post a Comment