মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ
আসুন সকলে ভালো থাকি। সুস্থ থাকি। সুস্থ রাখি। বদ্ধ অঙ্গিকার করি...
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
আসুন সকলে ভালো থাকি। সুস্থ থাকি। সুস্থ রাখি। বদ্ধ অঙ্গিকার করি...
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
পাখি রঙের আকাশ ------ ৯১
একটা ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণের পর সবকিছু চুপ থাকে। চুপ হয়ে যায়, না চুপ করিয়ে দেওয়া হয় ----- কেউ জানে না। অনেকে গলা তুলতে চায় কিন্তু কতখানি গলা তোলা উচিত ঠিক বুঝে উঠতে পারে না। অনেকেই নিজেকে টুনটুনির ডাক মনে করে চেপে যায়। কারও কারও কাঁচা ঘুম ভেঙে যাওয়ায় হঠাৎ রেগে বাক্য হারিয়ে ফেলে। সে যাই হোক, দীর্ঘ সময় ধরে একটা চুপচাপ ভাব। কিন্তু কেউ কেউ জানলা খোলে, কেউ কেউ দরজার দুই পাল্লার মাঝখানে নিজেকে আটকে দেয়, কেউ কেউ গুমটির পাশ থেকে বেরিয়ে এসে ফাঁকা রাস্তা দেখে। কত কত মানুষ। কত কত রঙ। বিভিন্ন দৈর্ঘ্য প্রস্থের। বিভিন্ন উচ্চতার। কিন্তু এরা সবাই বিস্ফোরণের ------- ফেটে চৌচির হয়ে বেরিয়ে এলো।
প্রনব রুদ্র
পুনর্জন্ম
শব্দকে ছিঁড়ে যৌবনবর্তী বানাতে-
বাক্যবন্ধ থেকে উঠে এলো গর্ভবতী কবিতা!
কবিতা তুমি এত্তোবার জন্ম নাও
তোমার বিরক্ত লাগে না?
কবি এতোবার তুমি পিতা হও
তোমার আশ মেটে না!
কবিতা তোমার শুশ্রূষার প্রয়োজন!
কবি তোমার মুক্তির প্রয়োজন!
রৌদ্র ধুয়ে দেয় আদুল গা
শিশির বুকে নেই শতাব্দি আলাপন
প্রতিটি কষ্টে স্বপ্নবীজ বুনে ঘাস ফড়িং।
হাড় মাংসে মৃতজীবী প্রেম
বাসা বানাতে এলেই
রৌদ্র ধুয়ে দেয় বিগত আদুল গা!
মাটির জীবন মাটিতেই মিশে যায়
আকাশের সাথে ঘর বাড়ি বাঁধে না।
গমন
জীবনের দেরাজে
ভালোবাসার দিনগুলো
জমে জমে হলদেটে
ইঁদূর আরশোলা
রোজ যায় চেটে
নিত্যদিন বিসর্জনমুখী
যাচ্ছি হেঁটে
অপরিপূর্ণ অথবা ত্রুটিযুক্ত
অনন্ত অবসরে বসে
পুড়িয়ে দিচ্ছি দীর্ঘশ্বাস
হুস করে বাতাস
শুনিয়ে যাচ্ছে তোমার গল্প।
নীল পাহাড় লাল পাহাড়
কচি দুটি সবুজ পাতা
উড়িয়ে নিলো ত্রিভুজ হৃদয়।
উই ঢিবিটা পার করলেই
ক্যালকুলাসে পানসে ডেফিশেন্ট জীবন... ...
উফঃ বাআআব্বা কী কঠিন
প্রতিটি জীবনের অংক
ও
হৃদয় প্রেমের সমীকরণ!!!
#Deficient
ডুবে গেছে তারা
উড়ে গেল স্বপ্নের দেশ
বাঁশ বাগানের মাথায় নেই
কাব্যিক কোন আকাশ।
ঘোর অমাবস্যায়
বৃষ্টি বা বর্ষায়
গায়ে থিকথিকে ঘা নিয়ে
সময়ের কোল থেকে লাফিয়ে
হারিয়ে গেছে মূল্যবোধ
আর ওই দ্যাখো বর্তমান
রাস্তার মাঝে চিৎপাত শুয়ে
রক্ত বমি করছে বিবেক...
মানুষ কোথায়?
কো
থা
আ
আ
য়
মানুষ!
শুভাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়
অনুগল্প
উপহার
'তা ধরুন এইট্টি থ্রি কি ফোর হবে। আমার বন্ধুর এক জামাইবাবু নেভিতে কাজ করার সুবাদে জাপান থেকে ওটা এনে দিয়েছিলেন। তখন এ জিনিস এদেশে যতটা দুষ্প্রাপ্য ছিল, আজ তো বিস্মৃতপ্রায় অতীত।'
' এমন অতীতকেই যে ধরে রাখতে চাই। দয়া করে ফেলে দেবেন না..।'
অণুকুলের কথার উত্তরে ভারী উৎসাহের সঙ্গে বললেন প্রতিবেশী কমল দা।
ভদ্রলোকের এই এক শখ! যত পুরনো, আদ্দিকালের জিনিস কোথা থেকে সংগ্রহ করে বাড়িতে স্বযত্নে সাজিয়ে রেখে দেন। একটা ছোটো মিউজিয়াম যেন ঘরখানা। সেদিন গিয়েছিল অনুকুল দেখতে।
অচল হয়ে যাওয়া,ঘরের বাঙ্কে পড়ে থাকা বহু স্মৃতিবিজরিত টেপ রেকর্ডারটা
আর একটু হলে হয়তো বেচেই দিত কিলো দরে। শেষমেশ কমল দাই নিয়ে চলে গেলেন। সাথে খান তিনেক ফিতে জড়ানো ব্ল্যাঙ্ক ক্যাসেট অবশিষ্ট ছিল। তখনকার কেনা। সেগুলোও দিয়ে দিল।
দিন তিনেক বাদে কমল দা এলেন আবার, অনুকূলের বাড়ি। সাথে একগাল হাসি।' মশাই দিয়েছেন বটে একটা অ্যাসেট! গ্রামোফোন কোম্পানির নুটু মুখুজ্জে আমার বাল্যবন্ধু। সেদিন এয়েচিল আমার বাড়ি। জিনিস দেখে সে কি তারিফ! উঁহু, আপনাকেও বঞ্চিত করবো না। একটা উপহার আছে।'
ভদ্রলোক মুখে কিছু না বলে ব্যাগ থেকে তার ফিট করা একটা কি মেশিন বের করলেন।
'বুঝলেন না তো? এ হলো ক্যাসেট ডিজিটাইজ করার যন্তর। আপনার ঐ বাকি দুটো ব্ল্যাঙ্ক ক্যাসেট কিছু আর করা গেল না। ফিতে জড়িয়ে অনেক আগেই পঞ্চত্ত প্রাপ্তি ঘটে গিয়েছে। যেটা পেরেছি সেটা আমি আজ আপনার জন্যেই..।'
মেশিনে ক্যাসেট সেট করা হলো। ভেসে আসছে আওয়াজ। বহুযুগ আগে হারিয়ে যাওয়া বাবা মৃগাঙ্কশেখরের স্বকন্ঠে আবৃত্তি.... কিছুটা করে গাওয়া রবীন্দ্রনাথের গানের কলি...।
সুদূর সোনালী দিগন্তরেখার ওপাড়ে দাঁড়িয়ে হাতছানি দিয়ে ডাকছে কে যেন! অশ্রুবাষ্পের মতো জমে থাকা থাকা রুদ্ধ আবেগকে সংযত করতে পারে না অনুকুল।
জীবন সায়াহ্নে দাঁড়িয়ে ফিরে পাওয়া দুর্মূল্য উপহারখানা হারাতে চায় না সে কিছুতেই..।
No comments:
Post a Comment