Thursday, 30 April 2020

মন্দিরা ঘোষ

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ










মন্দিরা ঘোষ



অলৌকিক 

সাদা কালো পাতার ঘামে যে সব লুকোচুরির 
বয়ান থাকে তার নাম নিশিযাপন  হোক
রাতের হেডফোন বদলে দেয়
খোলা জানলার চরিত্র
একটা  আনফোল্ড পাতায় এক টুকরো
  নিঝুম আকাশ  কিংবা
 চাঁদের আলোয় যে সব নাবালক  কবিতার মিছিল 
হেঁটে যাচ্ছে নিঃশব্দ আগুন নিয়ে 
সেই  অচেনা অভিপ্রায় টুকে রাখবো বলে মধ্যরাতের নোটবুক খুলেছি
আর ঘোলাটে  ঈশ্বর এসে সরিয়ে দিচ্ছে চোখ
বোতাম আলগা করেও রুখতে পারিনি অসুখ
শুধু কষ বেয়ে নেমে যাচ্ছে
 অলৌকিক  ভোরের উপশম


পিছুটানের কবিতা

যখন দিনের গায়ে দীন হয়
 ছায়ার কারুকাজ
প্রাত্যহিকতায় ডুবে যায় রোদের ভবিষ্যৎ 
একটা  সাদা পাতা জুড়ে 
নেমে আসে বাঁচার করুণা
আর ঠিক  তখনই  কোন বিকেল
 স্বয়ং আলোর দিকে হেঁটে যেতে থাকে
কোনো তরিক খুলে দেয় তরি
 বোঝাপড়ার দুপুরগুলো হাত নাড়ে
জলের অভিধান থেকে টুকে রাখি
কান্নার বিপ্রতীপ কোণ
শোক আর স্রোতের  প্রবাহে
কিছু লবনাক্ত লিমেরিক আমাদের
 পিছুটানের কবিতা হয়ে যায়


আবিল

সংকোচ  আছে 
আছে চাওয়ার সারি 
মাটির গন্ধের মত 
মায়া পিছু পিছু

স্পর্শের সারণি ছুঁয়ে
 নিঃসারী স্রোত
চোখের ভেতরে নামে
 নরম সহজ

ঝুরো ঝুরো বৃষ্টির তাত 
তুমি আমি শুদ্ধ ফেনায় মাতি 
 দূরকে কাছে পেতে 
আবিল খাতা খুলে রাখি


হয়তো 

বিষণ্ণ  বাঁক বদলে কিছু অনুগত 
আগামীকাল  থাক
জোনাকিপোকার শর্ত মেনে
ধানখেতে নেমে যাবে চাঁদ 
নদী  নামের মদ আকন্ঠ ভরে নিয়ে
উদাস বাউলের অবেলার উজান

আমাদের আন্তরিক দীনতায় 
  'হয়তো'র  ছায়া মুছে দিলে
বেলফুল ফুটে উঠবে দ্রাঘিমা জুড়ে

 সবুজখামারের লগবুক থেকে 
 উড়ে যাবে সরলবর্গীয় হাসি

আমরা  রোদ চিরে 
ক্লোরোফিলের জবাব খুঁজে দেবো


দুপুর

এতসব যৌগিক ব্যথার ভেতরেও তুমি উঠে বসলে
 ভাঙা হারমোনিয়াম থেকে  সভ্যতার ঘুম ভেঙে যায়। 
ধুলোর অধরে জ্যান্ত হরিতকী বিকেল চেয়ে থাকে চুপচাপ।
আমার সহোদর রাস্তা আমাকে খুলে নেয় প্রতিদিন।
 গ্রীবার ওপারে ফুটন্ত আকাশে তোমাকে দেখি অথচ 
তোমাকে লেখা যায় না ঠিকমতো। 
কাগজ ফুটো হয়। কলমে রক্তারক্তি। চোখে ঝাপসা চাঁদের ঝুমুর। 
আমার সহোদর রাস্তা দুপায়ের চাহিদা চুরি করে।
 দুপুরের গ্রীবার পাশে তোমাকে ফুটে থাকতে দেখি আর
 আমি পৌঁছাবো বলে পড়ে নিই আলোকিত বসন্তের বিকেল।

Monday, 27 April 2020

হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ









হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়


অমিত পাল

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ










অমিত পাল



কবিতার মহড়া

একদিন সবাই কবিতা লিখবে,
দারিদ্রতার ঠুনকো রাজনীতি বা মাংসভূখ প্রেমিক নিয়ে।
রাতের অন্ধকারে পড়শি জানলায় গোটা দুই চোখ,
খুঁজবে মৃত্যুর ওপারের চাপানউতোর তর্জা।
একদিন সবাই কবিতা লিখবে,
বিধানসভা, লোকসভায় নগ্ন সন্ন্যাসীর অধিবেশনে,
সব উলঙ্গ প্রেমিক-ও।
একদিন সবাই কবিতা লিখবে,
দূষিত জলবায়ু, লালসা বাসনার স্বৈরাচারিতায়,
অতৃপ্ত মধ্যরাত ও যোনির তাজা রক্ত নিয়ে।
একদিন সবাই কবিতা লিখবে,
নারী লিখবে সব ধর্ষিত পুরুষ নিয়ে,
যারা নিজের ছায়া দেখে নিজেকে চেনে।
একদিন সবাই কবিতা লিখবে,
বিস্তর থুতু, লালা, পুঁজরক্ত নিয়ে,
বন্ধ কারখানার জঙ্গলে বসে।
একদিন সবাই কবিতা লিখবে,
মাকড়সার জাল, মৃত লণ্ঠন ও
মর্ত্যলোকের আত্মবদল বা নিজের জীবাশ্ম নিয়ে।

আগন্তুক 
         
আচমকা জেগে ওঠা আগ্নেয়গিরির মতো 
ধর্মও জেগে উঠবে বিভাজনের তর্জমায় !

নাগরিকত্ব আজ এক আত্মসঙ্কট, 
এ এক সুদূরপরাহত তবু ভারসাম্যে অবিচল !
এ কোনো ভ্রম নয়, এ এক বিবর্তন 
এক তীক্ষ্ণ নির্মোহ দৃষ্টিতে যেনো 
সংলাপহীন মুখাভিনয় !

আমিও চাই একটা বদল আসুক ধর্ম কুটিরে, 
ব্যর্থ হোক ছাঁচে ফেলা পরিশ্রম, 
নিবৃত্ত হোক গনশত্রুর বাদানুবাদ !

এক নতুন কাল আসবে এই পৃথিবীতে, 
এ নিম্নচাপ কাটবে, চুরমার হবে তাবৎসংসার, 
সমস্ত দেশ মহাদেশ দুমড়ে মুচড়ে লঙ্গরখানা !

চুপ করে আছো শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে, 
বক্তৃতায়, সেমিনারে, গনকবরে, বারুদ ও 
পোড়া মাংসের গন্ধে, নিপাত চিত্রকল্পে !

টিকটিকির কণ্ঠে ধিক্কার ---
                           জাহান্নামে যাও !
                           জাহান্নামে যাও !
                           জাহান্নামে যাও !

ক্রীতদাস 
              
আমার পাঁজরে লুকিয়ে আছে মৃত অরণ্যের দেহাবশেষ !

এ প্রতিক্ষার শেষ কোথায়? 
কিছু অলিখিত শর্তের পসরা নিয়ে 
ধূর্ত কপটতা হিংসা, পায়ে বেরী, বন্দিদশা !
ভয় নেই মৃত্যুতে আমার 
মৃত্যুকে অপব্যবহার করেছি বহুবার, 
মৃত্যুতে আমার হাজার পদচিহ্ন রয়ে গেছে, 
কেবল নিজেকে অজ্ঞাত করে দু-একটি বচনে অস্তিত্ব !
গভীর বিষাদ আজ আর বিশেষ ন্যূব্জ করে না, 
ভাঙা নিঃশ্বাস বইছি স্বযত্নে, 
কিছু বারুদও জমিয়ে রেখেছিলাম 
অন্তর্ঘাত উচাটন ডিঙাতে কাজে লাগবে !

আমার পাঁজরে লুকিয়ে আছে আত্মার আদিম শস্য !
এ প্রতিক্ষার শেষ কোথায়? 
আর কতকাল থাকবো প্রতিক্ষার ক্রীতদাস? 

বাসস্থান 
                
এ অন্ধদের বাসস্থান বৃথা বিস্ময়, 
কোনো কিছুতেই আপত্তি করিনা আর, 
আমার অস্তিত্বের ছাল বিক্রি করি প্রতি ভোরেই ;
মন্দির, মসজিদ, গির্জা সবই শব্দ ব্রহ্ম !
আমার মস্তিষ্কে, গর্ভে, পদচিহ্নে উন্মাদিনী অবচেতনা;
এই আমার অন্ধদের বাসস্থান !

ভিতরে দহন, সূর্যকে বলি 
পোড়াও আমার দস্যুতা, 
এ আমার আত্মসমর্পন নয় 
শতাব্দী পূর্বে ছেড়ে আসা ভিটেমাটির অনুনয় !

কতটা পথ পেরোলে মানুষ হওয়া যায়? 
কতটা পথ পেরোলে ফকির হাসে? 
কত কেল্লাফতে কত গোল্লাছুট কত খোলা জানালা, 
বন্য স্বভাবে হন্যে অভাবে বা 
কত অকাল বাদলে ধুয়ে গেছে !

একদিন সব ব্যবধান মুছে যাবে, 
সেদিন মানুষ খুজবে মানুষকে, 
ফুঁসবে আত্মবিস্মৃত পুরুষ, দংশিত অপয়া নারী, 
ভিনদেশী হওয়ায় ভাসবে এ অন্ধদের বাসস্থান !

Friday, 24 April 2020

হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ








হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়


শম্পা মনিমা

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ










শম্পা মনিমা

জমে থাকা ক্ষোভ

সন্ধ্যাবেলায় ছায়ার মতো কল্পনাগুলো আবছা হতে থাকে, বেদনা তনু পৃথিবীটা সাগর চোখে ঝাঁপ দেয় আজগুবি মাতাল হাওয়াতে।

সান্নিধ্যে কতটা সাগর ছিল– কতটা পরিমাণ সত‍্যি পদার্থ ছিল তা জানা নেই, তবে মনটা ছিল, মোহ-দূর্বলতা নয় ; পাখায় লেখা মনপাতায় নিজের মনটা তিল থেকে তাল হয়ে উঠতো একদল ভালোবাসায়।

তবুও বলা হয়নি... নিজের ইচ্ছে নিজের মধ্যেই ঠেলে রেখেছি, পিছুটান ছিলো,ছায়া ফেলা মুখে পুড়িয়েছি বুক,চেনা অনন্ত ডাকে - বলা হয়নি তাকে।

হোলিখেলার মাতামাতি সুরে সব কিছু বুঝিনি –
যা কিছু বুঝেছি সে শুধু অসুখ নয়,হৃদয়ের ভনিতা নয় ,সত্যি আর উত্তেজনা আশ্রয় ভেবে একখানা ভুল যদি হয়,তাহলে তুমি আঙুল তুলে লিখে যাও তাকে নিয়ে সাজাবো–

" আমার হৃদয় আমারি আছে
বেচি নি তা কারোর কাছে
ভাঙাচোরা হোক যা হোক তা হোক
আমার হৃদয় আমারি আছে "


তবু আমি রাজি

যখন তখন খুব বায়না করছিস
হঠাৎ করে সব পাখির মতো
আমাদের গল্পটা ডানায় জমা রাখতে চাইছিস
আমের বকুলের গন্ধে লাজুক সন্ধ্যা নাক ঘষছে
এখন তোর আকাশ রেশমিচোখে বন্ধ হচ্ছে বুকে, লজ্জা পেয়ে লাল রঙটা ঠোঁটে লাগিয়ে
এখন কিভাবে বেখাপ্পা অবুঝ গল্পটা জমা রাখবে
নাছোড় ড্রাগসে ঝিমিয়ে গায়ে এখন ডিগ্রি জ্বর
শ্বাসের গন্ধে লুকিয়ে রাখা আবেশ রাখা কঠিন হতাশার মৃত্যু কে গলায় আকন্দে জড়িয়ে থাকে
থাকবে না, জানা, কিন্তু কাহাতক এড়ানো যায়
আমি রাজি হই
ভালোবাসলে হয়তো রাজি হতে হয়।


সোঁদা স্বাদ

অশান্তির ঘষা বাক্সের থেকে বেরোয়নি বারুদকাঠি
রাজকুমার ছুঁয়ে যায় নি রাসলীলার শূণ্য চুমু, ফেলেনি খসখসে ঘর্ষণে আওয়াজ, উত্তেজনার ভীষণ ঘাম; ভুলে গেছে একান্ত ব্যক্তিগত সময়।

কাটছে এভাবেই পছন্দের আকাশবাণী, দূরদর্শন,স্টার জলসা অঢেল টাইম,বারান্দায় ঘুরে, অনেক দিন পর হাসিতে দেখলো আয়নায়..
এই শুনছো,তোমাকে একটা কথা বলবো ভেবেছিলাম, এবার পুজোয় আমরা কদিন যাবো সবুজের গায়,তাঁত বোনা গন্ধরাজে গুমোট কাটিয়ে খুব বৃষ্টি যখন হবে তখন তুমি গলা জড়িয়ে বলবে,তোর কি যান্ত্রিক স্বর মনে পড়ে,
জীবন্ত পোষ্টারে আপসহীন নির্দেশের রাত?

উশখুশ করা সময়রেখা জোড়াতালি দিয়ে জুড়ে রাখা আছে, সলুকসন্ধান নেই পোড় খাওয়া নিলয়ের.. প্রয়োজন নেই মোলাকাত করতে, জাষ্ট বসে থাকতে, হন্তদন্ত হয়ে এঘর ওঘর খুঁজতে–নেই প্রয়োজন; শরীর ভারী হয় , বড়ো বড়ো চোখদুটোয় মৌরসী পাট্টা করে বৃষ্টিফোঁটা থাকে প্রস্তুতি ছাড়া নামে, আজও রওনা দেয় তোমার কথা মনে এলে...দেরী হয়ে যাচ্ছে ,বিজ্ঞাপন শেষ হবার আগেই কফি নিয়ে পৌছাতে হবে তাড়াতাড়ি ..আরো দূরে যাবার কথা ছিল..
পুড়ে যাক নির্মম ক্ষুধা,ক্ষমাহীন অপেক্ষাদাঁত।


সেদিন সন্ধ্যায়

কারুকাজ বোনা অর্ধেক আকাশে প্রলাপ নিয়ে
শত লাইট হাউসে সবুজ ম‍্যানগ্রোভ
আরো তীব্র সবুজ আত্মজীবনী হয়ে
আল্পনা দেয় চেনা রচনাবলীতে,
মনে হয় সীমান্তে দাঁড়িয়ে রুমাল ওড়াই
লম্বা একটা চিঠি লিখি তোমাকে
যে পঙক্তি লিখে ছিলাম বসন্ত বৃষ্টিতে
হঠাৎ করেই সেগুলো যেন নামেছে ভিড় করে
রাত বাড়িয়ে রজনীগন্ধা অপেক্ষা করে
তোমার আমার ছোট-কবিতার পান্থশালায়
এক পেয়ালা নেশা নিয়ে।


তোকে আমি ভুলবোনা কোনদিন

আপ্রান উষ্ণতা মুড়ে হাসিতে তুই ফিরে আসছিস
সফেন বালি থেকে ,বেলোয়ারি দিন –

ঘাম মোছা শহরের শহীদ মিনারে ঠোঁটের কোণে
ছুঁয়ে যাচ্ছে ঠুনকো হয়ে ওঠা হাইফেনের মিঠে সময়
তর্জনীতে জলন্ত স্পর্শ কাছাকাছি আসতে চায়,
সর্বহারার স্বাদটা ধুলোবালির দাম দিয়ে কিনলাম।ধুসর আত্মীয়তা জড়ানো মাফলারে রয়েছে শেষবেলার শীত। ফিকে হচ্ছে উঠোন, জেটিঘাট,একলা পথ,মাঠের কান্না, বরফের কুচির মতো বিষাদ থরে থরে সাজানো অস্তিত্ব সন্ধ্যের মরশুমী প্রনয়।বসন্তের আজান উদাসী লগ্নে কানে আসে,জলের ছায়া আরো গভীর হয় অভিমান করে, আমি খুঁজি বিচ্ছেদের আড়াল অমিতাক্ষর ছন্দে, মায়াছোঁয়া ধূপের গন্ধে, পাতা ঝরার ভালোবাসার ঋতুতে।
মুহূর্তের সোমলতাহীন চাঁদে বিরোধিতা খুলে বিজনে মেলে হাত,নেই সেখানে কান্না চোখ মোছার নক্ষত্রের হাত।

এই বেলায় থেমে থাক,এতটুকু থেমে থাক – যাযাবরের মধুমাস।


পারমিতা ভট্টাচার্য

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ










পারমিতা ভট্টাচার্য

জ্বলছে মানবতা

পুড়ছে মানবতা,মানবতায় জ্বলছে রিপুর আগুন
অন্ধকারে হোঁচট খেতে খেতে ভাবি
রক্ত শিকলে বাঁধা অস্তিত্বের বিকিকিনি হাট জুড়ে
তবুও তো মানুষ হিসাবে দেখি তোমার আমার মুখ।

রাস্তা জুড়ে ছড়ানো ছিটানো লাশ
দুপায়ে মাড়িয়ে যাই চেতনার ছিন্নমূলের সারি
নাড়ির টানে,মাটির টানে যারা মুখ গুঁজে পড়ে রয়
কাগুজে সভ্যতা বুকে শেল বিঁধে চোখ করে দেয় ভারী।

আজ ফুঁপিয়ে ওঠে মন ,কত পরিজন
নদীর স্রোতের টানে ভেসে গেছে ঘর, পরিবার
ত্রস্ত মন তবু অণুপুঙ্খ বিশ্লেষণে বসে
মানুষের নামে চলে আজ ধর্মের করবার।

আজ অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে সারি সারি মুখ
মানুষের পরিচয় শিকার অথবা শিকারী
বুকে চেপে ধরি সন্তানের কোমল মুখ
বাঁচতে দাও মানুষ হিসাবে হে,সভ্যতার কারবারি।

রক্ত আর আগুনে তাপ সেঁকে সভ্যতা দিচ্ছে ঘুম
ভ্রম হয়, এ কোন আলোয় দেখি মুখ
মানবতার শিকড়ে শিকড়ে বিষের সমারোহ
হিংসার স্রোতে ভেসে যায় আজ মানুষের যত সুখ।

অতর্কিতে

আরও একটা নির্ঘুম রাত
পাটি পেরে বসে গল্প শোনায়
শ্যাওলা ধরা,জরাজীর্ণ সময়ের।
জীবনের প্রমূর্ত সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে
শীতলপাটি বিছায় রোমন্থনের ইতিহাস।

আমি নখরের দাগ বুকে চেপে,
রোদচশমার আড়ালে রাখি
লোকলজ্জার সমস্ত উপকরণ।
সংস্কারের অশনিসংকেত রাখি
নিভাঁজ খাতায় পরিপাটি।

গলি থেকে রাজপথে বিছানো
শরশয্যার গোপন আহ্বান,
পা দিলেই শেষ পত্রের শেষ অক্ষর
জীবনের নিবন্ধ লেখে নরকের কীট
জীবন্ত লাশ করে দেয় এই নশ্বর দেহ।

তথাপি

বুকের মধ্যে যত্ন করে আঁকি একটা নদী
যার ছোট্ট ছোট্ট ঢেউয়ে আমি বাঙুর হয়ে যাই
দুচোখে আঁকি নক্সী কাঁথার অপূর্ব এক মোহ
টুপটাপ শব্দে সারা শরীর জুড়ে তবু বৃষ্টি নামে কই?
হৃৎপিণ্ড থেকে নাভিমূল অবধি বনবিথির ছায়া
ঠোঁটের কোণে পুষে রাখি মাতাল মহুয়া বসন্ত
একটিবার বুকের ঊষর উপত্যকায় বৃক্ষ রোপণ করো
সমস্ত অনাবিল ইচ্ছেরা ছুঁয়ে যাবে দূর দিগন্ত
মনের অদম্য ইচ্ছেগুলো আজ
প্রজাপতির মত মেলতে চায় পাখা
তবুও সংযমী সময় বারবার কড়া নাড়ে
রাকা চাঁদ দেখো কালো মেঘে রয় ঢাকা।
এসো আজ আরও একবার ঘুমঘোর মুছে
নদীর মোহনায় অস্তরাগে মাখামাখি হয়ে বসি
পাঁজরে তালাবন্ধ রাখি বিষের তীব্র জ্বালা
তথাপি বুকের মধ্যে গুঁড়ো স্বপ্নের আসমানী রঙ পুষি।

কাকতালীয়

বহুমুখী প্রতিভা চলকে ওঠে মাঝেমাঝে,
অন্তহীন কাব্যিক দ্যোতনায়।
সঙ্গতহীন হয় একাকী শ্রাবণের বিরহী অশ্রু,
কাকতালীয় ভাবে একটা গিরগিটি
রঙ বদলায়,পূর্ণিমার জ্যোৎস্না মেখে।
অহরহ আঁতলামিতে ডুবে থাকা জীবন যাপন
হঠাৎ আশ্রয় নেয় শব্দ শৈলীর ছত্র ছায়ায়।
নমাসে ছমাসে কবিতারা হয়ে ওঠে স্রোতস্বিনী,
দুদিনের বরষায় ফুঁসে ওঠে কলম
আগলে রাখে তার সম্ভ্রম,
সময়ের নিরিখে তা আবার 
কালের গর্ভে হয় লুক্কায়িত।

প্রেমে অপ্রেমে

জীবন একটা রঙহীন রূপকথা
পরাগের সাথে ওড়ে ডাকনাম যত
ফেলে আসা সময়ের টুংটাং সুর
কেউ ছিলনা কোনোদিন শুধু ভালবাসবার মতো।

ফুরফুরে ফাগুনে ওড়ে ছেঁড়া চিরকুট
না রাখা কথারা মেশে বিস্মৃতির বুকে
হলোনা যে কথা বলা, তা আজও না বলাই থাক
শুধু কেউ সুখী হোক ভালোবাসা মেখে।

চুপিচুপি রাত নামে, শূন্যতা ঘিরে
কারা যেনো রাখা কথা পুরে রাখে খামে
তবু,আজও কেউ সুখ খোঁজে বিকোতে বিকোতে
কেউ আজও বেঁচে থাকে জং ধরা প্রেমে।

Thursday, 23 April 2020

হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ
 










হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

পাখি রঙের আকাশ  ----- ৬০

যেটুকু রোদ দেখে তুমি চৌকাঠ পেরিয়েছিলে তা এখন অনেকটা ছাড়িয়ে ফেলেছে নিজেকে। আর তার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে ছোট ছোট ফুল। সারা সকাল দস্যিপনা করার পর দুপুরে লজেন্স বুকে নিয়ে ছোট ছেলে যেমন ঘুমিয়ে পড়ে তেমনি রোদ তোমাকে অনেকটাই সাজিয়ে ফেলেছে। অনেকক্ষণ রোদের দিকে তুমি তর্জনীও বাড়িয়ে দিয়েছ। ধুলো পায়ে হেঁটে হেঁটে তুমি সাজিয়ে দিয়েছ হাজার চারাগাছ সারা বাড়ি জুড়ে। মাথায় রোদ এলে তুমি একটা ছাউনি খুঁজেছ। হাতে হাতে আরও কত কাজ জুটে গেছে ----- দরজা খুলে ডেকেও নিয়েছ দু'হাত বাড়িয়ে। তারপর একদিন বিকেলের হঠাৎ ঝড় মাখামাখি করে ফেলবে সব রঙ। তুমি ছাদ থেকে দেখবে তোমার সাজানো অঙ্কের সংখ্যারা সব এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে। ছাদ থেকে নেমে আসতেই বৃষ্টি। মুখে এতটুকুও বিকৃতি নেই, যেন এটুকুই শুধু তোমার। তোমার গা ধোয়া জলের নদীর নাম আত্মশ্লাঘা। পাড়ে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিবিকেলে তুমি আকাশ দেখছো।

সিদ্ধার্থ সিংহ

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ










সিদ্ধার্থ সিংহ

হাইট

লোকটার নাম শুনেছিলাম।
সবাই বলতেন, লোকটার হাইট সাত ফুট তিন ইঞ্চি
ইয়া ছাতি
লম্বা লম্বা হাত।
আমি বিশ্বাস করতাম না।
দূর থেকে যে দিন দেখলাম
বুঝলাম, কেউ মিথ্যে বলেননি।
সাত ফুট তিন কী?
ঠিকঠাক মাপলে, দু'-চার ইঞ্চি বেশিই হবে।
এর ক'দিন পরেই
লোকটার সঙ্গে আমার আলাপ হল,
ভাল করে চিনলাম।
একদিন ফিতে দিয়ে মাপতে গিয়ে দেখি
তাঁর হাইট মাত্র পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি।
পাঁচ ফুট চার!
হিসেবে কোনও গণ্ডগোল হচ্ছে না তো!
পরের দিন মাপতে গিয়ে দেখি
তিন ফুট সাত,
তার পরের দিন
কোনও রকমে টেনে-টুনে দু'ফুট।
দু'ফুট! এর পরের দিন মাপতে গেলে
হয়তো আরও কমে যাবে...
আমি ছিটকে চলে এলাম।
মানুষকে আর কত ছোট হতে দেখব!
কত! 

সুতো

যত দূর যাই, যাব 
হাওয়ায় ভাসিয়ে দেব গা
এই ভাবে গেলেই তো পাব মণি-মাণিক্যে ভরা
গুপ্তধনের গুহার মুখ
খেলতে বসলে সাপলুডোর মই
হাসতে হাসতে পৌঁছে যাব
মূল ফটকের ও পারে। 
যত দূর যাই, যাব
হাওয়ায় ভাসিয়ে দেব গা
হাত, পা, চোখ, মুখ, কান, মন, প্রাণ
শুধু ভেসে যাওয়ার আগে একবার দেখে নেব
শরীরের কোথাও কোনও সুতো বাঁধা নেই তো! 

সম্পর্ক

আমি তোমার সঙ্গে আর খেলব না।
তুমি যদি এই ভাবে গাড়ি-রাস্তার মাঝখান দিয়ে হাঁটো
তুমি যদি একের পর এক উপরতলা দেখিয়ে হঠাৎ হঠাৎ বায়না ধরো
তুুমি যদি হেঁশেলের থেকে বেশি পছন্দ করো ড্রেসিং টেবিল
আমি তা হলে তোমার সঙ্গে আর কখনও, কোনও দিন খেলব না।
খেলতে খেলতে বালির স্তূপে বানানো ঘর
আমি একদিন বালিতেই আড়াল করে ফেলব।

রূপান্তর

মানুষের একটা লেজ হোক
দুটো শিং
এক~একটা থাবা হোক সাত মন।
বাচ্চাটাকে কাপড়ে জড়িয়ে কারা যেন ফেলে গিয়েছিল রাস্তার ধারে
যতক্ষণ না লোকজন এসে তাকে তুলে নিল
একটা কাকও যাতে ঠোকরাতে না পারে
আগলে রেখেছিল কয়েকটা সারমেয়।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের একটা দল গভীর জঙ্গলে ঢুকে একেবারে তাজ্জব
পরে সারা পৃথিবী জেনেছিল
সেই গোরিলা~মা আর তার কাছে বেড়ে ওঠা মানব শিশুটির কথা!
তাড়া খেতে খেতে পাহাড়ের এক গুহায় এসে লুকিয়েছিলেন
তাসখন্দের রাজা সিন্দাবাদ
পিছনে তলোয়ার উঁচিয়ে হাজার হাজার সৈন্য
এই বুঝি কোপ পড়ল!
ঠিক তখনই গুহার মুখ ঢেকে যেতে লাগল এক জংলি মাকড়সার জালে।
সামান্য একটা মাকড়সা
কেমন করে তাঁকে সে দিন বাঁচিয়ে দিয়েছিল
সে কথা তিনি লিখে রেখে গেছেন তাঁর আত্মজীবনীতে।
জংলি মাকড়সাও বিপদ থেকে অদ্ভুত ভাবে রক্ষা করে একটা জীবন
বনের গোরিলাও কত মমতা দিয়ে বড় করে তোলে একটা মানবশিশু
রাস্তার কুকুরও কী সুন্দর আগলে রাখে একটা সদ্যজাতকে
আর মানুষ?
মানুষের একটা লেজ হোক
দুটো শিং
থাবা হোক ইয়া বড় বড়।

ক্ষোভে আর শোকে

থমকে গিয়েছে সব আজকে হঠাৎ
হয়েছে সকাল, তবু উঠছে না সূর্য
বাতাসও গুম মেরে বসে আছে ঘরে
বৃষ্টিকে বুকে নিয়ে মেঘ থমথমে।
টিভিতে খবর দেখে ক্ষোভে আর শোকে
ফুটছে না বেল, জুঁই, টগর, মালতি
নদীতেও খেলছে না তিরতিরে ঢেউ
পাখিরা ঝিমিয়ে আছে এ ডালে ও ডালে।
রাজনীতি এ রকম! এত ভয়াবহ!
দোয়ায়নি গোরু কেউ, লেপেনি উঠোন
উনুন জ্বালেনি কেউ, কাটেনি আনাজ
শিশুরা যায়নি মাঠে, পুকুরে নামেনি।
ঘেন্নায় ফিরিয়ে মুখ সব সরে গেছে
প্ল্যাকার্ড-ব্যানার নেই, মিছিল-টিছিল
সুনসান পথঘাট, জ্বলছে না চিতা
বুকের গভীরে জ্বলে কুশপুত্তলিকা। 

সেকেন্দার আলি সেখ

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ









সেকেন্দার আলি সেখ


সংবিধানের বর্ণমালারা

ধ্বংসস্তূপের উপর চরে বেড়াচ্ছে পরিশ্রান্ত পিঁপড়েরা 
খাক হয়ে গেছে বেঁচে থাকার রসদ 
ভাইবোন বন্ধু পরিজন কোথায় কে জানে 
অসহায় পিঁপড়েরা চোখের জলে খুঁজে বেড়াচ্ছে...  
শকুনের দৃষ্টি এখনও রাজধানী শহরের মহল্লায় l 

কী সুখ ছিল এই মৃত্যু কামনার 
কী সুখ ছিল আগুনের এই মহড়ার 
কী সুখ ছিল দু হাতে এই রক্ত মাখার 
ভায়ের রক্তের ছোপ মহল্লার রাজপথে- রাজপথে 
অনাথ ফুলগুলোর চোখে নেই সূর্যের আলো l

বেলা থাকতে নেমে এসেছে অনেক অন্ধকার 
গ্রহণের আগ্রাসী ক্ষুধার প্রহর জানত না পিঁপড়েরা 
অনেকদিন দেশ দেখেনি এই নারকীয় ক্ষুধা 
বিশ্বাসের চেনা পাহাড় টলে গেল 
রক্ত -দাঙ্গা - উচ্ছাস ঘেরা দঙ্গলের ভোটাধিকারে l 

তবুও মন্দিরের ঘন্টা ছড়িয়ে পড়ে বাতাসে 
মসজিদের আজান শুনে প্রার্থনার আসর বসে
 গির্জায় - গির্জায় চলে সাবলীল জীবনের স্রোত 
পায়ে ভর  দিয়ে দাঁড়াচ্ছে দেশ 
পাখির মুখে ছড়িয়ে পড়ছে মিষ্টি সুর 
সংবিধানের বর্ণমালারা সকালের রোদে ছড়িয়ে পড়ছে l 

Tuesday, 21 April 2020

হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ











হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়


পাখি রঙের আকাশ  ----- ৫৯

একটা বড় বাড়ির নিচে অনেকগুলো সাইকেল দাঁড়িয়ে। অনেকগুলো কাজের মানুষ যেন একসাথে জামা ছেড়ে রেখে কোথায় চলে গেছে। সাইকেলের চাকাগুলো এখনও ঘুরছে। অনেকটাই ছুটেছে তারা। এখনও তো তারা ছুটতে চায়। কিন্তু হঠাৎ তাদের দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমন কিন্তু কথা ছিল না। গতকাল রাতেও তাদের বলা হয়েছিল তারা ছুটবে। যেখানে যেমন খুশি তারা ছুটতে পারে। কিন্তু মাঝদুপুরেই তারা বসে গেল। তাদের গায়ের রঙ এখন অনেকটাই ফ্যাকাশে। কিন্তু পছন্দের কোনো খাতা তারা তো কাছে টেনে নেয় নি। তবুও তো দিকে দিকে রটে গেল ঘরবদলের বাৎসরিক গিরগিটির গল্প। একটু পরেই তারা দুপায়ে দাঁড়াবে। দেখে নেবে চারপাশ। চালিয়ে দেবে রাস্তা যেদিকে খুশি। সামনের কোনো জিনিসের দায়িত্ব তারা নেবে না।



দেবাশীষ সরকার

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ










দেবাশীষ  সরকার 



শুধু  তোকেই  ভালোবেসে...       

হয়তো তোর মনে হয় ,সে ভাবে তোকে ভালোবাসতে পারি না আমি ;
তাই তো জলে পা না ভিজিয়েই হেঁটে যাস পার ঘেঁষে
কাশ বনকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে l  
তোর ছন্দে আমিও  চলি তোরই  বিক্ষিপ্ত প্রতিচ্ছবি  
বুকে নিয়ে l  
সে ভাবে আদর করতে শিখিনি বলেই মুখ অস্তগামী  
করে আঙ্গুল খুঁটিয়ে সেকেন্ড গুনে চলিস 
কখন উড়ে যাবি নিজ আকাশে ;
তুই জানিস না তোর দেহ গ্রন্থি জুড়ে আমার সহবাস 
ছয় ঋতু ধরে l 
একবার শুধু একবার নিজেকে আমার শুন্য দু' হাতে 
সমর্পন করে দেখ .....
দেখবি মেঘ চাঁদরে রেখে তারায় তারায় কেমন 
সাজিয়ে তুলি তোকে ,কল্পনার সোহাগী 
পালকে এঁকে দেব স্বর্গিক ডানা ; 
এরপর সাঁজের বাতি জ্বেলে আলো--আঁধারির 
বুক জুড়ে মেলে দেব আমার ছিন্ন আকাশ 
শুধু ....শুধু  তোকেই  ভালোবেসে l 


তোমায় ভালোবেসে...

ফেনিল মেঘ বারান্দায় দাঁড়িয়ে চাঁদকে ছুঁয়ে 
তুমি যখন ধীরে ধীরে ভিজে ওঠো জ্যোস্না ধারায়  ;

জান না কত তারারা হয়েছে দিশা হীন আঁধারের কোলে , 
কত তারা খসে গেছে চাঁদের ছায়া বুকে l  

আমার জীর্ণ জানালা জুড়ে আদ্রতা নেমে আসে
তোমার সোহাগী চাউনিতে l 

হাজার বছর ধরে হিজলের ছায়া মাঝে  
স্বপ্নের জীবাশ্বরা শিশিরের গন্ধ ফিরে পায় l 

তোমার মনের আকাশটা আমায় দিলে তারা হতে ,

আমি আঁধারকে তাই বেসেছি ভালো 
তোমায় ভালোবেসে....


আমার পাশে এসে দাঁড়ালেই 
           
আমার পাশে এসে দাঁড়ালেই  চাঁদ ভেজা শিশির 
আমায় ভিজিয়ে দিয়ে যায় ,

সিক্ত শরীর জুড়ে লেপ্টে থাকা তোর ছায়া 
রঙিন ঝড় তোলে তপ্ত সাহারায় l  

ক্যাকটাসের বুকে তোর উষ্ণ নিশ্বাসের আদ্রতা 
স্বপ্ন আঁকে আগামী সবুজায়নের ;

খাজুরাহি দেহ ছুঁয়ে আমার দৃষ্টিরা রোমান্টিজম এ উদ্বুদ্ধ

রঙের স্তর বেয়ে বেয়ে উঠে আসে কুয়াশা মাখা 
এক অপ্রত্যাশিত সমীকরণ , 

বিমূর্ত মন গর্ভে জন্ম নেয় অপার অপার্থিব বাসনা ,
জানি না তুমি কি নামে আখ্যা দেবে তাকে ........


তুমি যখন রাতের রজনী গন্ধা...
            
শিস মহলের বেলোয়ারী ঝাড় বাতির নিচে 
আজ আমি একা,---

পোস্টমর্টেম টেবিল জুড়ে নিস্তব্ধতা আমায় ঘিরে l 

বুকের বাঁ দিক টা অবলীলায় কেটে হৃদপিন্ডের 
কাটা ছেঁড়া ভবিষৎ কে সুনিশ্চিত  করতে  ;

তোমার দু হাতে জমে ওঠা আমার শীতল ধমনী স্রোত 
আগলে রাখে সঞ্চিত স্বপ্ন রাশি ,
ধীরে ধীরে ফসিল হবে অলিখিত আগামী ইতিহাস হয়ে l  

তোমার পৃথিবীতে তুমি যখন রাতের রজনী গন্ধা ,
তখন আমার কবরে জাগে উপবাসী চাঁদ l  


শব্দেরা আঁকে কবিতা

পদ্ম কুঁড়ির নিচে প্রতীক্ষিত  ভ্রমর  
স্বপ্নের জাল বোনে হাজার আলোক বর্ষ ধরে l 

জাপটে ধরা কামনার ডানা বুকে 
শব্দেরা আঁকে কবিতা  l 

গোলাপি সাগর মাঝে জোছনার ধ্রুপদী চলন  
বাসনার  ঢেউ মাখে মনে ;

মায়াবী আঁখি জুড়ে  শব্দহীন ভাষারা   
মেঘ ছুঁয়ে লেখে স্বরলিপি ,
আমার বুকের দ্রাঘিমা বরাবর l  

তোমার এলো কেশ বনে পলাশের দাবানলে
ফিনিক্স এ মন পুড়েছে  সহস্র বার 
তোমারি অজান্তে বিনিদ্র রাত ধরে ........


সৌমী আচার্য্য

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ










সৌমী আচার্য্য


হতেও পারে

"কি রে,ওয় লেড়কি,ইধার আ,চল আজকে আমার সাথে।আরে শুন না।"...ছেলেটা এবার হাতটা ধরেই নেয় মেয়েটার।মেয়েটা ঘুরে তাকায় বিড়বিড় করতে থাকে।ছেলেটা বলে..."আরে রাগ করছিস কেনো?চল,চল...বিরিয়ানি খাওয়াবো।আমাকে কি ছিঁচকে পেয়েছিস নাকি?টাকা আছে,চল।".....মেয়েটার বিড়বিড় বাড়তেই থাকে,মাথাটাও দোলাতে থাকে অল্প অল্প।ছেলেটা ওর হাতটা ছেড়ে দেয়......"কি রে রেগে যাচ্ছিস না কি?"....হাতের নোংরা ব‍্যগটা আচড়ে ফেলে,নিজের বুকে কিল মারতে মারতে মেয়েটা বলে ওঠে...."বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ উদ্ দৌল্লা,মিরজাফর শয়তানি,এ পিলাস বি হোলেস্ কয়ার ইজকল্টু ভৌম জল......"....এইসব বলতে বলতে মাথা নাড়তে নাড়তে মুখ থেকে থুতু বার করে ফেললো।লোকজন এদিকে তাকাচ্ছে দেখে ছেলেটা গলা চুলকে গুটিগুটি কেটে উঠলো।দূরে থাকা জি আর পি দুজন হেলেদুলে এসে বললো...."ভাগ ইয়াসে,ভাগ,চিল্লায়েগি তো মার পড়েগা,নিকাল"....মেয়েটা জামা তুলে থুতু মুছলো,ব‍্যাগটা নিয়ে হেলেদুলে স্টেশনের একধারে চলে এলো।পেছন পেছন প্ল‍্যাটফর্মে বসে বসে ঘষটে ঘষটে একটা ছেলেও এলো।মেয়েটা ঘষটানোর আওয়াজ পেয়ে তাকালো,ছেলেটার বারো তেরো বছরের চোখে ভয়,বিস্ময়।ষোলো সতেরোর দুই বিনুনি মিচকে হেসে বললো....."ভয় খেয়েছিস?ভয় খাসনা এদিকে আয়।ঐ দেখো ভ‍্যাবলা হয়ে থাকে।আয় এই ছায়ায় বসি।"....ছেলেটা সংকোচে এসে বসে।মেয়েটা ব‍্যাগ থেকে কাগজের থালা বার করে রাখে।তারপর একটা প্লাস্টিক বার করে সেটা থেকে খাবার বার করে।পরোটা,ভাত,সোয়াবিনের তরকারি মাংসের ঝোল,আলু একসাথে মাখামাখি অবস্থা।তবু তাই দেখিয়ে এক আকাশ হাসে।

 পাশের কল খুলে হাত ধোয় ঘষে ঘষে।মুখে,চোখে জল দেয়।নোংরা জামাতেই হাত মুছে নিজে খায়,নুলো ছেলেটাকেও খাইয়ে দেয়।গড়িয়ে পড়া ঝোল মুছে দেয় ছেলেটার ঠোঁটের পাশ থেকে।ভুরু নাচিয়ে বলে...."তখন থেকে অমন চুপ মেরে আছিস কেনো?".....ছেলেটা ঢোক গিলে বলে...."আবার যদি ওরম হয়ে যাও?".....মেয়েটা হাসতে হাসতে স্টেশনে শুয়ে খানটেক গড়াগড়ি দিয়ে নিয়ে বড়োবড়ো চোখ করে বললো ....."বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব??....ধুস,তুই একটা পাগল।তোর ঐ করিনা কাপুর শুধু পারে,আমি পারি না ভেবেছিস?".....ছেলেটা অবাক চোখে তাকায় ....."ওটা মিথ‍্যে ছিলো।".....মেয়েটা থালা,প্লাস্টিক তুলে দূরের ডাস্টবিনে ফেলে আসে।হাত,মুখ ধুয়ে নেয় ।নিজের হয়ে গেলে ছেলেটাকেও মুখ ধুয়ে দেয়।দুদিকে দুপা ছড়িয়ে বসে বলে....."বুদ্ধি হওয়া থেকে দেখেছি একেক রাতে একেক জন,মার পাশে।ঘেন্না করতো জানিস।আমি একটু বড়ো হতে আমার শরীরটাও হাতাতো লোকগুলো।তারপর মা পাগল হয়ে গেলো।সবাই কে কামড়াতো,মারতো।একদিন এই বেজম্মার জীবন রেলের নীচেই শেষ।বুঝে গেলাম একাই বাঁচতে হবে।এসব কত শয়তান আসে,তখন একটু পাগল হয়ে যাই বুঝলি।".....ছেলেটা করুণ চোখে বললো....."এভাবে বাঁচবি কতদিন?"......মেয়েটা ব‍্যাগটা তুলে নিলো কাঁধে,বললো......"বাঁচবো না তো,তবু ফাদারের স্কুলে পড়তে যাই,ফাদার বলেছে পড়াশোনা করলে বাঁচতেও পারি।".....জোরে হুইসেল বাজিয়ে দূরপাল্লার ট্রেনটা প্ল‍্যাটফর্ম ছেড়ে চলে গেলো।

রুবি রায়

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ










রুবি রায়  

বিশেষ্যের পরিচয় 

সামান্য নাইট্রাস অক্সাইড চেটে নিয়ে আবার সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় নিজেকে রত করেছি ।

প্রতিটা বীর্য মাখা কাপড় --
দলিলের কোণায় ঠেসতে থাকে আমায় ।

আমি ... বিশেষ্যের পরিচয় খুঁজতে খুঁজতে
চিৎপটাং হয়ে বাঁশের কেল্লায় শুয়ে ---

ঐ লম্বা মশালটার আলোয় 
পরজন্মকে দেখে নেব 


চার্লি চ্যাপলিনের গোঁফ 

ডায়রির সংখ্যা , নাকি ডায়রির পাতা গুনলে 
সম্পর্কের গভীরতা বোঝা যাবে ? 

অনেকেই সম্পর্কটাকে চপিংবোর্ডে রেখে ,
শান দেওয়া Adjective ছুরি দিয়ে --
গভীরতা বুঝতে যাবে |

বিশ্রী গন্ধ মাখা "LY" যুক্ত শব্দ গুলো 
আমার দিকে আসবে | কারণ .....
আমি " যোনী জাত" , আমার দায় বেশি |

আমার Destiny জেনে বসে থাকা মানুষগুলো 
স্থূলকোণী ভাবে জারিত হয়ে হাসছে | 

গভীরতা খোঁজার নামে , পচা কাদা ছিটিয়ে --
আমার ভালোবাসাটাকে .......
চার্লি চ্যাপলিনের গোঁফে বসিয়ে দিচ্ছে !

Monday, 20 April 2020

হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ
 










হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়


পাখি রঙের আকাশ  ------ ৫৮

বেলা বারোটায় একটা মৌটুসী আসে আমার দরজায়। আমি দরজা খুলে দিলে মৌটুসী আমার সারা ঘরে পা ছড়িয়ে বেড়ায়। প্রতিটা পায়ে ফুল। আমার মেঝের ক্যানভাসে ও আপন মনে আলো আলো রঙের ঘর এঁকে যায়। একদিন সকাল থেকে খুব বৃষ্টি। মৌটুসী এলো না। আমার সারা ঘরের মেঝেয় জলছাপ। মৌটুসীর পায়েরা এখন জলের নিচে। জল শুকনো হলেই পায়েরা আবার হাঁটতে শুরু করে। রোদ ওঠে। এখন তো টুনটুনি। বেগুন গাছের পাতার আড়াল থেকে লেজ নাড়ে। জানলা খুলে দিই। ও বইয়ের টেবিলে এসে বসে। ওখান থেকে আমার দিকে চায়। বারবার মুখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখে। চোখে কিছু পড়ে না মনে হয়। উড়ে যায়। বুঝতে পারি আমি এখনও অনেক দূরে। দূরেই তো ছিলাম। ওদের মা আমার ঘর চিনিয়েছে। ওদের মায়ের বাড়ি তো পাখিবাড়ি। একদিন তুলে নিয়ে এসেছিল আমার কাছে। সেদিন থেকেই আমার দাঁড়াবার জায়গায় বাড়ি ঘর আঁকা হয়ে গেল।



নাসির ওয়াদেন

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ










নাসির ওয়াদেন


কেনো ডাকো আমাকে              

শুধু আমাকেই ডাকো কেনো বেলা
হরিণের দেশে, মাঠের বাউলে
অপেক্ষা বিছিয়ে দিই পোড়াভাতে
হলুদ আঁচলে ছায়াসুখ পেতে
রাখি দুরন্ত ভেজা ভেজা চুল

বসন্ত আকাশে একান্ত মেঘ এসে
ভিজিয়ে দিয়েছে তপ্ত-অংকের খাতা
সহজেই রোদ পেরিয়ে যায় মাঠ
ওই মাঠে ফুল আঁকি পলাশ,রঞ্জন

আগুনকেও কাছে ডাকি, রঙফুলে
মেহেদী রঙা মৃত ঘাস
সম্পর্কের গন্ধ শুঁকে নিহত আশ্রয়ে
                   

পোড়া            

বিশ্বাসের লম্বা সেতু দিয়ে হাঁটি, পথ
মাথার আকাশে পায়চারি মেঘ ঝরে

নির্ভেজাল দুপুরের ক্লান্তি মেঘ, শরত
ভুবনডাঙ্গার মেঘ রঙিন নৌকার দাঁড়ে

সত্যের কাছাকাছি পলিমাটি ছোঁয়া ফাগ
বসন্ত বসনে ঢাকি ফেরারি কলমে নীলদাগ

ছোঁয়াচে বাতাস-কান ভর্তি আশীর্বাদীফুলে
উদ্বাস্তু আলোর কাছে না-চলা পথে চলে শুধুই মহড়া

রোদ ভেসে ওঠে লাগোয়া কলমিলতার দুলে
আগুনে সন্ত্রাসদাগে ছটপটে পা দু'খানি শুধু  পোড়া ।
                  


সম্পর্কের ছায়া-ডাল                 

ছায়াহীন সুখ-মাখা আলোর সোহাগ, কিঙ্করী
বিশ্বাসের ছায়ায়  ভিজিয়ে দিয়েছে যৌবন

বেঁধে দিই লাল ফুল খোঁপায়, হাতে রঙ চুড়ি
সূর্য ধোয়া বাড়ি থেকে ভাসে সুখি মনপবন

অন্ধকার ভয় পায়, রাত্রি খোঁজে আলো
তুমি তো আমার ছিলে, তোমাকেই বাসি ভালো

রসিক শিখা পায়চারি করে সহজ সরল ঘর
বিছানায় শুয়ে আছি, ভীষ্ম পিয়াস জুড়ে অন্তর

দুরবতী স্বপ্নগুলো ঝোলা নিয়ে করে মাধুকরী
টগবগে মেয়ে তুমি, ঠোঁটে আঁকা চন্দ্র-ময়ূরী

সম্বন্ধ সরলরেখায় চলে, বিশ্বাসের ভাঙা ডালে
একান্ত অসুখিমেঘ এসে মুগ্ধ নদীজলে ঢেউ তোলে
                    



গৃহবন্দী          

গুহাবাসী ছিল আদিম পিতা, একান্ত নির্জনে
সুখ কাকতালীয় পথে হামাগুড়ি দিতে
বনের ডালের ফাঁকে সূর্যের কিরণে
সাধগুলো হা হা করে তাকিয়ে থাকত
কখন খাদ্য আসে গুহাঘরে, জ্যান্ত অথবা মৃত

হাতগুটিয়ে বসে থেকে ভাগ্যকে দোষারোপ কেন?
মারী নিয়ে যারা প্রতিনিয়ত ঘর করে
তাদের লড়াই করেই বাঁচতে হয়,
এসো, বিজ্ঞানের আলো জ্বালিয়ে দিই ঘরে ঘরে

বিজ্ঞানই বাঁচাতে পারে , সংস্কার নয়,
যেটা অনেক আগেই বুঝেছিল গুহামানব
হাত আর মস্তিষ্কের যৌথ উদ্যোগে ।
                    

ছায়াহীন সুখ             

যা কিছু সম্পর্ক ছিল হলুদ বাতাস এসে
ভিজিয়ে দিয়েছে চোখ উদ্বাস্তু আলোয়
বসন্ত ভেজা আকাশ অপেক্ষা বসে
নীরবে কাঁদে ভুবনডাঙ্গার মেঘ, সজল ওই

আগুনের সন্ত্রাস চিহ্ন আঁকা ফেরারি বুক
, রসিক শিল্পগুলো আঁকি তামাটে শরীরে
সবুজ ছায়া উড়ে, সকাল সন্ধ্যার অসুখ,
অবিশ্বাসের নোংরা জলে, উড়ন্ত দুপুরে

সূর্য-ধোয়া আলয় যেখানে ছিল এক ছায়াহীন সুখ
একদিন পূণ্যতোয়া ঘাসজলে ভরিয়ে দিয়েছে এ মুখ