শিশির পাল
একতারা
কংসাবতী নদীর পাড়ে ছোট জনপদ পলাশবনি। অনেক পুরনো গ্রাম।বর্ষার সময়ে চরম ব্যস্ত হয়ে পড়ে এখানকার লোকজন।চাষের কাজে।মানুষজনের কাজ মূলত চাষবাস।
এখানেই থাকে পবন বাউরি আর ভুবন বাউরি। স্ত্রী ছেলেমেয়ে নিয়ে একান্নবর্তী দু'ভাইয়ের পরিবারটি গত বছর ফাল্গুন মাসে, ফসল তোলার পর পরই ভাগ হয়ে গেছে। সালিশি সভা ডেকে রুলিং পার্টির লোকাল দাদাদের উপস্থিতিতে ভাগ বাঁটোয়ার করে নিয়েছে প্রায় সমস্ত জমিজমাই। কিন্তু সব তো আর সেভাবে ভাগ করা যায় না! বসত বাড়িটি দুভাগে সমান ভাগ হয়নি।উপায় নেই।কারও কম কারও বেশি হবেই।আর এই বাড়ির ভাগাভাগিটাই, ছোট ভাই ভুবনের স্ত্রী, অপর্ণার একদমই মন মতো হয়নি। এই নিয়ে অশান্তির মেঘ জমতে জমতে ভারি হয়ে গেছে।যেকোনও দিন প্রবল বৃষ্টি হতে পারে।ভুবনকে তাতিয়ে লাল লোহার মতো বানিয়ে রেখেছে অপর্ণা।পবনের স্ত্রী , বিমলাও কম যায় না।পবনকেও উপযুক্ত প্রতিপক্ষ তৈরি করেছে।দু'জায়ে কেউ কারোর ছায়াও মাড়ায় না।
যে কোনও মূল্যে পছন্দের ঘরটা অপর্ণার চাই।পরিবার পৃথক হওয়ার আগে দুই ভাই পবন আর ভুবন ঠিক রাম লক্ষ্মণের মতো ছিল।এখন রাবণ বিভীষণ।অপর্ণার এটাই জয়।সে এই বিভাজনটা তৈরি করতে পেরেছে এই ক'মাসের মধ্যেই। ভুবন বা পবন এক অদ্ভুত অস্থিরতায় দিন কাটায়।
চরম ঘটনাটা ঘটারই ছিল।চাষের কাজ সেরে বাড়ির উঠোনে এসে বসেছে ভুবন।ভাদ্রের ভ্যাপসা গরমে মেজাজটাও ভ্যাপসা।তেলে বেগুনে জ্বলতে শুধু স্ফুলিঙ্গের অপেক্ষা।পবন তখনও ফেরেনি।খুব সামান্য বিষয় নিয়ে অপর্ণা নালিশ করছে ভুবনকে।ভুবন চুপচাপ শোনে।অপর্ণা অন্যদিন তালপাতার হাতপাখা দিয়ে হাওয়া করতে করতে কথা বলত।আজ হয়তো ইচ্ছে করেই হাওয়া না করে, খাবার দেওয়ার আগেই নালিশ করছে।পরিশ্রান্ত ভুবন যেন মুহূর্তে জ্বলতে পারে।কথা হতে হতে পবনও ফিরে এলে জমির কাজ সেরে। এসেই যুদ্ধের দামামা শুনতে পেল।একটাই উঠোন।শুধু হাঁটু সমান মাটির প্রাচীর দিয়ে ভাগ করা আছে। আস্তে আস্তে সবাই হয়ে উঠল ঝগড়ার রথী।মহারথী। কে শোনে কার কথা! ধিকি ধিকি জ্বলতে জ্বলতে আগুনটা হঠাৎ দাবানলে পাল্টে যায়। সকালে মাঠে যাওয়ার আগে জ্বালানির কাঠ কাটার জন্য কুড়ুলটা বের করেছিল ভুবন।মাটির দেওয়াল ঘেঁষে একটু দূরেই সেটা রেখে গিয়েছিল। নাহ্।তার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে।কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই এক ঝটকায় কুড়ুলটা ছোঁ মেরে তুলে, হাঁটু সমান প্রাচীরটা ডিঙিয়ে পবনের কাছে পৌঁছে গেল যমদূতের মতো।হাত দিয়ে থামাতে পারল না পবন। বিশাল কোপ গিয়ে পড়ল তার ঘাড়ে।পর পর তিন বার। লুটিয়ে পড়ল পবন।ভুবন কিংকর্তব্যবিমূঢ়।গোটা পাড়ার লোক জুটে গেছে।
পুলিশ এসেছে।ঘরের সামনে জটলা।ফিসফাস।থমথমে ভাব।আততায়ী ভুবন ঘরের এককোনে অন্ধকারে মুখ লুকিয়ে আছে।পালানোর সময় পায়নি।
পুলিশ ওকে গাড়িতে তোলে।একটা অবাক করা খুন পাল্টে দিয়েছে চারপাশের হাওয়া।শরতের বিকেল আস্তে আস্তে সন্ধ্যার দিকে এগোচ্ছে।ফিরতি পাখিদের দল উড়ে যাচ্ছে নিজের নিজের বাসায়।মাধুকরি সংগ্রহ করে সান্ধ্য পথের অবসন্ন আলোয় বাউল ফিরছে তার নিঃসঙ্গ আশ্রমে। হাতে একতারা।গলায় বৈরাগ্যের সুর।
দুরাগত গান ভেসে আসছে, ".....কেন বাঁধো দালান ঘর।একদিন মাটির ভিতরে হবে ঘর.....।"
কংসাবতী নদীর পাড়ে ছোট জনপদ পলাশবনি। অনেক পুরনো গ্রাম।বর্ষার সময়ে চরম ব্যস্ত হয়ে পড়ে এখানকার লোকজন।চাষের কাজে।মানুষজনের কাজ মূলত চাষবাস।
এখানেই থাকে পবন বাউরি আর ভুবন বাউরি। স্ত্রী ছেলেমেয়ে নিয়ে একান্নবর্তী দু'ভাইয়ের পরিবারটি গত বছর ফাল্গুন মাসে, ফসল তোলার পর পরই ভাগ হয়ে গেছে। সালিশি সভা ডেকে রুলিং পার্টির লোকাল দাদাদের উপস্থিতিতে ভাগ বাঁটোয়ার করে নিয়েছে প্রায় সমস্ত জমিজমাই। কিন্তু সব তো আর সেভাবে ভাগ করা যায় না! বসত বাড়িটি দুভাগে সমান ভাগ হয়নি।উপায় নেই।কারও কম কারও বেশি হবেই।আর এই বাড়ির ভাগাভাগিটাই, ছোট ভাই ভুবনের স্ত্রী, অপর্ণার একদমই মন মতো হয়নি। এই নিয়ে অশান্তির মেঘ জমতে জমতে ভারি হয়ে গেছে।যেকোনও দিন প্রবল বৃষ্টি হতে পারে।ভুবনকে তাতিয়ে লাল লোহার মতো বানিয়ে রেখেছে অপর্ণা।পবনের স্ত্রী , বিমলাও কম যায় না।পবনকেও উপযুক্ত প্রতিপক্ষ তৈরি করেছে।দু'জায়ে কেউ কারোর ছায়াও মাড়ায় না।
যে কোনও মূল্যে পছন্দের ঘরটা অপর্ণার চাই।পরিবার পৃথক হওয়ার আগে দুই ভাই পবন আর ভুবন ঠিক রাম লক্ষ্মণের মতো ছিল।এখন রাবণ বিভীষণ।অপর্ণার এটাই জয়।সে এই বিভাজনটা তৈরি করতে পেরেছে এই ক'মাসের মধ্যেই। ভুবন বা পবন এক অদ্ভুত অস্থিরতায় দিন কাটায়।
চরম ঘটনাটা ঘটারই ছিল।চাষের কাজ সেরে বাড়ির উঠোনে এসে বসেছে ভুবন।ভাদ্রের ভ্যাপসা গরমে মেজাজটাও ভ্যাপসা।তেলে বেগুনে জ্বলতে শুধু স্ফুলিঙ্গের অপেক্ষা।পবন তখনও ফেরেনি।খুব সামান্য বিষয় নিয়ে অপর্ণা নালিশ করছে ভুবনকে।ভুবন চুপচাপ শোনে।অপর্ণা অন্যদিন তালপাতার হাতপাখা দিয়ে হাওয়া করতে করতে কথা বলত।আজ হয়তো ইচ্ছে করেই হাওয়া না করে, খাবার দেওয়ার আগেই নালিশ করছে।পরিশ্রান্ত ভুবন যেন মুহূর্তে জ্বলতে পারে।কথা হতে হতে পবনও ফিরে এলে জমির কাজ সেরে। এসেই যুদ্ধের দামামা শুনতে পেল।একটাই উঠোন।শুধু হাঁটু সমান মাটির প্রাচীর দিয়ে ভাগ করা আছে। আস্তে আস্তে সবাই হয়ে উঠল ঝগড়ার রথী।মহারথী। কে শোনে কার কথা! ধিকি ধিকি জ্বলতে জ্বলতে আগুনটা হঠাৎ দাবানলে পাল্টে যায়। সকালে মাঠে যাওয়ার আগে জ্বালানির কাঠ কাটার জন্য কুড়ুলটা বের করেছিল ভুবন।মাটির দেওয়াল ঘেঁষে একটু দূরেই সেটা রেখে গিয়েছিল। নাহ্।তার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে।কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই এক ঝটকায় কুড়ুলটা ছোঁ মেরে তুলে, হাঁটু সমান প্রাচীরটা ডিঙিয়ে পবনের কাছে পৌঁছে গেল যমদূতের মতো।হাত দিয়ে থামাতে পারল না পবন। বিশাল কোপ গিয়ে পড়ল তার ঘাড়ে।পর পর তিন বার। লুটিয়ে পড়ল পবন।ভুবন কিংকর্তব্যবিমূঢ়।গোটা পাড়ার লোক জুটে গেছে।
পুলিশ এসেছে।ঘরের সামনে জটলা।ফিসফাস।থমথমে ভাব।আততায়ী ভুবন ঘরের এককোনে অন্ধকারে মুখ লুকিয়ে আছে।পালানোর সময় পায়নি।
পুলিশ ওকে গাড়িতে তোলে।একটা অবাক করা খুন পাল্টে দিয়েছে চারপাশের হাওয়া।শরতের বিকেল আস্তে আস্তে সন্ধ্যার দিকে এগোচ্ছে।ফিরতি পাখিদের দল উড়ে যাচ্ছে নিজের নিজের বাসায়।মাধুকরি সংগ্রহ করে সান্ধ্য পথের অবসন্ন আলোয় বাউল ফিরছে তার নিঃসঙ্গ আশ্রমে। হাতে একতারা।গলায় বৈরাগ্যের সুর।
দুরাগত গান ভেসে আসছে, ".....কেন বাঁধো দালান ঘর।একদিন মাটির ভিতরে হবে ঘর.....।"
No comments:
Post a Comment