রঞ্জনা বসু
মঙ্গলা
যা আন্দাজ করা গিয়েছিল। হোমে নয়, বড়বাবুর বাসাতেই ' মানুষ' হতে থাকলো মঙ্গলা। সেদিন থানার ডিউটি সেরে বাড়ি ফিরে, মিনতির হাতে বাচ্চাটিকে দিয়ে বলেছিল, আমার 'মা' এসেছে গো মাসি। একটু যত্ন দিয়ে পারবেনা ওকে বড় করে তুলতে ?
এমন ফুলের মত পবিত্র শিশুর মুখের দিকে তাকাতেই, মিনতির মনটা ভরে গেল। এতদিন বড়বাবুর দেখভাল ছিল , এখন এই মঙ্গলার জন্য কাজ আরও বেড়ে গেছে। নামটা মিনতিরই দেয়া। যেদিন ও এলো, সেদিন মঙ্গলবার ছিল।
বড়বাবু ডিউটি সেরে বাড়ি ফিরে আগে খোঁজ নেয় মাসি,মঙ্গলা ভালো আছে তো?
ভালো আছে মানে ! এই তিন- চার মাসে একেবারে দস্যি মেয়ে হয়ে উঠেছে গো বড়বাবু !
সেদিন থানা থেকে বড়বাবু একটু তাড়াতাড়ি ফিরেছে। ভিতরের বারান্দায় মিনতির সামনে বসে একটি তরুনী বধূ। বড়বাবুর সাড়া পেয়ে মাথার কাপড়টা একটুখানি টেনে দিল কপালের উপর। মুখের ডৌলটি সুন্দর। সব জুড়ে কেমন একটা বিষন্ন ছায়া। তার কোলের ওপর শুয়ে মঙ্গলা হাত,পা ছুঁড়ে খেলছে। বড়বাবু তাদের পাশ কাটিয়ে নিজের ঘরে ঢুকে গেলে, মিনতি চা নিয়ে এলো।
মাসি,ইনি কে ? আগে তো কখনও দেখিনি ?
মিনতি একটু সময় নিয়ে বলল, ঐ বস্তিতে থাকে,ওর নাম রুমকি। মঙ্গলার 'মা'। সেদিন থানার সামনে ও নিজে গিয়ে বাচ্চাটাকে শুইয়ে রেখে এসেছিল। যদি কারো দয়ায় মেয়েটা বেঁচে থাকতে পারে, এই ভেবে। বাড়ি ফিরে মিথ্যে বলেছিল, যে শিশুটি মারা গেছে। কন্যা সন্তানের জন্য ঘরের লোকের কোন মাথা ব্যথা ছিল না।এর আগের মেয়েটিকেও বাঁচাতে পারেনি। ওর পরিবার বাঁচতে দেয়নি।
বড়বাবু নিঃশব্দে বসে রইলেন। জানালা দিয়ে অনেক্ষন চেয়ে রইলেন বাইরের দিকে। তারপর উঠে গিয়ে রুমকির মাথায় হাত রেখে বললেন, চিন্তা নেই, আমি আছি তো। বড়বাবুর পায়ের পাতা ভিজে গেল রুমকির চোখের জলে।
No comments:
Post a Comment