Monday, 28 June 2021

জুন সংখ্যা ≈ প্রচ্ছদ

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || জুন সংখ্যা ||

প্রচ্ছদ ~ মোহনা মজুমদার




সম্পূর্ণ সূচি ::


সম্পাদকীয় নয় কিন্তু ____

মনোতোষ আচার্য।মৃণালেন্দু দাশ।গৌতম গুপ্ত।দেবাশিস পাড়ুই।নবকুমার শীল।চিরঞ্জিৎ বৈরাগী।সোমা ব্যানার্জি।বিমল মণ্ডল।অনামিকা নন্দী।শিশির পাল।পার্থ সারথি চক্রবর্তী।বন্যা ব্যানার্জি।মোহনা মজুমদার।রঞ্জনা বসু।দীপিতা চ্যাটার্জি।সোমা ঘোষ।মধুমিতা রায় চৌধুরী মিত্র।সুতনু হালদার।শীর্ষেন্দু পাল।সিদ্ধার্থ দাস। শর্মিষ্ঠা। কৃষ্ণ রায়।পলাশ দাস।অমিত চক্রবর্তী।টুয়া জানা।মানস চক্রবর্তী। অসীম মালিক।গাফফার মাহমুদ।সুনন্দ মণ্ডল। রিঙ্কা রায়। হামিদুল ইসলাম। রফিকুল নাজিম।পল্লব গোস্বামী। সৌমেন দেবনাথ। কুমকুম বৈদ্য।

প্রচ্ছদ~মোহনা মজুমদার 

জুন সংখ্যা ≈ সম্পাদকীয় নয় কিন্তু

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || জুন সংখ্যা ||

অভিজিৎ দাসকর্মকার











সম্পাদকীয় নয় কিন্তু---

আজ থেকে সাড়ে ৪ বছর আগে সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন শুরু করেছিলাম ভাঙার লেখা এবং তরুণ দের লেখা (লেখায় তরুণ বয়সে নয়) প্রশ্রয় দেবো এই উদ্দেশ্যে। কিন্তু লেখা আসতে থাকলো আধুনিক ধারার (মর্ডান এরা) উপর দাঁড়িয়ে। ফলে সেই লেখা ভালো কিন্তু সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল-এর এথিকস্ এর বাইরে।তাই সুরু করলাম মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা। এই মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকায় অনেক নতুন তরুণ কবি এবং কবিনী দের আমন্ত্রণ করে,লেখা একটু আধটু চেঞ্জ করতে বলে, প্রকাশ করেছি।অনেকেই তা মানে, আবার বেশির ভাগই অন্য পত্রিকায় একসাথে ১২ টি কবিতা সহ পয়সার বিনিময়ে সংকলনে থেকে নিজেকে হেভি ওয়েট ভেবে নিয়েছে,তা ভাবুক,ভাবার স্বাধীনতা আছে।
আর আমি আমার ঢাক পিটালাম না ।

কিন্তু কবিতা যখন চাই,কী তোমার লেখা পাচ্ছি না কেনো?
উত্তরে যা সব শব্দ আসে,মনে হয় কী অসভ্য কাজ করেফেলেছি কবিতা চেয়ে।

একজন বলে আপনি কতদিন আছেন বাংলা বাজারে? আমি ২০১৯ এর ডিসেম্বর থেকে লিখছি।

আমি বললাম।আমি বেশিদিন না ২০০০ সাল থেকে।

ও...
একজনের লেখা মাঝের দিকে রেখে প্রকাশ করেছিলাম।বাব্বাড়ে সে কী রাগ!
মানে বুঝলুম,তার রোল নং~১ থেকে ১০ মধ্যে থাকা উচিত,তা নিশ্চয়ই তবে যাঁরা এতো বছর থেকে লিখছেন।তাঁদের লেখা?

ও মা রে..

কী করা উচিত?---
জানিনা সহমত হবেন কিনা!!!

ঝেড়ে আনফ্রেন্ড। যারা নিজেদের শুধু জাহির করে ছবি পোষ্টায়,অথচ কারো লেখার পাশ দিয়ে ঘুরতেও আসে না সারা বছর,তাদের জায়গা জড়ো করে রাখলাম না।অন্য অনেক অনুরোধ আসছে।তাঁদের দিই।

পরবর্তীতে তারা করলে??

সোজা সার্ফ এক্সেল অক্সিজেন পাওয়ার।
কেনোনা আমি লেখার সাথে কোনো কম্প্রোমাইজ করি না।

সাবধানে থাকুন, সুস্থ সাহিত্যে থাকুন।



জুন সংখ্যা ≈ কবিতায়@মনোতোষ আচার্য

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || জুন সংখ্যা ||

মনোতোষ আচার্য












ক্ষয়ের জন্মকথা

আমি তো মেখেছি ভস্ম সময় পোড়ানো অপচয়
ধীরে ধীরে পরিচয় শব্দ অধিবাস
প্রকৃত পাঠক নয় কবিতা বাঁচিয়ে রাখে পুরোনো অভ্যেস
সময়ের কুলুঙ্গিতে ঝুলে আছে চিরন্তন গাথা
ডেকে নেয় রোদ্দুর ভাঙাচোরা নিকোনো উঠোন  

ক্ষয়ের জন্মকথা ---- যাপনের মিথ্যে অধিকার
আমি তো মেখেছি ভস্ম পাড়ায় পাড়ায় কলরব
কবি তো বিষয়ী নয় সংসার বিরাগী আশ্রম
জন্মগত ভুলের ভেতর নূপুরে নিক্কণ মায়াডোর

ছিঁড়ে যায় সুতল প্রহর 
নৈবেদ্য নাও হে দেবী
শত ফুল কোরক হৃদয়...



জুন সংখ্যা ≈ কবিতায়@মৃণালেন্দু দাশ

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || জুন সংখ্যা ||

মৃণালেন্দু দাশ












হাত একটি ক্রিয়াপদ

এমন অসময়ে এলে তোমাকে যে বসতে দেব

সে সময়টুকুও আমার হাতে নেই ৷ এখনও পড়ে আছে
মেলা কাজ ৷এত কাজ যে মৃত্যুও এসে বারবার ফিরে যাচ্ছে

ডায়রির পাতায় আজ অব্দি একটি আঁচড় কাটা হয়নি
পরে নিশ্চই অক্ষর গুঁজে গুঁজে ভারাক্রান্ত করা হবে পাতা
স্বাভাবিক ৷ অস্বাভাবিক ব্যাবহারের পদ্ধতিগত পার্থক্যে —

জীবনও এক সাদা পাতা কত কিছু লেখা হয় মোছা হয়
তবু তার শুদ্ধতা অপিরিসীম ৷তা সত্বেও সূঁচ ফোটানোর
হাতের অভাব নেই ৷যেমন ভাতের সঙ্গে কাক

হাত একটি বিশেষ ক্রিয়াপদ সে বিরত থাকতে জানেনা


জুন সংখ্যা ≈ কবিতায়@গৌতম কুমার গুপ্ত

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || জুন সংখ্যা ||

গৌতম কুমার গুপ্ত













পথে যেতে যেতে 

পথে যেতে যেতে দেখা হল উনি পয়গম
হাই তুলছিলেন রকের শ্রীবস
রোয়াকে ভাঙা দু পিস আ্যরোরুট
চায়ে ডুবে আছে আড্ডা
কয়েকটি ঘষা বয়ামে ক্যাডবেরির জিভ ঝুলে আছে
ইটের পাঁজরে ভুল বানানে ভোট দাও শ্রীলেখা

উনুনের ছাইয়ে ঘুঁটের খন্ডহর
তালপাখায় জমা হাওয়ার ধুঁয়ো
বাথরুমে জল ভাঙা কিশোরী থইথই
খিস্তি দিতে দিতে চলে গেল লোমশ বাইক
মফস্বলী বাসের উড়ে গেল
পোড়া ডিজেলের ছাই 

গরম ত্বকে বিদ্রুপ ব্যাধি
গাছে গাছে উড়তা নখর বিষ
এখনি সোঁদাগন্ধ চায় স্বেদভেজা মাটি
মেঘ প্রত্যাশী আকাশে উদাসী নীল
ডেকে নিয়ে যায় দু একটি বিদ্যুত রেখা
হা অন্ন বৃষ্টি কোথায় ভাসে

পথে যেতে যেতে দু একটি প্রেম
যুবক যুবতী মোবাইলে কান ঢাকে
হিন্দী গানে অন্তরা অরিজিত
সিভিক পুলিশ লাঠির বিলাসে হাঁকে
হাফ হাতার প্রৌঢ় ভ্রমণে উন্মুখ
শ্লথ গতযৌবনা প্রৌঢ়াও বহুল মেদে

পথে যেতে যেতে
অভাগার চোখদুটি চেয়ে থাকে


জুন সংখ্যা ≈ কবিতায়@দেবাশিস পাড়ুই

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || জুন সংখ্যা ||

দেবাশিস পাড়ুই












খেয়ালি

জল ছিটিয়ে ডাকছে যে মেঘ 
                       উড়ছে খামখেয়ালী ।
ডোবাবে না কি ভাসাবে আবার 
                      সেটাই হেঁয়ালি।

চোখের তারায় ফটিকজল 
                  এই বুঝি তুই এলি ।
মেঘের মত চঞ্চলা তুই
                  মনেও খেয়ালী।

জুন সংখ্যা ≈ কবিতায়@বিমল মণ্ডল

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || জুন সংখ্যা ||

বিমল মণ্ডল 












নিষেধ 

আমার সামনে ভয়ের পাঁচিল
পেছনে মৃত্যুর  শেকল
বাঁধা পড়ে আছি সময়ের নৌকায় 
সকল পথই এক অদৃশ্য অসুখে ডুবে 
সকাল থেকে  রাত অবধি অজস্র আর্তনাদ শুনি 
ভুল আর ভুল সবই আবছায়া 
কি করে পথে  হাঁটি
সামনে- পেছনে নিষ্ঠুর নিষেধ 
তবুও যেটুকু  পথ চিনি
ধীরে ধীরে সে পথে এগোলেও

কে বা কারা যেন 
সকল পথেই  পাঁচিল তুলে দেয়।




জুন সংখ্যা ≈ কবিতায়@নবকুমার শীল

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || জুন সংখ্যা || 

নবকুমার শীল











কঙ্কালের ধূসর শরীর পান্ডুলিপি  

খড়খড়ির ফাঁকদিয়ে আলো এসে মৌমিতার মুখের ওপর ডিজাইন বানাচ্ছে । 
খড়খড়ি নয় , আলোটা আসছে ঘুলঘুলির ফাঁক দিয়ে । 

দেওয়ালের একটা শূন্য হুকে ঝুলিয়ে দিলাম পদ্মিনী মাসির বগলকাটা ব্লাউজ । 
একবাটি হাড়িয়ার মধ্যেই যেন জীবনের সমস্ত সুখ ।  

 শূন্য চক্ষুকোটরের অসীম শূন্যতায় দু -একটা বাবলাপাতা খসে পড়ছিল । 
একটা দুটো প্রজাপতি ও উড়ছিল ।  

যেই চোখ বুজে কোনও কোকিলের দিকে ফেরালাম কান , 
শোষণ , ফিউডালিজম , সংগ্রামী চেতনা 
এই সব কোন শব্দ খোঁড়াতে খোঁড়াতে এসেছে ওমনি বলেছি যা ভাগ ।  

দেওয়ালে নকল যামিনী রায় !  আলোটা মরা আলো ।


জুন সংখ্যা ≈ কবিতায়@চিরঞ্জিৎ বৈরাগী

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || জুন সংখ্যা ||

চিরঞ্জিৎ বৈরাগী












মিস্টিক মিটার নাহি রহে

ভলিনি মিথ জড়ানো চোখ-অবচেতন
পিউরিফাই স্প্রে'র সাঁটানো সেভেন
লিকার-লিভার পুল ছুঁয়ে জিরো লেভেল

লাইলা মজনু থেকে নাক্ষত্রিক রুইতন
পাঁজরের ঘাম-যোনি পেট্রোলিক লাই
হাঙরহীন সুয়েজ বন্দর

ত্রিশের ছক্কা-পুটের দৌড়
আপ-গেমের আয়তনিক আয়ন
বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন, নো জাজমেন্ট

মিস্টিক মিটার নাহি রহে
হম আম জনতা। ব্যাক কভার কিস লিয়ে
অর পেয়ার! এক ধোঁকা

জুন সংখ্যা ≈ কবিতায়@সোমা ব্যানার্জী

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || জুন সংখ্যা ||

সোমা ব্যানার্জী












নতুন ভোর

ছোঁয়াছুঁই খেলা দুপুরের রোদ
কংক্রিটের দেওয়াল চুঁইয়ে মিশেছে নাকছাবির একটুকরো কাঁচে।
আকাশের কপালে সিঁদুরের টিপের মতন
লাল সূর্যটাকে কাঁচের চুড়ির মাঝে বন্দী করা গোধূলি। 
নীলজলে মিশিয়ে দিলো লাল রঙের তুলি
কপোল বেয়ে টুপ করে খসে পরা বিন্দির মত সন্ধ্যে নামে অনাদরে-
পাথরের ফলকে লেখা কিছু এপিটাফ।
কাল সকালে ভোর হবে
অন্য এক নতুন জগতে
যে জগতে প্রবেশ করছি জ্বলন্ত এক অগ্নিকুণ্ডে অগ্নিশুদ্ধি হয়ে।



জুন সংখ্যা ≈ কবিতায়@অনামিকা নন্দী

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || জুন সংখ্যা ||

অনামিকা নন্দী











লজ্জা
                   
নক্ষত্রের ভাঙা আলো এসে পড়ে হলুদ হয়ে আসা পাতার ফাঁকে,খণ্ড খণ্ড রাস্তায় ,
পৃথিবীর প্রাচীন জীবনের লজ্জাগুলো ধোঁয়ার মতো উড়ে যেতে চায় আকাশের নীচে ।

অনাহারের সন্ধ্যা নামলে খাবারের বাটি হাতে "মৃত্যু"ঘুরে বেড়ায় শহরের প্রান্তরে 
প্রান্তরে ,
যত্নে রাখা শব্দের নাড়িভুঁড়ি ছিঁড়ে খেতে চায় নিঃস্ব আর ক্ষুধার্ত মানুষের কান্না।

পাথরের বুক চিরে বেরিয়ে আসা আবেগ দু'এক ঢোক জল খেয়ে বিকারগ্রস্ত অনুভবের মতো ভেসে থাকে
এ তল্লাটে কেউ থাকেনা যে এক টুকরো কাপড়ে পৃথিবীর লজ্জা ঢাকে.... 


জুন সংখ্যা ≈ অণুগল্পে@শিশির পাল

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || জুন সংখ্যা ||

শিশির  পাল











একতারা


কংসাবতী নদীর পাড়ে ছোট জনপদ পলাশবনি। অনেক পুরনো গ্রাম।বর্ষার সময়ে চরম ব্যস্ত হয়ে পড়ে এখানকার লোকজন।চাষের কাজে।মানুষজনের কাজ মূলত চাষবাস।

এখানেই থাকে পবন বাউরি আর ভুবন বাউরি। স্ত্রী ছেলেমেয়ে নিয়ে একান্নবর্তী দু'ভাইয়ের পরিবারটি গত বছর ফাল্গুন মাসে, ফসল তোলার পর পরই ভাগ হয়ে গেছে। সালিশি সভা ডেকে রুলিং পার্টির লোকাল দাদাদের উপস্থিতিতে ভাগ বাঁটোয়ার করে নিয়েছে প্রায় সমস্ত জমিজমাই। কিন্তু সব তো আর সেভাবে ভাগ করা যায় না! বসত বাড়িটি দুভাগে সমান ভাগ হয়নি।উপায় নেই।কারও কম কারও বেশি হবেই।আর এই বাড়ির ভাগাভাগিটাই, ছোট ভাই ভুবনের স্ত্রী, অপর্ণার একদমই মন মতো হয়নি। এই নিয়ে অশান্তির মেঘ জমতে জমতে ভারি হয়ে গেছে।যেকোনও দিন প্রবল বৃষ্টি হতে পারে।ভুবনকে তাতিয়ে লাল লোহার মতো বানিয়ে রেখেছে অপর্ণা।পবনের স্ত্রী , বিমলাও কম যায় না।পবনকেও উপযুক্ত প্রতিপক্ষ তৈরি করেছে।দু'জায়ে কেউ কারোর ছায়াও মাড়ায় না।

যে কোনও মূল্যে পছন্দের ঘরটা অপর্ণার চাই।পরিবার পৃথক হওয়ার আগে দুই ভাই পবন আর ভুবন ঠিক রাম লক্ষ্মণের মতো ছিল।এখন রাবণ বিভীষণ।অপর্ণার এটাই জয়।সে এই বিভাজনটা তৈরি করতে পেরেছে এই ক'মাসের মধ্যেই। ভুবন বা পবন এক অদ্ভুত অস্থিরতায় দিন কাটায়।

চরম ঘটনাটা ঘটারই ছিল।চাষের কাজ সেরে বাড়ির উঠোনে এসে বসেছে ভুবন।ভাদ্রের ভ্যাপসা গরমে মেজাজটাও ভ্যাপসা।তেলে বেগুনে জ্বলতে শুধু স্ফুলিঙ্গের অপেক্ষা।পবন তখনও ফেরেনি।খুব সামান্য বিষয় নিয়ে অপর্ণা নালিশ করছে ভুবনকে।ভুবন চুপচাপ শোনে।অপর্ণা অন্যদিন তালপাতার হাতপাখা দিয়ে হাওয়া করতে করতে কথা বলত।আজ হয়তো ইচ্ছে করেই হাওয়া না করে, খাবার দেওয়ার আগেই নালিশ করছে।পরিশ্রান্ত ভুবন যেন মুহূর্তে জ্বলতে পারে।কথা হতে হতে পবনও ফিরে এলে জমির কাজ সেরে। এসেই যুদ্ধের দামামা শুনতে পেল।একটাই উঠোন।শুধু হাঁটু সমান মাটির প্রাচীর দিয়ে ভাগ করা আছে। আস্তে আস্তে সবাই হয়ে উঠল ঝগড়ার রথী।মহারথী। কে শোনে কার কথা! ধিকি ধিকি জ্বলতে জ্বলতে আগুনটা হঠাৎ দাবানলে পাল্টে যায়। সকালে মাঠে যাওয়ার আগে জ্বালানির কাঠ কাটার জন্য কুড়ুলটা বের করেছিল ভুবন।মাটির দেওয়াল ঘেঁষে একটু দূরেই সেটা রেখে গিয়েছিল। নাহ্।তার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে।কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই এক ঝটকায় কুড়ুলটা ছোঁ মেরে তুলে, হাঁটু সমান প্রাচীরটা ডিঙিয়ে পবনের কাছে পৌঁছে গেল যমদূতের মতো।হাত দিয়ে থামাতে পারল না পবন। বিশাল কোপ গিয়ে পড়ল তার ঘাড়ে।পর পর তিন বার। লুটিয়ে পড়ল পবন।ভুবন কিংকর্তব্যবিমূঢ়।গোটা পাড়ার লোক জুটে গেছে।


পুলিশ এসেছে।ঘরের সামনে জটলা।ফিসফাস।থমথমে ভাব।আততায়ী ভুবন ঘরের এককোনে অন্ধকারে মুখ লুকিয়ে আছে।পালানোর সময় পায়নি।

পুলিশ ওকে গাড়িতে তোলে।একটা অবাক করা খুন পাল্টে দিয়েছে চারপাশের হাওয়া।শরতের বিকেল আস্তে আস্তে সন্ধ্যার দিকে এগোচ্ছে।ফিরতি পাখিদের দল উড়ে যাচ্ছে নিজের নিজের বাসায়।মাধুকরি সংগ্রহ করে সান্ধ্য পথের অবসন্ন আলোয় বাউল ফিরছে তার নিঃসঙ্গ আশ্রমে। হাতে একতারা।গলায় বৈরাগ্যের সুর।

দুরাগত গান ভেসে আসছে, ".....কেন বাঁধো দালান ঘর।একদিন মাটির ভিতরে হবে ঘর.....।"

জুন সংখ্যা ≈ কবিতায়@পার্থ সারথি চক্রবর্তী

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || জুন সংখ্যা ||

পার্থ সারথি চক্রবর্তী












স্মৃতি, ক্ষয় ইত্যাদি 


১১২ বছরের পুরনো একটি বটগাছের নিচে-
         অনেকগুলো পিঁপড়ের বাস,
যে সব পথিকেরা চলতে চলতে ক্লান্ত হয়ে- 
বটগাছটির নিচে বসে- তাদের গায়ে ওঠে।
মনের কথা বলে, সুখ-দুঃখের কথা শোনে।
রেডিওঅ্যাকটিভ ডিকে'র নিয়ম মেনে-
স্মৃতি হাল্কা হয়ে আসে- কমতে কমতে;
          কিন্তু শেষ হয়না কিছুতেই। 
রেসিডুয়াল বহন করে চলে পিতৃপুরুষের।
আমাকে গুলিয়ে ফেলে,সম্পর্কিত করে-
চেনা চেনা ব'লে দাগিয়ে দেয় কখনো।
স্মৃতিমেদুরতা, জন্মকাহিনীর অধ্যায় ঘিরে ধরে ক্রমশঃ।


জুন সংখ্যা ≈ কবিতায়@ বন্যা ব্যানার্জি

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || জুন সংখ্যা ||

বন্যা ব্যানার্জি












সহজ পাঠ

ফিরে আসে স্পর্শের অতীত।
খরা চিরে নামে বৃষ্টি।জীবিত জলবিন্দু রা হেঁটে যায় এনামেল করা মুখে। জল সরিয়ে তবু ফিরে আসে ওরা - হাঁটুজল নদী,শুক্রবারের হাট।।
মাটিতে মাদুর বিছোই।আমি আর আমার সহজ পাঠ‌‌।


 বিরহী

বসন্তের বাতাস পাঠালো চিঠি বর্ষার।আত্মীয় হয়ে উঠলো মাঠ,নদী।সাদা পাতায় কালো অক্ষরেরা। তোমার ঠোঁটের কালো তিল অন্ধকারের বিরুদ্ধে একাই লড়ে।.....জলের দিব্যি


জুন সংখ্যা ≈ কবিতায়@মোহনা মজুমদার

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || জুন সংখ্যা ||

মোহনা মজুমদার












জীবাশ্ম

উৎসমুখের বিপ্রতীপে দাঁড়ানো সদ্যোজাত ভ্রুন

ঘন,থকথকে -
শ্রোতের উজানে খাবি খেতে খেতে
অন্ধকারের সীমানা পেড়িয়ে পাকদন্ডী খেলায় ,
যখন মোহনার কাছাকাছি-
প্রবাহের শিকড় জুড়ে এলো ঘন অমাবস্যা
ঊর্ধ্বগামী মানচিত্রে তখন কিছু অনুতাপ,
অবশিষ্টাংশ বরাবর হতভাগা শিরশিরানি
আর তার প্রাকৃত বিস্তৃতি ।


জুন সংখ্যা ≈ অণুগল্পে@রঞ্জনা বসু

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || জুন সংখ্যা ||

রঞ্জনা বসু













মঙ্গলা                                              

যা আন্দাজ করা গিয়েছিল। হোমে নয়, বড়বাবুর বাসাতেই ' মানুষ' হতে থাকলো মঙ্গলা। সেদিন থানার ডিউটি সেরে বাড়ি ফিরে, মিনতির হাতে বাচ্চাটিকে দিয়ে বলেছিল, আমার 'মা' এসেছে গো মাসি। একটু যত্ন দিয়ে পারবেনা ওকে বড় করে তুলতে ?

এমন ফুলের মত পবিত্র শিশুর মুখের দিকে তাকাতেই, মিনতির মনটা ভরে গেল।  এতদিন বড়বাবুর দেখভাল ছিল , এখন এই মঙ্গলার জন্য কাজ আরও বেড়ে গেছে। নামটা মিনতিরই দেয়া। যেদিন ও এলো, সেদিন মঙ্গলবার ছিল।

বড়বাবু ডিউটি সেরে বাড়ি ফিরে আগে খোঁজ নেয় মাসি,মঙ্গলা ভালো আছে তো? 
ভালো আছে মানে ! এই তিন- চার মাসে একেবারে দস্যি মেয়ে হয়ে উঠেছে গো বড়বাবু ! 

সেদিন থানা থেকে বড়বাবু একটু তাড়াতাড়ি ফিরেছে। ভিতরের বারান্দায় মিনতির সামনে বসে একটি তরুনী বধূ। বড়বাবুর সাড়া পেয়ে মাথার কাপড়টা একটুখানি টেনে দিল কপালের উপর। মুখের ডৌলটি সুন্দর। সব জুড়ে কেমন একটা বিষন্ন ছায়া। তার কোলের ওপর শুয়ে মঙ্গলা হাত,পা ছুঁড়ে খেলছে। বড়বাবু তাদের পাশ কাটিয়ে নিজের ঘরে ঢুকে গেলে, মিনতি চা নিয়ে এলো। 

মাসি,ইনি কে ? আগে তো কখনও দেখিনি ?
মিনতি একটু সময় নিয়ে বলল, ঐ বস্তিতে থাকে,ওর নাম রুমকি। মঙ্গলার 'মা'। সেদিন থানার সামনে ও নিজে গিয়ে বাচ্চাটাকে শুইয়ে রেখে এসেছিল। যদি কারো দয়ায় মেয়েটা বেঁচে থাকতে পারে, এই ভেবে। বাড়ি ফিরে মিথ্যে বলেছিল, যে শিশুটি মারা গেছে। কন্যা সন্তানের জন্য ঘরের লোকের কোন মাথা ব্যথা ছিল না।এর আগের মেয়েটিকেও  বাঁচাতে পারেনি। ওর পরিবার বাঁচতে দেয়নি। 

বড়বাবু নিঃশব্দে বসে রইলেন। জানালা দিয়ে অনেক্ষন চেয়ে রইলেন বাইরের দিকে। তারপর উঠে গিয়ে রুমকির মাথায় হাত রেখে বললেন, চিন্তা নেই, আমি আছি তো। বড়বাবুর পায়ের পাতা ভিজে গেল রুমকির চোখের জলে।

জুন সংখ্যা ≈ কবিতায়@দীপিতা চ্যাটার্জী

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || জুন সংখ্যা ||

দীপিতা চ্যাটার্জী












কিছু কথা ক্যানভাসে  

তোমার ক্যানভাসে আমার আঁকা পটভূমি।
আমার তুলিতে তোমার রঙের খেলা।
কেঁপে যাওয়া পেন্সিলে বাঁকা রেখা গুলো বড্ডো একঘেয়ে।
সমান্তরালের চেষ্টায় আবার জন্ম কিছু বক্র রেখার।
আঁকাবাঁকা গুলো নিয়ে তৈরী এক নাটুকে ছবি।
যা তুলির নমনীয়তায় কোমল।
জলরঙের তরলতার সাথে  মিশে মায়াবী নদী।
রঙের ছিটেতে বিন্দুরা উথাল পাথাল ,
বার্তীদের, টুকরো কাপড়ে দম ফাটা অনুভূতি।
কাপের জলে রঙের ঘূর্ণি তে নিমজ্জিত তুলি,
এমন সন্ধিক্ষণে,
আদ্র তুলির আঁচড়ে জন্ম মধুজা চিত্রের।
যা রয়ে যায় ক্যানভাসি রূপকথায়।


জুন সংখ্যা ≈ কবিতায়@সোমা ঘোষ

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || জুন সংখ্যা ||

সোমা ঘোষ













সব চরিত্র ই জ্বলন্ত

ঢিলেঢালা রং সমস্ত শরীর-ময় ছড়িয়ে পড়ছে গল্পরা পৃথিবীর পথ ঢালু হয়ে 
নাভিমূলে আলটোপে রোদ্দুরের মায়া।
তবু,
      ঘাসের মুখোমুখি পতঙ্গ —  সে তো ঝড়ে ই এক কৌশল।এক গভীর সুখ যেন 
গভীর বেদনার মতো বসন্তবৌরি ডেকে ওঠে—
বারবার,
ভালোবাসা গাছের মতো ছায়া দিতে দিতে কখন যে পোড়াবে...
তৈরী থেকো সব চরিত্রই জ্বলন্ত।


জুন সংখ্যা ≈ কবিতায়@মধুমিতা রায় চৌধুরী মিত্র

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || জুন সংখ্যা ||

মধুমিতা রায় চৌধুরী মিত্র












অপেক্ষা

চোখ দুটিও জানে একটু ছায়ার প্রয়োজন।
তাদের যে ভীষণ ক্লান্তি,
নির্ঘুম রাতের ব্যথার ক্লান্তি,
কত উপেক্ষার অপেক্ষায় ভরা ক্লান্তি।
তবু ঘুমোবার স্বপ্ন তারা দেখেনা--
ঢেকে আছে তারা মিথ্যে প্রতিশ্রুতিতে!
কেউ নাকি কথা দিয়েছিলো আসবে বলে,
ভালোবাসবে বলে--
ভুল প্রতিস্মৃতির মিথ্যে পথ চাওয়াই যেন পিছু নিচ্ছে--
কিছু বলছে--
"ওরে দাঁড়িয়ে যা। অপেক্ষায় থাক। সে ঠিক আসবে---
ভালোবাসবে।

জুন সংখ্যা ≈ কবিতায়@সুতনু হালদার

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || জুন সংখ্যা ||

সুতনু হালদার












অস্বস্তি


আস্তে আস্তে আমরা 


সেতুটা পেরিয়ে এলাম

দু'জনেই নিজেকে তখন 

স্বরবর্ণের মতো মৌলিক ভাবতে শুরু করেছি

একগুচ্ছ দীর্ঘশ্বাস আমাদের প্রতিবিম্ব হয়ে

সামনে এসে দাঁড়াতেই হুশ ফিরে পেলাম


ধীরে ধীরে মেঘ কেটে গেলে

এক আশ্চর্য বোধোদয় হ'ল


ক্ষয়িষ্ণু রাত তখন ভোরের আঁচলে  মুখ ঢেকেছে

সেতুটা আমাদের আড়চোখে দেখছে

 তোমার চোখে খোদিত হ'ল এক নতুন সকাল 


ভূমির ওপর থমথমে কুয়াশার আলিঙ্গনে

নিজেকে রোদ ভাবতে আর কোনো অস্বস্তি হচ্ছে না





জুন সংখ্যা ≈ কবিতায়@ শীর্ষেন্দু পাল

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || জুন সংখ্যা ||

 শীর্ষেন্দু পাল











লক্ষ্মী 

আধোয়া ঘটি থেকে গড়িয়ে নামে অভিমান
ছিরিছাঁদহীন রান্নাঘরে নকশার আলো
স্পষ্ট ফুটিয়ে তোলে বাসনে জলের দাগ...
আঁচলে লেখা আছে অফিস টাইম
ভেজানো চা পাতা, স্কুলফেরত জলখাবার
আশ্চর্য সূর্যঘড়ি নিয়ে মাথায়
অভ‍্যস্ত হাত আঁকে বাটির আলপনা
ঘরে ঘরে আলো নিভে গেলে --
ঝলমলে আশ্বস্ত মুখে পায়ের জলছাপ এঁকে
চাল মেপে রাখে লক্ষ্মী ।