Wednesday, 29 July 2020

|জারা সোমা| ২৯শে জুলাই|

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা | | ২-য় বর্ষ ||












জারা সোমা
স্পর্ধার পদাবলি______ ১০
কানহা যাবক চলি ছোড়ি গোকুল
বিরহী রাধাকে নয়ন ব্যকুল।।

চাঁদ সা বদন ভরি ভরি নয়ন
বিখরি রয়সি শৃঙ্গার কুমকুম।।

চন্দন তিলক করি না মাঙ্গ সজাই
   বন্ধ কপাট পিছে রাধা রোয়ত।।

 কত শাম কাটি গেলি দিবস মহিনা
 আওবত শাওন পর তুঁহু দেখত কহিনা।।

বিরস বদনে রাধা চাহি পহুপানে
ছাতি ফট যায়ে বিলাপ গানে।।

বাসুকী নন্দন হম ঘোর অভাগন
কয়সন না শুনি হামার রোদন।।

আকেলি রাধারানী কয়সন জিয়ে
আও শ্যাম হমক দরশন দিয়ে ।।

সুদিন হেরি পনছি উতলা 
কদম ফুটত ভরকে আঙনা।।

জগভর সব প্রেমক গান গাওত
রাধা আকেলি পর শ্যামক না আওত।।

জারা ভণে শুনো আভি বাঁকেবিহারী
ছোড় কাম কাজ পহু দেখি রাধা তুঁহারি।।

বৃন্দাবন মে তুঁহু রাস রচাই
কয়সন ভুল গয়ে প্রেমক বাণী।।

শাওন মহিনা বরষণ তেজ
আকেলি রাধা বঠসি সজায়ে সেজ।।

চান্দ তারো সে মাঙ্গ সজাবক
বিধিবৎ সঙ্গ রাই সঙ্গম রচাবক।।

মোহন রূপ দেখত হরি হরি বোলি
 মিলি সখীগন সব রাস খেলি।।

দিলীপ নন্দিনী ঝুট না বোলব
জগ সারা যুগল রূপ হেরব।।

(হরিবোল হরিবোল, রাধেকৃষ্ণ রাধেকৃষ্ণ)


                                                                       #ছবিঋণ Abhishek Nandi

|কেয়া চক্রবর্তী | ২৯শে জুলাই|

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা | | ২-য় বর্ষ ||












কেয়া চক্রবর্তী
ও চাঁদ_____

ও চাঁদ তোমার মোহিনী ওই রূপে,
মন চায় যাই চলে মেঘের পানসি চেপে,
তুমি আছো মোর অনুভবে, ধরা ছোঁয়ার বাইরে,
বাতায়ন পথে তোমায় দেখেই মনের সাধ আমি মেটাই রে।।

পূর্নিমা রাতে তোমার মায়াবী আলো 
 পড়ে এসে যখন আমার বাতায়নে,
তোমার জোছনার ওই আলোকছটায়,
উদাস হয়ে অপলকে থাকি চেয়ে আনমনে।।

আঁধার রাতের ঘুচিয়ে দাও তুমি সকল কালো,
তোমায় নিয়ে হারিয়ে যেতে উদাসী এই মন চায়,
হাজার তারার আলোক বাতি লাগে না তখন ভালো
তোমার প্রেমে পাগল পারা কাব্য লিখি তায়।।

হঠাৎ যখন ঈর্ষাকাতর মেঘ এসে তোমায় যায় ছুঁয়ে,
তোমায় দেখতে না পাওয়ার যন্ত্রনায় কেঁদে উঠি ভয়ে,
ও চাঁদ তুমি দূর আকাশে আছো লক্ষ তারার ভিড়ে,
বাতায়নে বসে দেখি তোমায়, আমার নিভৃত নীড়ে।।


শহরের ইতিকথা____

কালের চক্রে ইতিহাসের হয় পুনরাবৃত্তি,
সময়ের খাতে বিলীন হয়ে যায় অতীতের কত স্মৃতি,
চাপা পড়ে গেছে কত মানুষের বুকফাটা চিৎকার
 অন্নের খোঁজে ডুকরে ওঠা বুভুক্ষু মানুষের হাহাকার।।

তবুও আজও নীরব রয়েছে পায়নি যোগ্য সম্মান,
দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় গেছে কত প্রাণ বলিদান,
সভ্যতার ক্রমবিবর্তনে সর্বহারারা আজও উপেক্ষিত,
শাসকশ্রেণীর অত্যাচারে অবহেলিত, নির্যাতিত।।

আজও তারা রয়েছে সুবিচারের অপেক্ষায়,
ভাগ্যের ফেরে যদি কখনোও তাদের বদল হয়,
ভগ্নশহরের হাড় পিঞ্জরে প্রোথিত আছে সেই সব কথা,
যদি অনুভব করতে পারো, কখনো তাদের মর্মব্যথা।।

এখানে শান্তি নেই, এখানে স্বস্তি নেই,
জীবনের কত ফুল মুকুলেই পড়ে ঝরে, তার হিসেব নেই,
অন্ধ গলির নরকে এখানে মুক্তির আকুলতা,
প্রাসাদোপম নগরী যেন বিলাসব্যসনের নিদারুণ রসিকতা।।

মনের কথা___

যখন থেকে পেন্সিল ছেড়ে,
হাতে তুলে নিলাম কলম,
ভুলগুলোকে শুধরে নিয়ে,
ঠিক করার রইলো না কোনোই মলম।।

কলম আবিষ্কারের পর লিখি
মনের কতই না  কথা,
লেখাই আমার মলম ক্ষততে,
ঘুচায় যা মনের ব্যথা।।

কলম আছে তাই লিখতে
পারি মনে আসে যত ভাবনা,
এর আগে লিখে চিরস্থায়ী
করার উপায় এত সহজ ছিল না।।

কলম ধরার মাঝে আছে
এক অসীম আনন্দ,
যা চেঁচিয়ে আমি পারিনা বোঝাতে,
লিখতে সেটা লাগে না তো মন্দ।

দুখের কথা লিখতে গিয়ে
কষ্ট আমার হচ্ছিলো বেশ,
সুখের কথা লিখতে গিয়ে,
দেখি কলমের কালিই শেষ।।

কলমের এক খোঁচাতে 
কত জীবন বদলে যায়,
কেউ সুবিচার যদিও বা পায়
কেউ থাকে বসে অপেক্ষায়।।

কলমের মত পরম বন্ধু
লেখকের কেউ নেই আর,
কত সহজেই বর্ণিত করতে পারে,
নিপীড়িত আর্তের চিৎকার।।


প্রতিবাদী_____

যদি চুপ করে থেকে অন্যের কথায় দাও তুমি সায়,
তোমার থেকে ভালো মানুষ আর কেউ নেই এই দুনিয়ায়,
যেই মুহুর্তে তুমি অন্যায়ের করবে প্রতিবাদ,
চলতে থাকবে সহস্র বাদানুবাদ।।

যার কাছে এতদিন ছিলে নয়নের মণি,
আজ তুমি হয়ে যাবে, সাক্ষাৎ শনি,
অন্যায়ের বিরুদ্ধে চুপ থেকে আমরা পরোক্ষে শক্ত করছি তাদের হাত,
প্রতিবাদী হয়ে ভেঙে দাও তাদের এই আঁতাত।।

সারাজীবন মুখ বুঝে সহ্য করেছি কত অত্যাচার,
এবার তবে গর্জে উঠে তোলো প্রতিবাদের ঝড়,
বুঝিয়ে দাও আমরা আর সইবো না অনাচার,
থাকবো না আমরা কুলুপ এঁটে, প্রয়োজনে তুলে নেবো হাতিয়ার।

নারী পুরুষ সমাজে উভয় উভয়ের পরিপূরক,
সভ্য সমাজ গড়তে হলে এদের মাঝের বৈষম্য দূর হোক,
আর কতকাল সইবে নারী অত্যাচার আর বঞ্চনা,
এবার নারী হও প্রতিবাদী, নয় তো তুমি ফেলনা।।


কবে হবে প্রতীক্ষার অবসান?___

বলতে পারো, কবে হবে এই প্রতীক্ষার অবসান?
দুপুর থেকেই মেঘলা হয়ে আছে যে আসমান,
সাগরতীরে বসে আছি হয়ে আনমনে,
স্মৃতিগুলো ভিড় করে আসে কেন সন্তর্পণে?

সাগরতীরে বইছে হাওয়া, দুলছে দূরে ঝাউ,
একলা বসে অভিমানীর পাশে নেই তো কেউ কোথাও,
হাওয়ার তোড়ে দুলছে কেমন তার কেশ,
তরঙ্গের দিকে আনমনে চেয়ে আছে হয়ে নির্নিমেষ।।

তরঙ্গের ওঠানামা দেখে সে অবাক নয়নে,
সাগর এসে মিশেছে সেথা বেলাভূমির সনে,
যেদিকে তাকাই সেদিকেই সুনীল জলরাশি,
ঢেউয়ের টানে যে সবকিছুই যাচ্ছে কূলে ভাসি।।

সাগরে ওঠে ঊর্মিমালা সাদা ফেনা রাশি রাশি,
আকাশ যেথা দিগন্তে যায় মিশি।।
এসব কথা ভাবতে ভাবতেই আঁখি করে ছলছল,
সাগরজলে মিশে যায় অভিমানীর চোখের জল।।

আর কতদিন এভাবেই করে থাকবে অভিমান,
আমার জন্য কাঁদে না বুঝি তোমার কঠিন পরান,
কোনদিনই আসবে না কি ভাঙাতে মানিনীর মান,
বলতে পারো কবে হবে এই প্রতীক্ষার অবসান?


Tuesday, 28 July 2020

|জারা সোমা| ২৮শে জুলাই|

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা | | ২-য় বর্ষ ||












জারা সোমা
স্পর্ধার পদাবলি______

সখীলো এ বিরহ মোহে সহন না হোয়ি
পিয়া সন এ দূরি অব কাটি ন যয়ি।।

মরণ না  আওয়ল এয়সন ভাগ
 ঝলসি যায় রোজ হিয়াকে তাপ।।

জনম জনম তোঁহে পুজব রহি দাসী
দেহ মন সমপনএ  রাধা উদাসী।।

বিধিবৎ সাধন  এ বর মাঙগি
 জনম লেবে তুঁহু সঙ পিরিতি লাগি।।

মোহন বাশরী শুনত ছাতি ফটসি যায়ি
  কৃপয়া করস তুঁহু ধুন শুনাই।।

হে মোরি কানহা ই দুখত রহি
মরণ কাল মধুর বদন দেখত ন পায়ি।।

একবার দরশন দেহ মোরি কানহা
বিনতি করল অভাগী আও অব কালা।।

   মোহনবেশ ধরল মথুরাকে নরেশ
  তনডুল সঁপি  যাঁউ যোগনী বেশ।।

জারা ভণে নন্দলাল কাহে করল তুঁ দেরি 
রাইকিশোরী যোগন বনি ফেরি।।

যাও অভি গোকুল কুঞ্জতলে
রাধারানী রোয়ত রহি নয়নজলে।।

দো বোল মিঠা বলিস ওহিসন
ফিরব আশ ফির পিয়া কে দরশন।।

রাধারানী মধুর  হাসি হসিব
তুঁহু সন ফির ও পিরিতি রচিব।।

যাও ওহে কালা অব দের ন হোই
বরষন মহিনা যব পিয়াস মিটাই ।।

কৃপা কর ওহে নন্দলালা 
রাই যদ রোয়ত হব নাহি ভালা।।

প্রভার নাতিন ভণে শুনো সখীগন
রাধেকৃষ্ণ রাধেকৃষ্ণ বোলি করব সমাপন।।



                                                                  #ছবিঋণ Shilpi Sarkar Roy

| দেবযানী বসু | ২৮শে জুলাই|

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা | | ২-য় বর্ষ ||












দেবযানী বসু  
নৈঃশব্দ্যের যূথচারিতায়____ 

নৈঃশব্দ্যের যা যা শব্দ ভিডিও করা শেষ। 
মাংসের আদিমতা ছাড়িয়ে খালি দাঁত আর খড়্গ চেঁচে নেয় মানুষ আজ। বনের সৌন্দর্য বাড়ে পশুপাখিদের রমণ কলায়। ঠিক অবতল লেন্স ছিন্নভিন্ন করে পরাজিত প্রেমিক রক্ত তোলে।
 অক্ষরের মাংসল মেধা স্ট্র বসিয়ে শুষে নিয়েছে উত্তরীয় ঢাকা শিম্পাঞ্জি।  ভিখারিরা এক হও সুর তুলেও চুপ হয়ে গেছে ভিখারিরা নিজেই।
 সাইকেল চালাই কেননা হাঁটুতে বিগত প্রেম চেপে বসছে। টেবিল চেয়ার আর কফিকাপ হুল্লোড় শুষে চুপচাপ এখন। পরাজিত প্রেমিক রক্ত তোলে মাংসল অক্ষরে অক্ষরে।

|শুভাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়| ২৮শে জুলাই|

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা | | ২-য় বর্ষ ||












শুভাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়
অনুভবে____

' আসা যাওয়ার পথের ধারে..কেটেছে দিন গান গেয়ে মোর কেটেছে দিন..যাবার বেলায় দেবো কারে...'
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কন্ঠ। ঊনসত্তর সালের কোনো এক সময় হিজ্ মাস্টার্স ভয়েস থেকে গানটি রেকর্ড করা হয়েছিল। আশির দশকের প্রথম দিকে বাড়ির পুরনো ইলেকট্রিক রেডিওটা খারাপ হয়ে যাওয়ায়  একটা নতুন ট্রানজিস্টার রেডিও এসেছিল। ঠাকুর্দার খুব প্রিয় রেডিও ছিল সেটা। ওঁর ঘরেই রাখা থাকতো। দুপুর বেলায় দাদুর পাশে বসে অনুরোধের আসরে গানটি প্রথম শুনি। কতই বা বয়স তখন। গানের ভেতরে প্রবেশ করে তার রসাস্বাদন করবার সাধ্য তখনো গড়ে ওঠে নি। গড়ে ওঠা সম্ভবও নয়। কিন্তু কি একটা অদ্ভুত ভালোলাগা জন্মে গিয়েছিল গানের প্রতি যতটা,তার থেকেও বেশি হয়তো সুরের প্রতি। মাঝে মাঝেই রেডিওতে গানটা দিত আর আমিও মনোযোগ দিয়ে শুনতাম। 
কতকাল কেটে গিয়েছে। আমার সে আসা যাওয়ার পথের ধার দিয়ে কত স্রোত বয়ে গিয়েছে। ঠাকুর্দা গত হয়েছেন বহুকাল হয়ে গেল। জীবন থেকে অনেক কিছু হারিয়ে গিয়েছে, বিদায় নিয়েছে। আবার অনেক কিছু পেয়েওছি..তার মূল্যও নেহাৎ কম নয়। 
সে পুরনো রেডিও খানা আজও রয়ে গেছে ঘরে।এখন আমার ঘরে। স্থানে স্থানে রঙচটা। বিবর্ণপ্রায়। ব্যাবহার হয় না অনেকদিন। আজ দুপুরবেলায় দাদু ঠাকুমার স্মৃতিবিজরিত আমাদের সে ৩৫ নম্বর মুক্তারাম বসু স্ট্রিটের পুরনো বাড়ির কথা(যে বাড়ি ছেড়ে এসেছি অনেককাল) গল্প করতে করতে খেয়ে দেয়ে উঠে কি মনে করে রেডিওটা 
 একটু চালাতে গিয়ে হঠাৎই গানটা আবার কানে বেজে ওঠে... সেই একই মানুষের কন্ঠ। শুনতে শুনতে শৈশবের সেই হারিয়ে যাওয়া আস্বাদ যেন বর্ষার মেঘের মতো অদ্ভুতভাবে নতুন করে ফিরে এলো আমার মনে..।  
জানি, ইউ টিউব সার্চ করলেই হয়তো বারবার গানটি শুনতে পাবো। কিন্তু চাইলেই কি আর পৌঁছাতে পারবো সে ৩৫ নম্বর ডাউন মেমোরি লেন এ, ফিরে দেখা স্মৃতির অলিন্দে, বিবর্ণপ্রায় রেডিওটার মতো করে?? 
জীবন বদলে যায়। শৈশবের আস্বাদ বোধহয় বদলায় না, যার মাঝেই লুকিয়ে থাকে বেঁচে থাকার রসদ...আসা যাওয়ার পথের ধারে ছড়িয়ে থাকা মালার ছিন্ন বিচ্ছিন্ন  ফুলগুলো যেটুকু পেরেছি যত্ন করে রেখে দিয়েছি,  হয়তো আমার ছোট্ট বাবলুর জন্যই...

Monday, 27 July 2020

| আপনার সাথে রবিবারে ৫টি কথা | | কল্যাণ চট্টোপাধ্যায় |

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা | | ২-য় বর্ষ ||


আজ মল্ল সাহিত্য -পত্রিকার "আপনার সাথে রবিবারে ৫টি কথা"- থাকছেন কবি কল্যাণ চট্টোপাধ্যায় নয়ের দশক থেকে লেখা প্রকাশিত হয় কল্যাণ দা সাহিত্যের পাশাপাশি ফোটোগ্রাফি এবং ছবি আঁকার মতো শিল্পের সাথেও যুক্ত 



আমি অভিজিৎ দাসকর্মকার । আমি মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকায় নতুন ১টা বিষয় প্রতি সপ্তাহে বের করছি 
" বরিবারের ৫টি কথা "। এই পর্বে আমি আপনার সাথে কথা বলার জন্য এসেছি। আপনার ব্যস্ত সময় থেকে আমাদের এবং এই ই-পত্রিকাকে ও আপনার কবিতার পাঠকদের জন্য আপনার কথাগুলো বলেন।

কেমন আছেন আপনি এবং আপনারা এই সংকটের কালে?
মল্লসাহিত্য ই-পত্রিকার ‘রবিবারের ৫টি কথা’ বিভাগে আমাকে আমন্ত্রণের জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।প্রথমেই বলে রাখি আমি কবি নই, কবিতাকর্মি মাত্র।কবি হবার ক্ষমতা বা ধৃষ্টতা কোনোটাই আমার নেই।শুধু্ এটুকুই বলে রাখি, কবিতাকে আমি ভালোবাসি।কবিতাই আমার জীবন এবং নিয়তি।
সংকট বললে কম বলা হবে।এটা একটা মহাসংকটের সময়। আমাদের আগের অনেক প্রজন্মই এমন মহাসংকটের মুখোমুখি হয়নি। আমরা এর সাক্ষী রয়ে গেলাম।একটি বদ্ধ জীবনের প্রাণী বলে নিজেকে এবং নিজেদের মনে হচ্ছে।ভেতরে ভেতরে নিজের মন ও অস্তিত্ব ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে।কোনো নতুন চিন্তা নেই মনে, যেন চেতনাহীন হৃদয়। বারবার মনে হয়, এর শেষ কোথায় সেদিকেই তাকিয়ে থাকতে থাকতে একদিন আমরাই শেষ হয়ে যাবো না তো?
-----
১) আপনি কবে থেকে কবিতা লিখছেন এবং সাহিত্যের সাথে যুক্ত?
 কবিতা বা সাহিত্য আমি সৃষ্টি করবো এরকম চিন্তা ও চেতন আমার মনের ভেতর বাসা বেঁধেছিল স্কুল জীবনে ক্লাস সেভেন-এইটে পড়ার সময়, ১৯৮৬-৮৭ সাল থেকেই।ক্লাস টেন থেকে খাতায় কলমে তার বহিঃপ্রকাশ।সালটা ১৯৮৯-৯০।এই সময়েই সত্যজিৎ রায় সম্পাদিত ‘সন্দেশ’ পত্রিকায় আমার প্রথম লেখা গল্প প্রকাশিত হয়।‘সন্দেশ’-এর বেশ কিছু সংখ্যায় আমার আঁকা ছবি ও ফোটোগ্রাফিও প্রকাশিত হয়।যে সংখ্যাগুলির সম্পাদক ছিলেন স্বয়ং সত্যজিৎ রায়, লীলা মজুমদার ও নলিনী দাশ-এর মতন মহান মানুষেরা।সেই সময়ে আমি কবিতার থেকে বেশি গল্পই লিখেছি।যদিও তার খুব কম লেখাই প্রকাশিত হয়েছে।এই সময়ে কবিতাই বেশি প্রকাশিত হয়েছে এবং এখনও লেখালিখির মধ্যে কবিতাই বেশি। আজ অবধি নিরবধি চলে আসছে তার নিরলস চেষ্টা, চর্চা।
২) আপনি ক্যানো কবিতা লেখেন? কখনো যদি কবিতায় না আসতেন অবসর সময় কিভাবে কাটাতেন?
 কবিতা না লিখে বেঁচে থাকতে পারবো না, তাই কবিতা লিখি।নিজেকে সৎ রাখবো বলে কবিতা লিখি।বিশ্বপ্রকৃতির সাথে তথাকথিত ঈশ্বরের সাথে নিজেকে যুক্ত করবো বলে, নিজেকে তাদের সাথে বিলীন করবো বলেই আমার কবিতালেখা।
মন তো স্রোতের মতন।স্রোত মনকে  যেদিকে বেশি টেনে নিয়ে যায় মন সেদিকেই যায় ও অবস্থান করে।আমার মনেরও কবিতা ছাড়া আরো বেশকিছু বিষয় ছিল, যেমন ফোটোগ্রাফি, গান, ছবি আঁকা।স্রোত যদি কবিতার কাছে আমার মনকে নিয়ে গিয়ে আছড়ে না ফেলতো তবে ওইগুলির কোনো একটিতে তো নিয়ে গিয়ে ফেলতোই, তাদেরই একটা না হয় আমার অবসর যাপনের বিষয় হতো।
৩) দাদা আপনিতো অনেক বছর পত্রিকা প্রিন্ট আকারেই সম্পাদনা করছেন। বিভিন্ন ধরনের লেখা নিয়েও থেকেছেন। আচ্ছা ১জন সম্পাদক হিসাবে এইসময়ে আপনার কাছে কেমন ধরনের কবিতা বেশি প্রাধান্য পাবে?
প্রশ্নটি আমার কাছে খুব পরিষ্কার হল না।তবু বলি শুধু মাত্র এই সময়েই নয়, সবসময়ই আমি চাই এই মুহূর্তে যে নতুন কবিতাটি লেখা হল, তার নির্মাণ, শব্দ প্রয়োগ, প্রকাশের ভঙ্গি সেটাকে পেরিয়ে যাক অব্যবহিত কিছু সময় পরে লেখা কবিতাটি।আসলে বলতে চাইছি প্রত্যেক কবির চেষ্টা করা উচিত তার প্রতিটি লিখিত কবিতাকে নতুন ভাবে প্রকাশ করা।নিজেকে ভেঙে ভেঙে এগিয়ে যাওয়া।প্রতিটি কবিতাতেই যেন পরীক্ষামূলক উত্তরণ ঘটে।তবেই নতুন কবিতার জন্ম হবে। এটা সব সময়ই একজন কবির কাছে পাঠকের কাম্য।
 ৪) আপনি তো প্রিন্ট পত্রিকার সাথে সরাসরি যুক্ত এবং ওয়েবজিনেও লিখছেন। সম্পাদক হয়ে এই ২টি ভিন্ন মাধ্যম web.mag, print media-কে আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
এগিয়ে যাওয়া অর্থাৎ উত্তরণই মানবসভ্যতার বেঁচে থাকার একমাত্র উদ্দেশ্য।পরিবর্তন ও আধুনিকতাই মানুষের গ্রহণ করা উচিত।জীবনকে একটি নির্দিষ্ট পরিসরের মধ্যে ধরলে আমার জীবনের বেশির ভাগটাই প্রিন্টমিডিয়ার সাথে কেটেছে।আমার নিজের পত্রিকাও প্রিন্টমিডিয়ার। তা বলে আমি দাবি জানাবো না যে প্রিন্টমিডিয়াই আমাদের প্রকাশের শ্রেষ্ট মাধ্যম।এই যে বললাম আধুনিকতা।আমরা তো চাইবো আধুনিকতার সর্বশেষ পর্যায়টিকে ছুঁয়ে যেতে।আমাদের প্রকাশের মাত্রা যে মাধ্যমে সর্বোচ্চ সূচকটি ছুঁয়ে যাবে আমরা সেটাই গ্রহণ করবো।মোবাইলফোনের অ্যানড্রয়েড ভার্সান এসে ‘ওয়েব’ এই মাধ্যমটিকে অনেক বেশি প্রসারিত করেছে।আমরা চাইবো প্রিন্টমিডিয়ার পাশাপাশি আমাদের বৃহত্তরো প্রকাশ ঘটুক ওয়েব মাধ্যমেই।মহামারির সময়ে আমরা এই ওয়েব মাধ্যমটির সমূহ ও সার্বিক প্রকাশের একটি সুফল লাভ করলাম।  আমরা যে পথ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি তার সামনেটা যদি অবরুদ্ধ হয়ে থাকে, অথচ আমাকে লক্ষ্যে পৌঁছুতে হবেই তখন তো আমি বিকল্প পথের চেষ্টা করবো।ঠিক সেভাবেই এই মহামারির লকডাউনের সময়ে আমাদের প্রিন্টমিডিয়ার পথটি অবরুদ্ধ, বিকল্প বলতে খোলাছিল ওয়েব মাধ্যমটি।সেটির প্রকাশ যেমন বিপুল আকারে হল, তেমনি বিকল্প পথ হিসাবে অনেকেই এটি ব্যবহারে বাধ্য হল এবং একটি অভ্যাস তৈরি হল যা আমাদের সমাজ ও সভ্যতাকে অনেকটা আধুনিক করলো।বাধাই পারে বিকল্প পথ খুলে দিতে ও সভ্যতাকে উন্নীত করতে।
৫) এখন অজস্র কবিতা লেখা হচ্ছে।বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশও হচ্ছে। কিন্তু তারপর আর কবি এবং কবিতাগুলির হদিশই পাওয়া যাচ্ছে না। আপনার মতে এর কারণ কী?
এখন বা বিগতের প্রশ্ন নয়, যুগে যুগে আমরা এই একই প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছি বারবার।সৃষ্টির পথ এমনই।স্রোত এভাবেই বয়ে যায়।সবকালেই সব শতাব্দিতেই যা সৃষ্টি হয় তার সামান্য কিছু শতাংশ থেকে যায় আলোর ভেতর।বাকি যা সব হারিয়ে যায় কালের গর্ভে।এটাই নিয়ম। কবিতার ক্ষেত্রে আলাদা কোনো নিয়ম নেই, খাটেও না। তবু এই যে এত এত কবিতা লেখা হচ্ছে, প্রকাশ হচ্ছে, কবির জন্ম হচ্ছে তা তো ওই মুষ্টিমেয় কিছু কবি ও কবিতার সৃষ্টিকে আলো ধরে রাখবে বলে।ওই মুষ্টিমেয় কবিতা ও কবিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য যে স্রোতের প্রয়োজন যে জলবায়ুর প্রয়োজন সেইসবই ওই হারিয়ে যাওয়া কবি ও কবিতা।আমাদের দেখতে হবে সাম্প্রতিক কী ঘটছে। আমরা সাম্প্রতিক লেখালিখির থেকে কী পাচ্ছি।নিজেদের স্রোতে কতটা ভাসিয়ে রাখতে পারছি। আগামির কথা আগামি ভাববে।আমি কবিতার জগতে আসন পাবো কিনা, টিকে থাকবো কিনা সেটা বড় প্রশ্ন নয়। আমি কবিতার ভেতর বেঁচে আছি কিনা সেটাই নিজের কাছে প্রশ্ন হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।
 সরাসরি কৃতি পত্রিকার সাথে যুক্ত। এই জার্নিটা একটু share করুন ---
‘কৃতি’ পত্রিকার সাথে যুক্ত নয়, আমিই ‘কৃতি’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক।পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশ হয় ১৯৯৯ সালে।২০১৪ সালে ভারত সরকারের রেজিস্ট্রেশনের কারণে পত্রিকার নাম সামান্য পরিবর্তিত হয়ে ‘কৃতি এখন’ হয়। প্রথমে দীর্ঘদিন কখনও মাসে মাসে, কখনও দুমাস অন্তর আবার কখনও কখনও অনেক দেরিতে দেরিতে প্রকাশ হয়েছে। তবে রেজিস্ট্রেশনের পর ত্রৈমাসিক হিসাবেই প্রকাশিত হচ্ছে।
মূলত কবি দিশারী মুখোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় ও ভালোবাসার থেকেই এই পত্রিকার জন্ম।কবি দিশারী মুখোপাধ্যায় সম্পর্কে আমার কাকা।স্কুল জীবন থেকেই দেখেছি তাঁকে অনেক পত্রপত্রিকা সম্পাদনা করতে।তার প্রত্যক্ষ প্রভাবই আমাকে সম্পাদক (?) করে তুলেছে।তাঁর সহযোগিতা না থাকলে আমার পক্ষে এই কাজ করা হয়ে উঠতো না। পরবর্তীকালে এই সময়ের প্রখ্যাত কবি ও সম্পাদক মাননীয় প্রভাত চৌধুরী আমার পত্রিকার বিভিন্নদিকে প্রভূত সাহায্য করেছেন।এখনও করে চলেছেন। তাঁর কাছে ঋণের কোনো শেষ নেই।আর একজন মানুষ যিনি অফিস নিজের লেখালিখি কলকাতা শহর থেকে অনেক দূরের বাড়ি সামলে দীর্ঘদিন শুধুমাত্র ভালোবাসার টানে স্নেহের টানে ‘কৃতি’-র প্রতিটি সংখ্যার প্রুফ সংশোধন, পেজ মেকআপ ইত্যাদি অতি জরুরি বিষয়গুলি দেখে দেন তিনি এই সময়ের ব্যস্ততম কবি নাসের হোসেন।আমার পত্রিকার প্রকাশে তাকে একজন অভিভাবকের মতোই দেখি।আমার পত্রিকা নিয়ে এঁদের সম্বন্ধে অন্য কোনো পরিসরে বিস্তারিত বলা যাবে।
কৃতি-র সরকারি রেজিস্ট্রেশনের পর সম্পাদনার কাজে নিয়মিত সঙ্গে রয়েছেন আমার স্ত্রী শ্যামাশ্রী মুখোপাধ্যায়।পত্রিকার সহসম্পাদনার কাজে দূর থেকে বিভিন্ন উপদেশ ও নির্দেশ দিয়ে সাহায্য করছেন কবি দিশারী মুখোপাধ্যায় আর কাছে থেকে প্রত্যক্ষ সাহায্যে শ্যামাশ্রী।
না নিজের কবিতা ছাপবো বলে এই পত্রিকা শুরু করিনি। আবার বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদকদের কবিতা আমার পত্রিকায় রেখে তাদের পত্রিকায় আমার কবিতা ছাপাবো বলেও আমার পত্রিকা শুরু করিনি।কেননা, এই সময়ে পশ্চিমবঙ্গের ও পশ্চিমবঙ্গের বাইরের অসংখ্য পত্রিকায় আমার লেখা প্রকাশিত হত। তবে এই সময়ে সবচেয়ে বেশি যে পত্রিকায় আমার লেখা ছাপা হয়েছে সেটি কবিতাপাক্ষিক-এ।সনির্বন্ধ ভালোবাসা ও অল্প বয়সের একটা টান থেকেই এই পত্রিকার শুরু।সেরকম কোনো বিশেষ লক্ষ্যও ছিল না, শুধুমাত্র বন্ধু কবিদের কবিতা ছাপবো বলেই যেন এই পত্রিকা প্রকাশ করা।তবে পরবর্তীকালে কবিতাকেই শিরোধার্য করে কবিতা বিষয়ক বিভিন্ন গদ্য, কবির সাক্ষাৎকার, কবিকে নিয়ে গদ্য এইসবই প্রকাশ হয়েছে।হয়েছে কবিতার কোনো বিশেষ দিক নিয়ে এক একটি নির্দিষ্ট সংখ্যাও।
‘কৃতি’ কোনো বিশেষ ঘরানার কবিতা বা কবির জন্ম দেয়নি, তবে ‘কৃতি’ সব সময়ই চেয়েছে পরীক্ষানিরিক্ষামূলক আপডেট কবিতাটি প্রকাশ করতে।নতুনদের সুযোগ দিতে বা খুঁজে নিয়ে আসতে। তবে এগুলোর সবেতেই যে সফল তা বলবো না।চেষ্টাটা করেছি।একটি লিটল ম্যাগাজিনের যা করা উচিত বলে মনে করি।
আমরা এখনও এইসব কাজের মাঝে আরও নতুন কী কী করা যায় তার চেষ্টায় থাকি।আর চেষ্টা করি পত্রিকাটা যেন আমার জীবনের শেষদিন পর্যন্ত সৎভাবে প্রকাশ করতে পারি।

 প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ রাত্রির নিজস্ব কথা, পুতুলপ্রেমিক, তৃণার জন্যে লেখা, সাঁতার শেখালে না কেন, লেডিস কামরার জানলা, সহকর্মী, অশ্বমেধের ঘোড়া, জলউৎসব, রক্তমাংসগাছ, সূর্যাস্তের কবিতা, ঈশ্বরের আশ্বর্য বাগান
✪✪ আপনার ২টি প্রকাশিত অথবা অপ্রকাশিত কবিতা দিন
কল্যাণ চট্টোপাধ্যায়-র  কবিতা
সঙ্গম

আমিও প্রতিদিন হলুদ অরণ্যে ভালোবাসা খুঁজি
গাছের মতো স্থির স্থাণু হয়ে থাকা শরীর
আলিঙ্গন ও চুম্বনে জাগিয়ে দিতে চাই
যেন তোমার প্রতিটি সুষমায় ঝড় লাগে

কত কাল ঘুমিয়ে আছো পৃথিবীর কোলে
এবার আমার বুকে মাথা রেখে শৃঙ্গারভাষা বলো
যেভাবে বৃক্ষ গাছ তরু প্রত্যেকেই জলবায়ু বোঝে
সিক্ত বৃষ্টিরাতে বৈধ ব্যাভিচারী

আমিও প্রতিরাতে দীপ্ত শরীরের কাছে প্রার্থনাময়
বন্ধুর পথেঘাটে হেঁটে যেতে চাই
মনে হয় জলজ পাহাড় আর অতল হ্রদের ভেতর
আবহমান যাপন করি

নিজের মতন

শেষ পর্যন্ত কেউই তোমাকে বুঝবেনা

যে বন্ধু বলে কাছে আসে
তারও নিজস্ব কিছু কাজ থাকে

কতকাল হয়ে গেল নিঃস্বার্থ শব্দটা নিস্প্রভ হয়েছে

এই যে আমি তোমার কাছে আসি
আর তুমি সরিয়ে দাও
আমার দিক থেকেও কখনও কখনও একই

আসলে এসব কিছুই বাঁচার খেলা
জীবন ব্যালেন্স নিয়ে এভাবেই দিন কাটিয়ে দিচ্ছে

যেভাবে ঋতু আসে জগতে--- চোখ ও মনের ভেতর
আমরাও প্রত্যেকে প্রতিদিন নিজেকে গুছিয়ে নিই
নিজের মতন


   ধন্যবাদ কল্যাণ চট্টোপাধ্যায়-কে উনি ওনার ব্যস্ত সময় থেকে আমাদের মাধ্যমে ওনার সময় আমাদের পত্রিকা এবং সকল পাঠকের সাথে ভাগ করে নিলেন এবং কিছু কথাও সকলের সাথে share করলেন মল্ল সাহিত্য -পত্রিকার তরফ থেকে ওনাকে অনেক শুভকামনা, শুভেচ্ছা এবং অশেষ ভালবাসা রইলো ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন দাদা


Saturday, 25 July 2020

| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা≈ অনুবাদ সংখ্যা |

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা | | ২-য় বর্ষ ||
| অনুবাদ সংখ্যা |

লিন্দা মারিয়া বারো-র কবিতা 
রুদ্র কিংশুক 

লিন্দা মারিয়া বারো (Linda Maria Baros, 1981) রোমানিয়ার কবি। তাঁর জন্ম বুখারেস্টে। তিনি পড়াশোনা করেছেন ফ্রান্সের পারি নগরের সরবন বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্য নিয়ে। রোমানিয়ান ও ফ্রেঞ্চ, দুই ভাষাতেই তিনি লেখেন মৌলিক কবিতা। আর তিনি অনুবাদ করেন দুই ভাষাতেই, নিজের রচনা এবং অন্যদের কবিতা। প্রথম কবিতা গ্রন্থ প্রকাশিত হয় ২০০১-এ। তারপর আরো কয়েকটি।২০০৪- এ প্রকাশিত  তাঁর "ল‍্য  লিভর দ‍্য সিগনে দৈমব্রে" সরাসরি ফরাসি ভাষায় লেখা কবিতা সংকলন লেখা কবিতা সংকলন।

১.

রিং রোডের ওপর 

মফসসলের মেয়েরা কেবল 
               উঠে যায় বড় রাস্তায়
     আমি ইতিমধ্যেই বলেছি সেটা 
     দেয়ালগুলোর ওপর থুথু ফেলা 
               তাদের স্পার্মের লম্বা স্রোত।


করুণাবসত করুনা করোনা তাদের 
     অথবা বিরক্তিতে, বাড়িতে, চিলেঘরে 
তুমি তাদের আত্মা দেখতে পারো না
     কারণ তারা চাবি লুকিয়েছে ।

মেয়েরা মফসসলের 
লোফালুফি করে মেঘ , হাতে ফিতে
তাদের হাসি খোলে না 
পুনরায় আটকানো হাইমেনের মতো
                    রেপিস্টদের উদারতায়।

মফসলের মেয়েরা জীবন্ত 
আমি আগেই সেটা বলেছি।পৃথিবীর মতো।

২.
খনিঘোড়ারা

 যে বাড়ি পালন করেছে তোমায়, হয়তো বলেছে
 খনিঘোড়াদের গল্প রাতের বেলা:
 খনিঘোড়াদের জন্ম ও বেঁচে থাকা গভীরে
 গ্যালারি-দেয়ালের মধ্যে তাদের বাড়ি,
 তাদের টেবিল।
সেখানে তারা খায় অন্ধকার বড় বড় পিস, কয়লার 
তারা খায় হাতড়ে হাতড়ে, বাতির আলোয় 
আর গ্যালারি-দাসের মতো তারা অন্ধভাবে টানে কয়লাভর্তি ট্রাক 
তারা টানে সর্বদা চিরকাল,
 যতদিন ঘোড়াজীবন।
 তারা টেনে আনে আলো উপরিতলে।

 কিন্তু উপরিতলে, আলোয় তারা বাচে না না বাচে না না,
 এমনকি অবসরের পরে, খনি থেকে মুক্তির পরেও না ।
কারণ তারা অন্ধ হয়ে জগতে ফেরে।
তাদের কপালে লাগা অন্ধকার।

আর এভাবে তারা একটু বেশি বাঁচে, পোষমানা। বাতাসও সুগন্ধ তাদের করে তোলে রুপালি,
 ভেঙে-পড়া কয়লা শেডের নিচে, খনির উঠানে
অন্ধ
 যতক্ষণ না তারা আর একবার গর্ভে নামে।

 তাদের বাড়ি অনন্ত অন্ধকার।

Friday, 24 July 2020

|| রোমিও~ মুরারি সিংহ ||

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা | | ২-য় বর্ষ ||












রোমিও~ মুরারি সিংহ
বেলুন অথবা হৃদপিণ্ড_____

সকালে ঘুম ভাঙার আগেই
সে একটা বেলুন টাঙিয়ে দিয়ে গেছে
আমার জানালায়

আজ ভ্যালেনটাইন-ডে নয়,
আমার জন্মদিন নয়
অন্য কোনো সেলিব্রেশনও নয়ও

এমনি এমনিই জানলার রডে বাঁধা হয়েছে
একটা লাল বেলুন
তার থেকে ঢেউয়ের শব্দ আসছে
নদীর গন্ধ আসছে

বারান্দায় রজনীগন্ধা ফুটেছে
এটা কোনো মিথ্যো সংবাদ নয়
অচেনা নৌকোর পালেও হাওয়া লাগল কোথাও
হয়ত

কী জানি, সেই সুখেই সে হঠাৎ
কানে কানেচুমু দিয়ে গেলকিনা

একটা বেলুন
অথবা একটা হৃদপিণ্ড

আমার জানালায়, মাননীযজাঁহাপনা
যেন রাঙামুলোরভৌতধর্মনিয়ে
এখনি কোনো বিবৃতি দেবেন  

|| রোমিও~ নাসের হোসেন ||

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা | | ২-য় বর্ষ ||












রোমিও~ নাসের হোসেন
ঝালর____

একটা কমলারঙের স্পেসকে খাড়া করে রাখা
হয়েছে,স্পেস থেকে কয়েকটা আঁকাবাঁকা নকশারেখা
উৎপন্ন হয়েছে এবং বেরিয়ে গিয়েছে সিলিং পর্যন্ত
ওপাশে একটা কালো দরোজা একটা কালো চৌকো
আয়তাকার চিহ্ণের মতো প্রোরোচিত করছে সেই
কৃষ্ণগহ্বরে প্রবেশ করবার জন্য, কয়েকটা জেড্- চিহ্ণ
স্পেস- এ উৎপন্ন হয়ে এগিয়ে এসেছে মার্বেলের মেঝেতে
যেন- বা চাদরের ঝালর,লুটিয়ে গেছে জলের নিগাঁহে।

|| রোমিও~ প্রভাত চৌধুরী ||

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা | | ২-য় বর্ষ ||












রোমিও~ প্রভাত চৌধুরী
রোমিও 76+

শেক্সপিয়ারবিদ্ সত্যপ্রসাদ সেনগুপ্ত সমীপে

শেক্সপিয়ার রোমিওদের বয়সের কোনো উর্ধ্বসীমা নির্ধারণ করে যাননি , অতএব টুর্নামেন্টটি ওপেন
লেখাটিতে গোপেন থাকবেন না , গোপিনীরা !
গোপিনীরা না থাকলে মৎস্যশিকারিরাও থাকবেন না
তাহলে ঝড়ে দু-চারটি বক !
বকের কথা থাক , কাকের কথাও থাক
রোমিওদের চরিত্রলিপিতে কাক-বকের কোনো উল্লেখ
চোখে পড়ে না , তবে বকেদের মতো একপায়ে দাঁড়িয়ে
থাকে রোডসাইড রোমিওরা

এখানেই জানিয়ে রাখি ক্যাপুলেট এবং মন্টেন্ড পরিবারের সঙ্গে আমি যুক্ত নই।
আমার পাঠ্যসূচি থেকে রাস্তা মুছে গেছে
আমার সমস্ত রোম ও রোমান্স এখন
এনড্রয়েড সিস্টেমেই সীমাবদ্ধ , কাজেই এখন
নো জুলিয়েট , নো ব্লাক ম্যাজিক !

|| রোমিও~ আলোক মণ্ডল ||

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা | | ২-য় বর্ষ ||












রোমিও~ আলোক মণ্ডল
নয় গৃহ জতু____


চারটি দেশলাই কাঠি ঠিকঠাক সাজাতে পারলে একটি বর্গক্ষেত্র হয়
সেই বর্গক্ষেত্রে গাছ লাগাতে পার কিংবা ইট সিমেন্ট দিয়ে ঘর তৈরী করতে পারো
যা তোমার অভিরুচি! 

তবে বারুদের কথা ভুললে চলবে না।

আগুন লুকিয়ে থাকে বারুদেই
একটু ঘর্ষণে যা জ্বলে ওঠে। 

সেখান থেকে একটি কাঠি সরিয়ে নিলে ত্রিকোণ আকৃতি পায়, 
ভালোবাসার প্রতীক চিহ্ন! 

ভালোবাসা থাকলে  বারুদ  মিহিয়ে যায়!

তখন সেটা ঘর নয়, ভালো বাসার ঠিকানা।

|| রোমিও~ পিনাকীরঞ্জন সামন্ত ||

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা | | ২-য় বর্ষ ||












রোমিও~ পিনাকীরঞ্জন সামন্ত
সুদেষ্ণা____

উত্তরের জানালা ছুঁয়ে যে মেয়েটি কবিতা লেখে তার নাম সুদেষ্ণা
সুদূর বীরভূম থেকে যে মেয়েটি কবিতা লেখে 
তার নাম সুদেষ্ণা
শান্তিনিকেতনের ছাতিম তলায় দাঁড়িয়ে যে মেয়েটি প্রতিদিন গান গায় তার নামও সুদেষ্ণা

এই সুদেষ্ণা 
                    আকাশ হতে চায়
                    মেঘ হতে চায়
                    বৃষ্টি হতে চায়
তবুও
এই সুদেষ্ণা নামটি এখানে প্রধান নয়
এই চায় - চায় - এই চাওয়ার উচচারণ টাই
এখানে প্রধান ।

আমি জানি
সুদেষ্ণা একদিন শ্রীকৃষ্ণের বাঁশি হতে পারে
রাধার শাড়ির আঁচল হতে পারে
বৃষ্টি হতে পারে এই সুদেষ্ণা
এই সুদেষ্ণা কবিতা হতে পারে একদিন ।।