সংযুক্তা পাল
দেবনগরীর অরন্যচর — জয়পুর (বাঁকুড়া)
টেরাকোটা শুধু মায়া হয়ে জেগে থাকে এমনটা নয়, জাগিয়ে রাখে ঐতিহাসিক অভিজ্ঞান।স্থাপত্যের অন্তরে খোদাই করা থাকে নীরব দেবত্ব। নিভৃতে জঙ্গল পেরিয়ে এসে যখন সমস্ত ঘুমের আদিমতা ভেক পরিবর্তন করে, গাঢ় হয় আলো-আধাঁরি প্রশ্নেরা তখনই কে যেন নিয়ে যায় পাথরের গায়ে । জীবন্ত হয়ে ওঠে শহুরে লাশ, কথা হয় মৃত্তিকার একান্ত গভীর, গোপন সৌষ্ঠবের সঙ্গে। শুধু মূর্তি নয়, শুধু শিল্প বলেও নয় , সময়ের নক্ষত্র হয়ে কী ভীষণ একাকিত্ব বহন করেও বেদনার একটি গরিমা-যাপনের দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠে গোকুলচাঁদ মন্দির যা মল্লরাজ ১ম রঘুনাথ সিংহের রাজত্বকালে নির্মিত —এমনটা জানা যায় মন্দিরের দক্ষিন দেওয়াল সংলগ্ন প্রতিষ্ঠালিপি থেকে। এটিকেই বাঁকুড়া জেলার সর্বাপেক্ষা বৃহৎ প্রস্তর মন্দির হিসেবে মান্যতা দেওয়া হয় (আর্কিওলজিকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার প্রদত্ত তথ্যানুযায়ী)।
রাজৈশ্বর্যের দ্বিপ্রাহরিক আয়োজন এখানে স্তিমিত , গোধূলিবেলায় সস্পন্দ প্রাণ আর তাদের অভিমান, অভিযানের অদ্ভুত সব খেয়াল।
অনতিদূরে জয়পুরের জঙ্গল। নিরাকার আমাদের বৃত্তিচর্চার বাইরে এক ধ্যানমগ্ন জীবনের সন্ধানে সন্ধে মাড়িয়ে মাড়িয়ে অবশেষে নিস্তব্ধতা। কখনো ঘনত্ব, কখনো বিস্তৃতি; প্রকৃতিও তো আসলে এক পরম সত্তা, যে আদরে, আহ্বানে ব্যপ্তির কোনো সীমাচিহ্ন না রেখেই স্বপ্নে-আলিঙ্গনে গাছ হয়ে থেকে যায়। সেই গাছের প্রতি মায়াই দিনের শেষে বেঁচে থাকার সমার্থক। এক বিশুদ্ধ ঘ্রাণের ইচ্ছা , প্রাণের ইচ্ছা সমগ্র 'আমি'র শরীরে ... ধীরে ধীরে ...এক হাতে অরণ্যেতিহাস , অন্য হাতে নাগরিক ভবিতব্য নিয়ে এ মাটির পৃথিবীতে আমি স্বয়ং যেন এক ফুল্লরা জন্ম।
বেশ লাগলো
ReplyDelete