সায়ন্তনী নাগ
সহপাঠী
মধুময়ের সাথে সদাশিবের রোজ দুবার দেখা হয় প্ল্যাটফর্মে। একসময় ওরা সহপাঠী ছিল। সদাশিব ফার্স্টবেঞ্চ, ঝাঁ চকচকে রেজাল্ট, স্যারেদের প্রিয়পাত্র। মধুময় শেষ সারি, টেনেটুনে পাশ, ‘ধুস, তোর দ্বারা কিস্যু হবে না!’ অথচ স্কুল শেষের পর কলেজে ঢুকেই সদাশিব হারিয়ে গেল। লোকে বলে কোনো মেয়ের ল্যাং খেয়েছিল। যখন ফিরল, তখন ওকে আর চেনা যায় না। এক মুখ দাড়ি, এক মাথা উস্কোখুস্কো চুল, নোংরা দুর্গন্ধযুক্ত পোশাক। এ ঘাট ও ঘাট ঘুরে শেষটায় ঠাঁই নিল স্টেশনে। লোকের ছুঁড়ে দেওয়া পাঁউরুটি কি বিস্কুটের ভরসায়।
মধুময়ের ভরসা হয়েছিল পার্টিঅফিস। দলীয় আনুগত্য এবং বিনাপ্রশ্নে সমর্থন তাকে ঠিক সময়ে একটা সরকারি চাকরি পাইয়ে দিয়েছিল। ডেইলি প্যাসেঞ্জার মধুময়ের এখন ধোপদুরস্ত পোশাক, পিঠের ব্যাগে লুচি তরকারি, জুতোয় মোমপালিশ, পুজোর বোনাস, বছরে একবার সপরিবারে পাহাড় কিম্বা সমুদ্র, মেয়ের ক্যারাটে ক্লাস, ছেলের জয়েন্ট এন্ট্রান্স।
মধুময় আর সদাশিব রোজ এ ওর দিকে তাকায়। মনে হয় দুজনেই দুজনকে চিনতে পারে, কিন্তু কেউই প্রকাশ করে না। একজনের ঠোঁটে বিদ্রুপ ফুটে ওঠে, অন্যজনের চোখে ঈর্ষা। একজন আরেকজনকে ঘেন্না করে, অন্যজন করে করুণা।
কিন্তু কে যে কোন অনুভূতি বহন করে, স্পষ্ট হলোনা আজও।
No comments:
Post a Comment