Saturday, 23 January 2021

জানুয়ারি সংখ্যা≈ সম্পাদকীয় নয় কিন্তু ✪ অভিজিৎ দাসকর্মকার

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ||  অভিজিৎ দাসকর্মকার  

সম্পাদকীয় নয় কিন্তু

আপনারা মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকার প্রথম সংখ্যা থেকে যারা এখনো অবধি লেখা দিয়ে পত্রিকাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারার সাহস এবং প্রশ্রয় দিয়ে চলেছেন,তাদের সকলের কাছে অশেষ ভালোবাসা। আপনাদের এইভাবে পাশে থাকায় মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা তৃতীয় বছরের জার্নিতে সরিক হলো। আমি সম্পাদনা করি এই ই-পত্রিকাটির,কিন্তু সবসময় বলি,কারণ বিশ্বাস করি, এই প্রয়াস শুধু আমার একার নয়,আমাদের সকলের। তাই ভালোবাসার সাথে সঙ্গে থাকুন। পড়তে থাকুন। ছড়াতে থাকুন নিজেদের লেখার লিংক শেয়ার করে।এতে আপনার লেখা সহ পত্রিকাটি ব্যপ্ত হোক প্রতিটি কোনায় ---

জানুয়ারি সংখ্যা≈ কবিতা ✪ নিখিলকুমার সরকার

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ||    নিখিলকুমার সরকার      

 অত্যাগসহন

শহরের পথে শেয়ালেরা একা একা, যশোদির সান্ধ্য ক্যামেরায় 
যে যার মুদ্রায় পোজ দিচ্ছে, ফোটোজিনিক সকলেই 
কারও চোখেে অপার বিস্ময়, অলৌকিক বিহ্বলতা 
কারও শরীরীভাষায় উৎসারিত কামনার হিরন্ময় ঢেউ 
কেউবা লুব্ধক, অপলক দুচোখেে তার তীব্র জিঘাংসা...  তবে 
শেয়ালনির্বিশেষে যশোদির একটুকু ছোঁয়া পেতে চায়, যদিও তা 
বাংলাকবিতায় আদৌ সম্ভব নয় --- শেয়ালেরা না জানলেও 
যশোদি সম্যক জানে, তৎসত্ত্বেও

সকলেই নয় , কেউ কেউ ইনবক্সে থেকে  যায়, অনলাইন যশোদি 
ওদের জন্য চুম্বন-প্রবণ সংকেত চয়ন করে, রাতভর 
গলে যাওয়া জ্যোৎস্নায় সেইসব সাংকেতিক উচ্চারণ --- 
অত্যাগসহন কবিতা, অপ্রকাশিত চিরন্তন...

রহস্যময় এমত বিবর্তন ওদের অজ্ঞাত, যশোদির দেখা পেতে 
ভুলে হুক্কাহুয়া, শহরের পথে তুচ্ছ নাগরিক 

জানুয়ারি সংখ্যা≈ কবিতা ✪ গৌতম রায়

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ||   গৌতম রায়  

ঋকবেদ 

আমাদের ভেতরেও আছে কংসাবতী
বিস্তৃত ক্ষীরাই চর 
অনুশীলনে ফুটে থাকে অজস্র গাঁদা এস্টার 

ফুল তুমি মুগ্ধতায় এ পৃথিবীকে জোড়ার জন্যই
নিয়েছো নান্দনিক জনম

সাবধানী হতে হয়
অতিক্রান্ত যজ্ঞ সফরের পরিণামে
ফল মাটিকে স্পর্শ করলে
মাটিরও নবজন্ম হয়

নবজন্ম মানেতো বর্ধিত দায়িত্বে এগিয়ে যাওয়া অনুশীলনের দুকদম 

জানুয়ারি সংখ্যা≈ কবিতা ✪ ফটিক চৌধুরী

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ||  ফটিক চৌধুরী   

দুপুর-কথা

আমার অরক্ষিত দুপুর কাটে নির্জন নিরালা
নিজেকেই কাটাছেঁড়া করি,ছিন্ন ফালাফালা।
আবার জুড়ে দিই অপরাহ্নে কিংবা সন্ধেবেলা
ক্ষতচিহ্ন এঁকে রাখি,তারপর করি অবহেলা।

দুপুরে তো নিজেকেই দেখি,দেখি নিজেরই রূপ
সবকিছু দেখা কি যায়, নাকি থাকা যায় নিশ্চুপ
তবু অতীত এসে করে ভীড়, কিছু নস্টালজিক
নির্জন দুপুর কি ঝলক দেখায়, দেখায় ম্যাজিক!

দুপুরের নূপুর ধ্বনি শোনা যায় কোন কোনদিন
নিয়ে যায় দিকশূন্যপুরে কিংবা হয়ে যায় বিলীন
এসব দুপুর-কথা শোনে চারদেয়াল নিজ বাসগৃহ
চর্চিত সে সব কথা ছড়ায় রহস্য-জাল, ভয়াবহ।

একটি দুপুর মানে অন্তঃক্ষরণ, সাদা ক্যানভাস
আমার দুপুর-কথা কক্ষনো জানবে না আকাশ।

জানুয়ারি সংখ্যা≈ অনুবাদ ✪ স্বপন নাগ

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ||   স্বপন নাগ    

আধুনিক হিন্দি কবিতার জগতে এ সময়ের উল্লেখযোগ্য একজন কবি হূবনাথ পান্ডের কবিতার অনুবাদ।
হূবনাথ পান্ডে : ১৯৬৫ সালের ১৩ এপ্রিল বেনারসে কবি হূবনাথ পান্ডের জন্ম। সামাজিক বৈষম্য, রাজনীতিকদের নীতিহীনতা, জাতপাত প্রভৃতি তাঁর কবিতায় উঠে আসে বারবার। সরাসরি ভণিতাহীন উচ্চারণ তাঁর। চর্চিত তিনি, বহুচর্চিত তাঁর কবিতা। 'মিট্টী', 'লোয়ার প‍্যারল', 'অকাল' প্রমুখ তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কাব‍্যগ্রন্থ। কবি বর্তমানে মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দি বিভাগের অধ্যাপক। এখানে 'মিট্টী' কাব‍্যগ্রন্থের কয়েকটি বাছাই কবিতার অনুবাদ মাত্র।

मिट्टी 
हूवनाथ पाण्डये

१.

मिट्टी को छुओ
तो ऐसे
जैसा छुता है फूल
खुशबू को
जैसा छुती है किरण
रौशनी को
जैसे छुती है हवा
शीतलता को
छुता है जल
तरलता को
मिट्टी ऐसे ही छुती है
मिट्टी को

১.

মাটিকে সেভাবেই ছোঁও
যেভাবে সুগন্ধ ছোঁয় ফুল।
যেভাবে আলো-কে ছোঁয় কিরণ
শীতলতাকে ছোঁয় হাওয়া
আর তরলতাকে জল।

মাটি
এভাবেই ঠিক ছুঁয়ে থাকে মাটিকে।

२.

मिट्टी को तो
न अग्नि जला सकती है
न जल गला सकता है
न वायु सुखा सकती है
अग्नि, वायु, जल
मिट्टी से मिलते है
तो प्रारंभ होता है
सृजन
जैसे
मनुष्य पुराने वस्त्र
त्याग कर
नए वस्त्र
धारण करता है
वैसे ही
मिट्टी धारण करती है
वनस्पति, पशु, पक्षी
मानव रूपी देह
भेद सिर्फ रूप काम है
सच तो
सिर्फ मिट्टी है

২.

আগুন যেমন জ্বালাতে পারে না
মাটিকে,
গলাতেও পারে না জল,
কিংবা শুকোতে পারে না বায়ু

মাটিতে এসে মেশে যখন
অগ্নি, জল, বায়ু
শুরু হয় তখনই
সৃজন।

পুরনোকে ত‍্যাগ করে যেভাবে মানুষ
ধারণ করে নতুন বস্ত্র,
মাটিও ধারণ করে সেভাবেই
বনস্পতি, পশু, পক্ষী
মানব রূপী দেহ --
রূপেরই যা তফাৎ
সত‍্য শুধু মাটি।

३.

हड़प्पा में मिली है
मिट्टी की
एक नारी प्रतिमा
जिसने पहने हैं
मिट्टी के गहने
पांच हजार साल पहले के
इंसान
जानते थे
नारी हो या गहने
अन्तत: होते है
मिट्टी

৩.

হড়প্পায় পাওয়া গেছিল
এক মাটির নারী মূর্তি --
পরনে মাটির গয়না।

পাঁচ হাজার বছর আগেও
মানুষ জানতো
শেষ অবধি মাটিই --
নারীই হোক অথবা গয়না।

४.

आवां में
मिट्टी जलती नही
ढलती है
एक नए रूप में
पाती है
एक नए रंग
अग्नि
देता है आकार
मिट्टी को

৪.

ভাঁটির আগুনে মাটি
জ্বলে না, শুধু
বদলে পায় নতুন রূপ,
নতুন আর এক রং

রূপ ও রঙের আকার
মাটিকে দেয় অগ্নি বরং।

५.

कई रंग की होती है
मिट्टी
लाल, काली, पीली, सफेद
इंसानों के भी होते है
इतने ही रंग
रंग तो
सिर्फ यह बताते है
कि
सच तो सिर्फ मिट्टी है
रंग तो सिर्फ रंग है

৫.

মাটির অনেক রং
লাল, কালো, হলদে, সাদা
মানুষেরও রং এতগুলি

রং শুধু এ কথাই বলে --
সত‍্য যা, তা শুধু মাটি।
আর রং --
শুধুই রং।

জানুয়ারি সংখ্যা≈ কবিতা ✪ সুশীল হাটুই

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ||   সুশীল হাটুই    

ডাঁসানো পেয়ারার কাছে জলের এসরাজ

আমি বোরোলিনের কাছে
লিরিল সাবানের গন্ধ-সংহিতা না-শুনে,

দুপুরবেলা ডাঁসানো পেয়ারার কাছে জলের
এসরাজ শুনলাম,

তারই মধ্যে ধর্মভিরু পাখিরা হারমোনিয়াম
বাজিয়ে রোদ্দুরে ছড়িয়ে দিল,
নিধুবাবুর টপ্পা,

আর ভিটামিন-বি আমার রক্তে মিশিয়ে দিল,
কিশোরী চাঁদের শীৎকার,

আমি পেয়ারাগাছের নীচে এসে দাঁড়ালাম,
তার গোলাপি ছায়াটি বলল,

তুমি ইতিহাসে হরপ্পা পেয়েছো, এবার অঙ্কে মহেঞ্জোদড়ো পেলে,
পাঠিয়ে দেব মর্গে,

আমি ভয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে এসেছি,
০ (শূন্য) শতাব্দে,

আর ৪৫০ বছর হাঁটলেই রেটিনার মধ্যে
সক্রেটিস... 

জানুয়ারি সংখ্যা≈ কবিতা ✪ দেবযানী বসু

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ||  দেবযানী বসু   

দর্শকদের জন্য

একেক সময় সাফাই গাইতে হয়। সিঁড়ির বাঁদিকের মতলব দক্ষিণদিককে জানাতেই হয়। তার মধ্যে পায়ের দুমদাম সত্তর ছুঁইছুঁই। হলঘরের ফোয়ারার ঠিক নিচে আমার মডেলের হৃদপিন্ড পোঁতা।পার্থ কঙ্কাল সেবির ঘর ঘাড়ের কাছে নাচছে। সুইগি আর অ্যামাজন বোড়ের সম্মান পায়। প্রথম সারিতে। মডেলের আলংকারিক চুম্বন সারাক্ষণ থরথর। সিগারেটের লাইটারে সঞ্জীবনী লুকিয়ে। আবার নতুন বন্ধুত্ব জাগে। মঁ মঁ করে ওঠে নতুন পয়রা গুড়।

নক্ষত্র সাক্ষী

ক্রমশ ভুলছি পুরোনো চার্জার হারিয়ে ফেলার দুঃখ। অনুভূতির এ টু জেড। সূর্য দ্রুত উড়ে চলেছে চোখের পাতায় ডাহুকি পায়ে। তখন বাসুকি শাসনের আমল ঢোকে ঘরে। সাপের দীর্ঘশ্বাস রসায়নাগারের কাচে ধাক্কা খায়। চোখের লোম সব ক্যাকটাসের সাদা কাঁটা। এ বছর দেখা গেল আমরা বরফমানুষ ঠিক রাত বারোটায়।তাই যথেষ্ট। যথেষ্ট শব্দটি প্রথম বিশ্বের নাগরিকদের জন্য মোটেও মোলায়েম নয়। নিচে গাড়ি উপরে পাবের জানলায় ভরাট মুখ রয়েল বেঙ্গল টাইগারের। নির্বাসনের কবিতা হলঘরের ফোয়ারাটিকে লং এক্সপোজারে স্তরস্তরায়িত করে রাখে।


ভিক্ষুনীতি

যথেষ্ট শব্দটির মধ্যে কাশ্মীর ভ্রমণ অন্তর্ভুক্ত করতে পারি নি। ছোট্ট দিনটির সূর্য একটু বেশি গোলাপি ছিল মনে পড়ছে। ঠান্ডার ভিতর যাত্রা শুরু করেছে অপরদিকের চাঁদ। গাছের প্রতিটি পাতা হায়নার জিভ। আরেকটা বাঁক নিলে পাইনশ্রেণি দুলে উঠবে। ওদের ডিজিটাল পদাবলী পড়ি। সিগারেট টেনে নিচ্ছে কুয়াশা। রাতের কথা ভেবে দিন নিজেকে গুটিয়ে নেন।দরকার কথা ভেবে জরায়ু সেভাবে।জ্বলছে নিভছে অর্কিড বৃক্ষের নিচে। আত্মা বেরিয়ে যাবে হয় মুখ নয় পায়ুপথে।

জানুয়ারি সংখ্যা≈ অণুগল্প ✪ রফিকুল কাদির

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ||  রফিকুল কাদির   

উত্তরাধিকার

তিনি পারতেন যত্ন নিতে। কিন্তু নিলেন না। তিনি অবহেলায় নয়, অকারণেই সমস্ত দায় নিজেই চুকিয়ে দিলেন। তারপর সব পাঠ গুটিয়ে কোথায় চলে গেলেন কেউ জানলো না; জানতে চাইলোও না। কেবল এক অব্যক্ত ঘৃণা শান্ত জনরোষে জেগে রইলো।

তারপর কোন এক সকালে রাহেলা বেগমের মৃত্যু হলে কবির সাহেব উদিত হলেন। সমস্ত জনরোষ, পূর্বাপর অবহেলা- সবকিছু উপেক্ষা করে, সামাজিক কৃতঘ্নতাকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে হলেন সমস্ত স্থাবর, অস্থাবরের মালিক।
কারণ তার সনদ ছিল। অথবা ডিএনএ টেস্টেও মিলে যেত; সে রিপোর্টই বলে দিত এই রাহেলা বেগমের উত্তরাধিকার।

তার অবহেলার কথা তাই প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে বসে রইল। জনরোষেরও দরকার ছিল না আর। কেবল ঘৃণা সমাজের কোন এক কোণে চুপচাপ পড়ে রইল। কারণ সে ক্লান্ত।

 

জানুয়ারি সংখ্যা≈ কবিতা ✪ সুবীর ঘোষ

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ||  সুবীর ঘোষ   

হ্রস্বমুখ


কবে যে এ ক্ষত যাবে , কবে লাগবে হাওয়া !

সেই গন্ধ পুরোনো হলেও চারপাশে ক্রমাগত ঘোরাফেরা করে ।

 

যখন নিকটে ছিল বান্ধবরাক্ষসী

তখন যা শুষেছিল রক্তমজ্জাপ্রাণ

তার থেকে ভয়ঙ্কর তার আলোছায়া

        এখনো বাতাসে তার পায়ের দাপট ।

 

অনালোক বিশ্ব ছিল অকর্ষিত দ্বীপভূমি

স্বেছায় খাদের নীচে চলে যাওয়া বাসনায় ছিল ।

শিথিল হয়েছে মুষ্টি ক্রমযোগে

             আমানত শেষের সংকেতে...

 

দীর্ঘ নয় হ্রস্বমুখে আরাম তোমার বেশি

               চৌমোহানি রসে  ।

জানুয়ারি সংখ্যা≈ কবিতা ✪ বিভাবসু

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ||  বিভাবসু      

উচ্ছন্নে যাবে কিনা ভাবো 

নিভৃতে যা লিখেছো, সে সুজনকথা নয় 
আরো গোপন এক অভিসন্ধি 
আরো একাকী এক পর্যটন 
আমার জয়হীন ঘুমের সারাৎসার 

ছুটে এসে বুকের গভীরে বিঁধিয়ে  দিয়েছো নদী 
এবার জলের প্রবাহে, কল্লোলে ডিঙিনাওয়ের মায়া 
একটা ধারাপাতের কান্নাও 
একটা আশ্রয়ের নোঙরহীনতা 

আজ আদরে-ভাদরে পারাপার, পারাবার 
নদীর ভেতরে নারীভাসান 
বীজ পুঁতে রেখে, কেউ গাইছে ভাটিয়ালি 
কে আমাকে বাঁচাতে পারে আর! 

কেউ আর পাশে থেকো না 
আমার মৃত্যুরা আরো কোলাহলময় হয়েছে  
শব্দকে শাসন করতে পারিনি বলে 
নিভৃতে অন্ধত্ব ছড়ানো 

জানুয়ারি সংখ্যা≈ মুক্ত গদ্য ✪ প্রকাশ ঘোষাল

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ||  প্রকাশ ঘোষাল    

শব্দের রিলেটিভিটি  এবং গর্বিত আইকন 

মধ্যরাতে আমি যখন শূন্য দেরাজ খুলি,কিংবা তারা ভর্তি আকাশের নিচে আমার শান্ত জগৎ বিছিয়ে রাখি তখনি প্রকৃতি আর সৃজনশীল পরিবেশের মধ্যে এক অদ্ভুত অভিলেপন ঘটে।এই সংকরায়নের ফলে বহুরৈখিক শব্দের ত্রিমাত্রিক বিন্যাসে দৃশ্যত এক জটিলতার জন্ম টের পাই। যেখানে অবশ্যই মাখন স্বর কিংবা আগুনের ভ্রমণ কবিতার যতিচিহ্ন বদলে দেয়। এও এক গভীর অন্ধকারে যেন টেষ্ট টিউবের ভেতর হৃদপিণ্ড আর শক্তির সাংঘাতিক বিস্ফোরণ।

সত্যি বলতে কি, যদি শব্দের প্রকৃত অবস্থান পরিবর্তিত না হয়, বলা ভাল, লোয়ার স্পেস থেকে আপার স্পেসে না যায় যেখানে চিন্তা,চেতনা বা বোধের মিথস্ক্রিয়ায় বহুমুখীকরণ সত্যিই মৃত বৎসার তকমা পায় তাহলে যে কোন কবিতাই শারীরিক ভাবে দূর্বল হতে বাধ্য। তখন সাদা মাটা পংক্তির বাজার ছাড়া আর কিই বা বলা যায়। আমার ব্যক্তিগত মত এই যে, বিশ্বব্রহ্মাণ্ন্ডের শব্দ নির্মাণ বা বিনির্মাণ যাই হোক না কেন মূলত শব্দের লীলাখেলা স্পেস আর টাইম ওরিয়েন্টেড। ইদানীং অনেক কবিতায় দেখি থিসিস আর অ্যান্টিথিসিসের জারণ বিজারণ। ফলত আমার মনে হয় ক্রমাগত রূপান্তর ক্রিয়ার ফলে শব্দ বুঝি পরিসীমা থেকে ছিটকে বেরিয়ে পড়ছে। যেন মুক্তি বেগ পেলেই আয়োনস্ফেয়ার পেরিয়ে যাবে।বলা ভালো এখানেই অতিআধুনিকতার টাই পরে স্মার্ট হয় কবিতা। নথিভুক্ত ব্যবহারিক যতিচিহ্নের গতিপথ বদলে যায় অতি বিস্ময়ের দিকে। কোন কোন ক্ষেত্রে কবিতার ইউনিভার্সালিটি হয়তো বা পাঠকের চেতন স্তর চুঁইয়ে চুঁইয়ে ক্রমশ অনিবার্যতা লাভ করে। 

আমি আশ্চর্য হই এই ভেবে যে শব্দেরা আজও  ছায়ার নিচে অনন্তকাল কবির জন্য অপেক্ষা করে এবং কবিরা কিভাবে কখন যে ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা পেরিয়ে উৎকেন্দ্রিক বিন্দুতে মিশে গিয়ে বিস্ময়চিহ্ন জাগিয়ে তোলে এবং পাঠকের মগজ খোলতাই করে নিজেরাই কি টের পায় হয়তো পায় কিংবা পায় না। অদ্ভুত এক ঘোর কাজ করে। এখন আর সেই 'নরম নরম ঘুম জেগে থাকে চোখের উপর' গোছের লেখা হয় না।বরং 'ক্ষুদ্রান্ত্রের ভেতর মাসকাবারি হিসেব কষছে রামানুজমের বিদ্যুৎ' অনেক বেশি মাল্টি ডাইমেনশনাল।ব্যাপ্তিরেখার মাত্রাও ছড়িয়ে যায় স্বাভাবিক নিয়মে।পাঠকের ডিগ্রি অফ অবঅজারভেশন পূর্ণসংখ্যা পেরিয়ে যায়।


তাহলে দেখা যাচ্ছে এই যে, আমিত্ববোধ থেকে নিস্তার পেতে কবি বা লেখক যখন শব্দের গর্ভকোষে সাঁতার কাটেন যা বিজ্ঞানের পরিভাষায় ইন অরবাইটাল ওয়েভ ইকুয়েশন, তার বিস্তার দশার মায়াজগৎ তখনি কবিতা আমার কাছে এক নতুন ইথারিয়াল ভার্সান হয়ে মাথার চারপাশে ঘোরে । কয়েক দশক জুড়ে আজও চলছে কবিতায়  সেই বিনির্মাণ পর্বের মেগা সিরিয়াল । স্বীকার করছি, আমিও তার শিকার। এর প্রতিক্রিয়া ভালো না খারাপ সময় বলবে। 

আমার বিশ্বাস এই যে আজ অব্দি কবিতার জন্য যত মতবাদ জন্ম নিয়েছে তা কোনটাই চূড়ান্ত সত্য নয়। এরও আপেক্ষিকতা আছে, যা সামাজিক দায়বদ্ধতার সম্পুরক।বলতে দ্বিধা নেই, নিয়ত্রণহীন কোন লেখাই সাহিত্য বিচার্য নয়। সমুদ্র থেকে মহাকাশ প্রত্যেক পর্বেই লাইন অফ কন্ট্রোল আঁকা আছে যা অবশ্যই বাস্তবিক কিংবা কাল্পনিক এবং বলা বাহুল্য বাধ্যতামূলক। সমুদ্র পারে বিভ্রান্তিকর পতাকা উড়লে বহুমাত্রিক বিশ্লেষণ হতেই পারে। ভাবনার প্রতিসরাঙ্ক বদলে গেলেও তা কখনোই ওসানোগ্রাফি বা কসমোলজির বাইরে নয়।অতি দূর চিন্তায় অনেক গুপ্তস্বর শুনতে পেলেও তা যে বিশ্বতন্ত্রের বাইরে এ তত্ত্ব মেনে নিতে আজও আমি দ্বিধাগ্রস্ত হই। কেননা প্রতিটি শব্দই আমার কাছে গর্বিত আইকন। 

জানুয়ারি সংখ্যা≈ কবিতা ✪ মাসুদুল হক

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ||   মাসুদুল হক    

খাট

আমার সঙ্গে একটা খাট শুয়ে থাকে 

আমার নয় ওর পাকস্থলীর শব্দ শুনতে পাই
শরীরের আড়মোড়া 
বুকের পাঁজরে হাড় মড়মড়িয়ে ওঠে 

হৃদয়ের স্পন্দনে রক্তমন্থিত দিনগুলো;  
মধুরাত জেগে ওঠে সিথানে 
পৈথানে পায়ের মৈথুনের স্মৃতি পড়ে আছে 

আমি ন‌ই খাটটাই আমাকে নিয়ে ঘুমিয়ে থাকে 
পুরোনো দিনের  স্মৃতির ভেতর পাশ ফিরে শোয়
মাঝে মাঝে অযাচিত স্বপ্নে আঁতকে ওঠে 

জানুয়ারি সংখ্যা≈ কবিতা ✪ রথীন বন্দ্যোপাধ্যায়

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ||  রথীন বন্দ্যোপাধ্যায়  

তিন ইয়ারি কথা 

সবুজের মুখোমুখি দাঁড়ালাম একা
যেকোনো সবুজে ঘন ছায়া নামলে বড় অন্ধকার হয়ে যায় এ শহর
এ শহরে আমি বড় একা
অন্ধকারের ভিতর পারদ ঊর্ধ্বমুখী হয়
জ্বর
আসছে
ঝড়ও আসবে
নিঃসঙ্গ তিনজনে বসে কফিকাপে চুমুক দেব
শপিং মলগুলো আবারও রঙিন হয়ে উঠবে
বায়োস্কোপ-এ একসাথে চলবে তিনখানা সিনেমা
সমস্ত রুটের বাস ছুঁয়ে যাবে আমার রঙচটা জামা
তবুও আমি আর জ্বর আর আসন্ন ঝড়
একা একা একা
মুখোমুখি ঘনিষ্ঠ
শহরের সমস্ত সবুজ জাহান্নামে যাক সবুজের ওপর ঘনায়মান অন্ধকারও

প্যারাসিটামল সাথে রাখতে হবে আর
আ্যলজোলামের ভিতর যে ঘুম থাকে, সেটিও 

জানুয়ারি সংখ্যা≈ কবিতা ✪ সোনালি বেগম

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ||  সোনালি বেগম  

গভীরতর অসুখ

গভীরতর অসুখে অসীম শূন্যতা আশংকা
প্রবল ঝড় চূর্ণবিচূর্ণ হৃৎস্পন্দন সাহস সঞ্চয়
রাস্তাঘাটে রুক্ষ কথাবার্তায় বিজ্ঞাপন ধাক্কা
অবাধ্য কণ্ঠস্বর গল্পগুজব রহস্যময় হাসি শোনায়।
যন্ত্রচালিত ক্লান্তি অনুভব পিষ্ট অনুষঙ্গ
অপরাধবোধ নেই তার
          নেই কোনো ভয়ের সংকোচ।
মোবাইল-হ্যাকিং কম্পিউটার-হ্যাকিং তার প্রতিদিনের অভ্যাস
জানি না খোশ-মানুষ কীভাবে মুখোশ-মানুষ হয়!
পুলিশি তদন্ত অনিবার্য একটি ইতিহাস
সাইবার-ক্রাইমে পার পাবে না সে –––
                   নতুন সমাজ-সংস্কার দরকার।


জানুয়ারি সংখ্যা≈ মুক্ত গদ্য ✪ চন্দ্রদীপা সেনশর্মা

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ||   চন্দ্রদীপা সেনশর্মা  

শিশিরের গান

অনিদ্রার গায়ে লেগে থাকে রাত আঠালো বোঁটায় হেমন্তের শিশির ঝরে পড়ে তার পতন কথা বলে :
'তুমি একরকম সৌভাগ্যবতী, নির্জনে কাটালে। 'অন্ধকারে চোখ খুলে ঠাওর করি নির্জন, ভাবি সৌভাগ্যের কথা নিঃশব্দে মাথা নাড়ি সম্মতির মন কি সত্যি মেনে নেয় এইসব রাত্রির আলাপ? টের পাই ভিজে রয়েছে ছাদ, আধখাওয়া চাঁদ তাদের সীমানা ভেঙে দু দুটি ফ্লাইট উড়ে যাবে চমকে উঠে ক্ষীণ কোলাহলে বিরক্তি জানাবে বিদ্যুতের তার আঁকড়ে নিদ্রামগ্ন কাকেরা ওরা জানে ঘরে অনিদ্রার বিছানায় আমি আছি শীতরাতে ছাদে উঠে আসার নিষেধ এবং ওষুধে

রাতরাস্তা উল্লম্ববাতি ভিজছে শিশিরে আমার খুব নিকটেই কেউ বলল : 'মেনে নিচ্ছ সৌভাগ্য আমার কথার ফাঁক ফাঁকি?' লালচে ফুটে ওঠা শরীরের তিলে হাত বুলোতে বুলোতে ভাবি, মিথ্যা নয় হয়তো একাকিত্ব ভাগ্য গড়ে তোলে, সে অর্থে সৌভাগ্য বৈ কি! চকচক করে ওঠে ছোট মাঝারি ওষুধের ফয়েল শিশি, হোমিওপ্যাথি অ্যালোপ্যাথি স্কচরঙে স্বপ্ন নামে দুচোখে ঘুম আসে না খর চামড়া খুঁটি, একটি শুভ্র ক্যানভাসে হেলান দিয়ে কেটে গেল প্রায় মধ্যবয়স, খুব কি একা? মনে এল সমৃদ্ধির বাইরে এলোমেলো বসবাস প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলাম প্রশ্নের প্রতি : 'তুমি কি এসে বসোনি পাশে, নিভৃতি ঘেঁষে বিশ্রামহেতু?' কেউ হেসে উঠল, সেই মুহূর্তে দ্বিতীয় ডোমেস্টিক ফ্লাইটটি উড়ে গেল কা কা কা কা...

রাস্তার মলিন আলো ভরে তুলেছে বিনিদ্র বিছানার বেগুনিফুলের এমব্রয়ডারি, কেউ কি হাত ছুঁল?--হয়তো নিষ্পলক দেখে চলল, বলল : 'বয়স হয়েছে তোমার, রুপোলি চুলে ঢেউ শান্ত হয়েছে, যখন একঢাল হাঁটুছোঁয়া চুল ছিল, তীব্র ঢেউ ছিল, খেলতে চেয়েছিলাম সাঁতারে সাঁতারে কী আশ্চর্য আদিগন্ত ঢেউ নিয়ে তুমি শান্ত ছিলে আমার বৃষ্টির ভিতরে কোনোদিন আসনি অপাপবিদ্ধ খেয়ালে খুশিতে ছুঁয়েছিলে বল, আত্মবিশ্বাসে তুমি কি ছিলে না টইটুম্বুর সৌভাগ্যশালিনী? ' এখন গভীর রাত, চোখ ভারী প্রতিহেমন্তে বিনিদ্র স্বপ্ন ঘিরে থাকে, প্রশ্ন করে, চলে যায় সম্মতির মাথা নাড়ি আমার কি কোথাও যাবার ছিল, আজও আছে?

'Hey, Mr. Tambourine Man, play a song for me
I'm not sleepy, and there is no place I'm going to

Hey, Mr. Tambourine Man, play a song for me

In the jingle jangle morning I'll come followin' you'

রুপোলি চুলে হাত দিয়ে খুঁজি ঘন নিশ্বাস আকাশ এখন ক্রিমসন ঘুমের পরাবৃত্তে আরো একটি রাত মুছে যাচ্ছে, শিশিরজিঙ্গেল