Tuesday 21 January 2020

মৌসুমী রায়

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ , ২১-তম প্রয়াস












অচিনপুর-৩     মৌসুমী রায় 

সারাটা পথ জিয়া আর তিমির নানান বিষয়  গল্প করতে করতে কাটিয়ে দিলো। কটকে পৌঁছে যে যার গন্তব্যে রওনা দেয়, তার আগে ফোন নাম্বার বিনিময় করে। জিয়া কটকে দুদিন কাটিয়ে ফিরে আসে কলকাতায়।জিয়ার মা মেয়ের মধ্যে একটা সুন্দর পরিবর্তন দেখতে পান, আর মনে মনে খুশি হন। জিয়ার হাতে প্রচুর কাজ এখন অনেক ছবি রেডি করতে হবে পরের এক্সিবিশনের জন্য। মাঝে মাঝেই তিমিরের সাথে ফোনে কথা হয়, রাধামাধব মন্দিরের মাসিমা কেমন আছেন জানতে চায়। দেখতে দেখতে মাস তিনেক কেটে যায়, দোলের পর পর কয়েকদিন ছুটি পান জিয়ার মা। জিয়া প্ল্যান করে মাকে নিয়ে মাসিমার কাছে যাবে। মাকে রাজি করিয়ে, সে তিমিরকে ফোন করে বলে, মাসিমাকে বলে দিতে দুদিনের জন্য একটা ঘর রাখতে মন্দিরে। তারা এবার দোলে ওখানেই কাটাবে। 
 দোলের আগেরদিন জিয়া মাকে নিয়ে পৌঁছে যায় তার অচিনপুরে। সেই রিকশাওয়ালা দাদা তাদের রাধামাধব মন্দিরে নিয়ে যায়। ভাড়া মিটিয়ে সে আরো একশ টাকা দেয় আর বলে দাদা বাচ্চাদের জন্য আবীর আর মিষ্টি নিয়ে যেও। এরপর দরজায় কড়া নাড়ে, দরজা খুলতেই সে অবাক। তিমির দাঁড়িয়ে সামনে একটা হলদে পাঞ্জাবি পরে, বেশ লাগছে দেখতে তো। জিয়া জিজ্ঞাসা করে ' আরে তুমি এখানে আমি তো ভাবতেই পারিনি দেখা হবে,ইনি আমার মা তিমির।' সবাই মিলে ভিতরে যায় এবার জিয়ার মা বুঝতে পারেন মেয়ের পরিবর্তনের কারণ। এত সুন্দর পরিবেশে একদিন থাকলে মন শান্ত হতে বাধ্য। মাসিমার সাথে আলাপ হওয়ার পর তো আরোই খুশি হন তিনি।  মাসিমা বলেন জিয়াকে ' খুব অবাক হয়েছ তিমিরকে দেখে?  এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেছেন তিমিরের প্রপিতামহ। আমি তিমিরের পিসিমা হই। চল ঘরে গিয়ে কিছু খেয়ে নেবে। খাওয়া দাওয়ার পর জিয়ার মা আর মাসিমা গল্প করতে বসেন। তিমির জিয়াকে নিয়ে গ্রামে ঘুরতে যায় তার বাইকে বসিয়ে। আজ যেন গ্রামটা খুব চেনা জায়গা মনে হয় জিয়ার। ঘুরতে ঘুরতে বিকেল নামে। ওরা সেই নদীর পারে এসে বসে।  কাকার দোকান থেকে চা খায়।  দূরে সূর্যাস্তটা কি সুন্দর লাগে, লালচে কমলা আকাশ। নদীটাও সেই একই রঙে রঙিন। জিয়ার খুব ভালো লাগে চুপচাপ বসে থাকতে। কিন্তু আবারো সেই নদীর ওপারে চিতার আগুন দেখে জিয়া উঠে দাঁড়ায়। তিমির জিজ্ঞাসা করে 'কি হল উঠে গেলে বাড়ি যাবে?' জিয়া জানায় সে এই দৃশ্য একদম সহ্য করতে পারে না।  যেদিন থেকে বাবা চলে গেছে সেদিন থেকেই। তিমির বলে ' জিয়া এটাই বাস্তব সবার জীবনে, একে এড়িয়ে যাওয়া যায়না। আমরা সবাই একদিন ফিরে যাব। সুতরাং এর থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখে লাভ কি। যে পুড়ছে সে ভালো না মন্দ, পাপি বা পূণ্যবান এখন এসবের আর কোন মানেই নেই। সে নেই এটাই ধ্রুব সত্য। চল তোমায় জোর করে বসিয়ে রাখব না, শুধু একটাই কথা বলব জীবন খুব সুন্দর দান ঈশ্বরের। সেটা তোমাকেই সুন্দর রাখতে হবে, নিজের সাথে মানুষের কথা ভাবতে হবে। নাহ বড্ড জ্ঞান দিয়ে দিলাম চল চল দেরি হচ্ছে।'
 সন্ধ্যা আরতির পর জিয়ারা দোতলার ঘরে যায় সেখানে গিয়ে তিমিরের অসুস্থ মায়ের সাথে আলাপ হয়। উনি একেবারেই বিছানায় শোয়া। ওঠা হাঁটা একেবারেই বন্ধ। হয়ত বেশিদিন সময় নেই, তাও হাসিমুখে অনেক কথাই বলেন। ওরা বেশিক্ষণ থাকে না উপরে, নিচে এসে খাওয়া সেরে ঘুমাতে যায় পরের দিন দোল।  জিয়া আর তিমির মন্দিরের উঠানে দাঁড়িয়ে পূর্ণিমার চাঁদটা দেখে। আগেও কি চাঁদ এত সুন্দর ছিলো?  তিমির জিয়ার কাঁধে হাত রেখে বলে ' যাও ঘরে এবার বিশ্রাম নাও সারাদিন অনেক ঘোরাঘুরি হয়েছে। কাল দেখবে এখানে কেমন আনন্দ হয়।'
জিয়ার মন আবার ভারি হয়ে যায়, না সে তুতানের জায়গায় আর কাউকেই ভাবতে পারবে না। কিন্তু তিমিরকেও সে এড়িয়ে যেতে পারছে না কেন? 

ক্রমশ.... 

No comments:

Post a Comment