Friday, 17 January 2020

মৌসুমী রায়

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ , ১৭-তম প্রয়াস












অচিনপুর-১       মৌসুমী রায় 

জিয়া হটাৎ করেই অচেনা একটা স্টেশনে নেমে যায়। তার যাওয়ার ছিলো কটকে একটা আর্ট এক্সিবিশনে। পেইন্টিং গুলো আগেই চলে গেছে। কেন জানেনা তুতানের কথা মনে পড়াতেই বুকের ভিতর তুতান নামের কাঁটাটা বিঁধতে থাকে আর সে রক্তাক্ত হয়। যাই হোক নেমে তো পড়েছে এবার কি করবে, কোথায় যাবে থাকবে কিছুই জানেনা। স্টেশনের বাইরে এসে দেখে দু চারটে রিকশা দাঁড়িয়ে, তাদেরই একজনকে ডেকে সে জানতে চায় 'দাদা এখানে দেখার মত কোন জায়গা আছে, আর থাকার কোন হোটেল?' লোকটি বলে এখানে দুটো পুরানো মন্দির আর একটা শীতকালে শুকিয়ে যাওয়া নদী আছে বেশির ভাগটাই চর তার,আর রাধামাধবের মন্দিরে থাকার ঘর পাওয়া যায় কিন্তু সেটা খালি আছে কিনা সে জানেনা। জিয়া উঠে বসে রিকশায়, গ্রামের সবুজ গাছপালা আর চোখ ধাঁধানো হলুদ সরষের ক্ষেত দেখতে দেখতে মন্দির দুটো দেখে ফেলে। একটা শিব মন্দির আরেকটা দুর্গা মন্দির। বাংলা আর ওড়িশার মেলানো ধাঁচে তৈরি মন্দির গুলো। তবে বেশ পুরানো, ভিতরে হয়ত সাপের বাস হবে। এরপর নদীর পারে এসে একটা ছোট্ট চায়ের দোকানে চা আর কয়েকটা লোকাল বিস্কুট খায়। রিকশাওয়ালা দাদাকেও খাওয়ায় জোর করেই। মাত্র একশ টাকায় সে যতটা পথ ঘুরছে কলকাতা হলে পাঁচশো টাকার নিচে নিতোই না। বিকেল নামছে ধীরে ধীরে, নদীর ওপারে আগুন জ্বলতে দেখে জিয়া জানতে চায় দোকানদারের কাছে 'ও কাকা ওই আগুনটা কিসের গো?' দোকানদার বলে ওটা মড়া পোড়ানো হচ্ছে। শুনেই জিয়া এক সেকেন্ড আর দাঁড়ায় না, যদিও নদীর ধারে বসে তার ভালোই লাগছিলো। রিকশায় বসে আর তাকে রাধামাধব মন্দিরে নিয়ে যেতে বলে। ছোট থেকেই সে এই মড়া পোড়ানো বা শ্মশান এসব একদম সহ্য করতে পারেনা।
 কিছুক্ষণের মধ্যেই সে পৌঁছে যায় রাধামাধব মন্দিরে। সে মন্দিরের দরজা খুলে ভিতরে ঢোকে। একজন ভদ্রমহিলা বেরিয়ে আসেন তার দরজা খোলার আওয়াজ শুনে। জিয়া জানতে চায় সে আজ রাত এখানে থাকতে পারবে কিনা? ভদ্রমহিলা হেসে সম্মতি জানান এবং তাকে ভিতরে নিয়ে যান। একটা ঘরের দরজার তালা খুলে তাকে ভিতরে যেতে বলেন। জিয়া অবাক সাদা ধবধবে বিছানা আর বালিশ একটা আলনা ব্যাস আর কিছু নেই। আহ চোখের কি আরাম সারাদিন ঘোরাঘুরির পর বিছানাটা যেন তাকে টানছে। সে ভদ্রমহিলাকে জিজ্ঞাসা করে কত টাকা দিতে হবে?  উত্তরে উনি বলেন তুমি হাতমুখ ধুয়ে নাও আরেকটু পরেই সন্ধ্যাআরতি শুরু হবে। বলে উনি কলতলা দেখিয়ে মন্দিরে চলে যান।  জিয়া বাইরে এসে রিকশাওয়ালাকে দুশো টাকা দেয় আর বলে কাল সকালে এসে যেন তাকে স্টেশনে নিয়ে যায়। লোকটি খুব খুশি হয়ে চলে যায় বলে কাল ১১টায় ট্রেন সে আগেই এসে নিয়ে যাবে। জিয়া হাতমুখ ধুয়ে বিছানায় শোয়া মাত্র ঘুমিয়ে পড়ে। চোখ বুজলেই তুতানের চেহারা ভেসে ওঠে। দু ফোঁটা জল চোখের কোল বেয়ে নামে।

ক্রমশ....

No comments:

Post a Comment