Saturday 18 January 2020

মৌসুমী রায়

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ , ১৮-তম প্রয়াস












অচিনপুর-২           মৌসুমী রায় 

গত বছর জিয়ার বিয়ের কার্ড ছাপানো হয়ে যাওয়ার পর, সে ঠিক করল তানিয়াকে তারই বার্থডেতে বিয়ের কার্ডটা সারপ্রাইজ দেবে।যেমন ভাবা তেমন কাজ। জিয়া তানিয়ার বাড়ি পৌঁছে কলিংবেল বাজায়,দরজা খোলে কাজের দিদিটা। সে একছুটে তানিয়ার বেডরুমের দরজা খোলে। তারপর! পায়ের তলায় মাটিটা যেন সর‍তে থাকে। এও কি সম্ভব! তুতান আর তানিয়া খুব ঘনিষ্ঠ অবস্থায়। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারেনা জিয়া, একি তার তুতান? তানিয়া উঠে কাপড় ঠিক করে কিছু বলার আগেই জিয়া বেরিয়ে আসে রাস্তায়। বিভ্রান্ত জিয়া কোথায় যাবে, কাকে বলবে তার এই সর্বনাশের কথা। বাবাকে হারাবার পর মা একা মানুষ করেছেন, সব ঝড় ঝাপটা থেকে আগলে রেখেছেন। জিয়া বাড়ি ফিরে আসে। মা তখন অফিসে, জিয়া ভাবে সুইসাইড করেনিই তাহলে আর মার মুখোমুখি দাঁড়াতে হবেনা। পরক্ষণেই ভাবে এত স্বার্থপরের মত ভাবছে, মার কি হবে তাকে ছাড়া? জিয়া ফাঁকা ঘরে চিৎকার করে কাঁদে। মোবাইলে তুতান আর তানিয়ার ঘন ঘন ফোন আসতে থাকে। সহ্য করতে না পেরে আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেলে ফোনটা। সন্ধ্যায় মা ফিরলে সে মাকে সব জানায়। উনি বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর উঠে গিয়ে কার্ডের প্যাকেট টা ভালো করে বেঁধে নিচে ডাস্টবিনে ফেলে আসেন। আর জিয়াকে কাছে ডেকে জানতে চান জিয়া কি চায়। জিয়া নিরুত্তর, শূন্য চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। তখন তিনি জিয়াকে বোঝান যে মস্ত বড় ভুলের থেকে জিয়া বেঁচে গেছে, জীবন তাকে নতুন সুযোগ দিচ্ছে। জিয়া এবার নিজের কেরিয়ারে মন দিক। হয়ত ভোলা সম্ভব নয় তুতানকে, তবুও সময়ের বালি সব ঢেকে দেবে। 
 মন্দিরে শাঁখের আওয়াজে জিয়ার ঘুম ভাঙে। চট করে উঠে সে ঘরের বাইরে আসে। মন দিয়ে রাধামাধবের পুজো দেখে। জিয়ার অস্থির মন কেমন যেন শান্তি খুঁজে পায়। পুজো শেষে সবাই প্রসাদ নিয়ে ফিরে গেলে, সেই ভদ্রমহিলা জিয়াকে ডাকেন আর প্রসাদ দেন। তিনি জিয়ার মাথায় হাত রেখে কিছুক্ষণ জপ করেন। কি অদ্ভুত জিয়া যেন আগের সেই ছটফটে মেয়েটার মত হয়ে যায়। উনি জিজ্ঞাসা করেন জিয়াকে 'মা এখন কি মনের ভার কমেছে? তুমি চাইলে এখানে আরো কিছুদিন থাকতে পারো।' জিয়া বলে না মাসিমা আমি একদম ঠিক আছি, আপনি আমার মাথায় হাত রাখার পর কেমন যেন নিজেকে ভারমুক্ত মনে হচ্ছে। আমি আসব আবার আসব এখানে মাকে নিয়ে আরেক মায়ের কাছে।  এরপর জিয়া তাঁর সাথে অনেক গল্প করে তার জীবনের সব কথা বলে। তিনি জিয়াকে বলেন যা কিছু করেন ঈশ্বর তার পিছনে ভালো মন্দ দুই থাকে। তোমার ভালো হয়েছে জিয়া কারণ বিয়ের পর সব জানলে তুমি আরো ভেঙে পড়তে। তার চেয়ে সামনের দিকে তাকাও, জীবন অনেক বড় তোমার অনেক কাজ বাকি। এরপর দুজনে রাতের খাওয়ার খেয়ে ঘুমাতে যায়। পরেরদিন খুব ভোরে আরতির সময় জিয়া উঠে পরে। আরতি দেখে স্নান সেরে মাসিমা প্রণাম করে রওনা দেয়। আজ সে কটক যাবে। তার মনের ঘা শুকিয়ে গেছে অনেকটা। মাসিমাকে কথা দিয়ে যায় খুব শিগগিরই মাকে নিয়ে আসবে। 
 ঠান্ডায় বৃষ্টি জিয়ার দারুণ লাগে, আজ বৃষ্টি নেমেছে। স্টেশনে এসে পৌছায় তার আধ ঘন্টা পরেই ট্রেন। সে ফাঁকা প্ল্যাটফর্মে এক ভাঁড় গরম চা নিয়ে বৃষ্টি পড়া দেখে। শীতটা আরো জাঁকিয়ে নামে। পাশ থেকে কেউ একজন জিজ্ঞাসা করে 'কোথায় যাবেন, এখানে নতুন দেখছি।' জিয়া দেখে একটি বছর তিরিশের যুবক তার পাশের সীটে বসে আছে। সে উত্তর দেয় কটকে আর্ট এক্সিবিশনে। যুবকটি বলে আমি তিমির সেন, এখানকারই বাসিন্দা। আমিও কটক যাব অফিসের কাজে। জিয়া বলে সে প্রথম এসেছে এখানে তার মাসিমার কাছে যিনি রাধামাধব মন্দিরে থাকে। তিমির হেসে তাকায় জিয়ার দিকে, বলে উঠুন ট্রেন ঢুকছে বাকি পথ গল্প করতে করতে যাব। জিয়াও বেশ খুশি হয় তিমিরের সাবলীল ভাবে কথা বলায়। ইনিয়েবিনিয়ে কথা বলা মানুষ সে মোটেও সহ্য করতে পারেনা।

ক্রমশ... 

No comments:

Post a Comment