Friday, 15 October 2021
শারদীয় সংখ্যা ~প্রচ্ছদ ১৪২৮
শারদীয় সংখ্যা ~ শ্রদ্ধার্ঘ্য
শারদীয় সংখ্যা ~সম্পাদকীয় নয় কিন্তু
শারদীয় সংখ্যা ~কবিতায় স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়
শারদীয় সংখ্যা ~ জর্নাল লিখলেন দ্যুতিমান ভট্টাচার্য
শারদীয় সংখ্যা ~কবিতায় দেবাশিস চন্দ
ডেকে ডেকে বলা যেতেই পারে হারিয়ে যাওয়া রেললাইনের কথা
তার রোমাঞ্চ–সফর, ঝরনার কলতান, অসভ্যরকম ভিড় কামরা
একের পর এক সুড়ঙ্গের রোমাঞ্চ, তখন তো ৩৭ সুড়ঙ্গের ঝমঝম
যে অন্ধকারে ভূতেরা সব বাসা বেঁধে থাকত, ভাল ভূত, দুষ্টু কিম্ভূত
টিলার পর টিলা, পাহাড়, উপত্যকা, ঝরনা— জীবনের কত রং
পাহাড়ী রমনীর উদ্ধত স্তনে লেগে আছে কত শতকের লাঞ্ছনা
ভোরের আলোর মতো কমলালেবু—হারেঙাজাও, জাটিঙ্গা
হাফলঙে ঔপনেবেশিক কাঠের দোতালায় দুপুরের চিকেন–ভাত
আহা, পাহাড়লাইন যদি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে চলে যায় দক্ষিণ মেরু
সেখান থেকে টন টন বরফ এনে শিলচরের আকাশে লেপে দিলে
গরম তো যাবে কমে। আহা! গরমকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তখন
বসবে কবিতার আসর, ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে মাফলার গলা
বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে কাকতাড়ুয়ার নকল পোশাকে মুখ ঢেকে
আমারা তখন স্লেজ গাড়িতে সওয়ার, এ–বাড়ি ও–বাড়ি, দরজায়
দরজায় আনন্দ–হুল্লোড়, কত বাড়ি পড়ে আছে জনশূন্য চৌকাঠ
অতীতের চিঠির ওপর স্মৃতির গালা লাগিয়ে আমরা বন্ধ করে
দিতে চাইছি সব পথ— ডাইনে–বাঁয়ে, আরও কত না দিক
শারদীয় সংখ্যা ~কবিতায় পার্থজিৎ চন্দ
শারদীয় সংখ্যা ~কবিতায় মন্দাক্রান্তা সেন
শারদীয় সংখ্যা ~অণুগল্পে ব্রতী মুখোপাধ্যায়
মধুসূদন
মধুসূদন আমার কাছে হঠাৎ হঠাৎ আসে। একেকদিন আসে। আর আসেও সারাদিন খাটাখাটনির পর, সন্ধে নামলে পর।
মধুসূদন আমার ছেলেবেলার স্যাঙাৎ। স্কুল লাইফ একসঙ্গে। কলেজ লাইফ একসঙ্গে। এখন যেদিন আসে, আমরা প্লাস্টিকের চেয়ার নিয়ে ছাদে উঠে যাই। দক্ষিণ দিকে মুখ করে মুখোমুখি বসি। মেঘের ভেতর চাঁদ, মেঘের বাইরে চাঁদ।
আমরা কথা বলি। স্কুলদিনের কথা। কলেজদিনের কথা। বন্ধুদের কথা। সাইকেল করে খালশিউলি পেরিয়ে গিয়ে একবার আমরা কীভাবে হারিয়ে গিয়ে ভয় পেয়েছিলাম, সেইরকম কথা।
মধুসূদন খুব ভয় পাচ্ছে আজকাল। বলছে, ফ্যাকট্রি্টা যেকোনো দিন বন্ধ হয়ে যাবে।
কলেজে যখন পড়ি, আমি ঋতুকে চাইতাম। ক্লাসে ঋতুই ছিল সবচেয়ে ঝলমলে। ঋতু কিন্তু মধুসূদনকে ভালোবাসত। তবে মধুসূদনের ঋতুর ওপর একটুও টান ছিল না। তখন আমি সবসময় ঋতুর কথা বলতাম। আমি কোনোভাবে ঋতুর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি মধুসূদন একদম চাইত না।
ট্রেন এক্সিডেন্টে আমার বাবার পা কেটে গেল। মধুসূদন খুব কাঁদল।
মধুসূদনের মেজদি ভাল গান গাইত। আমাদের পাড়ায় আনোয়ার বলে একজন তবলিয়া ছিল। মধুসূদনের দিদি তার সঙ্গে বম্বে পালিয়ে গেল। মাসিমা শুনে অজ্ঞান হয়ে যায়! মেজদিরা শুনতে পাই ভাল আছে আজ। শুনতে পাই মেজদির মেয়েও ভাল গান শিখেছে। মেজদি আমাদের দুজনকে একবার খুব বকেছিল।
মাসিমা পোস্তর বড়া আর বিউলির ডাল এমন রান্না করত যার কোনো তুলনা হয় না।
কলেজের পর মধুসূদন চাকরি পেয়ে যায়। আমি তখনও বেকার। দুজনে মিলে বেড়াতে গেছি। একবার কোনারক, আরেকবার খাজুরাহো।
আমরা অনেক অনেক অনেক কথা বলি। আমাদের কথা যেন শেষ হয় না।
অঙ্কিতা মধুসূদনকে পছন্দ করে না। মধুসূদন এলে সারাক্ষণ গজগজ করে। আমি কিছু বলি না। আমাদের দুজনকে ডাইনিং টেবিলে ডিনার সাজিয়ে দিয়ে পান্নাকে হেঁচড়ে টেনে নিজের রুমে নিয়ে সশব্দে দরজা বন্ধ করে। পরের দিন মধুসূদন ভোর ভোর উঠে পড়ে, আমাকে ঠেলে তুলে দেয়। ফিরে যায় যখন, অঙ্কিতা কিচেন থেকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলে, বউ কেন ছেড়ে দিয়েছে ভাবছে কেউ জানে না?
আমি মধুসূদনের মুখের দিকে কয়েক সেকেন্ড চেয়ে থাকি, তারপরই বলি, আসিস কিন্তু আবার।
শারদীয় সংখ্যা ~কবিতায় হিন্দোল ভট্টাচার্য
কাঁটাতার
প্রদীপ জ্বলে, মনস্কামনায়
রক্ত আর বারুদে পুড়ে যাওয়া
হিসেব নেই, অনিশ্চয়তার;
ভাসাও তরী। দিয়েছ তুমি সাড়া
দেহাতি পিঠ শক্ত পুড়ে কাঠ
খোয়াব নিয়ে মরছে ক’হাজার?
প্রদীপ জ্বলে, প্রদীপ পুড়ে খাক!
ভাগের মা-ও গঙ্গা পায় না তো-
তরী ভাসাও, পিছনে ভাঙে পাড়!
চৈতন্য
দিও বাউল গান
লাজুক সুর কাঙাল,- ভেসে যায়
কেন যে দূরে হারিয়ে যেতে চাও!
শ্রীমতী তুমি
গোপিনী মেঘ ভাঙো ...
বিষাদ যত সিন্ধু, তত বাঁশি
লীলাখেলাই দেখেছে বৈরাগী।
কোথাও কোনও ফিরে যাওয়ার নেই-
মৃত্যু কেন গাও?
ধ্রুপদী গান গাইছে নিধুবন...
বেড়াল খুব লাফিয়ে ওঠে ঘাড়ে
লাজুক সুর কাঙাল, ভেসে যাও...
শারদীয় সংখ্যা ~কবিতায় প্রদীপ কর
শারদীয় সংখ্যা ~কিছুকথায় পুষ্পিত মুখোপাধ্যায়
শারদীয় সংখ্যা ~কবিতায় মোস্তফা মঈন
শারদীয় সংখ্যা ~ দোঁহা কবিতায় ইউসুফ মুহম্মদ
দোঁহা
৩১৫
নরকে যার শয্যা পাতা তার কি আছে হাপরকুঞ্জে ভীতি?
জনম তাহার -- স্রোতের নাটে বহতা নদ সীতার মলিন সিঁথি
৩১৬
অকাল বর্ষণে বৃক্ষ-জাগে, কে শুনিবে এই অবেলার ডাক
সাঁঝের বেলার দুঃখগুলো একলা-নিরব; বুকের ধারেই থাক।
৩১৭
সুরার বাটিতে ক্লান্ত আল্জীবের জলগন্ধী চুমু
প্রার্থনায় নগ্ন হলে,
আমাকে জাগালো কে সে! চোখমগ্ন কুয়াশার রঙে
বাল্মীকি ছোঁয়ার ছলে।
৩১৮
সবকিছু তার পুণ্যে ভরা, আমার বেলায় শূন্য এবং পাপ!
বিনা-ভ্রমর গোষ্ঠঘরে, ফলের বাহারÑ দগ্ধ অনুতাপ।
৩১৯
দারুক চেয়েছে-- অগ্নিপুরাণ, আগুন ছুঁয়েছে আমার অযুত কৃষ্টি
জ্বর-উত্তাপে মঞ্চে নাচুক অর্ধ-ছটাক রক্ত কাজল বৃষ্টি।
৩২০
কে যে ওড়ায় মেঘের ছায়া রাধার বাড়ির ঊর্ধ্বে
কানাই এসে ছন্দ-লীলায় আমার দোঁহায় সুর দে!
৩২১
একমুঠো দাবদাহে-- স্নানে যেতে চেয়ে কাকে যেন হারিয়েছি ঘাসে
তালু জুড়ে বরফের কুচি, উষ্ণধারা ঢেলে দিলো কার মূল উল্লাসে।