Friday, 15 October 2021

শারদীয় সংখ্যা ~প্রচ্ছদ ১৪২৮

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || শারদীয় সংখ্যা||

প্রচ্ছদ ১৪২৮~শ্রীমহাদেব


























:: সম্পূর্ণ সূচি ::

স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় | দ্যুতিমান ভট্টাচার্য (জর্নাল লিখলেন) | দেবাশিস চন্দ | পার্থজিৎ চন্দ  (হাইকু কবিতা) | মন্দাক্রান্তা সেন | ব্রতী মুখোপাধ্যায় | হিন্দোল ভট্টাচার্য | প্রদীপ কর | পুষ্পিত মুখোপাধ্যায় (কিছুকথায়) | মোস্তফা মঈন | ইউসুফ মুহম্মদ (দোঁহা কবিতা) |সুব্রত পণ্ডিত | অরিজিৎ চক্রবর্তী ( জর্নাল লিখলেন) | কার্তিক ঢক্ | তুলসীদাস মাইতি | সৈকত ঘোষ | কাজল সেন (ঝুরো গল্প) | প্রত্যূষা সরকার | পৌলমী ভট্টাচার্য | পবন লোহার, শিকড় মানুষ,(সাক্ষাৎকার~সুব্রত পণ্ডিত | নার্গিস পারভিন | আলোক মণ্ডল (অণুগল্প) | মনোতোষ আচার্য | অরণ্যা সরকার | শ্রীমহাদেব |  শ্রাবণী গুপ্ত  | বন্ধুসুন্দর পাল | রাখী সরদার | অমিত সরকার (গল্প) | বিপাশা ভট্টাচার্য | বন্যা লোহার | সুজল সাহা | তমোঘ্ন মুখোপাধ্যায় | সৌমাল্য গরাই | ফারহানা রহমান (অনুবাদ) | শান্তময় গোস্বামী |  সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়  | রাজা দেবরায় | মায়িশা তাসনিম ইসলাম | মৌসুমী চৌধুরী ( অণুগল্প) | আয়েশা মুন্নি | মারুফ আহমেদ নয়ন | নিবিড় সাহা | ভানুমতি সর্বজ্ঞ | মোহনা মজুমদার (মুক্তগদ্য) | মৃণালেন্দু দাশ | সমিধ গঙ্গোপাধ্যায় | শুভেন্দু ঘোড়াই | সুমন সাহা | প্রসেনজিৎ আচার্য | রূপক চট্টোপাধ্যায় | মৌ গোস্বামী | শিশির পাল |


শারদীয় সংখ্যা ~ শ্রদ্ধার্ঘ্য

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || শারদীয় সংখ্যা||

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা-র শারদীয় সংখ্যা ১৪২৮,২৮ শে আশ্বিন সংখ্যা,উৎসর্গ করলাম কবি শামসুর রাহমান কে ।


শামসুর রাহমান 

(জন্ম: অক্টোবর ২৩, ১৯২৯, মাহুতটুলি, ঢাকা – মৃত্যু: আগস্ট ১৭, ২০০৬ ) 

বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। শামসুর রাহমান পেশায় সাংবাদিক ছিলেন,দৈনিক মর্ণিং নিউজ-এ। 
 ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পরিবার নিয়ে চলে যান নরসিংদীর পাহাড়তলী গ্রামে। এপ্রিলের প্রথম দিকে তিনি লেখেন যুদ্ধের ধ্বংসলীলায় আক্রান্ত ও বেদনামথিত কবিতা ‘স্বাধীনতা তুমি’ ও ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’। তাঁকে আদমজী সাহিত্য পুরস্কার,বাংলা একাডেমী পুরস্কার,একুশে পদক,নাসির উদ্দিন স্বর্ণপদক,জীবনানন্দ পুরস্কার,মিতসুবিসি পুরস্কার (সাংবাদিতার জন্য),আনন্দ পুরস্কার এবং ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কবিকে সম্মান সূচক ডি.লিট উপাধিতে ভূষিত করে। কবি শামসুর রাহমান ২০০৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর ইচ্ছানুযায়ী ঢাকাস্থ বনানী কবরস্থানে, নিজ মায়ের কবরের পাশে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়।


শারদীয় সংখ্যা ~সম্পাদকীয় নয় কিন্তু

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || শারদীয় সংখ্যা|| সম্পাদকীয় নয় কিন্তু 
                                                                        অভিজিৎ দাসকর্মকার 


সম্পাদকীয় নয় কিন্তু 


আজ মহাদশমী,এ পূণ্যলগ্ন বড্ড মন খারাপের, আজ দেবী নিজগৃহে রওনা দিলেন দোলায় চড়ে,সমস্ত মড়ক বিনাশ হোক এই আশা রাখি।এই বছর মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ২টি শারদ সংখ্যা প্রকাশ করলো, আজ ২৮শে আশ্বিন, ১৪২৮ দ্বিতীয় শারদীয় সংখ্যা, উৎসর্গ করলাম বিখ্যাত সাংবাদিক এবং কবি শামসুর রহমান কে। এই সংখ্যায় প্রচুর শক্তিশালী কলম তাঁদের শব্দ ঝংকারে আলোড়িত করবেই পূজো মরশুমি পরিবেশ আর কবিতা, জর্নাল, মুক্তগদ্য অণুগল্প, ঝুরো গল্প এবং অনুবাদ সাহিত্যের বিশাল সম্ভার।

সম্পাদকীয়, তাই কিছু বলতেই হয়,সকলে সকলের লেখা,পড়ুন।নিজস্ব স্বাধীন মতামত দিন।নিজেদের লিংক ফেসবুকে শেয়ার করুন।আপনাদের লেখা লিংক খুলে পাঠক পড়লে আমার পত্রিকার ভিউয়ার বাড়বে,এটিই আমার পরিশ্রমের ফল।তাই কেও স্ক্রিনশট দেবেন না।

সকলে সুস্থ থাকুন, নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে প্রতিমা দর্শন করুন। 

সর্বস্বরূপে সর্বেশে সর্বশক্তিসমন্বি তে | 
ভয়েভ্যস্ত্রাহি নো দেবি দুর্গে দেবি নমোস্তু তে || 

শারদীয় সংখ্যা ~কবিতায় স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || শারদীয় সংখ্যা||  কবিতায় স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়


বিষাদকথা

বিষন্ন মেঘ কাঁদলো অনেক 
চুল ভেজালো নীল মেয়েটির 
বুকের অনেক গোপন কথা
ভেসেই গেল শেষ বেলাটির...

বিষাদ আকাশ ঢাকলো ও মুখ
বিষাদ বায়ূ কাঁপলো জোরে 
বিষাদ কথার এই কাহিনী 
ডাক ডুবে যাক ঘুমের ঘোরে...


শারদীয় সংখ্যা ~ জর্নাল লিখলেন দ্যুতিমান ভট্টাচার্য

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || শারদীয় সংখ্যা||  জর্নাল লিখলেন দ্যুতিমান ভট্টাচার্য

লুকোচুরি খেলা

আজ ধানের ক্ষেতে রৌদ্রছায়ায় লুকোচুরি খেলা রে ভাই, লুকোচুরি খেলা। 
নীল আকাশে কে ভাসালে সাদা মেঘের ভেলা রে ভাই-- লুকোচুরি খেলা॥
এই মাঠ, ঘাস, সাঁঝবেলা। চরাচর শান্ত হয়ে আসার বেলা। আলো আঁধারি। তাতে লুকোচুরি খেলা।
খড়ের পালুই, ঝোঁপ-জঙ্গল, পোড়ো বাড়ির মতো জায়গায় নিজেকে লুকিয়ে ফেলে চলত খেলা। আর আড়াল থেকে শোনা যেত ‘কুক’! ধরা পড়লেই - ‘ধাপ্পা!’।
নিয়ম হল, মোড়ধারী এক জায়গায় দাঁড়িয়ে এক থেকে একশো পর্যন্ত গণনা করবে। আর ওই সময়ের মধ্যে বাকি খেলোয়াড়দের খড়ের গাদা, ঝোঁপ-জঙ্গল বা পোড়ো বাড়ির আড়ালে আলাদা আলাদা ভাবে নিজেকে লুকিয়ে ফেলতে হবে। 
একশো গোনা হয়ে গেলে চোর ধরার পালা। লুকনো জায়গা থেকে ভেসে আসে ‘কুক’ শব্দ। সেই শুনে খেলোয়াড়দের খুঁজে বের করার পালা মোড়ধারীর। সবার আগে যাকে মোড়ধারী খুঁজে পাবে তার নাম-সহ ‘আইস-বাইশ’ বলে চিৎকার করে উঠবে। এরপর একে একে অন্যদের খুঁজে বের করতে হবে মোড়ধারীকে। সবাইকে খুঁজে বের করতে পারলেই মোড় ঘোচে মোড়ধারীর। তখন ‘আইস-বাইশ’ চিহ্নিত খেলোয়াড়কে মোড় খাটতে হয়।
কিন্তু প্রথমজনের পর অন্যদের খোঁজার সময় যদি কোনও খেলোয়াড় মোড়ধারীর নজর এড়িয়ে তার পিঠে চাপড় মেরে ‘ধাপ্পা’ বলে চিৎকার উঠতে পারে, তাহলে আর মোড় ঘোচে না মোড়ধারীর। সেক্ষেত্রে প্রথম খুঁজে পাওয়া খেলোয়াড়ও খেলায় সামিল হওয়ার সুযোগ পায়। ফের একই প্রক্রিয়ায় মোড় খাটতে হয় মোড়ধারীকে।
এ খেলা ভাঙতেই চাইত না। বাড়ি থেকে মা কান ধরে টেনে না নিয়ে গেলে। সেই খেলাটাই হঠাৎ কোথায় গায়েব হয়ে গেল। ভূবনে এমন মোড়ধারী নেই যে খুঁজে বের করে। 
ছোটবেলায় খবরের কাগজে লুকোচুরি খেলার ওস্তাদের খবর হতো হেডলাইন। মন্ত্রমুগ্ধের মতো পড়তাম। সাতের দশকের শেষ থেকে আটের দশক জুড়ে। স্কুলজীবনে। তখন তিনি এক রূপকথার নায়ক। খলনায়কও বটে। ওই সময়ের হিন্দী ছবির উগ্র খলনায়কদের থেকে আলাদা। অ্যান্টি হিরো। অজস্র গপ্পোগুজবের খোরাক।
লোকটার ৩০টা গার্লফ্রেন্ড। ১৪টা ভাষা গড়গড় করে কথা বলে যেতে পারে। চোখের দিকে তাকালে তাবড় সুন্দরীরা ভূপতিত!  খুন করে পাসপোর্ট হাতিয়ে নেয় তাদের। জেল থেকে পালায় কেত মেরে। ‘বিকিনি কিলার’, ‘দ্য সারপেন্ট’ ইত্যাদি খেতাব জুটে যায় এসবের মাঝেই। খবরের কাগজের ফ্রন্ট পেজে নিজের ছবি দেখে অপছন্দ হলে বলেন- ‘আই ডোন্ট লাইক দিস পিকচার। সেন্ড দেম আ গুড ওয়ান’! 
তখনও হলিউডি সিরিয়াল কিলার-এর গল্পের আমদানিন হয়নি এদেশে। আমাদের ছোটবেলার ব্যাড বয় ছিল চার্লস শোভরাজ। আদি। অকৃত্রিম। 
নেপালের ধনী পরিবারের মেয়ে নিহিতাকে বিয়ে করেছিলেন চার্লস। সংসার ভেঙ্গে যায় দাম্পত্য অশান্তিতে। এরপর তিনি পশ্চিমা নারীদের সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করে আর্থিকভাবে লাভবান হতেন এবং একসময় প্রেমিকাকে খুন করে ফেলতেন। ১২ জনের বেশি নারীকে খুন করে সিরিয়াল কিলার হন চার্লস শোভরাজ। খুনের ঘটনাগুলো ঘটেছিল ১৯৬৩ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত।
আসামীর কাঠগড়ায় বলেছিলেন, ‘আমি গরিব ছিলাম বলে অনেক অপমানিত হয়েছি। কিন্তু দেখতে সুন্দর ছিলাম। আর দর্শনশাস্ত্র ও মনোবিদ্যা বেশি করে পড়েছিলাম। ফলে নারীর মন বুঝতে সাইকো-এনালাইসিস করতাম। আর দর্শনের ‘নিহিলিজম’ আমাকে অপরাধ করতে বাধা দিতো না। 
তার জীবনীকার ডেভিড রবিনসন। শোভরাজের জীবনী নিয়ে ছবি হয়েছে। ২০১৫ সালে রনদীপ হুডা অভিনীত প্রবাল রমনের হিন্দী ছবি ‘ম্যাঁয় আউর চার্লস।’ 
শোভরাজের জন্ম ১৯৪৪ সালের ৬ এপ্রিল ভিয়েতনামে। কিন্তু ফ্রান্স ও ভারতসহ আরো কয়েকটি দেশের নাগরিকত্ব ছিলো তার। বাবা ছিলেন ভারতীয়। মা ভিয়েতনামি। চার্লস শোভরাজ খুন করে একদেশ থেকে অন্য দেশে পালিয়ে বেড়াতেন। লুকোচুরি খেলায় সেরার সেরা। ভারতের তিহার জেল থেকেও পালিয়েছিলেন। আবার জীবনী বইয়ের রয়্যালটি, মুভি রাইটস, ম্যাগাজিনে ইন্টারভিউ তাঁকে করে কোটিপতি। জেলে বসেই। 
১০ জুন, ২০১৭ কাঠমাণ্ডুর ‘‌গঙ্গালাল হার্ট সেন্টার’‌–এ তার হৃৎপিণ্ডে অস্ত্রোপচার করা হয়। বর্তমানে কাঠমাণ্ডু জেলে যাবজ্জীবন সাজা কাটছে। ঐ সময়, দিন কয়েক আগে জেলের মধ্যে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায় সে। ডাক্তারি পরীক্ষায় হৃদযন্ত্রে সমস্যা ধরা পড়ে। ভালভ রিপ্লেসমেন্টের জন্য তার ওপেন হার্ট সার্জারি করতে হবে বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। ফ্রান্সের নাগরিক চার্লস প্যারিসে অস্ত্রোপচার করাতে চেয়েছিল। এই অজুহাতে রেহাই মিলতে পারে বলে ভেবেছিল সে। কিন্তু নেপাল প্রশাসনের অনুমতি মেলেনি। তার শারীরিক অবস্থা খতিয়ে দেখে কাঠমাণ্ডুতেই চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২০২০ তে বয়স হয়েছে ৭৪।
শোভরাজ দেখতে ছিল ভীষণরকম সুদর্শন। তার চেহারায় একটা অন্যরকমের আকর্ষণ ছিল যা অল্পবয়সী তরুণীদের কাছে বেশ মোহনীয় ঠেকতো। অল্প বয়সেই শোভরাজের জীবনে বৃষ্টিধারার মতো নারীর প্রেম এসেছে। সে প্রেমে পড়ছে, তার প্রেমেও পড়ছে মেয়েরা হুমড়ি খেয়ে। অনেক ক্ষেত্রেই অল্পবয়সী মেয়েদের প্রথম ভালবাসাগুলো এমন হয় যে, তারা কোনো একটা মোহের বশে ঘোরের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কগুলো করে ফেলে। কিন্তু, ধীরে ধীরে প্রেমের গভীর স্তরে যখন তারা পৌঁছে যায়, তখন তারা এই সম্পর্কের ঘোর থেকে বের হতে পারে না। বরং এই প্রেমবোধ তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে সময়ের সাথে সাথে। সাইকোপ্যাথরা এমনিতে বেশ আকর্ষণীয়, আপনি তাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যেতে পারেন খুব সহজে, হতে পারেন তাদের প্রতি দূর্বল। তারা আবেগ দ্বারা সিদ্ধান্ত নেবে, আপনাকে ব্যবহার করবে চূড়ান্ত স্বার্থপর হয়ে, তারপর ফন্দি করবে, বিশ্বাসঘাতকতা করবে। অন্যতম বুদ্ধিমান এবং কমপ্লিট সাইকোপ্যাথ সিরিয়াল কিলার ছিল চার্লস। 
শোভরাজ একটা সাবজেক্ট। যে সাবজেক্ট নিয়ে অনেকেই এক সময় অনেক গবেষণা করেছিলেন। আর আমরা কচি বয়সে হয়েছিলাম মোহিত। গল্পগাথার নায়ক তখন সে। স্কুলে। খেলার মাঠে। 
জানিস, চার্লস শোভরাজ তিহার জেল থেকে পালিয়েছে?
বলিস কি!
শোভরাজের খুনগুলো বেশিরভাগই হয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে। ফলে সেসব দেশের আইন অনুযায়ী তার নামে অনেক খুনের মামলা হয়েছে। রয়েছে লোক ঠকানোর মামলাও। কিন্তু, শোভরাজ জেলের ভাত খাওয়ার জন্য বেছে নেয় ভারতকে। কারণ, ভারতে সে সাজাপ্রাপ্ত হয় চুরির অভিযোগে! ১৯৭৬ সালের কথা সেটা। তার জেল হয় ১২ বছরের। 
১৯৮৫ সালের তার সাজা যখন শেষের দিকে, আর অল্প কয়দিন বাকি সেসময় শোভরাজ সিদ্ধান্ত নিলো, জেল থেকে পালাবে। পাগলামি মনে হচ্ছে না? যে কয়দিন পর এমনিই জেল থেকে ছাড়া পাবে সে কেন আবার জেল পালানোর চেষ্টা করছে! 
শোভরাজ তার শাস্তির দশ বছরের দিনে একটা বিশাল পার্টির আয়োজন করলো জেলের প্রহরী আর জেলে থাকা আশেপাশের অন্যান্য আসামীদের জন্যে। পান বিভিন্ন উপহার উপটৌকন। ওদিকে সাগরেদরা ব্যবস্থা করেছে ঘুমের ট্যাবলেট আর অজ্ঞান করে দেওয়ার ড্রাগস। পার্টির খাবারে মিশিয়ে দেওয়া হলো। এবং তারপর জেল থেকে নিজে এমনভাবে হেঁটে বের হলো যেন কিছুই হয়নি।
কিন্তু যে ধূর্ত এক খুনি, যে কোনও প্রমাণ রাখে না, সেই জেল ভাঙ্গা কয়েদি খুব সহজেই ধরা দিল গোয়ায় একটা বীচ পার্টি থেকে। সবাই অবাক। আবার সাজা হয় তাঁর। আবার জেলবন্দি। আবার দশ বছর। কিন্তু এটাই তো চেয়েছিলেন তিনি। থাইল্যান্ডে খুনের আসামীর জন্য ওয়ারেন্টের মেয়াদ থাকে কুড়ি বছর। দশ বছরে শোভরাজ ছাড়া পেলে, তাঁকে ভারত সরকার থাইল্যান্ডের হাতে তুলে দিত। সেখানে খুনের মামলাগুলোয় মৃত্যদন্ড অবশ্যম্ভাবী। মোড়ধারী নিজেকেই দিলেন ‘ধাপ্পা!’
১৯৯৭ সালে মুক্তি পান শোভরাজ। চলে যান প্যারিসে। দিব্যি কাটাচ্ছিলেন জীবন। ইন্টারভিউ দিয়ে। ২০০৩এ নেপালে এসে কাঠমান্ডুর রাস্তায় ধরা পড়ে যান। ১৯৭৫এ দুটি খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজা হয়। সেই ইস্তক সেখানেই। লুকোচুরি খেলা কি ছেড়েই দিলেন ওস্তাদ?



শারদীয় সংখ্যা ~কবিতায় দেবাশিস চন্দ

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || শারদীয় সংখ্যা|| কবিতায় দেবাশিস চন্দ 


হারানো রেললাইন

ডেকে ডেকে বলা যেতেই পারে হারিয়ে যাওয়া রেললাইনের কথা
তার রোমাঞ্চ–সফর, ঝরনার কলতান, অসভ্যরকম ভিড় কামরা ‌
একের পর এক সুড়ঙ্গের রোমাঞ্চ, তখন তো ৩৭ সুড়ঙ্গের ঝমঝম
যে অন্ধকারে ভূতেরা সব বাসা বেঁধে থাকত, ভাল ভূত, দুষ্টু কিম্ভূত
টিলার পর টিলা, পাহাড়, উপত্যকা, ঝরনা— জীবনের কত রং
পাহাড়ী রমনীর উদ্ধত স্তনে লেগে আছে কত শতকের লাঞ্ছনা
ভোরের আলোর মতো কমলালেবু—হারেঙাজাও, জাটিঙ্গা
হাফলঙে ঔপনেবেশিক কাঠের দোতালায় দুপুরের চিকেন–ভাত
আহা, পাহাড়লাইন যদি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে চলে যায় দক্ষিণ মেরু
সেখান থেকে টন টন বরফ এনে শিলচরের আকাশে লেপে দিলে
গরম তো যাবে কমে। আহা!‌ গরমকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তখন
বসবে কবিতার আসর, ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে মাফলার গলা
বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে কাকতাড়ুয়ার নকল পোশাকে মুখ ঢেকে
আমারা তখন স্লেজ গাড়িতে সওয়ার, এ–বাড়ি ও–বাড়ি, দরজায়
দরজায় আনন্দ–হুল্লোড়, কত বাড়ি পড়ে আছে জনশূন্য চৌকাঠ
অতীতের চিঠির ওপর স্মৃতির গালা লাগিয়ে আমরা বন্ধ করে
দিতে চাইছি সব পথ— ডাইনে–বাঁয়ে, আরও কত না দিক‌


শারদীয় সংখ্যা ~কবিতায় পার্থজিৎ চন্দ

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || শারদীয় সংখ্যা|| কবিতায় পার্থজিৎ চন্দ


মাছ

পশ্চিমের পর আরও কত পশ্চিম, অন্ধকার জল
সূর্য অস্ত যাচ্ছে, ঢেউয়ের মাথায় ঝকঝক করছে
আলোর অন্ধকার।
নোলকপরা মাছের হাঁ-মুখে
কয়েক ফোঁটা জলের সমুদ্র
তারা’রা মিটমিট করে জ্বলছে
গ্রাসের ভেতর তারাদের নিয়ে
মাছ তলিয়ে যাচ্ছে
তলিয়ে যাচ্ছে সূর্য

আগুন পাখি’রা

এই চরাচরে এসে দেখা
আকাশপ্রমাণ এক গাছ
মাথা নীচু করে ঝুঁকে,
ডালে ডালে তার কোটি কোটি
রংমশালের অবাক দহন
দিনশেষে তার কাছে পাখিদের ফেরা
আগুন পাখি’রা

প্রজাপতি

এখানে দাঁড়াও,
ঝরে পড়ে মহাকাশ-হিম
উপরে তাকাও, দেখ
চির-অন্ধকার আকাশের বুকে
সূর্য আর চাঁদ। ক্ষত-
হীন। চেয়ে আছে, একে অপরের
রহস্য দেখছে
যে ভাবে ছায়ার ভেতর
তোমার শরীর কাঁপে
ভীরু হরিণের মতো

জন্মসরোবর

এ ছায়া তোমার নয়
কোটি কোটি তারাদল
পার হয়ে জলের শরীরে
এ ছায়া পড়েছে
এ মুখ তোমার…
কোটি কোটি তারাদল দূরে
তুমি শুয়ে আছো
জন্মসরোবর তীরে

শারদীয় সংখ্যা ~কবিতায় মন্দাক্রান্তা সেন

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || শারদীয় সংখ্যা||  কবিতায় মন্দাক্রান্তা সেন 


অতিথি 

এই যে গোপন কথা, রহস্যরোমাঞ্চ গল্প সব
রানীর জঠর থেকে গূঢ় রূপকথার প্রসব

প্রসবের আগে পরে মায়ের যন্ত্রণা পাওয়া প্রথা
এভাবেই শুরু হয় আবহমানের গল্পকথা

রানী আর রাজকন্যা, তাদের সহস্রাধিক দাসী
তাদের আকাঙ্ক্ষা দেখে মাতৃতান্ত্রিকতাটিতে আসি

মাতৃতান্ত্রিক জানি, তবুও কি কান্না পাওয়া দোষ
আয় রানী রাজকন্যা পিড়ি পেতে রান্নাঘরে বোস

পাপ দোষ যন্ত্রণার আজকে তো ত্র্যহস্পর্শ তিথি
রাজা আর রাজপুত্র, তোমরা রূপকথার অতিথি।


শারদীয় সংখ্যা ~অণুগল্পে ব্রতী মুখোপাধ্যায়

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || শারদীয় সংখ্যা|| অণুগল্পে ব্রতী মুখোপাধ্যায়


মধুসূদন

  


মধুসূদন আমার কাছে হঠাৎ হঠাৎ আসে। একেকদিন আসে। আর আসেও সারাদিন খাটাখাটনির পর, সন্ধে নামলে পর।  


মধুসূদন আমার ছেলেবেলার স্যাঙাৎ। স্কুল লাইফ একসঙ্গে। কলেজ লাইফ একসঙ্গে। এখন যেদিন আসে, আমরা প্লাস্টিকের চেয়ার নিয়ে ছাদে উঠে যাই। দক্ষিণ দিকে মুখ করে মুখোমুখি বসি। মেঘের ভেতর চাঁদ, মেঘের বাইরে চাঁদ।        


আমরা কথা বলি। স্কুলদিনের কথা। কলেজদিনের কথা। বন্ধুদের কথা। সাইকেল করে খালশিউলি পেরিয়ে গিয়ে একবার আমরা  কীভাবে হারিয়ে গিয়ে ভয় পেয়েছিলাম, সেইরকম কথা।


মধুসূদন খুব ভয় পাচ্ছে আজকাল। বলছে, ফ্যাকট্রি্টা যেকোনো দিন বন্ধ হয়ে যাবে।  


কলেজে যখন পড়ি, আমি ঋতুকে চাইতাম। ক্লাসে ঋতুই ছিল সবচেয়ে ঝলমলে। ঋতু কিন্তু মধুসূদনকে ভালোবাসত। তবে মধুসূদনের ঋতুর ওপর একটুও টান ছিল না। তখন আমি সবসময় ঋতুর কথা বলতাম। আমি কোনোভাবে ঋতুর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি মধুসূদন একদম চাইত না।   


ট্রেন এক্সিডেন্টে আমার বাবার পা কেটে গেল। মধুসূদন খুব কাঁদল।  


মধুসূদনের মেজদি ভাল গান গাইত। আমাদের পাড়ায় আনোয়ার বলে একজন তবলিয়া ছিল। মধুসূদনের দিদি তার সঙ্গে বম্বে পালিয়ে গেল। মাসিমা শুনে অজ্ঞান হয়ে যায়! মেজদিরা শুনতে পাই ভাল আছে আজ। শুনতে পাই মেজদির মেয়েও ভাল গান শিখেছে। মেজদি আমাদের দুজনকে একবার খুব বকেছিল।


মাসিমা পোস্তর বড়া আর বিউলির ডাল এমন রান্না করত যার কোনো তুলনা হয় না।


কলেজের পর মধুসূদন চাকরি পেয়ে যায়। আমি তখনও বেকার। দুজনে মিলে বেড়াতে গেছি। একবার কোনারক, আরেকবার খাজুরাহো।


আমরা অনেক অনেক অনেক কথা বলি। আমাদের কথা যেন শেষ হয় না।    


অঙ্কিতা মধুসূদনকে পছন্দ করে না। মধুসূদন এলে সারাক্ষণ গজগজ করে। আমি কিছু বলি না। আমাদের দুজনকে ডাইনিং টেবিলে ডিনার সাজিয়ে দিয়ে পান্নাকে হেঁচড়ে টেনে নিজের রুমে নিয়ে সশব্দে দরজা বন্ধ করে। পরের দিন মধুসূদন ভোর ভোর উঠে পড়ে, আমাকে ঠেলে তুলে দেয়। ফিরে যায় যখন, অঙ্কিতা কিচেন থেকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলে, বউ কেন ছেড়ে দিয়েছে ভাবছে কেউ জানে না?


আমি মধুসূদনের মুখের দিকে কয়েক সেকেন্ড চেয়ে থাকি, তারপরই বলি, আসিস কিন্তু আবার।     

 


শারদীয় সংখ্যা ~কবিতায় হিন্দোল ভট্টাচার্য

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || শারদীয় সংখ্যা|| কবিতায় হিন্দোল ভট্টাচার্য


কাঁটাতার

 

প্রদীপ জ্বলে, মনস্কামনায়

রক্ত আর বারুদে পুড়ে যাওয়া

হিসেব নেই, অনিশ্চয়তার;

 

ভাসাও তরী। দিয়েছ তুমি সাড়া

দেহাতি পিঠ শক্ত পুড়ে কাঠ

খোয়াব নিয়ে মরছে ক’হাজার?

 

প্রদীপ জ্বলে, প্রদীপ পুড়ে খাক!

ভাগের মা-ও গঙ্গা পায় না তো-

তরী ভাসাও, পিছনে ভাঙে পাড়!


চৈতন্য

 

দিও  বাউল গান

লাজুক সুর কাঙাল,- ভেসে যায়

 

কেন যে দূরে হারিয়ে যেতে চাও!

শ্রীমতী তুমি

গোপিনী মেঘ ভাঙো ...

 

বিষাদ যত সিন্ধু, তত বাঁশি

লীলাখেলাই দেখেছে বৈরাগী।

কোথাও কোনও ফিরে যাওয়ার নেই-

 

মৃত্যু কেন গাও?

 

ধ্রুপদী গান গাইছে নিধুবন...

বেড়াল খুব লাফিয়ে ওঠে ঘাড়ে

 

লাজুক সুর কাঙাল, ভেসে যাও...

 

শারদীয় সংখ্যা ~কবিতায় প্রদীপ কর

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || শারদীয় সংখ্যা||  কবিতায় প্রদীপ কর


বইমেলায়

বইমেলায় গিয়ে, চারপাশে এত এত
বাঁধানো, সুন্দর বই, দেখি।

বইয়ের পৃথিবীতেই পাখি ডাকে
ঝরে পড়ে অক্ষরবকুল।

হাতে নিয়ে ঘ্রাণ নিই বর্ষণসিক্ত কোনো নতুন কবির।
কথাসমুদ্রের পাড়ে সারারাত জেগে
উপন্যাস লিখেছেন যে অলৌকিক মায়া
তার পাশে চুপিচুপি বসি।

এত এত কথা আর কথার প্রতিধ্বনি
আমাকে গভীর স্নানে মৌন করে রাখে

নিভৃতে, শান্ত আলোয় বসে ভাবি
এখনও এমন কোনো কথা আমি বলতে পারিনি, যাকে

সমুদ্রশিশিরে কিম্বা আশ্রয়গাছের পাতায় 
বাঁধিয়ে রাখা যায়



শারদীয় সংখ্যা ~কিছুকথায় পুষ্পিত মুখোপাধ্যায়

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || শারদীয় সংখ্যা||  কিছুকথায় পুষ্পিত মুখোপাধ্যায়


দেশপ্রেমিক উর্দু কবি জিগর মুরাদাবাদী....

বিংশ শতাব্দীর উর্দু সাহিত্যের মহান কবি জনাব জিগর মুরাদাবাদীর জন্ম 1890সালে মুরাদাবাদে। জিগর মুরাদাবাদীর আসল নাম আলি সিকন্দর। বংশ পরম্পরায় তিনি কাব্য প্রতিভা লাভ করেছিলেন। তাঁর পিতা মৌলবি আলি নজ়রও কবি ছিলেন। জিগর সাহেবের পিতা তৎকালিন সময়ের বিশিষ্ট কবি খ্বাজা ওয়াজির লক্ষৌভীর শিষ্য ছিলেন। তাঁর কাব্য সংগ্রহের নাম..."বাগ এ নজ়র। জিগর সাহেবের প্রাথমিক শিক্ষা ঘরেই হয়,পরে মক্তবে ভর্তি হ'ন। ছোট থেকেই কবিতা লিখতেন। এবং তাঁর পিতা তাঁর কবিতা সংশোধন করে দিতেন। পরে দাগ় দেহলভী,মুন্শি অমীরুল্লা 'তস্নিম 'এবং রসা রামপুরীকে নিজের লেখা গ়জ়ল দেখাতেন। স্কুলে পড়াশোনার সময় থেকেই তিনি গ়জ়ল লিখতেন,কিন্তু ছাত্র থাকাকালীন সময়ে ওইসব গ়জ়ল প্রকাশ্যে আনেননি। 
     জিগর সাহেব পরে চশমা তৈরির এক কোম্পানিতে সেল এজেন্টের চাকরি করেন। এইভাবে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে তাঁকে অর্ডার আনতে হতো। শরাবে তাঁর প্রবল আসক্তি ছিলো। ছাত্রাবস্থা থেকেই তিনি সুরাসক্ত হয়ে পড়েন। সে সময় কবিতা এবং শরাব তাঁর নিত্য সঙ্গী ছিলো। সেই যুগে তিনি ঘুরতে ঘুরতে গোন্ডা পৌঁছন,যেখানে বিশিষ্ট উর্দু কবি অসগর গোন্ডভীর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। তাঁর প্রতিভাকে চিনতে অসগর সাহেবের কাল বিলম্ব হয় না। ওনাকে শোধরানোর চেষ্টায় নিজের শ্যালিকা নসীমের সঙ্গে জিগর সাহেবের বিবাহ দেন। এইভাবে জিগর সাহেব তাঁর ঘরের এক সদস্য হয়ে ওঠেন। কিন্তু ভ্রমণ,'শায়রি এবং শরাব জিগরকে এমন ভাবে আঁকড়ে ধরেছিল যে,বিবাহিত জীবন বন্ধনও তাঁকে বেঁধে রাখতে পারেনি। বিভিন্ন স্হানে ঘুরে বেড়ানোর সুবাদে ততদিনে বিভিন্ন জায়গায় কবি হিসাবে তাঁর পরিচিতি লাভ হয়ে গেছিল। 
    জিগর সাহেব অতীব দয়ালু প্রকৃতির ব্যক্তি ছিলেন। কারো দুঃখ কষ্ট দেখতে পারতেন না। তিনি কাউকে ভয় পেতেন না। লক্ষৌর ওয়ার ফান্ডের জন্য আয়োজিত মুশায়ারাতে,যার পৌরহিত্য করেছিলেন এক ইংরেজ সাহেব; সেই মুশায়ারাতে "কহত এ বঙ্গাল "(বাংলার দুর্ভিক্ষ)কবিতা পড়ে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিলেন। 
    বেশকিছু রাজ্যপ্রধান তাঁকে নিজেদের দরবারের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে চাচ্ছিলেন। জিগরের সমস্ত শর্ত মানতে রাজি ছিলেন। কিন্তু তিনি বারবার তা প্রত্যাখ্যান করে গেছেন। তাঁকে পাকিস্তানের নাগরিকত্ব দিতে সাগ্রহে আহ্বান জানিয়েছিলেন তৎকালিন পাকিস্তানি সরকার। নাগরিকত্ব সহ সমস্ত রকম আরাম আয়েশ ও জীবনের নিশ্চয়তার আশ্বাস দেওয়া সত্ত্বেও জিগর সাহেব বলেছিলেন..."আমি যেখানে জন্মেছি,সেখানেই মরতে চাই।"
    জিগর সাহেব কোনদিন নিজের সুরাসক্তির জন্য গর্ব বোধ করেন নি,পরবর্তী কালে তিনি বরাবর বলেছেন ...."ওটা ছিলো জ্ঞানহীনতার যুগ "।
   যাইহোক,শরাব ছেড়ে দেবার পর রামি খেলায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে জিগর সাহেব প্রচন্ড ধার্মিক হয়ে পড়েছিলেন। 1953সালে তিনি হজ যাত্রা করেন। জীবনের প্রতি উদাসীনতা এবং বেপরোয়া জীবনযাত্রা তাঁর মন মস্তিষ্ককে ধ্বংস করে দেয়। 1941সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হন। 1958সালে মস্তিষ্ক বিকৃতি হয়। লক্ষৌতে তিনি দু বার হৃদরোগে আক্রান্ত হন। 
  ঘুমের ওষুধ খেয়েও সারারাত তাঁর ঘুম আসতো না। 1960সালে তিনি উপলব্ধি করেছিলেন মৃত্যু সন্নিকটে। নিজের জিনিস পত্র স্মৃতি স্বরূপ লোকজনকে দান করে দিতে শুরু করেন। তাঁর অত্যন্ত প্রশংসিত কাব্যগ্রন্থ..."আতিশ এ গুল "এর জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কারে ভূষিত হন। জিগর মুরাদাবাদী আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে কেবলমাত্র দ্বিতীয় কবি,যাঁকে ডি লিট সম্মানে সম্মানিত করা হয়। এই সম্মান প্রাপক প্রথম কবি ডক্টর স্যার মুহম্মদ ইক়বাল। জিগর মুরাদাবাদী 1960সালে 9ই সেপ্টেম্বর গোন্ডাতে মারা যান। তাঁর দুটি বিখ্যাত শের....
        তেরি খুশি সে অগর গ়ম মেঁ ভী খুশি না হুয়ী
        ওহ জ়িন্দগী তো মুহব্বত্ কী জ়িন্দগী না হুয়ী। 
          হমনে সীনে সে লগায়া,দিল্ না অপনা বন 
         সকা 
        মুস্কুরা কর তুমনে দেখা,দিল্ তুম্হারা হো 
        গ্যায়া। "

শারদীয় সংখ্যা ~কবিতায় মোস্তফা মঈন

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || শারদীয় সংখ্যা|| কবিতায় মোস্তফা মঈন


দু’চোখে ধান হয়ে বাঁচি


গেল বছরের চেয়ে এবার আরো বেশি ধান চাই
মাটির সোঁদা গন্ধ মেখে— চোখে সোনালো ধানের স্বপ্ন।
বুক চিতিয়ে—
জমিতে হালচাষ করে মই দিচ্ছি। তুমি এসে
মই উল্টে দিলে!
আমি লেপ্টে যাই পলি কাদায়।
পিঠের ওপর দিয়ে মই যখন যায়—
জীবন উল্টে নাক ডুবিয়ে কাদামুখো হয়ে আছি।
লাগিয়ে দাও ধানের চারা।
খুব ভালো চাষ দিয়েছি।
ভাদ্রের ভরা রোদে গলছি।
জীবন কিছু কাদাই তো—
কিষাণরা বুনে যাচ্ছে জীবন। এবার ভালো ফসল ফলবে।
নবান্নের উৎসব হবে। পাইজাম, বিরই, কার্তিকশাইল, রতিশাইল...
কি মিষ্টি সব ধানের নাম!
ঘোড়ার লেজের মতো, পাকা ধানের ছড়া— নতুন ভাতের গন্ধ।
আমি অঘ্রানি ধান দেখব বলে— দু’চোখে ধান হয়ে বাঁচি।

জো

কাঠফাটা রোদ। মাটি শুকিয়ে ফেটে চৌচির।
পিপাসার্ত পাখিরা ঠোঁট তুলে বসে থাকে গাছে।
জল নেই একফোঁটা!
সহসা, বৈশাখী মেঘ এসে নিজেকে ঝরায়!
ঝরঝর বৃষ্টির পরে মাটিতে জো আসে—
বীজের জন্য তৈরি হয় মাটি। ধারণ করে
সোনালো বীজ।

জন্ম নেয় জীবন— সবুজ অঙ্কুর!
তার চেয়ে কষ্ট যেন, কবির অন্তরে জো আসা—
কে জানে, কোত্থেকে এসে পড়বে সোনালো
শব্দবীজ!
ঘাই মেরে দেবে—
কবির হৃদয় আলোড়িত হবে।
অঙ্কুরিত হবে নতুন চারা
জড়ায়ু ভেঙে ওঠে আসবে কোনো কবিতাগাছ।


শারদীয় সংখ্যা ~ দোঁহা কবিতায় ইউসুফ মুহম্মদ

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || শারদীয় সংখ্যা|| দোঁহা কবিতায় ইউসুফ মুহম্মদ


দোঁহা

          

৩১৫


নরকে যার শয্যা পাতা তার কি আছে হাপরকুঞ্জে ভীতি?

জনম তাহার --  স্রোতের নাটে বহতা নদ সীতার মলিন সিঁথি

 

৩১৬


অকাল বর্ষণে বৃক্ষ-জাগে, কে শুনিবে এই অবেলার ডাক

সাঁঝের বেলার দুঃখগুলো একলা-নিরব; বুকের ধারেই থাক।

 

৩১৭


সুরার বাটিতে ক্লান্ত আল্জীবের জলগন্ধী চুমু

প্রার্থনায় নগ্ন হলে,

আমাকে জাগালো কে সে! চোখমগ্ন কুয়াশার রঙে

বাল্মীকি ছোঁয়ার ছলে।

 

৩১৮


সবকিছু তার পুণ্যে ভরা, আমার বেলায় শূন্য এবং পাপ!

বিনা-ভ্রমর গোষ্ঠঘরে, ফলের বাহারÑ দগ্ধ অনুতাপ।

 

৩১৯


দারুক চেয়েছে-- অগ্নিপুরাণ, আগুন ছুঁয়েছে আমার অযুত কৃষ্টি

জ্বর-উত্তাপে মঞ্চে নাচুক অর্ধ-ছটাক  রক্ত কাজল বৃষ্টি।

 

৩২০


কে যে ওড়ায় মেঘের ছায়া রাধার বাড়ির ঊর্ধ্বে

কানাই এসে ছন্দ-লীলায় আমার দোঁহায় সুর দে!

 

৩২১


একমুঠো দাবদাহে-- স্নানে যেতে চেয়ে কাকে যেন হারিয়েছি ঘাসে

তালু জুড়ে বরফের কুচি, উষ্ণধারা ঢেলে দিলো কার মূল উল্লাসে।

 

 



শারদীয় সংখ্যা ~কবিতায় সুব্রত পন্ডিত

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || শারদীয় সংখ্যা|| কবিতায় সুব্রত পন্ডিত 


স্বপ্ন দেখার স্লিপিং পিল
 

সারা শহর স্লিপিং পিল খেয়ে স্বপ্ন দেখছে

সেমিনারে ভাষণ দেওয়া জোকার গুলি   
ব্যালেন্সের খেলা খেলতে খেলতে 
চিলি চিকেন,ফ্রায়েড রাইসের আভিজাত্য মাপতে মাপতে
ফিরে আসে ডিজিটাল রূপকথায়

অ্যাসিড হামলায় অন্ধকার নামে শহরে 
একটি ধর্ষণকে আড়াল করার  জন্য 
দুই দলের পেঙ্গুইন  মস্করা করে 

বাস ট্রেনে আগুন লাগায়,মুখোশের কুশপুত্তলিকা পোড়ে
শহরে এখন আর সকাল নামে না

প্রেসক্রিপশন ছাড়াই অবৈধ ডেরায় বিক্রি  হয়
স্বপ্ন দেখার স্লিপিং পিল....


শারদীয় সংখ্যা ~ জর্নাল লিখলেন অরিজিৎ চক্রবর্তী

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || শারদীয় সংখ্যা||  জর্নাল লিখলেন 
                                                                        অরিজিৎ চক্রবর্তী 


লাভ-প্যাডলক, আইফেল টাওয়ার আর অপেক্ষারত অ্যালিসের গল্প

প্যারিসে যখন পৌঁছলাম তখন দুপুর দুটো ,অঝোরে বৃষ্টি পড়ছে। কলকাতা বিমানবন্দর থেকে দীর্ঘ পনেরো ঘন্টা ফ্লাইটে জার্নি করার পর এই অবতরণের ক্লান্তি, উৎসাহে এতটুকু শিথিলতা আনেনি। এয়ারপোর্টের বাইরে বৃষ্টি আর দূরে অপেক্ষারত অ্যালিসের হাতনাড়া দেখে  মনে পড়ল অঞ্জন দত্তের সেই গানটা 'আমি বৃষ্টি দেখেছি, বৃষ্টির ছবি এঁকেছি...' কিন্তু এটা প্যারিস। তাই মন গুনগুনিয়ে উঠল ‘Rappelle-toi Barbara, Il pleuvait sans cesse sur Brest ce jour-là, Et tu marchais souriante..’- ‘ মনে কর বারবারা, সেদিন অঝোরে বৃষ্টি পড়ছিল, আর তুমি রাস্তা দিয়ে হেঁটে আসছিলে, হাসিমুখে..’ সেই হাসি মুখের মায়াবী আলোয় যখন ভেসে যাচ্ছি... ভিজে যাচ্ছি... আমি! ঠিক তখনই এই লেখার খেয়ালি লক্ষ্যের দিকে Bienvenue ( বিয়াভ্যন্যু ) যার বাংলা করলে "স্বাগতম"! সারা শহর জুড়ে লেখা এই শব্দটা যেন ফরাসি পর্যটনের অভিমুখ হয়ে আমাকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে।

ফরাসী ভাষাকে ভালোবাসার ভাষা আর প্যারিসকে বলা হয় ভালোবাসার শহর। শ্যেন নদী প্যারিসকে ভালোবেসে যেন আষ্টেপৃষ্ঠে পুরো শহর জুড়ে ছড়িয়ে আছে; একইভাবে শৈল্পিক সব স্থাপত্যশৈলী এই নদীর উপরেই প্রায় ৩৭ টি ব্রীজ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই ব্রীজগুলোর উপর দিয়ে হাঁটতে গেলেই যে কেউ টের পাবে ব্রীজের রেলিংগুলোতে এক ধরণের বিশেষ তালা ঝুলে আছে। এগুলোকে “লাভ প্যাডলক” বলা  হয়।প্যারিসের পন্ট ডেস আর্টস ব্রিজ, আবেগ এবং বিশ্বস্ততার প্রতীকের এমনই এক উদাহরণ। 

প্রেমিক কিংবা প্রেমিকা যে কোনো একজন অন্যজনের নামের আদ্যক্ষর দেয়া একটি তালা ব্রীজের রেলিংয়ে বেঁধে রাখেন এবং চাবিটি ফেলে দেন শ্যেন নদীতে। চাবি হারিয়ে যাওয়ার ফলে তালা কখনো খুলে যায় না; ঠিক তেমনি প্রেমিক-প্রেমিকার বন্ধনও যেন জন্ম জন্মান্তর অটুট বন্ধনেই বাঁধা থাকে। এমনটাই প্রত্যাশা করে বাঁধা  হয় এই তালাগুলো। প্রেমিক-প্রেমিকার ভালোবাসার এমন নিদর্শনের কারণেই প্যারিস ভালোবাসার শহর হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। আর অদ্ভূত ভাবেই আমি জড়িয়ে গেছি সেই ভালোবাসার মায়াবী বন্ধনে। অ্যালিসের সঙ্গে বন্ধুত্ব গভীর হয়েছে। সেই আমাকে প্যারিস শহরটাকে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে চেনানোর চেষ্টা করছে। আমি উঠেছি নীলের কাছে। নীল কলকাতার ছেলে। সিটে ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনার জন্য এসেছে। ও আরো দুজন সহপাঠী কে নিয়ে একটা ঘর ভাড়া করে থাকে। নিজেরাই রান্না করে খায়। নীলের সঙ্গে যে দুজন থাকে তাদের একজন বাংলাদেশী আর অন্যজন রাশিয়ান। অনেকটা আমাদের এখানকার মেসের মতো। ফলে এখানে থাকার একটা মজা আছে। হৈহৈ আছে। তাছাড়া হোটেলের মতন ব্যয় বহুল নয়। আমিও ওদের খরচে কিছুটা শেয়ার করে দিই। পনেরো কুড়ি দিনের সফর দিব্যি কেটে যায়।

প্যারিস শহরটি ইউরোপ জুড়ে পারি নামেই পরিচিত। এই পারিকে সিটি অফ লাইটস বা আলোকিত শহরও বলা হয়। কাগজে কলমেও প্যারিসের নাম “লা ভিল্লা ল্যুমিয়ের"। ইউরোপের প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় প্যারিস ইউনিভার্সিটি (লা সোরবোন্নে) এর জন্য ইউরোপের অন্যতম জ্ঞান-বিজ্ঞানের তীর্থভূমি ছিল এই প্যারিস। আর জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হয়েই ইউরোপের প্রথম শহর হিসেবে প্যারিসের রাস্তায় রাস্তায় প্রথম গ্যাস চালিত ল্যাম্পপোস্ট স্থাপিত হয়। সন্ধ্যার গাঢ় অন্ধকারে যখন পুরো ইউরোপ তলিয়ে যেত তখন প্যারিস স্বমহিমায় আলো ঝলমলে এক রূপ নিয়ে সবাইকে চমকে দিত। আর তাই তো সিটি অফ লাইটস বা আলোকিত শহর নামে এখনও পরিচিত প্যারিস। 

আজ অ্যালিসের সঙ্গে আইফেল টাওয়ার ভ্রমণে যাব। লাচাপেল ( La Chapelle ) থেকে আইফেল টাওয়ারের দূরত্ব পঁয়তাল্লিশ মিনিট। প্রথমে পায়ে হেঁটে ভিক্টর হুগো 
( Victor Hugo) পৌঁছলাম। সেখানে থেকে  ৮২ নং বাসে ট্যুর আইফেল ( Tour Eiffel) প্রায় মিনিট কুড়ির রাস্তা।

১৮৮৯ সালে গুস্তাভ আইফেল বিশ্বমেলার প্রবেশদ্বার হিসেবে নির্মাণ করেন এই টাওয়ার। তখনকার সময়ে ব্যাপক সমালোচনার স্বীকার হয় টাওয়ারটি। এমনকি এটি সরিয়ে ফেলতে প্যারিসের রাস্তায়ও নেমেছিল একদল মানুষ। কিন্তু উনবিংশ শতাব্দী থেকেই প্যারিস তথা ফ্রান্সের প্রতীকে পরিণত হয় আইফেল টাওয়ার। ফ্রান্সে ঘুরতে গিয়ে আইফেল টাওয়ার না দেখা ফ্রান্সে না যাওয়ারই সমতুল্য বলে মনে করেন অনেকেই। প্রতি বছর গড়পড়তা প্রায় ৭০ লাখ মানে ৭ মিলিয়ন পর্যটক কেবল প্যারিসের এই দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য দেখতে আসে। আঠেরো হাজার আটত্রিশটি লোহার টুকরোর সমন্বয়ে তৈরি এই স্থাপত্যশৈলী বর্তমানে প্যারিস তথা ফ্রান্সের প্রতীক বলে বিশ্বব্যাপী মর্যাদা পেয়েছে। 
               অ্যালিসের সঙ্গে
এখন আমি ট্যুর আইফেল থেকে অ্যালিসের হাত ধরে আইফেল টাওয়ারের দিকে এগিয়ে চলেছি। আমার মনের রসায়নে যে মুহূর্ত প্রেমের উদ্দীপনা তৈরী হয়েছে তাকে অস্বীকার করার মতো ধৃষ্টতা আমার নেই। কারণ অ্যালিসের সৌন্দর্যে যে কোন পুরুষই মুগ্ধ হবে।
টাওয়ারের মূল কাঠামো চারটি বিশাল লোহার পিলারের উপর তৈরী। জানা যায় ২৫০ জন নির্মানকর্মী দুবছর পাঁচ মাস সময় ধরে তৈরী করেছেন এই টাওয়ারটি ।আইফেল টাওয়ার দিনের চেয়ে রাতে দেখতে বেশী সুন্দর ।
      
আইফেল টাওয়ারে লাগানো আছে বিভিন্ন রংয়ের অসংখ্য আলো ।এই আলো গুলো যখন রাতে  জ্বালানো হয় তখন টাওয়ারের পুরো এলাকাকে অপূর্ব সুন্দর করে তোলে। এক সংগে ছয় হাজার দর্শনার্থী আইফেল টাওয়ারের ছুড়ায় উটতে পারে। টাওয়ারের মোট উচ্চতা এক হাজার ৮১ ফুট ৭ ইঞ্চি । টাওয়ারের চূড়া থেকে পুরো প্যারিস সিটির সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। পাশ দিয়ে বহমান শ্যেন নদী। নদীতে আবার রয়েছে ক্রুজ লাইন । এখানে পর্যটকরা নৌভ্রমনের মাধ্যমে আইফেল টাওয়ার এর সৌন্দর্য উপভোগ করে থাকে।

যখন আইফেল টাওয়ারের সামনে এসে পৌঁছলাম তখন বিকেল। অ্যাসিসের মুখে সেই ভালোবাসার হাসি। হঠাৎ আমার কাঁধে হাত রেখে কয়েকটা সেলফি তুলল। তারপর টাওয়ারের উপরে ওঠার টিকিট কেটে আমাকে হাত ধরে এগিয়ে নিয়ে গেল লিফটের দরজায়। খানিকক্ষণ বাদেই পৌঁছলাম আইফেল টাওয়ারের চূড়োয়। সেখান থেকে নিচের লোকজন গাড়ি সমস্ত কিছুকেই মনে হচ্ছিল গ্যালিভারের গল্পের লিলিপুটদের মতো। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অ্যালিসের কাঁধে কাঁধ রেখে হাতে হাত রেখে আমি তখন সমগ্ৰ প্যারিসের সৌন্দর্য উপভোগ করছি। ধীরে ধীরে সন্ধ্যা নেমে এলো। জ্বলে উঠলো টাওয়ারের সমস্ত আলো। নিচে শ্যেন নদীর জলে সেই আলোর অবারিত আলপনা। ভাসমান ক্রজ। অ্যালিসের ডাকে ঘোর কাটল। আইফেল টাওয়ারের উপর ফিফটি এইট ট্যূর আইফেল রেস্তোরাঁয় আমরা দুকাপ কফি নিয়ে বসলাম। কফিতে চুমুক দিতে দিতে ঠিক কখন যে এই ফরাসি নারীর চোখের অতলে হারিয়ে গেলাম! আজও ঠিক মনে করতে পারি না!