চিন্ময়ীর জগৎসংসার
মুখ থেকে মাটির ছাঁচ নামিয়ে রেখে মেয়েটা এঁটো বাসন হাতে বাবুদের শ্যাওলা পুকুরে নামে। যেন মন্ডপ ছেড়ে হ্যারিকেন হাতে চইচই ভাতের দানা খুঁজতে বেরিয়েছে হরপ্পার চাপা পড়ে যাওয়া এক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন।।
বাসন বলতে একটা হাঁড়ি, একটা কড়া,তিনটি থালা। গাছ কোমর করে শাড়িখানা পাকিয়ে সাঁতরে চলে যায় পুকুরের মাঝ অব্দি।
সেখানে ডাঁটো ডাঁটো শালুকের পাত আর ডাঁটা, ফুলে তার লজর নেই, ফুলে কি তরকারী হয়, যে ফুলে মন যাবে??
মাজা বাসনের পাঁজা গোছ করে রেখে হেঁটে যায় উদ্বিগ্ন চিলের মতো মাঠের আল তক।
ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে, কি আতুর অপেক্ষা,
সন্ধ্যেবেলা মাঠ থেকে ফেরার পথে
যেসব বিচক্ষণ গরুরা পথে এক দাবা নাদে, তারা তার আরাধ্য ঈশ্বর।।
দুধে তার অধিকার নেই, দুধ মালিক দুয়ে নেয়, তার জন্য নির্দিষ্ট সময় আছে। কিন্তু গোবরের তো সময় অসময় নেই।।
চুরির অকাল গোবরে গরুর বা মালিকের লেবেল সাঁটা থাকে না, তা থেকে ঘুঁটে হয়, ঘুঁটে বেচে চাল,
চাল ফুটিয়ে ভাত।
ভাতের পাশে শালুকের ডাঁট আর পাত সাঁতলে, গপাগপ, গপাগপ, পাশাপাশি মাটির দাওয়ায় তিনটে থালা,
মানে তিনটে পেট, ব্যস, ক্ষিদের গত্ত বুজে গেলেই ওমনি এট্টা করে টুসকি ঢেকুর।।
একটা করে ঢেকুর মেরে একটা একটা গোটা দিন বয়সের গাছে চড়ে।।
তারপর এঁটো থালা, বাসন, আবার পুকুরে নাবা, আবার শালুকের ডাঁটপাত কিংবা কলমীর খোঁজ, আবার গোধূলির আলোয় গোবরের জন্য অপেক্ষা,
...
.....
........
পুকুর অন্যের, গরু অন্যের, কিন্তু পেটটা তো নিজের, সংসারটাও। এবং
ক্ষিদেটাও,
সেই ক্ষিদের যুদ্ধে দূর্গতিনাশিনী মাটির খোলস ছেড়ে, দশভুজা হয়ে সেজে ওঠে।
গেরস্থালির মেটে হাঁড়িতে উথলে ওঠে
পঞ্চামৃত ভোগ।।।
No comments:
Post a Comment