মস্তি
রাত বাড়লে ফাঁকা হয়ে যায় স্টেশনের আশপাশের এলাকাটা। ফলে বেশ জমে ওঠে টোটাদের মজলিশ। এমনিতেই দিন-রাতের বেশিরভাগ সময়টা নেশার ঘোরেই কাটে তাদের গ্যাংটার। আর সন্ধের পর তো স্টেশ- নের অদূরে আধো অন্ধকার এক গাজা-চুল্লুর ঠেকে মৌতাত বেশ ভালোই জমে ওঠে। সঙ্গে উপড়ি পাওনা বিজলির ঝলক। বেশ যত্ন করে ডিমকষা বা কখনও সখনও কষা মাংসের সঙ্গে চুল্লু পরিবেশন করে বিজলি। আর গাজা, চুল্লুর টাকা জোগাড় করতে মাঝে মাঝেই ছিনতাই করে তাদের দলের বল্টু, ননী, মদনা... টোটাকেও ট্রনিং দিতে চায় তারা। কিন্তু এখনও সাহসে কুলোয় না তার।
আজ সারাদিন বাড়ি ফেরেনি টোটা। তারা সব্বাই আজ নেশায় একেবারে বুঁদ হয়ে আছে। আর সন্ধে গড়িয়ে রাত বাড়তেই তারা সেই আদিম উল্লাসে মেতে উঠল। বেছে বেছে যাত্রী -বোঝাই মহিলা কামরার দিকে মহা উল্লাসে ছুঁড়ে মারতে লাগল রেললাইনের ধারে পড়ে থাকা চোখাচোখা পাথরগুলো। টোটাদের কাছে এ নেশার আনন্দ গাঁজা-চুল্লুর নেশার চেয়েও কম কিছু নয়। সবাই একসঙ্গে হৈহৈ করে ওঠে। খ্যা খ্যা করে হাসতে হাসতে গলায় চুল্লু ঢালে। মস্তিতে চুর সব্বাই!
হঠাৎ জমাটি আসরের রসভঙ্গ করে টোটার পকেটের ফোনটা গাঁক গাঁক করে বেজে ওঠে,
— " শিগগির বাড়ি আয়, ওরে অকালকুষ্মাণ্ড! মামাবাড়ি থেকে ফেরার পথে তোর মায়ের অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে। লোকজন হসপিটালে নিতে গেছে। অবস্থা একদম ভালো নয়। কারা যেন ট্রেনের কামরায় বাইরে থেকে পাথর ছুঁড়েছিল!"
টকটকে লাল চোখে নেশার ঘোরের মধ্যে টোটার মনেপড়ে, আজ সকালে বেরোনোর সময় আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে যখন বহু যত্নের মিঠুন চক্রবর্তী মার্কা চুলটা আঁচড়াচ্ছিল তখন পিঠে হাত রেখে পিছনে দাঁড়িয়েছিল মা,
—" আজ ভাইফোঁটা। ডায়মন্ডহারবারে যাব ফোঁটা দিতে। বুলকিও সঙ্গে যাবে। তুই কি যাবি? চল না। বহুদিন তো মামাবাড়ি যাস নি।"
— " নাঃ, আমি যাব না৷"
মুখের ওপর মানা করে দিয়েছিল টোটা।
ফোনটা ধপাস করে পড়ে যায় টোটার হাত থেকে।
No comments:
Post a Comment