Friday, 15 October 2021

শারদীয় সংখ্যা ~ঝুরো গল্পে কাজল সেন

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || শারদীয় সংখ্যা|| ঝুরো গল্পে কাজল সেন


হীরের আঙটি

বেদশ্রুতিকে বারবার সবাই মানা করেছিল, বিয়ের আর মাত্র দিন চারেক বাকি আছে,এখন যখন তখন হুটহাট করে বাইরে বেরোনো ঠিক নয়। কখন কী অঘটন ঘটে যেতে পারে, কে বলতে পারে! আর যদি বেরোবারই থাকে দিনের আলোয় যাবি, সন্ধ্যের পরে কখনই নয়

        কিন্তু বেদশ্রুতি অত নিষেধ মেনে চলতে পারে না। নিজের বিয়ে বলে কথা! তাও অফিস থেকে মাত্র মাসখানেক ছুটি আদায় করতে পেরেছে। বিয়ের সাতদিন আগে উড়ে এসেছে লন্ডন থেকে। বিয়ের পর হপ্তা তিনেক কাটিয়েই আবার ফিরে যেতে হবে কর্মক্ষেত্রে। তার আই টি কোম্পানি বছর দুয়েকের জন্য তাকে পাঠিয়েছে। মাত্র  একবছর পেরিয়েছে। তার বিয়ের যাবতীয় ব্যবস্থা করে রেখেছে বাড়ির সবাই। পাত্র দেখা থেকে বিয়ের বাজার সবকিছুই। বেদশ্রুতি পাত্রের ছবি দেখে পছন্দ করেছে।পাত্র কলকাতাতেই অন্য একটা কোম্পানিতে  চাকরি করে। আর কিছু না হোক, বন্ধু-বান্ধবীদের বিয়ের নেমন্তন্ন তো তাকে নিজে গিয়েই করতে হবে! সেদিনও সন্ধ্যের ঠিক আগেই বেরিয়েছিল বেদশ্রুতি। বিয়ের কার্ড তাদের হাতে তুলে দিয়ে আন্তরিক অনুরোধ জানিয়েছিল, অবশ্যই আসবি! কোনো অজুহাত শুনব না। মোটামুটি প্রায় সব বন্ধু-বান্ধবীদেরই বাড়ি গেছিল। বেদশ্রুতি ওলা-উবেরে যাওয়াআসা করে। কিন্তু সঙ্গীতার বাড়ি থেকে বেরিয়ে অনেক চেষ্টা করেও কোনো গাড়ি বুক করতে পারল না। বাধ্য হয়ে হেঁটেই রওয়ানা হলো, বড়রাস্তায় পৌঁছে ট্যাক্সি ধরবে। সঙ্গীতার বাড়ি বড়রাস্তা থেকে অনেকটাই ভেতরে। সাপের মতো একটা রাস্তা এঁকেবেঁকে এগিয়ে গেছে বেশ কয়েকটা বসতি পেরিয়ে। আসার সময় উবের তাকে সঙ্গীতার ঘর পর্যন্তই পৌঁছে দিয়েছিল। কিন্তু ফেরার সময় এই বিপত্তি। বেদশ্রুতি দ্রুতপায়েই এগোতে থাকে। কিন্তু অঘটন বোধহয় এভাবেই ঘটে। বেদশ্রুতি কিছু বুঝে ওঠার আগেই আচমকা তার শরীরটা এলিয়ে পড়ে কী একটা আশ্চর্য মিষ্টি গন্ধে। কেউ যেন পেছন থেকে তার নাকে চেপে ধরেছে সেই আশ্চর্য মিষ্টি গন্ধের রুমাল। না, বেদশ্রুতি তারপর আর কিছুই বুঝতে পারেনি, কিছুই জানতে পারেনি। আচ্ছন্ন অবস্থায় তাকে কে কোথায় নিয়ে গেছিল, কী করেছিল, তার পক্ষে জানা সম্ভব ছিল না। যখন তার আচ্ছন্নভাব আস্তে আস্তে কেটে গেল, একটু একটু করে বোধের অবস্থানে পৌঁছল, বুঝতে পারল, সে এখন শুয়ে আছে সেই সাপের মতো রাস্তারই একধারে একটা পরিত্যক্ত অন্ধকার ঘরে। মোবাইল মানিব্যাগ খুঁজে পেল না। জিন্সের প্যান্ট প্যান্টি পায়ের তলায় নামানো। যোনিতে হাত দিতে একটা চটচটে তরল আঙুলে উঠে এলো। বেদশ্রুতি নিশ্চিত হলো, এই নারীরক্তের সঙ্গে মিশে আছে পুরুষের বীর্য। তাড়াতাড়ি উঠে প্রায় দৌড়েই বড়রাস্তায় পৌঁছল। একটা ট্যাক্সিও পেয়ে গেল। ঘটনার কথা কেউ জানল না, বেদশ্রুতি কাউকে জানালো না। বিয়ে হয়ে গেল। বরের সঙ্গে পৌঁছে গেল শ্বশুরবাড়ি। ধুমধাম করে দুপুরে বৌভাত আর সন্ধ্যেবেলায় প্রীতিভোজ হলো। ফুলশয্যার খাটও সুন্দর সাজানো হয়েছিল। মাঝরাতে আদর করে বহুমূল্যের হীরের আঙটি বেদশ্রুতির আঙুলে পরিয়ে দিল তার বর। বেদশ্রুতি হতবাক। অঘটনের পর এই আঙটিটাও আর খুঁজে পায়নি বেদশ্রুতি

 

2 comments: