" হবুবর মানুষ নয় "
কি দুঃসাহস!
যতোই ছুটে চলি ও ততোই পিছু ছোটে।
মনে হয় দিই ঘুরিয়ে ওর ঘাড়ে এক রদ্দা। কিন্তু ভয় লাগে এই ভোর সন্ধ্যায় আর এই অজানা তায় নির্জন পরিবেশে।
হাতে সোনার ঘড়ি। পকেট ভর্তি টাকা। গাড়িটা খারাপ হয়ে গেল। সামনে মেকানিক্সও পেলাম না। অন্যথায় ড্রাইভারের হাতে সব ভার সঁপে দিয়ে হাঁটা ধরলাম ট্রেন ধরতে। বারুইপুর থেকে শিয়ালদহ আর শিয়ালদহ টু শান্তিপুর। সন্ধ্যা থেকে রাত। মানে সাতটা এগারোটা কাজ শেষ। মানে রাতেই মিঠা দের বাড়িতে টাকাগুলো পৌঁছে দিতে পারবো। কারণ যে কাল মিঠার বিয়ে!
মিঠা আমার প্রিয় বন্ধু অনলের বোন যে! টাকা কম পড়ায় সকালেই অনল আমায় ফোন করে আর আমিও ব্যাঙ্ক থেকে দুপুরে টাকা তুলেই রেখেছিলাম। দোকান বন্ধ করেই গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়েওছিলাম। কিন্তু যত বিপত্তি হল আচমকা গাড়িটি বিকল হয়ে যাওয়ায়। টাকা আজ রাতে পেলেই বিয়েবাড়ির মঙ্গল। তাই আমার এই দৌড়ে সামিল হওয়া।
কিছুটা আসার পর অনুভব করি কেউ যেন আমার পিছনে পিছনে আসছে। বারুইপুর মফস্বল শহর ।লোকালয়ের আসার পথে স্টেশন রোড বেশ নির্জন। দুলাখ টাকা পকেটে তাই সাবধানের মার নেই। খানিকক্ষণ দৌড়ে হাঁটার পর সাহসের সঙ্গে ঘুরে দাঁড়ালাম।
অবাক হয়ে দেখি আমার পিছনে যে ছুটে আসছিল
ধুতি পাঞ্জাবী পরা টোপর মাথায় নেকড়ার জুতো পায়ে সুবেশী এক বর !
আমি হেসে ফেলার জোগাড়। ভয়ে নেতিয়ে যাওয়া শরীর তখন রোমাঞ্চিত এই ভেবে ছেলেটা আমাকে বোকা বানিয়ে মজা করছিল এতক্ষণ। আলাপ করার জন্য হেসে হাত বাড়াতেই ও পোঁ পোঁ দৌড়!
হায় পাগল! আমি হেসে হেসেই লজ্জায় মরি!
মিঠা দের বাড়ির সামনে যথাসময়ে পৌঁছে গেলাম। আমার দায়িত্ব শেষ। অনলের হাতে টাকাটা তুলে দিতে পারলেই আমি মুক্ত। কথা এমনি আবার বিয়ের ব্যাপারে।
বাড়ির সামনে বানানো নহবতখানা এবং আশপাস কেমন অন্ধকার। আলোরমালায় সুসজ্জিত অথচ। সব নেভানো। বাড়িতে আলো ছিল , তবে বেশ নিস্তব্ধতা বিরাজ করছিল। বেল মারতেই অনল বেড়িয়ে এল - ও যেন আমার অপেক্ষাতেব ছিল।
ওকে কেমন বিমর্ষ দেখালো। আমি ওর হাতটা ধরলাম ,--
-- কি ব্যাপার কি হয়েছে? আমি পুরো দুই-ই এনেছি চিন্তা কিসের?
ও কিছু না বলে আমায় নিয়ে বাইরে যেতে চাইলো। আমি অবাক হলাম ও আমায় বাড়িতে না ডাকায়।
বাইরের রাস্তার অন্ধকার এককোণায় নিয়ে গিয়ে ও কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো। আমার। বুঝতে বাকি রইলো না যে কোন বিপদ ঘটেছে নিশ্চয়ই।
আমি অনলকে শান্ত করার চেষ্টা চালাতেই ও আমাকে জড়িয় ধরে বললো, --
-- মিঠার হবু বর আজ সকালে রাণীগঞ্জ থেকে বাড়ি ফেরার পথে গাড়ি এক্সিডেন্টে প্রান হারিয়েছে। অফিস থেকে বিয়ের জন্য ছুটি নিয়ে ফেরার পথে ভোরের কুয়াশায় ওর গাড়ি দূর্ঘটনার কবলে পড়ে এবং ওর তাৎক্ষণিক মৃত্যু ঘটে!
আমি চুপ হয়ে যাই। উত্তর দেওয়ার কোনই ভাষা পাই না। চুপ করে চোখ বন্ধ করে দেখার চেষ্টা করি বারুইপুরের নির্জন রাস্তায় আমার পিছনে আসা মিঠার হবুবরের বরবেশী পাত্রটিকে!
No comments:
Post a Comment