মধুসূদন
মধুসূদন আমার কাছে হঠাৎ হঠাৎ আসে। একেকদিন আসে। আর আসেও সারাদিন খাটাখাটনির পর, সন্ধে নামলে পর।
মধুসূদন আমার ছেলেবেলার স্যাঙাৎ। স্কুল লাইফ একসঙ্গে। কলেজ লাইফ একসঙ্গে। এখন যেদিন আসে, আমরা প্লাস্টিকের চেয়ার নিয়ে ছাদে উঠে যাই। দক্ষিণ দিকে মুখ করে মুখোমুখি বসি। মেঘের ভেতর চাঁদ, মেঘের বাইরে চাঁদ।
আমরা কথা বলি। স্কুলদিনের কথা। কলেজদিনের কথা। বন্ধুদের কথা। সাইকেল করে খালশিউলি পেরিয়ে গিয়ে একবার আমরা কীভাবে হারিয়ে গিয়ে ভয় পেয়েছিলাম, সেইরকম কথা।
মধুসূদন খুব ভয় পাচ্ছে আজকাল। বলছে, ফ্যাকট্রি্টা যেকোনো দিন বন্ধ হয়ে যাবে।
কলেজে যখন পড়ি, আমি ঋতুকে চাইতাম। ক্লাসে ঋতুই ছিল সবচেয়ে ঝলমলে। ঋতু কিন্তু মধুসূদনকে ভালোবাসত। তবে মধুসূদনের ঋতুর ওপর একটুও টান ছিল না। তখন আমি সবসময় ঋতুর কথা বলতাম। আমি কোনোভাবে ঋতুর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি মধুসূদন একদম চাইত না।
ট্রেন এক্সিডেন্টে আমার বাবার পা কেটে গেল। মধুসূদন খুব কাঁদল।
মধুসূদনের মেজদি ভাল গান গাইত। আমাদের পাড়ায় আনোয়ার বলে একজন তবলিয়া ছিল। মধুসূদনের দিদি তার সঙ্গে বম্বে পালিয়ে গেল। মাসিমা শুনে অজ্ঞান হয়ে যায়! মেজদিরা শুনতে পাই ভাল আছে আজ। শুনতে পাই মেজদির মেয়েও ভাল গান শিখেছে। মেজদি আমাদের দুজনকে একবার খুব বকেছিল।
মাসিমা পোস্তর বড়া আর বিউলির ডাল এমন রান্না করত যার কোনো তুলনা হয় না।
কলেজের পর মধুসূদন চাকরি পেয়ে যায়। আমি তখনও বেকার। দুজনে মিলে বেড়াতে গেছি। একবার কোনারক, আরেকবার খাজুরাহো।
আমরা অনেক অনেক অনেক কথা বলি। আমাদের কথা যেন শেষ হয় না।
অঙ্কিতা মধুসূদনকে পছন্দ করে না। মধুসূদন এলে সারাক্ষণ গজগজ করে। আমি কিছু বলি না। আমাদের দুজনকে ডাইনিং টেবিলে ডিনার সাজিয়ে দিয়ে পান্নাকে হেঁচড়ে টেনে নিজের রুমে নিয়ে সশব্দে দরজা বন্ধ করে। পরের দিন মধুসূদন ভোর ভোর উঠে পড়ে, আমাকে ঠেলে তুলে দেয়। ফিরে যায় যখন, অঙ্কিতা কিচেন থেকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলে, বউ কেন ছেড়ে দিয়েছে ভাবছে কেউ জানে না?
আমি মধুসূদনের মুখের দিকে কয়েক সেকেন্ড চেয়ে থাকি, তারপরই বলি, আসিস কিন্তু আবার।
No comments:
Post a Comment