Tuesday, 12 October 2021

শারদীয় সংখ্যা ~মুক্তগদ্যে দেবলীনা চক্রবর্তী

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || শারদীয় সংখ্যা|| মুক্তগদ্যে দেবলীনা চক্রবর্তী


সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে ...

প্রথম ধাপে...

কোনো এক ধাতব সন্ধ্যায় আমাদের মধ্যে কথা শুরু হলো। কত রকমারি , বাহারি , আদুরে, জমকালো কথার ফরাস পাতা জমিনে বসে সুখের গল্প, টুকরো প্রেমে মজে থাকা আঙুর থোকার গল্প, নুয়ে পড়া অশ্বত্থের ডালে সার দিয়ে বেঁধে রাখা লালসুতো অথবা ছেলেবেলার দোলনা কথা, একফালি রোদ কিভাবে  অধিকারে ছুঁয়ে যায় আমাকে সে...সব কথা। এত কথোপকথনের মাঝে কিছু অব্যয় আর কিছু প্রশ্নচিহ্ন যেমাত্র ঢুকে পড়ল আমাদের সম্মিলিত প্রচ্ছদে, ওমনি হাড়গোড় ভাঙা কিছু শব্দ দিয়ে তুমি কীভাবে যেন সমাস তৈরি করবে বলে উদগ্রীব হয়ে উঠলে।কিন্তু শুধুমাত্র কিছু ক্রিয়াপদেই ভরে উঠতে লাগলো আমাদের এই গল্প।
এভাবে আমরা পেরিয়ে গেলাম রাত্রি প্রহর , মাঝে বিরতি খানিক তারপর আবার সেই কথকথার ঢেউ এ ভাসতে ভাসতে আমরা পেরিয়ে গেলাম একটা গোটা নক্ষত্র পথ!


দ্বিতীয় ধাপে ...

নিভে যাওয়া অন্ধকার আর গোলাপ রঙা ভোরের সন্ধি আলোয় তখন আমাদের অক্ষরবিতান সেজে উঠেছে অরূপ আলোয়। শব্দের থেকে ঘষে ঘষে সব ধূসর রং তুলে ফেলার পর আমরা জমা করে চলেছি ক্রমশ সম্পর্কের মেহগনি রং। ধীরে ধীরে জমে ওঠা রঙের পরতে পরতে তুমি এঁকে দিচ্ছ জুঁই বাতাস, সতেজ মিঠে হাওয়ায় আমরা দুলে উঠছি দুধে আলতা মাধবীলতার থোকায়। আরো কিছুটা শব্দ ও গল্প কথা বলতে বলতে আমরা ধেয়ে যাচ্ছি নৈকট্যের
ধারাভাষ্যে।


তৃতীয় ধাপে ...

বাতাসের করতালির মাঝখান দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে আমাদের গল্পগাঁথা তখন এতটাই সুক্ষ্ম ও পেলব হয়ে উঠছে যেন তুলো বের হয়ে আসা ফুটিফাটা বালিশে মুখ ডুবিয়ে কাটিয়ে দেওয়া গোটা একটা আয়েশি দিন।সেইসব দিনে আমরা নিজেরা নিজেদের মতো করে এক চিলতে চারদেওয়াল গাঁথি।কথার সিঁড়ি বেয়ে উঠে আসি সাজানো চিলেকোঠায়।বহু যতনে সাজানো সেই ঘর, যেখানে শুধুই অন্দর-কথা।আন্তরিক কথার গিঁট খুলে খুলে আমরা ডুবতে থাকি গহীনে,ক্রমশ তলিয়ে যাই মন্দ্র সপ্তক চিরে কুহেলি প্রদেশে। সেখানে কি যেন বারবার টোকা দেয় আর অনুভূতির গাঢ় অন্ধকার ছিঁড়ে দিতে চায় , আমাদের বেসাতি ক্রমশ হয়ে ওঠে সাদা পলকা পালক।


চতুর্থ ধাপে ...

আমাদের এত কথা ইতিমধ্যেই একটা গোলকধাঁধায় ঢুকে পরে। যেখানে চতুর্দিকে কিছু দৃশ্য অপেক্ষায় তোমার রং তুলির ছোঁয়ায় ছবি হবে বলে , যে দৃশ্যগুলো আজ পর্যন্ত অনুবাদ করা যায় নি , ওরা অধীর হয়ে তোমায় আকুতি জানায়!সেসব দৃশ্যের দিকে সরাসরি না তাকিয়ে তুমি শুধু জলের ভিতর ছায়া খুঁজে যাচ্ছ অথচ সে ছায়া তুমি ছুঁতে পারছ না।
শুকিয়ে যাওয়া আতরের মতো অবান্তর হয়ে উঠছে সেসব দৃশ্য। তুমি আমাদের সংলাপকে একটা অবয়ব দিতে চাইছো, এদিকে সাদা কাগজের ওপর প্রথম বিন্দুই বসিয়ে উঠতে পারছ না, আসলে ক্যানভাস উপচে পড়ছে লৌকিক ভ্রমে।


পঞ্চম অথবা শেষ ধাপে ...

তারপর হাওয়া দেয় , ধুলোদের দাপট বাড়ে।শেষ অব্দি ঝড়ের উন্মাদনার মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে আমাদের গল্পের কথকথা। আমরা কিছুটা নীরব হয়ে পেরিয়ে যাই আরো কিছুটা পথ তারপর একে অপরকে বিদায়ী অভিবাদন জানিয়ে ফিরি তথাকথিত চেনা জংধরা পরিসরে। আর সেঁধিয়ে যাই বানানো খুপরির কিনারে। তারপর কাটতে থাকি সাদা কাগজ জুড়ে যত আঁকিবুকি, তাদের ছোট ছোট গোল্লা বানিয়ে ছুঁড়তে থাকি, তাক করি নির্দিষ্ট একটা দিক ধরে - যেমন যেদিকে সূর্য তার উল্টোদিকে, সকালে পশ্চিম দিকে। মাঝদুপুরের ঠা-ঠা রোদ্দুরে মাটির দিকে। বিকেলবেলা পূবদিকে। আর সারারাত জুড়ে তারাদের দিকে। অনেকটা প্রায় বে-খেয়ালে... শেষমেশ গোল্লা গুলো ছুঁতে চায় এক অলিখিত গল্পের উপসংহার!



No comments:

Post a Comment